STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

এ তুমি কেমন তুমি

এ তুমি কেমন তুমি

3 mins
425

 ** অষ্টম অধ্যায় **

কিংস্টন সাহেব ছুটকিকে নিয়ে হাজারিবাগে ফিরে এলেন। ছুটকি বাড়ি যেতে বায়না ধরে । সাহেব বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাস টার্মিনাসে একটা চায়ের দোকানে কিছু খাবার কিনে লজে আসবার পথে ভীড় দেখে নেমে পড়েন ।

ভীড় ঠেলে ভেতরে আসতেই দেখতে পান মিঃ পাল কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন । তিনি ' পল ! পল ! হ্যালো মিঃ পল' ! বলে ডাকেন। 

মিঃ পাল তাঁকে দেখে খুশি হন। কিন্তু ছুটকিকে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে এসে ছুটকির পায়ে পড়ে প্রাণ ভিক্ষা করেন ।

ছুটকি কিছু বুঝতে পারে না । ফ্যাকাশে মুখের লোকটাই যে দোভাষী সেটাই যেন ভুলে গিয়েছিল । 

ওই ভীড়ে আর একজনের মুখ দেখে ছুটকি ঘৃণায় তিন হাত পিছিয়ে গেল । এ যে তারই বাপ ! যার ঔরসে সে জন্ম নিয়েছে ! আর কেমন বাপ গা তুই ? নিজের মাইয়াটাকেও ছাড়লি না ?

ক্ষোভে দুঃখে ছুটকির মাটিতে মিশে যেতে চেয়েছিল । কিন্তু সে নিজেও তো সীতামাইয়া নয় ! তাই হয়তো ধরণী 

দ্বিধাবিভক্ত হয়নি !

ছুটকি সরে এসে গোরা সাহেবকে টানতে লাগল ।

- চল চল আমরা চইলে যাই। নইলে ওই মতিচ্ছন্ন ধরা বাপটা আবার পিছু লেবে।

ছুটকি কিংস্টন সাহেবকে অনেক অনুনয় বিনয় করেও নিয়ে যেতে পারল না ।

- ওহ্ চুটকি ! হিয়ার ইজ মাই ফ্রেণ্ড মিঃ পল ! আমাকে দেখিতে দাও তাহার কি হইয়াছে !

ছুটকি ভীড়ের মধ্যে ঢুকে গেল। আর লক্ষ্য করতে লাগল কালীচরণ তাকে ফলো করছে কি না ।

পিছন থেকে কে একজন ছুটকির হাত ধরে টান দিল।

- চল বেটা ! ইখেন থিক্যা পলাই। ইয়ারা ভদ্দরলোকরা সহবৎ জানে না ।

পিছু ফিরে ছুটকি কালীচরণকে দেখেই কান্নাকাটি জুড়ে দিল । 

- ইমন সব্বনাশ তুই আমার কইরতে পারলি বাপ ?

কালীচরণ বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে তাকাল । কি সর্বনাশ, কে করেছে, কিছুই তো জানে না ! অথচ মেয়ে তার অযথা তাকে দেখলেই কেঁদে ভাসাচ্ছে । বলল -

কি কইছিস মা রে ! আমি তুর সব্বনাশ কইরতে পারি? বল ?

- হাঁ হাঁ তুই। তুই আমার এমন হাল কইরেছিস ? মনে লাই খাদের ভিতর কেমন লকলক কইরে আমারে চুইষা ফেলাইছিস ?

বিস্ময়ে ঘোর কাটতে চায় না কালীর । ছুটকি যা বলছে সে ইঙ্গিত তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। কিছু বলতে গেলেই খরিস সাপের মত ফোঁস করে উঠছে। তবু বোঝাতে চেয়েছে খাদে আমি লাফাব কেনে? আর বাস থিকেই বা ঝাঁপ দিতে যাব কোন দুঃখে ?

মিঃ পালের জ্ঞান ফিরতেই চেঁচিয়ে ওঠেন - ধর ধর পালাচ্ছে। ওই তো ,ওই তো দেবল কিস্কু!

বলে গোরা সাহেবকে বলেন সব কথা। গোরা সাহেব তাকিয়ে দেখেন কালীচরণ আর ছুটকি তর্ক করছে। বলেন - মিঃ পল ! হি ইজ নট দেবল কিস্কু। হি ইজ কালীচরণ, ফাদার অফ চুটকি ।

মিঃ পাল মানতে নারাজ। 

- অফ কোর্স হি ইজ দেবল , স্যার ! প্লীজ কিল হিম ।

গোরা সাহেব দেখেন কালীচরণকে আর মিঃ পাল দেখেন একই অঙ্গে দেবলকে ।

ভীড়ের লোকজন বেশ মজা পেয়ে যায় । 

- একে ভুতে পেয়েছে রে ! এখানে কেউ ওঝা-খোজা থাকলে একটু ঝাড়ফুঁক করে দে বাবা ! 

গোরা সাহেব গর্জে ওঠেন । 

- নট এট অল । মিঃ পল একজন ভদ্রলোক । তিনি মিথ্যে কথা বলেন না । আমি জানি ওই লোকটা দেবলই। আপনারা ললিপপ খেয়েছেন নাকি ?

জনতা চুপ করে যায় । এই ক'মাসে তারা সাহেবকে ভালো করে জেনে ফেলেছে। হাজারিবাগে তাঁর অস্থায়ী আস্তানায় অনেকেই গেছে নাচের আসরে।

সাহেব বললেন - আপনারা শুনুন । আমি নিজের চোখে দেখেছি দেবল একটা সুপারনেচারাল এলিমেন্ট হয়ে গেছে। এখন সে কালীচরণের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। আর সেইজন্যই মিঃ পাল ওকে যা ভাবছেন আপনারা তার উল্টোটা দেখতে পাচ্ছেন । এই দেখুন আমি চার্চে্য পবিত্র জল কালীচরণের গায়ে ছিটিয়ে দিচ্ছি । দেখুন তারপর কি হয় ? কিন্তু সাবধান ! এক প্রেতাত্মার আমার আপনার মতই একটি আশ্রয়স্থল চাই । দেবল কিস্কু অপঘাতে মরেছে বলে সে এখন ভুত বা পিশাচ হয়ে আছে। এই পবিত্র জল ছিটিয়ে দিলে দেবল কালীর শরীর ছাড়তে বাধ্য হবে ঠিকই; কিন্তু আপনাদের কারও শরীরে প্রবেশ করতেই পারে । অতএব আপনারা আমার এই কাজ নিজেরা দেখলেও দেখতে পারেন অন্যথায় ভীড় খালি করে আমাদের আস্তানায় নিয়ে যেতে সাহায্য করুন 

এবার ওষুধে কাজ হয় । বেশীর ভাগ লোক ভয়ে পালিয়ে যায়; দু'চারজন যারা অত্যন্ত কৌতূহলী এবং প্রত্যক্ষ করার সাহস রাখে তারা এগিয়ে এসে ওদেরকে গোরা সাহেবের আস্তানায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে ।

কিন্তু সেখানেও এক নতুন বিপত্তি শুরু হল ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics