এ তুমি কেমন তুমি
এ তুমি কেমন তুমি
ত্রিংশতি অধ্যায় /
ছুটকির কথামত কালীচরণ এবং কিষাণকে ওই রুমে তালা বন্ধ করে রেখে দেওয়া হল ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - এটা তোর ভালো কাজ হয়নি ছুটকি । অমন এক শয়তানের কাছে তোর বাবাকে রেখে দেওয়া ঠিক হল না ।
ছুটকি বলল - তুই ভাবিস না বাবু । আমি রাত পাহারায় থাইকব । কুন বিপদ দেখলেই চেঁচাব; তুরা সবাই আস্যে জব্দ করবি ।
- তার আগেই যদি কালীকে মেরে দেয় ?
- দিবে । সব জেনে শুনে যদি মারে তো মারুক । আর একটা তো পলাই যাবে লাই ।
- যদি দুটোই মরে যায় !
- তবে তো ল্যাঠা চুকেই গেল ।
- ও। তার মানে তোর বাবাও তোর ল্যাঠা ?
- হাঁ না তো কি ? যদি আগেই বিহাটা মেনে লিত এমন হতই না ।
সতর্ক রইল সবাই । পুলিশও রেডি হয়ে রইল । শুধু ছুটকি দরজার সামনে বিছানা পেতে বসে রইল । দু'কান সজাগ রেখে সারা রাত কাটিয়ে দিল ।
সকালে দরজা খুলে দেখা গেল কেউ মরে নি । বরং আসল কালীচরণের মুখে হাসি ফুটেছে।
পৈতুণ্ডী মশাই বললেন - বুঝি কি করে কে আসল কে নকল!
মিঃ পাল বললেন - এটা একটা ধোঁকাই হবে ।
লাহিড়ী মশাইকে বললেন - এ রোগ তো মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টে সারবে না ! ওঝা ডাকতে হবে । স্যার রামগড়ে আমার বাড়ি । সেখানে আমার এক পরিচিত ওঝা আছে। বলেন তো নিয়ে আসি !
লাহিড়ী মশাই বললেন - উমাদাস আমাকে কামড়ানোর ব্যবস্থা করেছিল ; তোমার যদি মেরে ফেলার মতলব থাকে তো নিয়ে এস ।
মিঃ পাল মা কালীর মত লম্বা জিভ বের করে বললেন - নামকরা ওঝা স্যার ।
- তবে আর দেরী কেন ! যত শীঘ্র সম্ভব জঞ্জাল সাফ করে ফেল ।
মিঃ পাল চলে গেলেন রামগড় ।
এদিকে দেবল এবং কালীর মধ্যে রাতেই একটা সমঝোতা হয়ে গেছে ।
কালী বলেছে - চিরটা কাল কি উটোকে শরীলে পুষবি ?
দেবল - কার সাধ যায় কাকা । তুমরা যদি সাহায্য না কর ; আমি ত আর পাইরবেক লাই ।
ছুটকি শুনছিল কথাগুলো । কড়ায় তালা দেওয়া কপাট ফাঁক করে দেখতেও পাচ্ছিল । আর দেবলের দশা দেখে খুব মায়া হচ্ছিল তার ।
অচিরেই বুঝে গেল দেবল মনে মনে ছুটকিকেই ভালবাসে । কিন্তু শঙ্কা কাটছিল না - কার কথা ওটা! দেবলের না কিষাণের ।
কালীচরণ দেবলের কথায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারল না । আগের মত আবার যদি বলে বিয়া তো পরিণতি - সব শেষ ।
বিকেলে পাল বাবু জনৈক ওঝাকে নিয়ে ফিরলেন রামগড় থেকে । রোগা পটকা এক আধবুড়ো । হাঁটু অব্দি ধুতি আর জামার উপরে চাদর জড়ানো । চুলে পাক ধরেছে বটে তবে এমন খোট্টা ছাঁট দিয়েছে দেখে মনে শ্মশান থেকে মড়া উঠে এসেছে । লিকলিকে আঙুলগুলো দিয়ে কাপ ডিস ধরতে গিয়ে চা-ই উল্টে ফেলল ।
লাড়িড়ী মশাই বললেন - পাল হে ! কাজের কাজ করেছ একটা। এর ক্ষমতা নেই আমার ক্ষতি করে !
ওঝার টিকিটি কিন্তু দেখার মত । পাক দিয়ে পেঁচিয়ে ফস্কা গেরো দিয়ে তাতে একটা জবাফুল বেঁধে দিয়েছেন । দেখতে ঠিক ভুতের মতই লাগছে তাকে ।
যাই হোক , সন্ধ্যা হতে না হতেই ওঝা বসে গেলেন ভুত ছাড়াতে । দুই কালীচরণকে পাশাপাশি দেখে নিজেও কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন ।
- কিস কো ভুত নে পায়া ?
বললেন মিঃ পালকে । পাল থতমত খেয়ে বললেন - ওহি যো উধার বৈঠা হ্যায় । ও বালা ।
ওঝা ধূপ ধূনো জ্বালিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে কালো সর্ষে ছুঁড়তে লাগলেন । কালীচরণ ফিক ফিক করে হাসতে লাগল ।
লাহিড়ী মশাই বললেন - পাঁচ পাঁচ কিলো সর্ষে দিলে এখনও তো কিছু হল না হে উমাদাস ! বাগানে বুনলে তো নতুন সর্ষে ফুটত ।
পৈতুণ্ডী মশাই বারবার অনুরোধ করতে লাগলেন - হেই রামু, কথা বাড়িও না । ওকে কাজ করতে দাও ।
- তোমার আর কি ! গুষ্ঠির শ্রাদ্ধ তো আমার হচ্ছে।
পৈতুণ্ডী মশাই এবার লাহিড়ীর হাত ধরে চুপ করে থাকতে বললেন ।
হঠাৎ আর একবার গোঙানির আওয়াজ পাওয়া গেল ।ওঝা ভাবলেন যাকে সর্ষে পড়া ছুঁড়ছেন সেই এরকম আওয়াজ করছে। তাঁর উৎহাহ বেড়ে গেল ।
- কৌন হ্যায় তু ? কাঁহা সে আয়া ? কিউ উসকো ছেড়ছাড় করতি হো ?
কোন জবাব নেই । গোঙানি বেড়ে গেল । কালীচরণ এত সর্ষে দেখে নিজে চোখে সর্ষেফুল দেখতে লাগল ।
( ক্রমশ )
