STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

এ তুমি কেমন তুমি

এ তুমি কেমন তুমি

4 mins
355

ষোড়শ পর্ব


নক্ষত্র পাল লাহিড়ী মশাইএর কথামত কালীচরণ এবং ছুটকিকে তাঁর আনতে সম্মত হলেন । লাহিড়ী মশাই তাঁকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে বললেন - তাহলে কি ঠিক করলেন পালবাবু ? দেশেই ফিরে যাবেন ?

- আমি রাজী স্যার । আপনার কথামত ওদের আনতে যাচ্ছি ।

- কিন্তু গোরা সাহেব যদি বাধা দেন !

- তারও উপায় ঠিক করে রেখেছি। আপনি অযথা চিন্তিত হবেন না স্যার । আমাকে একবারটি ভরসা করে দেখুন।

- সে তো অবশ্যই আছে মিঃ পাল । তবে সাহেব যদি জানতে পারেন আপনি ওদের ফুসলিয়ে নিয়ে আসছেন তখন ?

- বললাম তো স্যার ; ভরসা রাখুন। আমি ঠিক নিয়ে আসব ।

চিন্তান্বিত হয়ে লাহিড়ী মশাই বললেন - কাউকে সঙ্গে নেবেন না কি ? বলেন তো লোক ঠিক করে দি ?

- আছে স্যার । আপনাকে বলা হয়নি । ভোরবেলায় আমি মেথিলালের কাছে গিয়েছিলাম। আপনার বাড়িতে উঠেছি জেনে খুশি হল মনে হয় । ধীরে ধীরে উদ্দেশ্যের কথা জানাতেই সে রাজী হয়ে গেল সঙ্গে যেতে।

- সে তো বুঝলাম। কিন্তু ওর কোন উদ্দেশ্য নেই তো? কাল তো সাহেবের সঙ্গে যা দহরম মহরম দেখলাম!

- ওই চালেই তো কিস্তিমাত করলাম স্যার । 

- তা কেমন?

- দু'শো টাকা হাতে ধরিয়ে বললাম স্যার তোমাকে দিয়েছেন আমার সঙ্গে যেতে । প্রথমে একটু ভেবে নিল; কিন্তু আপনার নাম শুনে রাজী হয়ে গেল । বলল সাহেবকে ও ম্যানেজ করবে; সেই সুযোগে ওদের নিয়ে আমি বেরিয়ে পড়ব ।

লাহিড়ী মশাই খুশি হয়ে পাঁচশ টাকা পালের হাতে দিয়ে বললেন - মেথি যদি দুশো পায় তবে আপনার পাঁচশ এমন কিছু নয় ।

মিঃ পাল দুর্গা দুর্গা বলে বেরিয়ে পড়লেন । লাহিড়ী মশাই শুভ কামনা জানিয়ে বাগানে গেলেন রোদ পোয়াতে ।

তার কিছুক্ষণের মধ্যে কিংস্টন সাহেব সরাসরি লাহিড়ী মশাইয়ের বাগানে গিয়ে দাঁড়ালেন। 

লাহিড়ী মশাইয়ের তো ভুত দেখার মত দশা । তবু তা বুঝতে না দিয়ে তাঁকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন - গুড মর্নিং সাহেব । হঠাৎ আমাকে স্মরণ করলেন ? কোন কাজ আছে নাকি ।

সকালের প্রতিশুভেচ্ছা জানিয়ে সাহেব বললেন - মিঃ পাল কি চলে গেছেন ? 

- হাঁ সাহেব । ও তো চলে গেল ! আর একটু আগে এলেই সাক্ষাৎ পেয়ে যেতেন ।

- ওর সঙ্গে কথা ছিল । ভাবলাম ওকে ছাড়িয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি । তাই বিবেকের তাড়নায় চলে এলাম । কিন্তু--

- কিন্তু টিন্তু নয় । এসেই যখন পড়েছেন তখন আজকের সকালটা অন্তত আমার এখানে কাটিয়ে যান ।

লাহিড়ী মশাই ভেবে দেখলেন সাহেবকে যদি এখানে আটকে রাখা যায় ; তবে পালের পক্ষে তা অবশ্যই শুভ হবে ।

কিন্তু এই ভাবনা বেশীক্ষন স্থায়ী হল না । সাহেব লাহিড়ী মশাইয়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বললেন - শুধু সকাল বেলা কেন স্যার; আপনি বলছেন যখন রাতটাও কাটিয়ে যেতে পারি ।

প্রমাদ গণলেন লাহিড়ী মশাই - এ যে দেখছি শাকের পিছনে মূলোটাও ?

