জন্মদিন
জন্মদিন
১
ও দাদু, দাদু। ওঠো, আজ না তোমার জন্মদিন...আ ভেরি হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...
বাংলায় বল্ না রে ছোড়া...আজ অন্ততঃ একটু ! নইলে বড্ড হাঁপিয়ে উঠছি যে...
সে না হয় হলো...কিন্তু দেখছ না সবাই তোমার জন্মদিন নিয়ে কি মেতেছে...লেখা হচ্ছে...মুখবইতে ছবি আঁটছে, ডিডি-তে গান বেঁধেছে আর তুমি কিনা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছ!
হ্যাঁরে...দেখতে দেখতে কত্তগুলো বছর পেরিয়ে এলুম...তাও ওরা যে নিয়ম করে মনে রেখেছে এতেই আমি খুশি। কিন্তু তোর মা বাবা কাউকে দেখছিনা...
দুজনেই বেরিয়ে গেল...আর যাওয়ার সময় বলল, দাদুর খেয়াল এখন তোর। তবে আমি বলে দিয়েছি বাপিকে, আসার সময় বার্থডে কেক আর গিফট আনদাদু কোলবালিশটাকে আরো সাপটে ধরে বলল,
- ওসব গিফট টিফট আমি কি করব...তোর মা বড় ভালো পায়েস রাঁধে। ওতেই আমার চলবে...কিন্তু এই সাত সকালে আমায় ডেকে তুললি যে...! জানিসনে সে অভ্যেস কবেই গেছে...আগে খুব নিয়মিত ছিলাম বুঝলি...খুব ভোরে উঠতুম। ওই সময় প্রকৃতি বড় মনোরম, কত গান বেঁধেছি তাতে...
- ওসব কথা রাখো। নইলে আবারও সেই বিরহের ঝুলি খুলে বসবে আর চোখ থেকে গড়িয়ে আসবে জল...এদিকে তোমার চশমাটাও তো আর কাজ করেনা। দাঁড়াও মা-কে বলে একটা নতুন চশমা আনাবো...তাহলে তুমি আগের মতো বই পড়বে, আঁকিবুঁকি করবে খাতার পাতায়
কেন রে, পুরনোটাই তো ভালো...আর আমি বাড়তি মানুষ বাছা, অত খরচ করে লাভ কি!
ওসব ছেড়ে এবার ওঠো দেখি ... তোমায় দরকার আছে।
কি চাই বাছাধন? ইস্কুলে কবতে দিতে হবে, নাকি ম্যাগজিনে গপ্প...??
সে একখান প্রতি বছরের মতো তোমার থেকেই টুকব...ওসব ভুঁড়িভুঁড়ি লেখাদেরও তো একটা সদ্কাজ চাই! তাইনা!দাদু একঝলক হেসে নিল...এখন বয়সের ভারে ভাঁজ পড়ে কপালে, মুখের চামড়ায়। তবু সেই ঝকমকে হাসি। আগের মতসোনাই দাদুর হাতটা ধরে টানতে টানতে বললো, চলো না মর্নিং ওয়াকে যাই। রেডি হয়ে এসো।দাদু এবার বিছানা ছাড়ল...তারপর মোটা আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে সাদা চুল ও দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে গুনগুনিয়ে উঠল...“পুরানো সেই দিনের কথদোলানো চেয়ারটায় বসে সোনাই
তা শুনছিল আর তারপর সে কি হাসি! বলল,
- দাদু, তুমি এখনও ভীষণ রোমান্টিক! কেউ কি একথা বলেছে আগে?
দাদু খানিক লজ্জা পেল বোধহয়। তাই তরতরিয়ে এগিয়ে গেল বেসিনে আর সোনাই চালালো এফ এম...যেখানে হানি সিং গাইছে “রাত মেঁ হোগা হঙ্গামা/ জব চমকেগি চন্দামামা..বাথরুম থেকেই দাদুর স্পষ্ট আওয়াজ এলো..
ওসব কি ছাইপাশ চালালি...বন্ধ কর...তার চাইতে বরং স্বাগতালক্ষী দে...বড় ভালো গলা ওর...খুব দরদ দিয়ে গায় মেয়েটা...
দাদুর কথা এবারে শুনতেই হয়, নইলে বেঁকে বসবে। তাই ঘরখানাতে গমগমিয়ে উঠল, “সখী ভাবনা কাহারে বলে/ সখী যাতনা কাহারে বলে...”
২
জোব্বায় ওয়াকিং এ বেশ অসুবিধা...বাবাকে বলে সোনাই তাই দাদুর জন্য একটা ট্রাক শ্যুট আনিয়েছে...দাদু সেটা পড়েই বেরিয়ে এলো...তারপর মুখুজ্যেদের গলি ধরে যখন এগোচ্ছে, দেখে গলির এক্কেবারে মুখে দাদুর এক বিরাট ছবি সাঁটা আর তাতে দশটা গোলে দশ পরিচিত হাসিহাসি মুখ...এরা সবাই নাকি আজ রাতে দাদুর বাঁধা গান গাইবদাদু তা দেখে ইশারায় বলল...
- ও পানে দেখিস কি...যাকে নিয়ে ওরা মেতেছে ও আমি না...আমারই হমশকল্, এটা মাথায় রাখ আর চলতারপর সেক্টর সাতের বিশাল মাঠটায় আসতেই জমাট লোকজন...সবাই যে যার মতন ব্যস্ত।
দাদু পা ছড়িয়ে খানিক এলিয়ে পড়ল।
এককোণে বুড়োরা টোলা বানিয়ে বসেছিল...দাদু বলল, খানিক পর আমিও ওদের দলেই ভিড়ব। সোনাই তখন স্কিপিং নিয়ে লাফাচ্ছে..এদিকে বুড়োগুলোর তখন একচোট হাসি...হা হা হি হি...পুরো মাঠ ওতে গমগমিয়ে উঠল...
দাদুর মন বলল,
ভগবান, ওদের এমনটাই থাকতে দিও...কষ্ট দিও না...
তাঁর গলা কেমন জড়িয়ে আসছে, স্পষ্ট টের পেল সোনাই...
তাই লাফালাফি বন্ধ করে দাদুর হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যিখানে এনে বলল-
- ছিঃ মন খারাপ করেনা আজ। চলো চকোলেট দেব তোমায়, তবে বাড়ি গিয়ে ভালো করে দাঁত মেজো, নইলে মা আবার আমাকেই বকবে।