এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
পঞ্চম অধ্যায়
ছুটকি সাহেবকে দেখে অনুরক্ত হয়ে পড়ল । এমন ধবধবে ফর্সা বলিষ্ঠ চেহারার লোক খুব কেন প্রায় দেখেনি বললেই
চলে । হেসে গড়িয়ে পড়ে ইচ্ছে করেই সাহেবের গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল । সাহেবের গা থেকে ভুর ভুর করে আতরের গন্ধ বেরোচ্ছে। বলল -
- এ সায়েব কি মেইখেছিস রে ! এত সোঁদর বাস পাই !
সাহেব বললেন - ভেতরে চল তোকেও লাগিয়ে দি।
ছুটকি ভেতরে গিয়ে অবাক হয়ে গেল । একটা ছোট্ট তাঁবুর ভেতর এক ঘর জিনিসপত্র । এটা নাড়ে, সেটা ঘাঁটতে থাকে ।
সাহেব প্যারিস থেকে আনা একটা সুগন্ধি সেন্ট ফুস ফুস করে ছুটকির কাপড়ে মুখে হাতে লাগিয়ে দিলেন । ব্যস ! ছুটকিকে আর পায় কে ?
দেবল বাইরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল । হঠাৎ ছুটকির সেদিকে নজর যেতেই বলে উঠল - এই দেওলা ! দেখ দেখ আতর লাগাইলাম । কাছে আসবি না । তোর গায়ে যা মদ্দা মদ্দা গন্ধ ; আমার বমি পায়
সাহেব দেবলকে দেখে খুব একটা খুশি হলেন না । তথাপি ভদ্রতা দেখিয়ে বললেন - তোর নাম কি রে ?
- দেবল কিস্কু। আমি ছুটকিকে নিতে এইছি। আপনি ছাইড়ে দিন। উ আমার সম্পত্তি ।
ছুটকি মজা করে বলল - তোর বাপের সম্পত্তি ভাইবেছিস লয় ! যা যা ডুঙরিতে ফিরে যা । আমি এখন সায়েবের সেবা কইরব ।
রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে দেবল চলে গেল । সে জানে ছুটকির পরের কাজগুলো কি হতে চলেছে।
সামনের একটা মোটা শালগাছের উপর চেপে ছুটকির আসা পর্য্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগল । আসুক আজ ওর একদিন কি আমার একদিন !
সাহেব ছুটকির নাচ দেখলেন। প্রোভিশনালি সিলেক্ট করে রাখলেন । বললেন - যা চুটকি, তোর কাম হয়ে গেল । তোকে নিয়ে যাব রেডিও স্টেশনে ।
ছুটকি আনন্দে লাফাতে লাফাতে তাঁবু ছেড়ে বেরিয়ে এল। দোভাষীকে দেখে হেসে হেসে বলল - তোকেও সেবা কইরব রে ! ভাবিস না। আগে নিজের আখেরটো গুছাই লি।
দোভাষী লোকটা ভালো। বয়স হয়েছে । প্রৌঢ়ত্ব এসেছে দেহে । আবার একটু ধর্মভীরুও। বাড়িতে বৌ-ছেলেমেয়ে আছে। এখন এই বয়সে এসে বৌকে ধোঁকা দিতে পারেন কি ?
ছুটকি দৌড়াল। দেবল গাছ থেকে নেমে এল । সেও এক দৌড়ে গিয়ে ছুটকিকে ধরে দিল এক হেঁচকা টান । ছুটকি এসে পড়ল তার বুকের মাঝে। বজ্রকঠিন পেশীতে জড়িয়ে ধরল দেবল - তুই আমার ! খালি আমার । দেইখে লিব কোন শ্লা তোর দিকে লজর দেয় । চোখ গেলে দেব তার ।
ছুটকি হাসে । পারবি না রে। আমাকে কেউ বেঁধে রাখতে পারে নাই; তুই তো বাচ্চা ।
মনে মনে ভেবে নেয় ছুটকি যদি কারও হই তো সায়েবের ।
দেওলা যতই ভাবুক ওকে তো সুখী করতে পারবে না। হোটেলের বাসন ধোয়া চাকরটা।
ছুটকির মনে স্বপ্নের বিশাল লম্বা লাইন । অডিশন হবে, সিলেক্ট হবে আর তারপর নেচে নেচে জীবন কাটাবে। সেখানে দুঃখ কোথায়, দুর্দশা বা দৈন্য নেই । আছে কেবল সুখ আর সুখ ।
দেবল বলে - তুকে বিয়া কইরব আজই।
ছুটকি হাসে । বুঝতে দেয় না তার মনের কথা । দেবলকে চেনে । বড় জেদ ধরে ছেলেটা । হয়ত রাগে সায়েবের ক্ষতিও করে দিতে পারে ।
হাসতে হাসতে বলে - দেইখে লিয়েছি তুর মুরোদ ।
আহত হয় দেবল । জোরে আরও জোরে চাপ দেয় ছুটকির শরীরে ।
- আজ বিকালেই দেখতে পাবি ।
- কি ?
- তুকে ডুঙরিতে নে গেছি । সিতা রাঙিয়ে বউ করে। বুড়ো বাপটাকে তুই ছাড়া কে খাওয়াবে ?
- অঅঅ ! তুই আমাকে কাজের মিয়া ভাইবেছিস? ছাড় আমাকে । ছাইড়ে দে বলছি !
ছুটকির মুখের দিকে চেয়ে তখনকা মত ছেড়ে দেয় দেবল ।
যেতে যেতে বলে - সায়েব তোকে কিছু করে নাই তো ?
ছুটকি বলে - তাতে তুর কি ?
- চোখ গেইলে দিব শ্লার ! তুকেও ছাইড়ব না দেখিস! জানতি পাইরলে পরাণে মেইরে দুব ।
ছুটকি বেশ চেনে দেবলকে । তাই তখন হেসে হেসে বলল - না রে না । আমি তুর ছিলম, তুরই রইলম । ভাবিস না ।
দেবল শান্ত হল । দুধ সাদা দাঁত বের করে ছুটকিকে দেখতে লাগল। হঠাৎ দুটো শ্বদন্ত বের করে বলল - দেখ ছুটকি ওই শ্লা সিহেবকে কেমন ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাই।
ছুটকি দেবলকে দেখল । কিন্তু তার লম্বা দাঁত দুটো দেখতে পেল না । আগেও দেখেনি।
( ক্রমশ )
