এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
দ্বাত্রিংশতি অধ্যায়
মেথিলালের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে কিষাণলাল কাশীতে গিয়ে অনেক অনুসন্ধান করার পর সেই সাধুবাবাকে দেখতে পেল ।
কপালে ইউটার্ন তিলক । জটাহীন কেশ । পরণে হলদে রঙের ধুতি । তবে মাথায় লাল ফেট্টি বাঁধা। যেমন ভাবে কিষাণলাল মাথায় জড়িয়েছিল ।
সাধু গঙ্গাস্নান সেরে সবে আশ্রমে এসে ঢুকেছে । কিষাণলাল নির্দ্বিধায় সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ঢুকে গেল । সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করার ভান করে বেশ কিছুক্ষণ পড়ে রইল ।
সাধু বাবা পূজার্চনা শেষ করে উঠতে যাবেন ; দেখেন দীর্ঘাঙ্গ এক ফর্সা তরুণ তাঁর পায়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর একটু হলে তিনি পড়েই যাচ্ছিলেন; কিষাণ লাল তাঁকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করল ।
সাধু বাবা সন্তুষ্ট হয়ে বললেন - গিরণে সে বচা লিয়া। বোল বেটা কিসলিয়ে আয়া হো ?
কিষাণ লাল স্বভাব বিনয়ী তরুণ । তারই প্রকাশ ঘটল তার সম্বোধনে ।
- হে মহান বাবাজী ! মেরা ঔর মেরে পরিবারকে তরফ সে
আপকো হার্দিক প্রণাম করতা হুঁ ।
সাধু বাবা মনে করলেন কোন শিক্ষিত তরুণ বিপদে পড়ে এসেছে ।
বললেন - কহো বেটা ? কেয়া মাঙতে হো !
কিষাণ লাল সুযোগ পেয়ে বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথাই সাধুকে বলল । ছুটকি নামের মেয়েটাকে সে যে মনে প্রাণে ভালবাসে এবং তাকে বিয়ে করতে চায় ; তাও জানাল ।
সাধু বাবা যেন নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলেন । বললেন -
লেকিন ও লড়কিনে তুমকো ধোঁকা দিয়া - এহি তো ?
কিষাণ লাল কখনই ছুটকিকে ভালবাসেনি । তথাপি মিথ্যে করে বলল - বরাবর বাবা । লেকিন ম্যায় উস লড়কিকো শাদি করকেহি রহুঙ্গা ।
- তো ফিকর কিস বাত কি ?
- বাবা ! বোলনে মে খেদ হ্যায় ও লড়কি অব কোই দুসরা লড়কেকো চাহতি হ্যায় কিউকি ম্যায় অভিতক বেকার হুঁ।
- কোই বাত নেহি । ম্যায় তুমহে এক মন্তর জপনে কে লিয়ে দুঙ্গা । তুম তিনগো লং ঔর এক চামচ কুত্তিকি দুধ মে রখকে এক শো আঠবার ইস মন্ত্র কো জপ করকে শুখা হুয়া লং উস লড়কি কো খিলা দে না । ফির দেখ, ও লড়কি তুমহারা হি পশ্চাৎ পড় যায়েগী ।
- লেকিন বাবা ! ম্যায় চাহতা হুঁ মেরে কো ইস প্রকার ক্ষমতা প্রদান করে যিস কি প্রয়োগ সে ম্যায় উস লড়কে কা রূপ লেকে ছুটকিকো মনা সকুঁ ।
সাধু বাবা বললেন - এ্যায়সা মন্তর দেনা তো শাস্ত্রবিরোধী হোগা বেটা । তুমহে ছুটকি চাহিয়ে মিল জায়েগা
- বাবা ! বাবা ! ম্যায় উসকো দবায়ে রখনে কে লিয়ে বোলতা হুঁ।
- ঠিক হ্যায় তো ঔর এক কাম করো ও লং তুম লড়কিকো খিলানা ঔর খুদ কোই বাঁদরিকি পিসাব পি লেনা । কাম হো জায়েগা। যো কুছ তুম হোনা চাহতে হো পিনেকে বাদ উস রূপ প্রাপ্ত হো সকেগা।
কিষাণ মন্ত্র এবং নিয়ম কন্ঠস্থ করে চলে আসছিল ; সাধু বাবা বললেন - লেকিন মেরা দক্ষিণা ?
কিষাণ হাসল । - কাম হোনে কে বাত দশগুণা দে দুঙ্গা বাবা। বলে চলে গেল । বেওকুফ সাধু ফ্যালফ্যাল করে তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলেন।
তারপরের ঘটনার প্রমাণ তো চার্লস কিংস্টন।
সেই কিংস্টন সাহেব এখন দেবলরূপী কিষাণের সামনে বসে রয়েছে । দেখে তাজ্জব বনে গেল কিষাণও । জঙ্গল থেকে কে ওকে নিয়ে এল সে সমস্যারও কোন সমাধান খুঁজে পেল না ।
ইচ্ছে করলে সে পালিয়ে যেত পারত । কিন্তু দেহ থেকে না বেরোনো পর্য্যন্ত সে কিছু করতে পারছে না । একটা অদ্ভুত আকর্ষণে সে দেবলের দেহে রয়েই গেছে ।
আর ছুটকির খই ফোটা কথাগুলো বন্ধও করতে পারছে না । সম্ভবত গুরুদক্ষিণা না দেওয়ার জন্যই তার মন্ত্র কাজ করছে না বা আসল মন্ত্রটাই ভুলে গেছে ।
আবার মনে করার চেষ্টা করল । আবার আবার আবার ।
নাহ্ সঠিক মন্ত্র মনে আসছে না ।
কিষাণ সেই সাধুকে স্মরণ করল । বাবাজী এখন ধ্যানমগ্ন । কিন্তু তাকে আরও অবাক করে দিয়ে সাধু বাবা ঘরে যেখানে সে দাঁড়িয়ছিল ঠিক ওর সামনে এসে দাঁড়ালেন।
কিষাণ ভাবল বাবা তাকে উদ্ধার করতে এসেছেন ।
সে খুব আহ্লাদিত হল এবং ওঝার দিকে চেয়ে হা হা করে খুব জোরে হাসতে লাগল । ওঝা তাতে কিছুটা ভয় পেলেও
পিছিয়ে গেলেন না ।
( ক্রমশ )
