STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

এ তুমি কেমন তুমি

এ তুমি কেমন তুমি

3 mins
252

অষ্টাদশ অধ্যায়


কার্তিক মাসে রাস পূর্ণিমার রাতে চাঁদ যখন মধ্য গগনে তার রূপোর আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ; রাধাকৃষ্ণের রাস যাত্রা উপলক্ষ্যে হাজারিবাগ শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি ফুটবল মাঠে কলকাতার নট্ট কোম্পানী তাসের ঘর নামক যাত্রাপালা দেখতে অধিকাংশ লোক যখন মগ্ন ; দিগ্বিদিক কম্পিত করে লাহিড়ী বাড়িতে ঘটল বিস্ফোরণ । 

ঘটনাচক্রে লাহিড়ী মশাই যাত্রা দেখছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে গেলেন ঠিকই ; কিন্তু প্রলয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে তাঁর সখের বাগানবাড়ি ভস্মীভূত হয়ে গেল । 

বিস্ফোরণের ধরণ দেখে পুলিশের অনুমান পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে কেউ এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে । ভাগ্যক্রমে বাড়ির পোষ্যগুলি বাগান বাড়ির উল্টোদিকে আস্তানায় ছিল। তাদেরও কোন ক্ষতি হয়নি । 

পুলিশ জায়গাটা ঘিরে রেখেছিল । ফলে বিস্ফোরণের হোতা বেশীদূর পালিয়ে যেতে পারেনি । তার একটা পা এবং ডান হাতটা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পুলিশ প্রথমে তাকে হাসপাতালে এবং সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করায় পরে বডি মর্গে রেখে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ মৃতদেহ লাহিড়ী মশাইকে দেখাতে নিয়ে গেল । 

- দেখুন স্যার, চেনা যায় ?

লাহিড়ী মশাই খুঁটিয়ে দেখলেন । এমন বিভৎস দৃশ্য জীবনে এই প্রথম দেখলেন । একটা হাত, একটা পা নেই। মুখ এমন ভাবে পুড়ে গেছে যে দাঁতগুলো পর্য্যন্থ খসে পড়েছে। শরীরের কোন জায়গায় অক্ষত চামড়া বলে কিছু নেই । কষ্ট হল তাঁর। পুলিশকে বললেন - চেনা গেল না। 

- আবার এক বার দেখুন তো !

লাহিড়ী মশাই বিরক্ত হলেন । রাগত চক্ষে পুলিশটির দিকে চাইতেই ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে গেলেন । এ যে মিঃ কিংস্টন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে! তিনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন । পুলিশ রূপী কিংস্টন তাঁকে একরকম টেনে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁর গাড়িতে বসিয়ে দিলেন ।

বললেন - যে গেছে সে আপনারই দোকানের কর্মচারী। নাম মেথিলাল । বাই দ্য ওয়ে, এই মেথিলাল কিন্তু আমার সহোদর ভাই । আপনি পালের মুখে শুনেছেন নিশ্চয় !

লাহিড়ী মশাই ঝপ করে তাঁর হাত ধরে ফেললেন এবং চিৎকার করে বলতে লাগলেন - আসল অপরাধীকে ধরে ফেলেছি, আপনারা একে অ্যারেস্ট করুন ।

পুলিশের দল এসে কিংস্টনকে ধরতে যেয়ে পাঁচ হাত দূরে 

সরে এল । 

কেউ বলল - বুড়োটার মাথাটা গেছে ।

কেউ বলল - পাগল হয়ে গেছেন আপনি ।

কেউ বা রাঁচি স্যানিটোরিয়ামে নিয়ে যাবার পরামর্শ দিলেন।

লাহিড়ী মশাই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন - আপনারা ভুল করছেন । আমি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছি । বিস্ফোরণের নায়ক এই লোকটা। এর নাম চার্লস কিংস্টন। শুনেছি রেডিও শ্রীলঙ্কার একজন উচ্চপদস্থ অফিসার।

হাসির রোল পড়ে গেল । একজন কনস্টেবল এগিয়ে এসে বলল - নেহাৎ আপনি হাজারিবাগের গণ্যমান্যদের একজন ; নইলে পুলিশ ঠিকই আপনাকে রাঁচিতে পাঠিয়ে দিত । আপনার মতিভ্রমই হয়েছে। ইনি কে জানেন ?

বোকা বোকা চেয়ে লাহিড়ী মশাই তাকে দেখতে লাগলেন। পুলিশটি বলল - ইনি হাজারিবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মিঃ রামদাস প্যারেলাল পাণ্ডে ।

তখন লাহিড়ী মশাই আবার অফিসারকে দেখে লজ্জায় মুখ নীচু করে বসলেন ।

মিঃ রামদাস প্যারেলাল পাণ্ডে বেতার মারফত ধানবাদ থেকে জানালেন তিনি আজ এস পি সাহেবের সাথে জরুরি মিটিংএ ব্যস্ত আছেন । থানায় ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে ।

ঘটনাচক্রে যে কনস্টেবল লাহিড়ী মশাইকে রাঁচি নিয়ে যাবার কথা বলেছিল সাহেবের এই বার্তায় অবাক হয়ে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে শুরু করল। ইস ! যদি লাহিড়ী মশাইয়ের কথা শুনে লোকটাকে ধরে ফেলতাম !

গাড়িতে করে ফিরে এলেন লাহিড়ী মশাই । কোনমতে গাড়ি থেকে নেমে কর্মচারীদের বললেন - তোমরা আজ রাতে কেউ বাড়ি যাবে না । আমি আজ ভীষণ অসুস্থ বোধ করছি । যতই হোক বয়স তো হয়েছে !

তারপর তাঁর মনে পড়ল সেই মুখ, সেই চোখ আর তাঁর বলা কথাগুলো।

- আপনি কিন্তু নিজের বিপদ নিজেই ডেকে নিয়েছেন লাহিড়ী মশাই ! কালীচরণ, চুটকি আর পালকে রেখে ভীষণ ভুল করলেন । এখনও সময় আছে; ওদের ফিরিয়ে দিন । নইলে চুটকি বাদে কাউকেই বেঁচে থাকতে দেব না । এমনকি আপনার ছেলে, দুই মেয়ের পুরো পরিবারটাই ঘেঁটে দিয়ে আসব ।

মিঃ পাল বললেন - মেঘ যত গর্জায়, তত বর্ষায় না। আপনি ভয় পাবেন না স্যার । আমিও প্রথমদিকে ভীষণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এখন অভ্যেস হয়ে গেছে । আর আপনি যদি ভীত হয়ে পড়েন তবে আমাদের মিশনটাই তো বিফলে যাবে !

লাহিড়ী মশাই বললেন - ভয় পাইনে হে । চিন্তা হচ্ছে। ছুটকিকে একবার ডাকো তো ! কালীকেও ডেকে আনবে। তোমাদের সঙ্গে আলোচনা আছে ।

( ক্রমশ )



विषय का मूल्यांकन करें
लॉग इन

Similar bengali story from Classics