Jharna Biswas

Abstract

4  

Jharna Biswas

Abstract

চশমা

চশমা

4 mins
1.3K


আপনারা দুজনে এখানে একটা সই করুন। আচ্ছা সাক্ষী কারা কারা আছেন?

তারপর রেজিস্টার এগিয়ে দিলে পল্টু ও মধুমিতা সই করল। টেবিলে রাখা দুটো রজনীগন্ধার মালা বদল হয়ে গেল এরপর। সিঁথিও টকটকে লাল হতেই কিছু গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়ল নাকে।

- শ্যামা, অমিতদা তোকে খুব ভালো বাসবে দেখিস।

শ্যামা নিরুত্তাপ, একের পর এক ফর্ম্যালিটিস হয়ে চলল, ও সব শেষে উকিল বাবু মোহর লাগিয়ে দিলেন।

- আজ থেকে আপনারা স্বামী স্ত্রী। কনগ্র্যাচুলেশন মিস্টার এন্ড মিসেস রায়।

অমিত বাইরে দাঁড়ানো ড্রাইভারকে ফোন করল গাড়িটা যেন উকিলের চেম্বারের গেটের সামনে নিয়ে আসে।


পকাইকে সকালে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠাম্মা বলেছে আজ বাবা নতুন মা আনতে গেছে। কিন্তু দিদি অন্য কথা বলত। যখনই আগে মায়ের কথা জিগ্যেস করত, দিদি বলত মা তারা হয়ে গেছে। একবার রাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখিয়েও ছিল টিপটিপ করে জ্বলা তারাটা।

আর তার পর থেকেই ওর মনখারাপে ও ওখানে চলে যায়। আকাশ দেখে, দেখে মা-কেও।

মায়ের একটা সুন্দর ছবি রাখা আছে টেবিলে। টানাটানা চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা,পাতা চুল কপালের ওপর দিয়ে ছড়ানো।

পকাই নাকি অনেকটা মায়ের মত হয়েছে। এতে পকাইয়ের খুব ভালো লাগে। মায়ের স্মৃতি বলতে তেমন কিছু আর ও মনে করতে পারেনা।


মায়ের চশমাটা বড় ঘরের শো-কেসের ভেতর রাখা। পকাই আগে হাত পেত না কিন্তু এখন চেয়ারে দাঁড়িয়ে দিব্যি ছুঁয়ে দেখে।

দিদি যেদিন মামা বাড়ি চলে গেল, বারবার বলে গেছে, ভাই মায়ের এই একটাই স্মৃতি। খেয়াল রাখিস। দিদি চলে যাওয়ার পরদিন থেকে ওর বয়স যেন হঠাৎ করে বেড়ে গেল। এখন স্নান সেরে এসে আগে মায়ের ফটোতে প্রনাম সারে, মা-কে মনে পড়ে সবসময়। ঠাকুমার কাছে তাই বেশ ক বার জানতে চেয়েছে মায়ের গল্প। ঠাকুমাও না করেনি কখনো। চুলে বিলি কাটতে কাটতে এমন অনেক মায়ের গল্প ওর শোনা।

পকাইয়ের আট বছরের জন্মদিনে ঠাকুমা বলেছিল এক বিশেষ উপহার এনে দেবে, তাই কি এই নতুন মা!


ছেলেটা খুব মনমরা হয়ে থাকে। এবার কিছু একটা ভাবতে হবে অমিত।

কিন্তু অমিত জানে ও কিছুতেই অন্য মেয়েকে নীতুর জায়গায় বসাতে পারবেনা। মেয়েও বেশ বড় হয়ে গেছে, সেও মেনে নেবে না ব্যাপারটা। কিন্তু মা কে বোঝানো দায়। আর তাঁর কথাটাও তো সত্যি। কতদিনই বা আর মা বেঁচে থাকবে। তারও তো বয়স হয়েছে, নানা রকম অসুখ। তখন কে দেখবে ওই ছেলেটাকে।

অমিতের মনে পড়ে কত জায়গায় মানতের পর পকাইয়ের জন্ম। ওর এক বছরে যখন তারকেশ্বরে চুল ফেলতে গেল, তখনই বেশ অসুস্থ নীতু। ডাক্তার এ রোগের নাম জানায় সিরোসিস অফ লিভার, সোজা ভাষায় যাকে বলা হয় লিভার ক্যানসার। এ রোগ মহা রাজকীয়। কিন্তু হঠাত্‌ এ রোগ কিভাবে নীতুর মধ্যে এলো কেউ জানেনা। এ অসুখে বেশিদিন মেডিকেশনেও লাভ হয়না কিছু। আল্টিমেটলি মারণরোগ, একদিন না একদিন গ্রাস করবেই।

জানার পর থেকেই খুব ভেঙে পড়েছিল অমিত। সামনে তখন বারবার আসত ছেলের মুখটা। কে দেখবে ওকে, কিভাবে মানুষ হবে ওদের এই ভালোবাসার সন্তান!!


