এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
ত্রয়োর্বিংশ অধ্যায়
মিঃ উমাদাস পৈতুণ্ডী কয়েকদিন ছুটি নিয়ে এসেছেন হাজারিবাগে ' ক্যাপচার কিংস্টন ' মিশনে যোগ দিতে ।
গুণীনের কীর্তি আর গোরা সাহেবের কার্য্যকলাপ দেগতে তাঁর খুব শখ । ছুটি মঞ্জুর করিয়ে তিনি তৈরি হয়েই এসেছেন।
লাহিড়ী মশাই খাতির যত্ন করে তাঁকেও দলে সামিল করলেন ।
- কেমন গুণীন আনলে হে উমাদাস ? এ যে দেখি শুধু খায় আর টয়লেট ভর্তি করে !
পৈতুণ্ডী মশাই অবাক হয়ে বলেন - বল কি রামু ! লোকটা কাজের নয় ?
- তা বলি না অবশ্য । কিন্তু ওই চকখড়ি আর অন্ন ধ্বংস করা ছাড়া তেমন কিছু অগ্রগতি তো চোখে পড়ছে না !
- একটু সময় তো লাগবেই ভাই ! এত বড় একটা মিশন। এমন ধুরন্ধর লোককে পাকড়াও করতে গেলে সময় এবং খরচ দুটোই তো হবে ।
- জ্ঞান দিও না বাপু ! নেহাৎ ছোট মেয়ের বাড়িটাও জড়িয়ে গেছে; তাই এতো জেদ চেপেছে। নইলে কে আর খাল কেটে কুমির আনতে চায় বল ?
পৈতুণ্ডী মশাই বললেন - সে তো তুমি অনেকদিন আগেই বাড়িতে কুমির পুষেছ বন্ধু । এবার সেই জ্বালাতন তো সহ্য করতেই হবে !
- এতদিনে একটা কথার কথা বলেছ বটে । দেখি, গুণীন তো বলল আজ রাতেই একটা কিছু হবে । সেই আশা নিয়ে অপেক্ষাতে আছি । তুমিও এসে গেলে । ষোলোকলা পূর্ণ হল ।
নাওয়া খাওয়া সেরে গুণীন তখন বিশ্রাম নিচ্ছেন । পৈতুণ্ডী মশাই উঁকি দিয়ে দেখে এলেন । মিঃ পাল এসে লাহিড়ী মশাইকে বললেন - ছুটকি আর কালীচরণকে পাওয়া যাচ্ছে না ।
চমকে উঠলেন ওঁরা।
- পাওয়া যাচ্ছে না ? মানে ? ওদের কি ডানা পাঠা গজিয়ে গেল যে ইচ্ছে হতেই ফুড়ুৎ হয়ে গেল ?
মিঃ পাল বললেন - সত্যি বলছি স্যার । আমি গোটা বাড়ি, বাগান বাড়ি এমনকি আপনার দোকানেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওরা কোথাও নেই । আমার তো মনে হয় সাহেবের ভয়ে পালিয়েছে ।
- পালিয়েছে ? এই তো দুপুরেই দেখলাম খেতে বসেছিল । এরই মধ্যে পালিয়ে গেল ?
গুণীন উঠে এসে বললেন - ও লোগোঁকো ম্যায়নে ঝুমরিতিলাইয়া ভেজ দিয়া ।
- লেকিন কিউঁ ? মিঃ পাল অধৈর্য্য হয়ে বললেন ।
গুণীন লাহিড়ী মশাইকে বললেন - আপকো বোলা থা বাবুজী ! আজ রাতকে অন্দর ইসপার উসপার কুছ করুঙ্গা !
লাহিড়ী মশাই বললেন - সে তো বলেছ হে। কিন্তু ওরা ছাড়া সাহেবকে সনাক্ত করবে কে ?
- ধীরজ রখিয়ে । ম্যায় সমঝাতা হুঁ। সাহাব কে সাথ উস দোনোকা বহুত জান-পহচান হ্যায় ! ঠিক কি নেহি ?
লাহিড়ী মশাই বললেন - ঠিক । একদম ঠিক। ওই জন্যই তো ওদের পুষছিলাম ।
গুণীন বললেন - ম্যায় নে দেখা ও সাহাব অব কোডার্মা মে হ্যায় । ওহি লড়কি - কেয়া নাম হ্যায় - ছুটকি । তো ছুটকিসে বাত কিয়া সাহাবকে বারে মে । বোলা যাও কোডার্মাসে সাহাবকো কুছ ভী করকে ইয়াহাঁ লে আও । ছুটকি অকেলে হি জানা চাহতি থি । ম্যায়নে উসকো রোকা । বোলা কি অপনি বাপকো সাথ লে যাও ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - তো ইস বারে মে হমে ভী সূচিত কর সকতে থে !
তারপর পালের দিকে চেয়ে বললেন - আমরা কি বাধা দিতাম ?
পাল ঘাড় নেড়ে বললেন - হাঁ ।
পৈতুণ্ডী মশাই বললেন - গুড আইডিয়া । ওকে এখানে আনতে পারলেই তো অর্ধেক কাজ হয়েই গেল ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হল । চারদিক অন্ধকার করে রাত নামল । বাড়িটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে।
গুণীন তাঁর কাজ শুরু করলেন।
ধূপ দীপ, কালো সর্ষে, তিল, এবং রক্তজবার মত একটুকরো লাল কাপড় নিয়ে । ধূপ দীপ জ্বালালেন, সর্ষে এবং তিল একসাথে মিশিয়ে ঘি এবং গুড় মেখে রেখে দিলেন । তারপর লাল কাপড়ের টুকরোটা মাথায় ফেট্টির মত বেঁধে নিলেন ।
গুরু গম্ভীর স্বরে মন্ত্র আওড়াতে লাগলেন । একটা মায়াবী
পরিবেশ সৃষ্টি হল ।
লাহিড়ী, পৈতুণ্ডী এবং পাল বাবু ঘরের মেঝেতে শীতলপাটি পেতে বসলেন ।
আয়োজন শেষ হল । এবার গুণীন একটা বড় আয়না চেয়ে পাঠালেন । লাহিড়ী মশাইয়ের নির্দেশে তাও আনা হল ।
পৈতুণ্ডী বললেন - এখনও তো সেই সাহেব কিম্বা ওরা বাপ-মেয়ে কেউই এল না ! কি হবে ?
লাহিড়ী মশাই বললেন - এসে যাবে । না এসে যাবে কোথায় !
গুণীন হাসলেন - আপ লোগ ইতনা শোর মচা রহে হ্যায় কিউঁ ? আয়েগা তো আচ্ছা ঔর নেহি আয়েগা তো ভি আচ্ছা ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - নেহি আয়ে গা মতলব ?
গুণীন বললেন - আয়েগা তো জরুর। আনা হি পড়েগা নেহি তো ম্যায় খুদ জাকে লে আউঙ্গা তিনোকো ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - ও তুমিও যাবে নাকি ?
পৈতুণ্ডী বললেন - ধ্যেৎ তাই হয় না কি ? তুমি চলে গেলে সব পণ্ড হবে তো !
গুণীন বললেন - আইয়ে দেখিয়ে আপসব। অব ও সাব কাহাঁ হ্যায়, কেয়া কর রহা হ্যায় সবকুছ দেখ লিজিয়ে। নজর ডালিয়ে একসাথ ইস আইনেপে ।
ওঁরা তিনজন হুমড়ি খেয়ে পড়লেন আয়নার সামনে।
( ক্রমশ )
