এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
দ্বিতীয় অধ্যায়
মহুয়ার গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে দেবল তখন কাণ্ডজ্ঞানরহিত হয়ে কালীচরণকে প্রশ্ন করে - ছুটকিকে আমি ডুঙরিতে লিয়ে যাব । উয়াকে বিয়া করব । তুর কুন বাধা মানবেক লাই।
পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্য্যন্ত ক্রোধে অগ্নিলর্মা হয়ে যায় কালী - ছুটকির বাপ । মা-টাকে মেরে দিয়েছিল কালীচরণ এই দেবলের বাপের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে দেখে। ছুটকিও বলে - হাঁ ঠিকোই তো ! তুই ঠিকোই বলতেচিস দেওলা । লে চল আমাকে লিয়ে। ইমন বাপের মুখে থু: ।
সত্যিই মুখ থেকে থুতু বের করে ছুঁড়ে দেয় কালীচরণের মুখে । দেবল হা হা করে হাসতে থাকে ।
কালীর রক্ত গরম হয়ে ওঠে । তেড়ে আসে ছুটকিকে ছেড়ে দেবলের দিকে । দেবল সাহসী । ভয় পায় না । জানে তার বাহুতে কত ক্ষমতা ধরে ।
ঝুপ করে ঝাঁপিয়ে মহুয়া ডালটা ধরে ঝুলতে ঝুলতে কালীর মুখে বসিয়ে দেয় জোড়া পায়ের লাথি। দশ হাত দূরে ছিটকে যায় কালীচরণ । আর একদেড় হাত দূরে পড়লেই চলে যেত খাতের তলায় ।
সজোরে লাগা লাথির আঘাতে কালীচরণ কাবু হয়ে তখনকার মত ফিরে যায় । কিংস্টন সাহেবের গাড়ি তার দরজায় তখন দাঁড়িয়ে। সায়েব এসেছে দেখে কালীচরণ সাহস পায় । দেবল যে ছুটকিকে ডুঙরিতে নিয়ে গেছে - সে খবর দিতেই সাহেব বলেন - গেট আপ। দোভাষী বুঝিয়ে বলে - সাহেব তোমাকে গাড়িতে উঠতে বলছেন ।
- কেনে ? দোষ কইরলো দেওলা, আমাকে ধরেন কেনে ?
সাহেব বলেন - হামার সাথে চল ; চুটকিকে লইয়া আসি ।
কালীচরণ জীবনে প্রথমবার গাড়িতে চাপল । উঠে ভালো করে চেয়ে চেয়ে ভেতরটা দেখল । ড্রাইভ করছিলেন সাহেব নিজে। এবড়োখেবড়ো পথে কিছুটা যেয়ে ওঁরা নামতে বাধ্য হলেন । তারপর হেঁটে দেবলের ডুঙরিতে পৌছালেন ।
সাহেব দেখলেন ছুটকি মদিরা পানে ব্যস্ত । দেবলকে দেখতে পেলেন না। ডাক দিলেন - চুটকি !
ছুটকি আড়নয়নে দেখে নিল সাহেবকে। হেসে গড়িয়ে পড়ল । তারপর সে চোখের ঈশারায় নিজের খোলা বুক দেখিয়ে গেয়ে উঠল - আয় আয় আশমানী কবুতর ।
কালীচরণের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল । সাহেব তাকে বাধা দিয়ে বললেন - স্টপ ইট । হামি দেখছে।
এবার কালীচরণের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকল । গোরা সায়েবের এত হিম্মত ; বাপকে বলে কিনা আমি দেখছি !
দোভাষী আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় গাড়ি থেকে নেমে কালীচরণকে ধরে বলে - তুমি ভুল করছ। সাহেব বলতে চাইছেন উনি ব্যাপারটা দেখছেন ।
কালীচরণের মাথার ঠিক নেই । হতে পারে সাহেব ভাল মানুষ; তা'বলে এমন উদ্ভিন্নযৌবনা নারীর নগ্ন বক্ষ উপভোগ করবেন এ হতে দেওয়া যায় না ।
কালীচরণ বলে উঠল - না কাউকে দেখতে দেব না । আমি নিজে দেখব।
বলে দরজার সামনে গিয়ে ছুটকিকে বলল - ছি: ছি: ! ছুটকি তুই এত নীচে নেমে গেছিস ?
ছুটকি তখনও গোরা সাহেবের দিকে চেয়ে নানা অঙ্গভঙ্গী করে তাঁকে আকৃষ্ট করে চলেছে।
দেবল ওষুধে কাজ হয়েছে বলে এগিয়ে আসতেই হাতের লাঠি বাগিয়ে এক কোপ দিতেই পড়ে যায় দেবল। কালীচরণের সকল রাগ গিয়ে পড়ে দেবলের উপর। গলা টিপে খুন করার পর তার সম্বিৎ ফিরে। তারপর মাথা ঠাণ্ডা হয়ে এলে সাহেবের পরামর্শে তাকে মহুয়া গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ।
তখনই কালীচরণের আচরণে পরিবর্তন আসে । নিজেকে দেবল কিস্কু মনে করে । এগিয়ে যায় নিজের মেয়ের দিকে। বক্ষ তখনও নগ্ন । জিহ্বা ভর্তি লালসার জল কালীচরণের।
সাহেব প্রমাদ গণলেন । অবাক বিস্ময়ে কালীচরণকে দেখতে লাগলেন। নেশামুক্তি হল ছুটকির । শীঘ্র পরণের শাড়িটা জড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল । সাহেব তাকে গাড়িতে তুলে এক্সিলেটারে চাপ দিয়ে, কিছুটা কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলে গেলেন ।
কালীচরণ তা' দেখে হা হা করে হেসে উঠল ; ঠিক যেমনটি দেবল হেসেছিল কালীচরণকে।
সাহেব ছুটকিকে বোঝাতে লাগলেন - তুম্হারা পিতাজী আই মিন টোমার বাবা ঘোষ্ট হয়ে গেছে।
ছুটকি বুঝল কি বুঝল না ; দোভাষী ওকে বুঝিয়ে দিল এখন তার ডুঙরি বা গ্রামে থাকা বিপজ্জনক। দেবল এবং কলীচরণের সাঁড়াশি আক্রমণে তার প্রাণান্তও হতে পারে ।
ছুটকি বলল - আমি কবে নিরাপদ আছি ? আমার বাপ যেদিন আমার মাকে খতম করে দিয়েছিল ; সেদিনই বুঝে গেছি আমি কোথাও কারো কাছে নিরাপদ নই। এমনকি যে দেওল আমাকে ভালবাসার নাটক করে ডুঙরিতে নে এসেছিল আমি তখনই জেনে গেছি কি ঘটতে চলেছে।
সাহেব বললেন - এ কি ভাবে সম্ভব? আগে থেকে কেউ ভবিষ্যতে জানতে পারে না কি ?
- পারে । একটু পরে তোমরাও বুঝতে পারবে ।
( ক্রমশ )