তিন দাদার পর শ্যামা, তারপর ছোট এক ভাই। প্রত্যেকের এখন নিজের নিজের সংসার।

মা থাকতে বেশ ক বার পাত্র পক্ষ এসেছিল শ্যামাকে দেখতে। কিন্তু মেয়েদের বছর তিরিশের পরে মন মত ছেলে পাওয়া মুশকিল। তাই চেষ্টা চালিয়েও কিছু লাভ হয়নি।

কলোনির ছোটো ঘরগুলোর মধ্যে একটাতে ওর থাকার জায়গা। বাকি বড়দা, মেজদা আগেই আলাদা হয়ে গেছে মা থাকতে।

এখন সারাদিন ব্যস্ত থাকে শ্যামা। সেজবৌদি আর সীমা মানে ওর ভাইয়ের বউয়ের ফাইফরমাস খাটা, তাদের বাচ্চাদের পড়ানো এসব নিয়েই দিব্যি কেটে যায় ওর। তাও কখনও কখনও আয়নার সামনে দাঁড়ালে যখন নিজের দিকে চোখ যায়, ও দেখে বয়সের তুলনায় দিন দিন কত বুড়ি হয়ে যাচ্ছে।

মধুমিতা শ্যামার স্কুলের বন্ধু, ওর সব সুখ দুঃখের খবর রাখে মধুমিতা। পল্টুর সাথে বিয়ের পর আগে আসত খুব, এখন সংসার বড় হয়েছে তাই সময় পায়না।

তেমনি এক সন্ধ্যায় যখন এলো, দাদা বৌদির সাথে নাকি খুব দরকার, তাই চা বানানোর অজুহাতে ওকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দিল। জানালো,

ছেলের বাড়িতে কিচ্ছু চায়না, শুধু শ্যামার মত একটা মেয়ে খুঁজছে যে ওই বছর আটের ছেলেটার মা হয়ে আসবে।

শর্ত আরেকটাও আছে, এ বিয়েতে কোনও ইশ্যু হবে না।

পর্দার পাশ থেকে সব শুনছিল শ্যামা। এও শুনল পাত্র ওর চাইতে পনেরো বছরের বড়।


ছেলে ও নতুন বৌমা বরণ করে সেদিন ঘরে তুললেন মনোলীনা দেবী। তারপর ভেতর ঘরে নিয়ে এলেন যেটা আজ থেকে শ্যামার ঘর হবে।

দেওয়ালে ঝোলানো নীতুর ফটোটার সামনে দাঁড় করিয়ে মনোলীনা দেবী বললেন,

আশীর্বাদ নাও শ্যামা, আজ ওর সংসার, স্বামী, সন্তান সব তোমার হাতে তুলে দিলাম। দেখে শুনে রাখার দায়িত্ব এখন থেকে তোমার। আর আমার ছেলেটা খুব কম কথা বলে। ওর কষ্টটা বুঝে কাছের করে নিও।

বিছানার কাছটায় নিয়ে শ্যামাকে বসতে বললেন মনোলীনা দেবী, আর পকাইকে দু তিনবার ডাকলেও সে সারা দিল না।

অমিত সে সময় টেবিলের ওপর গলার মালাটা খুলে রাখল আর তোয়ালে হাতে বাথরুমে ঢুকে গেল পোশাক বদল করতে।

আয়, ভেতরে আয়। পর্দার নীচ থেকে দেখা যাচ্ছিল পকাইয়ের পা দুটো। দু তিন বার ঠাকুমা ডাকলেও ও সারা দিল না, ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। শ্যামা নিজেই উঠে পর্দাটা সরিয়ে ওকে হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিল।

কি নাম তোমার?

উত্তর দিল না পকাই। শ্যামার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।

শ্যামা আবার জিগ্যেস করল,

আজ তো তোমার জন্মদিন। তাইনা!

ছোট্ট উত্তর এলো, হ্যাঁ।

পকাই শ্যামার কালো মোটা ফ্রেমের চশমাটায় আঙুল লাগিয়ে বলল,

এটা তোমার?

হ্যাঁ, বলে মিষ্টি হাসল শ্যামা।

জানো আমার মায়েরও একটা চশমা আছে, চলো ওই ঘরে দেখাব।

হাত ধরে শ্যামার সাথে ও ঘরে এগোলো পকাই। আর মনোলীনা দেবী ঝাপসা চোখে বেরোতে গিয়ে অমিতের দিকে নজর গেল।

শ্যামাকে পছন্দ করে ছেলে কোনো ভুল করেনি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract