STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

এ তুমি কেমন তুমি

এ তুমি কেমন তুমি

4 mins
257

ত্রয়োদশ অধ্যায়


বাঙালি পাড়ার বিশিষ্ট বাসিন্দা রামতনু লাহিড়ী মহাশয়ের 

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশে দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে একটি বিখ্যাত মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান আছে। মেথিলাল সেখানকার ক্যাশিয়ার । সচ্চরিত্রের বলে মেথিলাল তাঁর কাছে খুব প্রিয়জন । 

গোরা সাহেবের কথায় তিনি মেথিলালকে চাকরিচ্যুত করলেন না । কিন্তু সে যে মদ খেয়ে মাতলামি করেছে তার আকাট্য প্রমাণ পেয়ে গেছেন গোরা সাহেবের কথায়। 

সাহেব বলেছেন সে মহুয়া পান করে বুঁদ হয়েছিল বলেই নাকি উড়ন্ত চালাটিকে ধরতে আমোদ পায় । অতিরিক্ত টাকা পয়সা তাঁকে দেওয়া হয় না ঠিকই; কিন্তু হিসাবের গরমিলও এতদিন পাননি ।

আজ স্বয়ং চললেন সারপ্রাইজ চেকিং করতে । পথে মিঃ পালের সঙ্গে দেখা ।

- এই যে পালবাবু ! যাচ্ছেন কোথায় ? সঙ্গে গোরা সাহেবকে দেখছি না ! কি ব্যাপার ? গৌরহীন নিতাইকে দেখি !

মিঃ পাল নমস্কার জানিয়ে বললেন - আজ্ঞে হ্যাঁ। আমাকে আজ তিনি জবাব দিয়ে দিলেন ।

- বলেন কি মশাই ? যে সাহেব আমাকে বললেন তাড়াহুড়া করে মেথিলালকে ছাড়িয়ে দেবেন না ; সেই কিনা আপনার মত সঙ্গীকে জবাব দিয়ে দিলেন ?

- আজ্ঞে হ্যাঁ। বললেন ইয়োর সার্ভিস ইজ নো লঙ্গা রিকোয়ার্ড ।

- সে কি কথা ? চলুন তো , আমাকে সাহেবের কাছে নিয়ে ।

- আজ্ঞে, তা' আর সম্ভব নয় । তিনি যা বলেন তার ব্যতিক্রম হয় না । শুধু শুধু নিজেকে ছোট করতে যাবেন না প্লীজ ।

লাহিড়ী মশাই কথা বাড়ালেন না । বললেন - দেখা যখন হয়েই গেল আমার মিঠাইয়ের দোকানটা একবার দেখেই যান । ওই তো - সামনেই - দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার।

মন খারাপ নিয়েও মিঃ পাল লাহিড়ী মশাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেন না । আর ক্ষিধেও পেয়েছিল। ভাবলেন মিষ্টির দোকানে গেলে আতিথেয়তার জন্য দু'চারটে মিষ্টি উদরস্থ করতে পারবেন ।

তিনি চললেন লাহিড়ী মশাইয়ের সঙ্গে । এক দেড় মিনিটের মধ্যে পৌঁছেও গেলেন । মেথিলাল তখন কিংস্টন সাহেবের সঙ্গে গল্পগুজবে মশগুল। লিহিড়ী মশাই ঝপ করে মিঃ পালের হাত ধরে টান দিলেন । আকারে ইঙ্গিতে তাঁকে সরে আসতে বললেন । মেথিলাল আর সাহেবের কি কথাবার্তা চলছে শোনার চেষ্টা করলেন ।

মিঃ পাল তাঁর পিছনে এসে দাঁড়ালেন।

ওদের কথাবার্তা শোনাগেল না কিছুই, কিন্তু দু'জনে বসে যেমন হাসাহাসি করছিলেন তাতে লাহিড়ী মশাইয়ের কপালে ভাঁজ পড়ল ।

অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে সাহেব কখন এসেছেন, কেন মেথিলালের সঙ্গে কথা বলছেন জানতে চাইলেন । ওদের কথাবার্তা শুনে যা ভাবলেন তাতে নিজেকেই অবিশ্বাস্য মনে হল তাঁর । 

সাহেব নাকি প্রতিদিন নিয়ম করে এই সময়টা দোকানে কাটিয়ে যান । যাবার সময় রাতের খাবারও দোকান থেকে নিয়ে যান । তবে লেনদেনের ব্যাপারে তারা কিছু জানে না। অর্থাৎ তিনি কেনেন না কি ফ্রিতে উপহার হিসাবে নিয়ে যান ওরা তা বলতে পারল না ।

লাহিড়ী মশাই বললেন - আমি যে এখানে এসেছি মেথিলাল বা সাহেব কেউ যেন জানতে না পারে । কোন অন্যথা হলে সবাইকে বরখাস্ত করব ।

এবার তিনি এবং নক্ষত্র পাল দু'জনে বাইরে বেরিয়ে এলেন। একটা অন্ধকার জায়গা দেখে সেখানে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন । সেখান থেকে দোটানের প্রতি নজর রাখলেন। প্রায় আধঘন্টা পর সাহেব বেরিয়ে এলেন দোকান থেকে। তারপর চলতে শুরু করলেন নিজের ভাড়া বাড়ির দিকে ।

মিঃ পাল সাহেবকে দেখে তো বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়লেন । এই তো কিছুক্ষন আগেই তিনি সাহেবের ঘর থেকে আসছেন । তখন তো তিনি বাড়িতেই ছিলেন। সময়ের হিসেবটা মেলাতে পারছেন না মিঃ পাল । মনের গতিবেগ পায়ে না ধরলে তাঁর হিসাব মত এইটুকু সময়ে সাহেব কোনভাবেই দোকানে আসতে পারেন না । তবে কি তিনি ....... 

লাহিড়ী মশাই বললেন - পালবাবু কি চিন্তা করছেন ?

পালবাবু তা চেপে গেলেন । বললেন - সাহেবও এখানে আসেন ?

- কেন ? আসতেই পারেন। 

- তা পারেন কিন্তু ---

- কিন্তু ?

- তেমন কিছু না। তবে লাহিড়ী মশাই সাহেব এমনিতে বেশ ভদ্রলোকের মত থাকেন । আমার কিন্তু মাঝেমাঝে তাঁকে সন্দেহ হয় , জানেন ? 

- সন্দেহ ? কি নিয়ে ?

- লাহিড়ী মশাই ! এই লোকটা আমার মনে হয় ঠকবাজ।

মানে তিনি এমনি টাকা পয়সা নিয়ে ব্ল্যাকমেল করেন না, তবে আমার মনে হয় ওনার কোন বিশেষ অভিসন্ধি আছে।

লাহিড়ী মশাই আরও চিন্তান্বিত হয়ে পড়েন । মিঃ পালকে বলেন - চলুন পালবাবু বাড়ি ফেরা যাক। আজ আর দোকানে যাব না ।

- সে কি ? দেখুন দেখি। আমার সঙ্গে দেখা হল আর আপনার মন পাল্টে গেল । ঠিক আছে আসুন। আমিও চলি ।

- আপনি ? আপনি কোথায় যাবেন ? 

- আমার লজে।

- রাখুন তো লজ। আমার বাড়ি চলুন আজ। আমার আতিথ্য নিয়ে থাকবেন ।

মিঃ পাল আর করেনই বা কি ! এমন লোকের কথা ফেরৎ দেওয়া যায় না । তিনি লাহিড়ী মশাইয়ের সাথে তাঁর বাড়ি গেলেন ।

লাহিড়ী মশাই বা পালবাবু কেউই ভাবতে পারেননি বাড়িতে তাঁদের জন্য কি ওয়েট করছে।

মহা সমাদরে পালকে নিয়ে বাড়িতে বসালেন লাহিড়ী মশাই। পাশের রুমে যা দেখলেন তাতে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে অসুবিধা হল তাঁর ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics