দেনা-পাওনা
দেনা-পাওনা


"ঠিক বুঝলাম না -- মানে কিরকম মনে হয় যখন এরকম হয়?"
মাথা নাড়ালো আকাশ, চোখে ফ্যাকাসে এক দৃষ্টি -- "বুকের ঠিক মাঝখানে অদ্ভুত একটা vacuum জানেন....যেন মনে হয় অনেক লোক চারপাশে। অনেকে অনেক কিছু বলছে। একসাথে।"
"কি বলছে?"
"জানি না", হাতের থাবায় মুখ গুঁজলো আকাশ -- "ঠিক বুঝতে পারি না।"
"তুমি কি এই লোকগুলোকে দেখতে পাও?“
"হ্যাঁ...কিন্তু স্পষ্ট নয়। যেন মনে হয় অনেকগুলো অবয়ব আমার চারপাশে কিলবিল করছে।
যেন কিছু বলতে চায়। অনেক কথা, অনেক না শেষ করা কথা..."
"আর? আর কিছু?"
"জানি না...একটা অদ্ভুত রাস্তা। একটা লম্বা করিডোর। দুপাশের দেওয়ালে হাত রাখলে নোনতা দেয়ালে যেন ঘেন্নায় সরে যায়। পুরোনো cobbled floor-এর ওপর দিয়ে হাঁটছি, নিজের পায়ের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।"
"তারপর?"
"করিডোরটার শেষ প্রান্তে একটা দরজা। দরজাটার knob-টায় হাত রাখলাম। ঠান্ডা ধাতব স্পর্শ। কেউ ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। একটানে দরজাটা খুললাম।"
"তারপর?"
মাথা নাড়লো আকাশ আবার -- "নাহ, আর মনে নেই। ঘুমটা ভেঙে যায়। খুব জোরে জোরে বুকের ভিতর একটা আওয়াজ হচ্ছে। ঘামছি।"
সৃজনী অনেকক্ষণ ধরে ওর দিকে চেয়ে রইলো। আঠাশ, ত্রিশের ঋজু চেহারা, চোখের দুপাশে dark circles, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, গালে বেশ কিছুদিনের না কামানো দাড়ির শ্যাওলা, কর্ডের কালো প্যান্ট আর ঘিয়ে রঙের body-hugging টি-শার্ট। এক অর্থে দেখে কখনোই কারোরই মনে হবার কথা নয় -- একটু আগেই ওর সম্বন্ধে যা শুনছে সৃজনী। টিভিতে, রেডিওতে, মোবাইল-এ ফ্ল্যাশ মেসেজে, কলকাতা পুলিশের জরুরি ব্রডকাস্ট করা মেসেজে, রাস্তায়, পার্কে, চপ-মুড়ির দোকানে।
আকাশ। আকাশ গোস্বামী।
জেল পলাতক পাগল খুনী। সিরিয়াল কিলার। শহর জুড়ে বিভীষিকাময় খুন --টালা থেকে টালি যেন রক্তে স্নান করে ক্লান্ত। তিন মধ্যবয়স্ক পুরুষ। এক বছর ত্রিশের তরুণী। খুন করার সেই একই মোডাস অপারেন্ডি -- গলার থেকে Adam's apple চেঁচে সেই একই ব্যাসার্ধের বৃত্ত কেটে উপড়ানো। মৃত মানুষের ডুওডেনামে পাওয়া 'রিসিন' এর ফোঁটা। মৃত মানুষের দেহে প্রচন্ড ব্যথার ছাপ -- কঁকিয়ে কুঁচকে ওঠা নীল ঠোঁট দেখে মনে হয় যেন মাঝ পথেই কথা থেমে গেছে। মৃত্যুর সময় ৫:৩০, ৬:০০, ৬:৩০. ৭:০০। যেন একজনের শেষ, তো আরেকজনের শুরু। এক নারকীয় linked list। মৃত্যু মিছিলে যেন ব্যাচে বসিয়ে বসিয়ে খুনী আকন্ঠ বিষ পান করিয়েছে।
রিসিন।
সম্ভবত: মানব সমাজে বানানো এতো ভয়াবহ কালকূট আর কিছু হতে পার না। নূন্যতম এক মাত্রার এক চা-চামচ-ই যথেষ্ঠ যে কোনো মানুষকে ভব-সাগরের ওপারে পাঠানোর জন্য। বিষে অকেজো দেহের গলায় ক্ষুর চালিয়ে কন্ঠি বের করে নেবার কি কারণ থাকতে পারে, ভেবে ভেবে তোলপাড় পুলিশ, ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া, নেটিজেন জগৎ। কেন? কি এমন বিদ্বেষ থাকতে পারে, যে আমি কাউকে এভাবে মারবো? মৃত মানুষগুলির সাথে আকাশের কোনোদিন ও যোগাযোগ হয়নি। না এরা, না আকাশ - কেউই কাউকে চিনত না। পুলিশে তন্নতন্ন করে খুঁজেও পায়নি কোনো সুরাগ। তাহলে এতো নারকীয় মৃত্যুদণ্ডের কারণ? জাস্ট killing spree? মানসিক বিকারতা? খুন করতে -- রক্তপাত একটা নেশার মতন লেগে গেছে আদতে?
আকাশ গত সপ্তাহে ধরা পড়েছিল, উল্টোডাঙার সেই পুরনো ফ্ল্যাট থেকে। বছর আঠাশের মিঠু সান্যাল। নিথর দেহের দেহের পাশে বসে ঠকঠক করে কাঁপছিলো আকাশ। হাতের ছুরিটায় তখনও মিঠুর কাটা গলার থকথকে ধমণীর শিকড়-বাকড় পুরনো বট-গাছের আগাছার মতন ঝুলে রয়েছে। মিঠুর বয়ফ্রেন্ড ফ্ল্যাটে ঢুকেই বমি করে ফেলে। ফ্ল্যাটের লোকজন ডেকে -- বেধড়ক মারতে মারতে পুলিশি হেফাজতে তুলে দেয়।
এক সপ্তাহ জেলে থাকবার পর আকাশ নিখোঁজ। খুনির সন্ধানে পাগল সারা কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশ। নজরদারীতে ট্রেন, প্লেন, বাস -- এমনকি রাজ্যের সব বহির্মুখী রাস্তাপথ।
আর তাই তো আজ এতো সকালে চেম্বারে (সৃজনীর ফ্ল্যাটেই ওর চেম্বার) ওকে দেখে চমকে উঠেছিল প্রথমে সৃজনী।
সৃজনী আরো কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো আকাশের দিকে।
চোখে কিছু একটা ঘোরাঘুরি করছে। কাঁটাকাঁটা গা ওয়ালা কোনো দংশক কীট। কিছু একটা আছে -- যেন ছটফট করছে খোঁজার জন্য।
সৃজনী চট করে একটা ক্যালকুলেশন করলো। ওর মোবাইল ফোনটা নির্বাক হয়ে শুয়ে আছে, ওর হাতের কাছেই। ১০০। ফোন করবে কি ও? ইমার্জেন্সি কল নম্বর। ফোন করে, স্পিকার-এ দিয়ে কথা বলবে। আশা করি ঐটুকুই যথেষ্ট, পুলিশের বুঝে নেবার যে আকাশ এখন এখানে এসেছে, তাই না?
সেটা একটু রিস্কি হয়ে যাবে না?
ড্রয়ার-এর নিচে একটা বেল আছে। বাজালে ঝনঝনিয়ে নিচে গার্ডের ঘরে বেজে উঠবে।এই প্রজেক্ট সোসাইটির ঘরে ঘরে এই ব্যবস্থাটি আছে। চব্বিশ ঘন্টাই সিকিউরিটির কড়া surveillance। ওখান থেকে ওদের তিনজন লোক এলে আশা করি একে বাগে আনতে বেশি বেগ পেতে হবে না...
যতক্ষণ ওরা না ওপরে উঠে আসছে, একে একটু কথায় ভুলিয়ে রাখতে হবে।
"আমি কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?"
আকাশ মুখ ওঠালো। চোখটা লাল -- "আমি জানতে চাই -- কি এমন আছে যা আমার মধ্যে বাসা বেঁধে আছে“, হাত চালালো চুলের ভিতরে আকাশ -- "মাঝে মাঝে...জানেন...কি যেন একটা ভর করে....ভয়ানক রাগ হয়। অন্ধের মতন ঝামড়ে পড়ি কিছু মানুষের ওপর...যেন অনেকদিন এদের চিনি। অনেকদিনের পরিচিতি এদের সাথে। Personal grudge, প্রতিশোধ স্পৃহা, ব্যক্তিগত ঘৃণা -- কি বলে আমি জানি না। চোখ খুলে দেখি নিথর এক লাশের সাথে বসে আছি -- গলার নলি কাটা, নিষ্প্রাণ চোখে আমায় দেখছে। আমি....আমি...এই হাতে আমি তাদের মেরেছি। অথচ কেন মেরেছি জানি না..."
আবার একটা হিসাবে কষলো সৃজনী -- "তাই? জানতে চাও কেন হয় এরকম?"
হাসলো আকাশ -- "চাই বলেই তো এসেছি এতদূরে", গলার স্বরটা কতকটা নামিয়ে বললো -- "আমি জানি পুলিশ আমায় খুব তাড়াতাড়িই খুঁজে বের করবে। আমার কাছে বেশি সময় নেই। হয়ত আমার ফাঁসি হবে। হয়তো যাবজ্জীবন। হয়ত আরও কিছু মারাত্ত্বক। মানে বুঝতেই তো পারছেন -- আমার মতন এমন পাগলকে -- কেই বা ওরকম বসিয়ে বসিয়ে জনতার ট্যাক্সের তাকে রুটি খাওয়াবে বলুন?", চেয়ারে একটু নিজেকে হেলিয়ে ফেলে বলল -- "তাই বলছিলাম -- যদি জানতে পারতাম -- তাহলে অন্তত পুরোটা জেনে মরতাম।"
"বেশ, শোনো তবে", চশমাটা খুললো সৃজনী -- "regression therapy....ডাক্তারি পরিভাষায় তোমার অবচেতনে হারিয়ে যাওয়া অনেক হিসাবই এ বের করে আনতে পারে। তুমি যা মনে করেছো হারিয়ে গেছে বলে -- তা আসলে কখনোই হারিয়ে যায়নি। Human memory...অতি অদ্ভুত একটি devise...জানো ? যা ভুলে গেছ বলে মনে হয়, তা আদপেও তুমি ভোলোনি। তার পদরেণু পরে আছে তোমার subconscious-এর লতিকায়। তোমার যা মনে আছে বলে মনে হয় -- তা একটিভ মাইন্ড-এর একটা impression ছাড়া আর কিছু নয়। তার আসল version-টা রেকর্ডেড আছে তোমার অবচেতন মনে। আদতে আজ ও এটা একটা বেশ বড় ডিবেট -- আমরা কি আদৌ কিছু ভুলে যাই, না মনে করে রাখাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।"
“কিরকম?"
"ধর -- কারুর ফোন নম্বর। তুমি বারবার মনে না করলে, আসতে আসতে দেখবে ভুলে গেছ। আবার ধর খুব পুরোনো কোনো সুখস্মৃতি। ছোটবেলার কোনো সোশ্যাল গ্যাদারিং। তোমার কলেজ ফেস্টে গান গাওয়া। মানে লং-টার্ম আর শর্ট টার্ম… দীর্ঘ আর স্বল্প মেয়াদি: এই দুরকম মেমোরিই রেকর্ডেড থাকে সেরিব্রাল কর্টেক্স-এ। আমাদের প্রতি মুহূর্তে যা কিছু দেখি, বুঝি,ভাবি আর করি -- সব কিছুই যেন জমা হচ্ছে এই অদ্ভুত অঞ্চলের কোনো এক কোণের এক বুদ্বুদ হয়ে। আজ ও আমরা অনেক কিছুই বুঝতে পারিনি -- এই যন্ত্রটা সম্পূর্ণ ভাবে কাজ করে কি করে। অনেক কিছুই অসম্পূর্ন রয়ে গেছে -- মানুষের অবগতি বা understanding-এর দায়রার থেকে।"
আবার হাসলো আকাশ -"ঠিক যেন একটা দেয়াল, কান পাতলে অনেককিছুই শোনা যাচ্ছে, কিন্তু ওপারে কারা আছে, কি করছে, কেন করছে -- বুঝতে পারছি না।"
উঠে দাঁড়ালো সৃজনী --"অদ্ভুত একটা কথা কি জান? মাঝে মাঝে তোমার মস্তিস্ক নিজেই বেছে নেয় কোনটাকে মনে রাখবে আর কোনটাকে ভুলে যাবে। নিজের ভালোর জন্য।", আকাশের চেয়ারটা টেনে ওকে উঠতে ইশারা করল সৃজনী -- "তোমার সেই তালাবন্ধ করা ঘরটাকে আবার একবার খোলারই উপায় হলো regression hypnosis ..."
ওর চেম্বারের ঠিক পিছনে, একটা ছোটো করিডোর, একটু এগুলোই একটা ছোট ঘর, ঝিমিয়ে পড়া একটা নীলচে আলো জ্বলছে। একটা গা এলানো চেয়ার -- "শুয়ে পর...relax....", বলল সৃজনী।
কিছক্ষণ এদিক ওদিক চেয়ে বসলো আকাশ।
"এটা একটা বিশেষ ধরণের হিপ্নোসিস প্রক্রিয়া...তুমি আমার কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়বে। হারিয়ে যাওয়া সেই রাস্তায় তুমি হাঁটবে...হাঁটতে হাঁটতে তুমি ফিরে পাবে তোমার সেই ফেলে আসা দরজার চাবিটা। খুলে দেখো -- পাবে তোমার প্রশ্নের উত্তর।", ফিসফিসিয়ে বলল কথাগুলো সৃজনী।
চোখ বুজলো আকাশ।
"ঘুমিয়ে পড়ো আকাশ....দেখো তুমি শুয়ে আছ এক পাহাড় চূড়ায়। এখানে সূর্যের রোদের ত্বেজ নেই, ঝিন্ঝিনিয়ে এক ঝর্ণা বয়ে চলেছে কোথাও, শুনতে পাচ্ছ?"
আকাশ উত্তর দিলো না।
"শোনো....আবার শোনো... কে যেন বাঁশি বাজাচ্ছে কোথাও। ঝিম ধরানো একটা অদ্ভুত melancholic সুর। তোমার চোখ ভারী হয়ে আসছে। বারবার চোখ বুজে ফেলছো তুমি। শত চেষ্টা করেও চোখ খোলা রাখতে পারছো না। তাই না, আকাশ?"
আকাশ একবার যেন গোঙালো।
"দেখ....দেখতে পাচ্ছ,...একটা অদ্ভুত মেঘ....তোমার ওপর নেমে আসছে আসতে আসতে...অদ্ভুত একতা গন্ধ মেঘের গায়ে। ছোটবেলার সেই মায়ের কোলের অদ্ভুত দোলাটা, মনে পড়ছে?"
কোনো উত্তর নেই।
কিছুক্ষণ চেয়ে আবার একটি হিসেব কষলো সৃজনী। ওর জিনসের বাঁ-পকেটে মোবাইলটা আছে। টুক করে বের করে একটা SMS লিখে ফেললো -- অংকুর আশা করি পড়তে একটু সময়ই নেবে।
ততক্ষণ একে শোয়ান-কাঠি দিয়ে একদম কুম্ভকর্ণ বানিয়ে দেব।
"আকাশ? শুনতে পাচ্ছ আমার গলা?", আবার জিজ্ঞেস করলো সৃজনী ফিসফিসিয়ে।
নাহ, উত্তর নেই। মারা গেলো নাকি?
"আকাশ?"
সৃজনী হাসলো -- নাহ, সন্মোহন করে অন্তত কেউ হার্টফেল করে মারা গেছে -- ব্যাপারটা হাস্যকর।
"আকাশ?", ও আবার ডাকলো।
"হ্যাঁ....", হঠাৎ উত্তর এলো।
চমকে উঠলো সৃজনী।
"কি দেখতে পাচ্ছ?", সৃজনী জিজ্ঞেস করলো -- "কিছু দেখতে পাচ্ছ কি?'
অনেকক্ষণ বাদ একটা উত্তর দিলো আকাশ -- "হ্যাঁ..."
"কি?"
