এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
ত্রয়োত্রিংশতি অধ্যায় **
সাধু বাবা এসে ওঝার পাশে আসন গ্রহন করলেন । ওঝার সঙ্গে তাঁর কিছু কথাবার্তা হল । বললেন ও সব তেল পড়া জল পড়া দিয়ে কিছু হবে না । এর উপযুক্ত দাওয়াই তাঁর কাছে রয়েছে ; যা তিনি সময় এলে প্রয়োগ করবেন।
- তো আপ হি কিজিয়ে না বাবা ! মেরা জরুরত কাঁহা ?
সাধু বাবা এবার পরিষ্কার তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন এই সব ব্যাপারে তিনি বিশেষজ্ঞ।
পাণ্ডেজী বললেন - ও ক্যায়সা ?
সাধু বাবা পাণ্ডেজীর দিকে চাইলেন । তাঁর পাশে গোরা সাহেবকে বসে থাকতে দেখে খুশি হলেন ।
- পিছলে সাল ...
সাধু বাবা বলতে লাগলেন - তখন আমি রাঁচিতে । পাগলা গারদে কে এনে ভর্তি করে দিল । আমার চিকিৎসা শুরু হল । যদিও আমি পাগল নই ; দশচক্রে ভগবানও ভুত হয়ে যান । ওই লোকটি আর হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরা মিলে আমাকে জবরদস্তি পাগল সাজিয়ে দিল ।
আমার অপরাধ আমি ওই লোকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলাম তিনি অর্থের বিনিময়ে দেহ ব্যবসা করেন । তাঁর আভিজাত্যে আঘাত লেগেছিল । বেতার অফিসের কর্মকর্তা । সুতরাং আঘাত লাগা স্বাভাবিক।
তিনি আমাকে টাকার লোভ দেখালেন । রাজী হইনি বলে বল প্রয়োগ করে ধুতুরা শিকড়ের রস খাইয়ে মাতাল করে দিয়েছিলেন । আমি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে মাতলামি করতে শুরু করি ।
সুযোগ পেয়ে তিনি তা' কাজে লাগিয়ে দিলেন। সহযোগীদের সাহায্যে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলেন । কয়েকদিন পর আমি হাসপাতালে শটশার্কিট করে একটা ঘরে আগুন লাগিয়ে দিই। ধোঁয়ায় ভর্তি হাসপাতাল শুদ্ধ লোকেরা দৌড়াদৌড়ি করতেই আমিও সেখান থেকে পালিয়ে কাশী চলে যাই ।
সেখানে ধ্যান জপ করে ঈশ্বর দর্শণ করিনি কিন্তু ভালো জ্ঞান প্রাপ্ত হই । আমার ওই লোকটির প্রতি মনোযোগ যায় । আসলে আমার লঘু অপরাধে গুরু দণ্ড দেওয়ায় আমার মনে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে ।
আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে যুক্ত করি ; সৃষ্টি হয় নতুন রসায়ণ । যে কেউ সেই ওষুধ খেলে যার তার রূপ নিতে পারবে ।
এমন সময় একজন তরুণ এসে পড়ে কাশীতে। সে কোন মেয়েকে প্রবল ভাবে কাছে পাওয়ার বাসনায় আমার কাছে ওষুধ নেবার আর্জি জানায় । আমি তাকে তার ইচ্ছেমত ওষুধের সঙ্গে আমার ইচ্ছে দিয়ে তৈরি ওষুধ দিয়ে দি ।
আমি জানতাম ছেলেটি রাঁচি ফিরে যাবে । অন্তত তার কথায় আমি সেটা বিশ্বাস করে বেশী মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করি।
যা হবার তাই ঘটে । পুলিশ সাহেব আপনার পাশে যিনি বসে রয়েছেন সে আমার শিকার - চার্লস কিংস্টন। আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ । আর অন্য শিকারটি তো এখন মুক্তির অপেক্ষায়।
কিষাণ লাল দাঁতে দাঁত চেপে গর্জন করে উঠল ।
- তোকে আমি ছাড়ব না ঠগ কোথাকার !
সাধু বাবা দেখলেন গোরা সাহেব পিস্তল বের করে তাঁর দিকে তাক করছেন । পাণ্ডেজীর নজর এড়ায়নি তা' । তিনি সঙ্গে সচ্গে চার্লসের মাথায় আঘাত করলেন । সাহেব মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হল । নাচ গান জানা মেয়েরাই ছিল তাঁর টার্গেট । এ বিষয়ে রাঁচি থানায় ১৯৬৫ সালে ডায়েরী করা হয়েছিল । কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাঁকে ধরা যায়নি ।
সাধু বাবা বললেন - আমার উপর এই অত্যাচারের ফলে তিনি আমার দুই বোনকে বেশ্যাবৃত্তি গ্রহনে বাধ্য করেছিলেন । কিন্তু কেস দেব কি ! তখন তো নিজেই কেস খেয়ে হাসপাতালে!
আর রইল বাকি আমার খরিদ্দার । কিষাণ লাল কিস্কু । মেথিলালের দাদা । শুনছি সেও নাকি মারা গেছে ।
কাশীতে খবরের কাগজে পড়েছি রেডিও শ্রীলঙ্কার এডিটর মি: চার্লস কিংস্টন কিডন্যাপ হয়ে গেছেন । আমি স্থির বিশ্বাস নিয়ে চলে আসি রাঁচিতে। তারপর খবর পাই সব ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু এই হাজারিবাগের বাঙালি পাড়া ।
পাণ্ডেজী গ্রেপ্তার করলেন সাহেবকে । কিন্তু শেষ দৃশ্য না দেখে আসর ছেড়ে গেলেন না ।
আরম্ভ হল সাধু বাবার খেলা । তিনি গুণীনকে বললেন - তোমার ওই হিং টিং টং এ কোন কাজ হবে না । কথায় বলে না কুমোরের ঠুকঠাক আর কামারের ঘা । আমি হলাম সেই কামার । দেখ এবার আমার খেলা।
তিনি একটা পথের মেয়ে কুত্তাকে ধরে নিয়ে এলেন। তাকে মন্ত্রপুত ওষুধ সেবন করালেন । নিমেষে কুত্তিটি ছুটকির রূপ নিয়ে কিষাণরূপী দেবলের সামনে এসে দাঁড়াল। আসল ছুটকি তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছে। সবার দেহে একটা শিহরণ খেলে গেল । লাহিড়ী মশাই তো চোখ বন্ধই করে ফেললেন ।
( ক্রমশ )
