এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
একাদশ অধ্যায়
হাজারিবাগের বাঙালি পাড়ায় বহু বিশিষ্ট জনের বাস। এঁদের মধ্যে রামতনু লাহিড়ী মশাইএর আভিজাত্য অন্যদের তুলনায় কিছু বেশী । তিনি যখন শুনলেন মেথিলাল মানে তাঁর বাড়ির কর্মচারী মহুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে জঙ্গলে পড়েছিল এবং সতীশরা চারজন ও এক গোরা সাহেব মিলে তাকে উদ্ধার করেছে ; তিনি বড়ই বিস্মিত হলেন ।
কর্মচারীদের মধ্যে মেথিলাল তাঁর অত্যন্ত প্রিয় এবং বিশ্বাসী কর্মচারী। কোনদিন কোন অস্বাভাবিকতা তার মধ্যে ছিল না । আর সে যে নেশা করে তাও তিনি জানেন না । প্রথমে শুনে তো তাঁর বিশ্বাসই হয়নি । কিন্তু গোরা সাহেবের মুখে জানতে পারেন মেথিলাল মাতলামি করতে করতে আসছিল ।
তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা কি ভাবে মেথিলালকে উদ্ধার করে এনেছেন সবিস্তারে জানালেন।
লাহিড়ী মশাই সাহেবের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ দিয়ে বললেন - কিন্তু মেথিকে ওভাবে নেশাগ্রস্ত করল কে ?
সাহেব বললেন - সে তো রহস্যময় মনে হচ্ছে। আমিও মেথিলালকে যতটুকু জানি বা চিনি তাতে তাকে তো নেশাড়ু বলে মনে হয় না । তবে ছোট জাত তো ! হয়তো দেখুন মদটদ খায় !
লাহাড়ী মশাই বললেন - তবে তো এমন লোককে আর কাজে রাখা যাবে না । আমি আজই ওকে বিদায় করে দিচ্ছি ।
সাহেব বললেন - আর কিছু দিন অপেক্ষা করলে হোত না ? না মানে আমি বলতে চাইছি নিজের চোখে না দেখে শুধু কানে শুনে এযন সিরিয়াস ডিশিসন না নিলেই কি নয় ?
লাহিড়ী মশাইয়ের সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল । তিনি তো ঠিকই বলেছেন - না বাজিয়েই বাতিল করে দেওয়া সুখকর হবে না ।
বললেন - ঠিক আছে, আপনি বলছেন যখন - এঅটা মাস নয় দেখেই নিই।
সাহেব কৃতজ্ঞতা জানালেন । মিঃ পাল বললেন - আমার সাহেবটি মাটির মানুষ কত্তামশাই । বড়ই দয়ালু ।
- সে তো দেখতেই পাচ্ছি হে !
মিঃ পাল এবং গোরা সাহেব ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে এলেন তাঁর ভাড়া বাড়িতে ।
এসে দেখেন কালীচরণ তার গ্রামে চলে গেছে। ছুটকি জ্বরের ঘোরে পড়ে রয়েছে তাঁর বিছানায়।
গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বরে বেহুঁশ। কপালে জলের পট্টি দিতে দিতে মিঃ পালকে বললেন - প্লীজ কল এ ডক্টর ।
মিঃ পাল ডাক্তার আনতে গেলেন । সেই অবসরে তিনি একটা বাঁকা হাসি হেসে ছুটকির পাশে বসলেন ।
জলের পট্টিতে ছুটকির জ্বর নামল ঠিকই কিন্তু অস্ফূটে বিড়বিড় করতে লাগল। গোরা সাহেব কিছু বলতে গেলেন; ছুটকি ঘাড় নেড়ে প্রতিবাদ করল।
গোরা সাহেব বললেন - তোমাকে আমি রাঁচি নিয়ে যাব।
এখানে তোমার কোন ভবিষ্যৎ নেই।
ছুটকি চোখ মেলে চাইল । সাহেবের কোন বদ মতলব নেই তো ! ধড়মড় করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। বাপটা কই ?
সাহেব বললেন - চলে গেছে ?
- কুথায় ?
- নিজের বাড়িতে ।
- আমাকে লিয়ে গেল না কেনে ?
- কাল তোমার রিহার্সাল। কেন নিয়ে যাবেন ?
- তাই বল্যে একা রাখ্যে ?
সাহেব কিছু বলার আগেই মিঃ পাল এসে বললেন - এসে পড়বে । এসে পড়বে । কালীচরণ তোমাকে একা রেখে যাবে কেন ! এখনই এসে পড়বে ।
ডাক্তার বাবুকে বললেন - আসুন স্যার, দেখুন তো মেয়েটার জ্বর এসেছে মনে হচ্ছে ।
ডাক্তার বাবু নাড়ি টিপে দেখলেন সব ঠিক। জ্বর তো নেই। বললেন - ওর তো কিছুই হয়নি !
সাহেব বললেন - কিন্তু ওর তো জ্বর ছিল। আমি জলফট্টি দিয়ে জ্বর নামিয়েছি । এই চুটকি বল না?
ছুটকি হাসতে লাগল ।
- মজা কইরেছি সায়েব। এই দেখ !
বলে বগল থেকে দুটো আস্ত পেঁয়াজ বের করে দেখাল । সাহেব বললেন - ওগুলো তো ওনিয়ন ।
ছুটকি বলল - অত সব জানি না বাবু। শুনেছি বগলে পিঁয়াজ চেইপে রাখলে গা গরম হয় । আমারও হয়েছিল।
ব্যস !
ডাক্তার বাবু এমন আজগুবি কাণ্ড দেখে না হেসে পারলেন না । মিঃ পাল বললেন - চলুন স্যার, আপনাকে রেখে দিয়ে আসি ।
ওঁরা চলে যেতেই ছুটকি এগিয়ে এসে সাহেবের হাতে ধরে বলল - এখনও বুঝলি না । তবে এই নে -
বলে পেঁয়াজ দুটো সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল - এগুলো বগলে ধর ; দেখবি কিছু পরে তোরও গা গরম হবে গো ?
সাহেব বললেন - ওনিয়ন ছাড়াই আমার বডি গরম হয়ে গেছে। চল বিছানায়।
( ক্রমশ )
