এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
একত্রিংশতি অধ্যায়
লাহিড়ী মশাইয়ের এবার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে লাগল । একবার পালের গুষ্টির ষষ্ঠী পূজো করেন তো পরে আবার ওঝাকে গালাগালি শুরু করেন । পৈতুণ্ডীর মাথা চিবিয়ে বলেন - এই যে উমাদাস ! তোমার ছুটি তো শেষ ?
পৈতুণ্ডী মশাই বলেন আরও দু'চার দিন এক্সটেণ্ড করে নেব ।
- আহাহা ! মামা বাড়ির আবদার ! এবার দয়া করে ডিউটি দাওগে যাও । বে-আক্কেলেগুলো সব !
তারপর পালের উদ্দেশ্যে বলেন - ওই যে আর এক মহাপুরুষ! একটা পাটকাঠির মত লোককে ধরে ঢুকিয়ে দিলেন ! বলি খেতে টেতে পায় না লোকটা নাকি !
পাল সবিনয়ে বলেন - স্যার, খুব নামডাক আছে ওনার। আপনি দেখুন - ঠিক কিছু একটা করবেই ।
লাহিড়ী মশাই মুখ ভেঙিয়ে বলেন - খুব নামডাক ! এই তার নমুনা ? ও ভুল লোককে মানে আসল কালীকে সর্ষে ছুঁড়ছে - আমি নিশ্চিত । নইলে এত সর্ষে লাগে নাকি ?
কথাটা যে পালের মাথায় আসেনি তা' নয় ।লাহিড়ী স্যারকেও এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখায় ছুটকিকে বললেন - এই ছুটকি ! তোর বাপকেও চিনতে পারছিস না ?
বন্যা আর অনন্যা এক পাশে তিনজনে বসে ছিল । ছুটকি
পালের দিকে চেয়ে বলল - কিছু বল্ল্যে ?
- বলছি এদের মধ্যে তোর বা কোনটা ?
- জানি না তো ! দুটোই ত এক লাইগছে ।
- যা বাব্বা : ! এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়লাম ।
ওঝার দিকে এগিয়ে যেতে সাহস হচ্ছে না । আবার ডাকলে তাঁর ধ্যান ভঙ্গ হতে পারে । কি করা যায় ভাবছেন। অন্য কালী এবার মারমুখী হয়ে ওঝাকে তেড়ে এল । ওঝা আসল কালীকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।
- ও তো তু হী হ্যায় অসলি হিরো ! নাম কেয়া হ্যায় রে তেরা ?
অন্য কালী গর্জে উঠল - চার্লস কিংস্টন!
ওঝার মুখ শুকিয়ে গেল । তবে যে এনারা বলছিলেন ও দেবল কিস্কু ! ওর দাদা কিষাণ ভুত হয়ে ওর ঘাড়ে চেপেছে ! এ যে আবার নিজেকে চার্লস বলে গো ! তবে ব্যাটা নিশ্চয়ই কেরেস্তান ভুত ।
- কাঁহা সে আয়ারে তু ? কবরস্তান ? ইয়া শমশান সে ?
গম্ভীর কন্ঠে গর্জায় অন্য কালী । - তুঝে কিউ বলু ? তু কেয়া কর লেগা রে মেরা ? বচনা হ্যায় তো ভাগ ইয়াহাঁ সে।
ওঝা এমন কথা বারবার শুনেছেন । যাবার আগে ওরা অমনি করেই তড়পায় ।
আবার একমুঠো মন্ত্র পড়া সর্ষে ওর গায়ে ছুঁড়ে মারলেন।
' জ্বল গিয়া জ্বল গিয়া ' বলে কিংস্টন লাফাতে লাগল ।এমন সময় আসল কিংস্টনকে নিয়ে পাণ্ডেজী এলেন
অকুস্থলে ।
ওঝা বললেন - বোল শালে কেয়া নাম হ্যায় তেরা ; নেহি তো ( একটা ঝাঁটা দেখিয়ে ) ইস ঝাড়ুসে পিটবাউঙ্গা তুঝে।
ভুত বলল - বোলা না চার্লস কিংস্টন!