"আমি দিল্লিতে থাকি। আমার নাম বর্ষা। বর্ষা খান্না।"
চমকে উঠলো সৃজনী। ও কি ঠিক শুনতে পাচ্ছে? গা হিম হয়ে উঠলো ওর -- ওর এতো বছরের ক্যারিয়ারে ও শুধু শুনেছে এমনটা হতে। কখনো চোখের সামনে হতে দেখেনি।
এ যে অসম্বভ।
"আমি পাহাড়গঞ্জে থাকি। আমি আর আমার বাবা। মা নেই -- বাবার স্বাস্থ্যের কারণে বেশি নড়তে করতে পারে না। আমি একটা স্কুলে পড়াই। ভালোবাসি একটি ছেলেকে। নাম ঋষি। ঋষি ভরদ্বাজ। দেরাদুনে বাড়ি, দিল্লিতে বিজনেস করে।"
এক কোণায় পুন্জীভুত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সৃজনী।
"ঋষির বেশ কিছুদিন ধরে ব্যবসায় মন্দা চলছিল। ওর চার মহাজনের কাছে প্রচুর ধার। কিঙ্কর, রাজীব, প্রসাদ আর দিপু। কয়েক লাখের ওপর। নাহ....ও অনেক চেষ্টা করেছে, ওদের মানানোর। ওরা শোনেনি।"
সৃজনীর পিঠ দিয়ে উঠে আসছে ঠান্ডা এক প্রাণীর চেটো।
"হ্যাঁ...শেষে ওরাও রাজি হয়েছে। অনেকবার বলাতে। কিন্তু বিশাল ভারী এক বন্ধকের বিনিমিয়ে।"
বন্ধক? কি বন্ধক?
"ওরা বলল -- ওরা আমায় এক রাতের জন্য চায়। চারজনের এক রাতের সঙ্গী।"
শিউরে উঠলো সৃজনী।
"রাজি হয়েছিল ঋষি। আইডিয়াটা প্ৰসাদেরই। মেয়ে দেখলে মাথা সামলাতে পারে না যে।"
তারপর?
"ঋষি আমায় সত্যিটা বলেনি। বলল ওর বাবা-মায়ের সাথে দেখা করানোর জন্য দেরাদুনে নিয়ে যাবে আমায়। আমি ওর কথা মেনে সেদিন বেরোলাম ওর সাথে। ওর গাড়িতে।"
পাটা যেন ঝিমঝিম করছে সৃজনীর।
"গিয়ে বুঝলাম ঋষি আমায় ওর বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে আনেনি", আকাশ যেন হালকা কাঁপছে -- "সারা রাত ধরে ছিঁড়ে খেলো ওরা আমায়। আমার সারা গায়ে ওদের ওই চার কুকুরের নোংরা জিভের স্পর্শ। আমার দেহটা নিয়ে ঋষি পরের দিন মুসৌরি থেকে দেরাদুনের ফেরার পথে ছুড়ে ফেলে দিল খাঁদ থেকে। ওপর থেকে পড়েও -- বেশ কিছুক্ষণ চেয়েছিলাম -- যদি কেউ এসে আমায় দেখতে পায়।"
বাকিটা যেন জানি, তাই না? সৃজনী সরে দাঁড়ালো.....
"আমি এই চার জনকে চিনি। ওই যে....ওই যে যাদের মেরেছি। ওই যে অতগুলো গলার শব্দ...অবয়বগুলি, সেই রাট জাগানো ফিসফিসানি...এরাই আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, এদের পরিচয়। আমি আমার অজান্তেই আমার দেন পাওনা শোধ করেছি।""
হঠাৎ চোখ খুললো আকাশ।
"আমায় চিনতে পারছো?"
সৃজনী যেন উত্তরটা জানে।
"আমায় চিনতে পারছো ঋষি ভরদ্বাজ? তোমার...তোমার বর্ষাকে?", উঠে বসেছে আকাশ চেয়ারটায়।
অংকুর রিভলবারটা আনলক করে যখন আটতলায় পৌঁছালো, তখন দেখে সৃজনীর ফ্ল্যাটের দরজাটা খোলা।
সন্তপর্ণে এগোলো ও। SMS-টা পড়তে একটু দেরিই করে ফেললেও, এখানে পৌঁছাতে আশা করি খুব বেশি দেরি করেনি ও, তাই তো?
নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো অংকুর ।
ফ্ল্যাটের দরজাটা ঠেলতেই উত্তরটা পেয়ে গেলো ও।
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ওর বান্ধবী। রক্তের গালিচায় সতেজ উঠেছে নিচের কার্পেটটা। চোখে বিস্ফোরক ভয় আর অবিশ্বাস।
যেন শেষ কথাটা না মেনেই পৃথিবী ছেড়ে কখন চলে গেছে অভিমান করে।