এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
একবিংশ অধ্যায়
পৈতুণ্ডী বাবু ভীড় দেখে এগিয়ে এসে দেখেন গুণীন এসে গেছেন । এর আগে তিনি কখনও তাঁকে চাক্ষুষ করেননি। গতকাল লাহিড়ী বাড়িতে না এলে আজও হয়তো গ্রাহ্যই করতেন না । যাক গুণীন এসে গেছেন যখন লাহিড়ীকে একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে।
তিনি ভীড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে গুণীনকে সমাদরে নিজের বাড়িতে এনে তুললেন। তাঁকে যে একবারটি হাজারিবাগে যেতে হবে তাও জানালেন ।
গুণীন বললেন - বেটা মেরা ফিজ লেকিন তিনগুনা হো যায়েগা আউর খানা পিনা আনা জানাকা খর্চা অলগ সে দেনা পড়েগা ।
পৈতুণ্ডী বাবু সম্মত হতেই গুণীন বললেন - কব জানা হোগা ?
- জী, অভি ইসি বক্ত ।
- মতলব অভি? লেকিন ---
- লেকিন মেকিন ছাড়ুন মশাই। রামু বলেছে তখন যেতেই হবে । আপকো পাঁচ গুনা ফিজ দুঙ্গা। ফির কাম খতম হোনে পর আউর দুগুনা দে দুঙ্গা ।
গুণীন এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনকি করে । বললেন - ঠিক হ্যায় তো অভি নিকলে !
পৈতুণ্ডী বাবু দশ মিনিট সময় চেয়ে নিলেন তৈরি হতে। রেডি হয়ে বেরিয়ে এলেন । পোস্ট অফিসের মেল ভ্যানটা তখন ডাক নিয়ে হাজারিবাগ সদরে যাচ্ছিল । কর্মীরা রেল বাবুকে বিলক্ষণ চেনে । ড্রাইভার বলল - আইয়ে স্যারজী! কাহাঁ জাইয়েগা ?
পৈতুণ্ডী বাবু বললেন - জানা তো থা হাজারিবাগ ; লেকিন--
গুণীনকে দেখিয়ে বললেন - ইনকো লে জানা থা ।
ড্রাইভার বলল - কোই বাত নেহি জী । আইয়ে সামনে বৈঠিয়ে আপ দোনো । ইয়ে বাঘা! তু চলা যা পিছে।
ওঁরা উঠলেন ডাকগাড়িতে । হাজারিবাগ সদর পোস্ট অফিসের একটু আগে নেমে গেলেন পৈতুণ্ডী এবং গুণীন । তারপর একটা অটোয় করে সোজা চলে এলেন লাহিড়ী মশাইয়ের বাড়িতে।
রুদ্ধদ্বার কক্ষে গোপনে বৈঠক বসল । লাহিড়ী মশাই, নক্ষত্র পাল, কালীচরণ, ছুটকি , পৈতুণ্ডী বাবু আর গুণীন - এই ছয় জন মিলে কিংস্টন সাহেবের বিষয়ে চুলচেরা আলোচনা চলল । তার আগে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল সবার সঙ্গে। পৈতুণ্ডী বললেন - দারুণ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো ! আমার যে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে!
লাহিড়ী মশাই বললেন - থাকো না ! তুমি থাকলে তো ভীষণ খুশি হব ।
- কিন্তু উপায় নেই বন্ধু ! সরকারি কাজ বলে কথা ! তায় আবার কল ডিউটি । থাকতে পারলে আমিও খুশি হতাম । কিন্তু আমায় যেতেই হবে । কোন উপায় নেই ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - বুঝতে পারছি । যাই হোক ছুটি নিয়ে চলে এসো !
পৈতুণ্ডী মশাই বিদায় নিলেন । এবার শুরু হল পঞ্চপাণ্ডবের খেলা ।
গুণীন বললেন - বহোত ডেঞ্জারাস হ্যায় ইয়ে সাহাব । লেকিন কোই ফিকর নেহি ; ম্যায় হুঁ না ! সম্ভাল লুঙ্গা। বাবুজী মুঝে এক খড়ি পেন্সিল দিয়া যায় ।
একটা চকখড়ি ওঁর হাতে দিয়ে লাহিড়ী মশাই বললেন - এটা দিয়ে কি হবে , আঁকি বুকি ?
- কেয়া ?
গুণীন না বোঝার ভাব দেখিয়ে বললেন - আঁকি বুকি কেয়া হ্যায় বাবুজী ?
- ও তুমি বুঝবে না । নাও দেখাও দেখি তোমার কেরামতি?
গুণীন মাটিতে একটি পাশার ছক এঁকে কি সব গোনাগুনি শুরু করলেন । মিনিট পাঁচেক বিড়বিড় করে বকতে বকতে বললেন - কেয়া নাম বতায়া সাহাবকা , বাবুজী ?
- চার্লস কিংস্টন।
- বুরা নাম । বহোত গন্ধা নাম।
লাহিড়ী মশাই বেজার মুখে বললেন - নামে কি আসে যায়? কাম দেখো অউর বতাও কেয়া করনা হোগা !
গুণীন চক ভেঙে কয়েক টুকরো করে পাশার ঘরে একটা একটা করে রাখলেন । একটিই ঘর খালি ছিল ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - আর একটা চক দেব নাকি ?
গুণীন সে কথায় পাত্তা না দিয়ে বললেন - এক হি ঘরকা আদমী হ্যায় । তিন ভাই থা ! দো মর গিয়া। এক হি জিন্দা হ্যায় অভিতক । ওহি হ্যায় আতঙ্ক । হ্যায় না ?
লাহিড়ী মশাই আপ্লুত হয়ে বললেন - হাঁ হাঁ। একহি আদমী বচা হ্যায় , ওহি চার্লস ।
মিঃ পাল গুণীনের কথায় বিমূঢ় হয়ে গেছেন । মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতে পারছেন না । কালীচরণ , ছুটকি কিছুই বুঝতে পারেনি। কি বলছে ওই গুণীন ।
লাহিড়ী মশাই মোহিত হয়ে গেলেন গুণীনের কথায় ।
বললেন - ইনকো ক্যায়সে পকড়া যায় শোচো।
গুণীন বললেন - বহোত কঠিন কাম হ্যায় ; লেকিন হ্যায় বঢ়া নেক ।
( ক্রমশ )