পাণ্ডেজী তখন আসল কিংস্টন সাহেবকে দেখিয়ে বললেন - তো ইয়ে কৌন হ্যায় ।
ভুতের ঘাড়েও ভুত চাপল । বলল - মুঝে কেয়া পতা ?
পাণ্ডেজী বললেন - তু কৌন হ্যায়। সচ সচ বোল নেহি তো ( রিভলভার বের করে ) ছে ছে গোলিয়া ভেজ দুঙ্গা ভেজে মে ।
ভুত কিংস্টন সাহেবের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। সর্ষে পড়ায় কাজ হচ্ছে না । আবার সাহেবও চেয়ে আছেন ভুতের দিকে । পাণ্ডেজীকে বললেন - স্যার , যো মেরে কো কিডন্যাপ কিয়া থা ও ইয়ে নেহি । ও আদমী থা এয়হাহি লম্বা অউর দমাকেদার লেকিন উসকা চেহরা তো গোরা থা।
পাণ্ডেজী বললেন - অব কালা ক্যাসে হুয়া কেয়া জানে ?
ছুটকি এসে পাণ্ডেজীকে বলল - আসলে ইটো বিষাণ ভাইয়া বটেক । তন্তর জাইনত তাই সায়েবের রূপ , আর এখন দেওলার রূপ লিয়েছে । উটোর গায়ের রচ সচমুচ গোরা ।
কিংস্টন সাহেব বললেন - হো সকতা হ্যায় জী । সুপারনেচারাল এলিমেন্টস ক্যান ডু এনিথিং ।
তারপর গোরা সাহেব মানে আসল কিংস্টন ভুতের দিকে একটু এগিয়ে এসে বললেন - হ্যাভ ইউ এভার বিন সিন মি ?
ভুতের বড় রাগ হল । ইঞ্জিরি ঝাড়ে লোকটা । অথচ ওর সঙ্গে যখন রাঁচিতে কথা বলছিল হিন্দিতেই বলছিল । এখন ইংরাজি বলছে। ভাবছে আমরা আদিবাসীরা মুখ্যু তো - কিছুই বুঝতে পারব না ।
মাথা উঁচু করে বলল - হু ডিড ইউ রেস্কিউ ফ্রম দ্য ফরেস্ট ?
পাণ্ডেজী থেকে ওঝা সবাই ওর মুখে ইংরাজি কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন । ওঝা বলে উঠলেন - ম্যায়নে ঠিকহি কহা তুম হিন্দু ভুত নেহি হো ; গোরস্তান সে আয়া না তুম ?
উসকাভি দাওয়াই হ্যায় মেরে পাস ।
বলে বিশুদ্ধ গঙ্গাজল ছিটাতে লাগলেন । ভুতের জামাকাপড় ভিজিয়ে দিলেন । লাহিড়ী মশাই তড়িঘড়ি এসে ওঝার হাত ধরে বললেন - অনেক হয়েছে । আর ঘরটা ভিজিয়ে দিও না । তোমার আক্কেল দেখা হয়ে গেল এবার বিদেয় হও ।
ওঝা বাংলা জানেন না । হাঁ করে লাহিড়ী মশাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন ।
পাণ্ডেজী সে যাত্রা ওঝাকে বাঁচিয়ে দিলেন ।
- শুনিয়ে মি: ওঝাজী । ইয়ে ভুত কোই ক্রিশ্চান লোগোকা নেহি হ্যায় । দেখ রহে হো না দো দো কালীচরণ সামনে খাড়া হ্যায় । এককো তো পহচানা ; দুসরে কো ছুড়বাইয়ে ।ও অভি কালীচরণকে রূপ মে এক অলগ আদমী হ্যায় জিসকা উপর কিষাণলালকা আত্মা ভটক রহা হ্যায় ।
( ক্রমশ )
