এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
নবম অধ্যায়
ছুটকি, কালীচরণ, মিঃ পাল এবং গোরা সাহেবকে নিয়ে অরুণ, শ্যামল, তিরলোচন ( আসলে নামটা ত্রিলোচন) এবং সতীশ কুমার - এরা চারজনে মিলে সূর্য্যকুণ্ডের কাছাকাছি সাহেবের ভাড়া করা একটি বাড়িতে নিয়ে এল ।
মিঃ নকসত্র পাল তখনও অসুস্থ ছিলেন। একসময় তিনি রক্তবমি করতে আরম্ভ করলেন । সে নিয়ে তিরলোচন এবং সতীশ কুমার ব্যস্ত হয়ে উঠল । দু'জনে গিয়ে কোন মতে এক ডাক্তার বাবুকে ধরে আনল ।
কালীচরণের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । দেখছে তো দেখছেই; একটা লোক গলগল করে বমি করছে ; তায় আবার রক্তবমি - সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেও কালীচরণ তা' দেখে যেন আনন্দিত হচ্ছে বলে মনে হল ।
ডাক্তার বাবু ওষুধ ইঞ্জেকশন দিলেন । বললেন - বমি বন্ধের ইঞ্জেকশন দিয়েছি ; যদি এতেও বন্ধ না হয়, তাহলে হসপিটালাইজড করতে হবে ।
সাহেব বললেন - কতক্ষন পরে ভোমিটিং বন্ধ হতে পারে ডক্টর ?
ডাক্তারবাবু বললেন - বন্ধ হয়ে যাবার কথা তো !
কালীচরণ বলে উঠল - রাখ তোর ডাক্তারি। এই দেখ আমি বমি বন্ধ করে দিচ্ছি ।
বলে একমুঠো ঘাস ছিঁড়ে এনে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিতেই বন্ধ হয়ে গেল বমি ।
ডাক্তার বাবু বললেন - ইঞ্জেকশন কাজ করেছে। এবার আমি আসি। কই হে সতীশ - আমাকে নিয়ে তো এলে; এবার পৌঁছে দাও দেখি বাবা !
সতীশ তিরলোচন অরুণ শ্যামল এমনকি ছুটকিও অবাক হল যে ধোঁয়া দিলে বমি বন্ধ হয়ে যায় । বলল - এ কালী ! ধোঁয়া না ইঞ্জেকশনে কাজ হল রে ?
কালী বলল - ধুঁয়াতে।
ডাক্তার বাবু কোন তর্ক করেন না । তিনি সতীশদের নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন ।
গোরা সাহেব বললেনৎ- কালীচরণ যে এমন কাজের লোক - ভাবা যায় !
কালীচরণ হাসল। খুশি হয়েছে সে। জ্ঞান ফিরে পেয়ে মিঃ পাল দেখলেন কালীচরণ বসে আছে। দেবল নেই। আবার ভিরমি খেলেন তিনি।
এবার সাহেবকে তো পথে নামতেই হয় । দেবলটা ডড় বাড়াবাড়ি করছে। এখনও নিজের কেরামতি দেখিয়ে যাচ্ছে। পবিত্র জলের পাত্রটি বের করলেন । ইতিমধ্যে তিরলোচন ও সতীশও ফিরে এসেছে ।
সাহেব বললেন - দেখ সবাই এবার আমার খেলা । আর দেখতেই পাচ্ছ এই রুমে দু'টো একজিট পয়েন্ট আই মিন দরজা আছে। আমি দু'টো দরজাই খুলে রেখেছি। ওই দুই পথের ধারেকাছেও কেউ থাকবে না । আর মেন গেটের উপরে যে চালাটা আছে , তার নীচের দরজাটাও খুলে রেখেছি ।
সবাই দেখল । কিন্তু কারণ কি বুঝল না। অরুণ আর শ্যামল এক যোগে বলল - কেন স্যার ?
- প্রশ্ন কর না ! কারণ আছে। দেখতেই পাবে ।
ছুটকিকে বললেন - চুটকি তুমি আমার সঙ্গে থাকবে। আর তোমরা চারজন চার দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে। কালী ছাড়া কেউ বসবে না ।
ওরা তাই করল । সাহেব সেই জলের ছিটা কালীচরণের গায়ে ছড়িয়ে দিতেই ; কালীচরণ উঠে দাঁড়াল । আর অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে রুমের দরজা বরাবর দৌড় লাগাল।
সবাই তার পিছু নিলেন । উঠোন পেরিয়ে চালাঘরের দরজার দিকে দৌড়াল কালী । একটা দমকা বাতাস এসে সেই চালাটি উপড়ে রাস্তায় ফেলে দিল । আর কালী দরজায় গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল ।
হঠাৎ একটা চালা ভেসে যাচ্ছে দেখে পথ ধরে আসা মাতাল মেথিলাল একটা লম্বা লাফ দিয়ে ওটা ধরার চেষ্টা করতেই চালাটি তার গায়ে গিয়ে পড়ল ।
কালীচরণ তো স্বাভাবিক হয়ে গেল কিন্তু মেথিলাল গান গাইতে গাইতে আসছিল ; সে গোঙাতে লাগল ।
সাহেব বললেন - দেখলে তো ! ওটা দেবলের প্রেতাত্মাই ছিল । কালীকে ছেড়ে এখন ওই লোকটাকে আশ্রয় করেছে।
সতীশ কুমার বলল - অব কেয়া হোগা স্যার ? মেথিলালকো হম সব পহচানতে হ্যায়। পিতা হ্যায় জরুর লেকিন আদমী ডহোত অচ্ছা হ্যায় । উসকো তো ভী বচানা হোগা । বেচারী !
সাহেব বললেন - চিন্তা কর না । সে ব্যবস্থা করব নিশ্চয় ।
ছুটকি এবার বুঝতে পারল ওর বাবা নয়; দেবলই তাকে --
মেথিলালকে ঘরে আনা হল । একই পদ্ধতিতে চেষ্টা করলেন দেবলকে ছাড়িয়ে দিতে । কিন্তু কাজটা এখন তেমন ফলপ্রসূ হল না । গায়ে জল পেতেই মেথিলাল দৌড়াল। ঝড়ের মত একটা কিছু উঠলও কিন্তু মেথিলাল দৌড়চ্ছে তো দৌড়চ্ছেই । পড়ে যাওয়া তো দূরের কথা, থামবার কোন লক্ষণই নেই ।
সবাই মিলে মেথিলালকে অনুসরণ করতে লাগলেন । সাহেব বললেন - একটু তফাতে থাকবে সবাই; না হলে মেথিলাল যদি দিক ফিরে ঘুরে যায় তো সর্বনাশ হয়ে যাবে ।
কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ওরাও দৌড়াতে লাগলেন। ছুটকি বলল - কি জ্বালা রে বাপ ! ছেল্যাটা এত বদ ?
মরেও শান্তি নাই !
এদিকে মেথিলাল ছুটছে তো ছুটছেই। শহর পেরিয়ে এক্কেবারে কোণা নদীর পাড়ে এসে থামল ।
সাহেব বললেন - রিভ্যুলেট ! ইটস দ্য রিভ্যুলেট অব দ্য রিভার দামোদর।
মিঃ পাল বললেন - ইয়েস স্যার ।
তিরলোচন বলল - আ গয়া শমশানমে ! অব আয়েগা মজা ।
( ক্রমশ )