কিন্তু তাঁর তো পিছিয়ে যাবার কোন প্রশ্নই নেই । বললেন - বেশ তো, শুধু রাত কেন কয়েকটা দিন কাটিয়ে যান না !

সাহেব খুশি হলেন না কি বোঝা গেল না । বললেন - পালকে বলবেন যেন আমার সঙ্গে দেখা করেন ।

বলে চলেই যাচ্ছিলেন, লাহিড়ী মশাই সময় কিনতে জবরদস্তি তাঁকে বসিয়ে রাখলেন । অন্তত বেলা এগারোটা পর্য্যন্ত যদি তাঁকে ধরে রাখা যায় ।

চা, কফি, ব্রেকফাস্ট খাইয়ে সাহেবকে তুষ্ট করতে চেষ্টা করলেন । 

এদিকে মেথিলাল এসে লাহিড়ী মশাইয়ের খোঁজ করছে। বাগান বাড়িতে আছেন শুনে খবর পাঠাল কাম হো গয়া।

লাহিড়ী মশাই সাহেবকে একটু বসে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বললেন - এক্সকিউজ মি। আপনি বসুন, আমি এখনই আসছি ।

ব্যস্ত পায়ে তিনি হনহন করে চলে গেলেন। সাহেবের সন্দেহ হলে তিনিও তাঁকে অনুসরণ করলেন । আড়াল থেকে মেথিলাল, মিঃ পাল, কালীচরণ আর ছুটকিকে দেখে নিলেন । আবার এসে বাগানে বসলেন যেন তিনি কিছু দেখেননি ।

ওদিকে লাহিড়ী মশাই মেথিলালকে বলে দিলেন ওদের সবাইকে বাড়ির চিলেকোঠায় নিয়ে গিয়ে রাখো। আমি সাহেবকে বিদায় জানিয়ে উপরে আসছি।

লাহিড়ী মশাই বাগানে এসে দেখেন সাহেব অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন । কারণ জিজ্ঞাসা করলে বললেন - আপ কা কাম তো হো গিয়া ; অব ম্যায় জাউঁ ?

লাহিড়ী মশাই বললেন - যাবেন ? তবে যে বললেন রাতটাও কাটিয়ে যেতে পারেন ?

- বলছেন ?

- আমি আর কি বলব ? এ তো আপনারই কথা।

- দেখুন স্যার ! আমি এখানে থেকে আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না । তবু বলছেন যখন --

লাহিড়ী মশাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন । ব্যাটা বলে কি ? তবে কি সত্যি সত্যিই রাত কাটিয়ে যাবে!

বললেন - আপনাকে আটকে রাখব এ সাধ্যি কি আমার আছে ! কাজের মানুষ আপনি ।

কোন ভণিতা না করে সাহেব বললেন - কেমন ছুটকিকে আমার মনে পড়ে গেল । জানেন স্যার ওকে আমি ভুলে থাকতে পারি না । এখনও যেন ওর গন্ধ পাচ্ছি। বাবার সাথে শহরে এসেছে বোধ করি !

লাহিড়ী মশাইয়ের সন্দেহ দৃঢ় হল । এ কোন সাধারণ মানুষের মত কথা নয় । ছুটকিরা তো এসেছে আর তারই গন্ধ পাচ্ছে ব্যাটা । নির্ঘাৎ অলৌকিক ক্ষমতা ধরে লোকটা।

সাহেব কিন্তু রইলেন না । ক্ষিপ্র পদে বেরিয়ে গেলেন । আর সেটাই লাহিড়ী মশাইয়ের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াল।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics