STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

এ তুমি কেমন তুমি

এ তুমি কেমন তুমি

3 mins
414

তৃতীয় অধ্যায়


দেবলের মৃত্যুটা আত্মহত্যা বা খুন যাই হোক না কেন ; পুলিশ এসে তাদের ধর্ম পালন করে গেছে। কর্ম সম্পাদনের ফল মৃতদেহ পাওয়া যায়নি ।

সত্যি সত্যিই দেবলের পার্থিব শরীরের কোন হদিস পাওয়া যায় নাই। সুতরাং দেবলের মৃত্যু হিসাবের বাইরে থেকে গেল । 

সংসারে তার আত্মীয় বলতে তার বৃদ্ধ অথর্ব পিতা। অসহায় পড়ে থাকে বিছানায়। বিছানা বলতে একটা দড়ির খাটিয়া আর কয়েকটা ছেঁড়া কম্বল । ছুটকি এসে কোনমতে দু'টো গিলিয়ে দিয়ে যেত । এখন তাও বন্ধ। 

নজর এড়ায়নি কিংস্টন সাহেবের । রাঁচির এক অনাথ আশ্রমে ডোনেশন দিয়ে তাকে সেখানে দেখভালের বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন ।

গাড়ি কোডার্মা থেকে জি টি রোড বরাবর হাজারিবাগের দিকে রওনা দিয়েছে । গন্তব্য অল ইণ্ডিয়া রেডিও রাঁচি স্টেশন। সেখানেই ছুটকি ওরফে চম্পা হাঁসদার নাচের রিহার্সাল করানো হবে । 

ছুটকি বলল - তুরা ত' লিয়ে যাচ্ছিস, ঠিক আছে । কিন্তু দেওলার গান না শুনলে আমার লাচ করা হবেনি। 

দোভাষী বললেন - সে ব্যবস্থা হবে'খন । আগে তো যাই সেখানে ।

- যেতেই পারবিনে। আমার মন বলছে তার আগেই তুরা মরবি ।

দোভাষী চমকে গেলেন না। নিছক মজা ভেবে নিয়ে বললেন - আর তুই ? তুই কি ভাবছিস তুই বেঁচে যাবি ?

- দেখে লে ! কার কথা সত্যি হয় !

গাড়ি হাজারিবাগ ছেড়ে রাঁচির পথ ধরেছে। কোন কয়লাখনিতে আগুন লেগেছে তাই গাড়ি রাস্তা ছেড়ে মেঠো পথ ধরল অন্য গাড়িগুলো অনুসরণ করে। হঠাৎ ধ্বসে পড়ল মাঠের কিছুটা জায়গা । 

কিংস্টন সাহেব শঙ্কিত হয়ে বললেন - এ চুটকি ! আমাদের কি হবে গো !

- মরবি লাই ইখেনে । লে গাড়িটো ডানদিকে ঘুরা। বেঁচে যাবি ।

দোভাষীর মুখে হাসি ফুটল । ছুটকি দেখেছে। মনে মনে বিড়বিড় করে বলল - দাঁড়া! দেখাচ্ছি খেল।

বলে জোরে জোরে ডাকতে লাগল - দেবল ! কুথায় তুই? ইয়ারা আমাকে লিয়ে পলাইছে ।

গাড়ি তখন আঁকাবাঁকা পাহাড়ী টিলা বেয়ে চলছে খুব ধীরে ধীরে। বিপরীত দিক থেকে এক মস্ত ডাম্পার এগিয়ে আসছে। কিংস্টন সাহেব গাড়ি থামিয়ে দিলেন । লরিটা পেরিয়ে যাক তারপর চলবেন । লরি চালক তা' দেখে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে এগোতে লাগল । গোঁ গোঁ আওয়াজ করে আসছে লরিটা । কিংস্টন সাহেব দেখছেন যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রয়েছে ; গাড়ি ঠিক বেরিয়ে যাবে । 

তিনি গাড়িতে স্টার্ট দিলেন । অমনি উইণ্ডো গ্লাসে দৃষ্টি দিতেই দেখলেন দেবল লরি ছেড়ে খোলা জানালা দিয়ে তাঁর গাড়িতে ঢুকে গেল । পিছন ফিরে দেখলেন । ছুটকি ছাড়া পিছনের সীটে আর কেউ নেই। স্বস্তি পেলেন তিনি। পাশের সীটে বসে থাকা দোভাষীকে কিছু বললেন । দোভাষী পিছনের সীটে চোখ রাখতেই গোঙাতে লাগলো।

দেবল এবং ছুটকি দুজনে প্রেমালাপে মত্ত ।পকেট থেকে পিস্তল বের করে পিছুর সীটে লাগাতার গুলিবর্ষণ করলেন। গাড়িটা ফুটো হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু হল না। গোরা সাহেব তাকিয়ে দেখেন দেবল ও ছুটকি খাতের দিকে নেমে চলে গেল ।

এমন একটি স্থানে গোরা সাহেবের গাড়িটা আছে কোনমতে এগিয়ে যাওয়া যায় ; কিন্তু পিছানোর কোন আশা নেই । সাহেব ভেবেছিলেন গাড়ি ঘুরিয়ে হাজারিবাগে ফিরে যাবেন । কিন্তু এই সঙ্কীর্ণ আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি ঘোরানো প্রায় অসম্ভব। 

তিনি সে চেষ্টাও করলেন না । গাড়ি এগিয়ে চলল রাঁচির উদ্দেশ্যে । এবারের মত নতুন মুখের সন্ধান পেলেও ছুটকি হাতছাড়া হয়ে গেছে ততক্ষনে।

দোভাষী বললেন - ভালো হল স্যার । অমন ভুতুড়ছ মেয়েকে নিয়ে সমস্যায় পড়তে হোত ।

কিংস্টন সাহেব ধমকে উঠলেন - শাট আপ ইউ ম্যান । তোমার জন্যই এমন কাণ্ড ঘটল । 

দোভাষী সভয়ে বললেন - আমি আবার কি করলাম ?

- করেননি ? আপনার জন্যই তো ওরা ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে গেল । আপনার জন্যই তো গাড়ির পিছন দিকটা ঝাঁঝরা হয়ে গেল ।

দোভাষী সলজ্জ নয়নে চাইলেন সাহেবের মুখের দিকে। বললেন - স্যার ভেবেছিলাম ওদের মেরে ফেলব তাই...

হাসলেন গোরা সাহেব । 

- আপনি আই মিন ইউ? কুড ইউ কিল এ ঘোষ্ট ?

- ঘোষ্ট ? দোভাষী ভয় পেলেন - আপনি জানেন ওরা ঘোষ্ট?

- সাট্টেনলি । বিকজ অফ দেয়ার ইনহিউম্যান বিহেভিয়ার। দেখেননি চুটকির ফাদার কেমন মিসবিহেভ করছিল ?

বলে কিনা নিজের ডটারের নেকেড হার্ট ওই দেখবে অন্য কেউ নয় । নরমাল আদমী এমন কথা বলে ?


( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics