Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Others

দরজার ওপারে

দরজার ওপারে

3 mins
205


দরজার কত রকম ব্যাখ্যা আছে এই বিশ্বে। কোন‌ও দরজা স্বর্গে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে, কোনটা আবার নরকের দিক নির্দেশ করে বলে মানুষের বিশ্বাস। আবার কোন‌ও দরজার অপরদিকে বিপুল ধন সম্পদ রাখা থাকে। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও পুরাকীর্তির ক্ষেত্রে দরজা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে হাজির হয়। অনেক সময় নানান প্রচলিত কথা শুনে মানুষ কিছু দরজা খুলতে বড্ড ভয় পায়। তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এই ভেবে যে ওই দরজা খুললে গোটা বিশ্ব অভিশাপে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। আবার কারোর ধারণা বন্ধ দরজা মানেই তা ঈশ্বরের নিজস্ব গুপ্তধনের আঁতুড়ঘর, সেখানে নাকি হাত দিতে নেই।


এই সমস্ত শুভ-অশুভ চেতনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ দরজাকে ঘিরে বেশ কিছু মিথ তৈরি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে এই পৃথিবীতে এমন বেশ কিছু দরজা আছে যা আধুনিক সময়ে কখনও খোলা হয়নি। হয়ত প্রাচীনকালে সেই দরজাগুলো খুলে দেখেছিল কেউ। তাতে হয়ত ক্ষতি হয়েছে বা ক্ষতি হয়নি, কিন্তু বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষ আর সেই দরজা খুলতে সাহস পায় না। এমনকি সরকার, আদালত কেউই মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করে এই বিষয়গুলি নিয়ে কোনরকম সাহসী পদক্ষেপ করে না।


কিন্তু আজ যে দরজার কথা হচ্ছে সেটা রোজ খোলা বন্ধ করা হয়, দরজার যে অংশের সাথে বাইরের জগতের যোগাযোগ সেই অংশ দেখায় এক বিলাস বহুল সময়ের সাথে তাল মেলানো একটি আবাসনের দরজার বাইরের অংশ। এই বাইরের অংশ থাকে কড়া নিরাপত্তার বেস্টনীতে আবদ্ধ। বিনা অনুমতিতে এখানে প্রবেশ নিষেধ।


দরজার অপর দিকে আপনার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত জীবন - এটাও নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্ধ বাইরের জগতের সাথে। ভিতরকার সব টুকুই আপনার নিজের দুনিয়া। সমস্ত বিলাসী জীবনের উপকরণে পূর্ণ এই অংশ আপনার স্বর্গ পুরী।


দরজাটির থেকে আনুমানিক কিলোমিটার দশক দূরে একদল তরুণ তরুণী বিগত প্রায় দেড় বছর ধরে নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করে চলেছেন - যাদের মাথার উপর সামান্য আচ্ছাদন টুকু জোটেনি, এদের মধ্যে অনেকেরই চাকরি পাবার বয়স পার হয়ে গেছে, তবু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে তারা লড়াই করে চলেছেন। কিন্ত রাষ্ট্র তাদের এখনও সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয় নি। ভাবলে অদ্ভুত লাগে যে নির্বাচিত সরকার কেন একটি দলের মানসিকতায় কাজ করবে - কারণ সরকার তো সব নাগরিকের, তাহলে কেন এই আমরা ওরা।

এভাবেই চলছিল ভালো, গত বারের মত এবারও শহর সেজে উঠতে চলেছে শারদীয়া উৎসবে মেতে। কিন্তু ঐ অন্ধকার ভবিষ্যতের তলায় চাপা পরে রয়েছে কয়েক হাজার তরুণ - তরুনীর জীবন। সর্বশক্তি দিয়ে ওরা লড়াই করছে, থাকুক যত কষ্ট, শারীরিক পারিবারিক, মানসিক হতাশার প্রতিবন্ধকতা। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী যিনি এই বিভাগের সর্বেসর্বা - সময় করে উঠতে পারেন না ওদের পাশে এক সহানুভূতি হাত এগিয়ে দেবার জন্য। আসলে এত ব্যস্ত মানুষের সময় কোথায়?


এরপর সেই দিনটি আসল যেদিন ঈশ্বরও আর পারলেন না এদের কাতর প্রার্থনার কাছে পাথরের মূর্তি হয়ে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে এক সঙ্গে বহু সন্দেহভাজন ব্যক্তির বসত বাড়িতে হানা দিল কাক ভোরে - তার মধ্যে সেই দরজাটাও ছিল। তারপর শুরু হল তল্লাশি অভিযান। সমস্ত কিছুই সঠিকভাবে চলছিল - ছন্দ পতন ঘটল যখন দেখা গেল দরজার ওপারের শয়ন কক্ষে শায়িত রয়েছে এক বিশাল অর্থ ভান্ডার। এই অর্থের উৎস অজানা। এই অর্থ আয়ের সাথে সংগতি পূর্ণ নয়। দরজার এই রহস্যময় অংশের জবাবও পাওয়া গেল। অর্থ গুনতে গুনতে লোকজন ক্লান্ত - তবু অর্থ শেষ হয় না গোনা। আসলে এই অর্থ গুলো আমাদের শাসকের মন্ত্রগুপ্তির মূল্য, মানুষ গড়ার কারিগর হতে ইচ্ছুক তরুণ তরুনীদের কষ্ট আর চোখের জলের, প্রচন্ড অহং বোধের যা কোন ন্যায্য গনদাবীকে রাষ্ট্রের সুরক্ষা কর্মীদের দিয়ে ফেলে পেটানোর কথা ভাবে।

এরপরে আরো এক জায়গাতেও এরচেয়েও বেশী পরিমান অর্থ লাভ হয়েছে - অর্থাৎ সে ট্রাডিশন এখন চলছে।

এই ভাবেই দরজার দুই পার এক হয়ে গেল - গোপনীয়তা মানেই অস্বচ্ছতা এটা বোঝা হয়ে গেল।

হয়ত এরপর রাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থা যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবেন অপরাধীদের জন্য, রাস্তায় বসিয়ে দেওয়া তরুণ তরুণীরা এতদিনের লড়াইয়ের সুফল পাবেন - কিন্তু দরজার ওপারের এই গল্পটা কিন্তু ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে। আবার একদল তরুণ - তরুণী আদর্শর উন্মাদনায় যৌবনের শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে মানুষ গড়ার কারিগর হবার জন্য। তাদের কর্মজীবনের দরজার দুটি পাশই একে অন্যের হাত ধরে চলবে, থাকবে না লুকোচুরির কোন নোংরা খেলা। এই আশা নিয়েই তো আমাদের জীবনের পথ চলা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract