STORYMIRROR

Shampa Saha

Classics Others Children

3  

Shampa Saha

Classics Others Children

চড়

চড়

3 mins
272


  'ঠাস', হঠাৎ একটা আচমকা শব্দ যেন গালে নয় আছড়ে পড়ল সবার মনের ওপর । বাঁ গালে হাত বুলাতে বুলাতে অবাক হয়ে অর্ক মায়ের দিকে তাকিয়ে । প্রদীপ বাবু বুঝতে পারেন না হঠাৎ কি হলো? অর্ক মায়ের বিরুদ্ধে কি একটা বলতে গিয়ে থমকে চুপ করে রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। 


 মনমোহিনী বালিকা বিদ্যালয় এর অংকের রাশভারী প্রধান শিক্ষিকা প্রভাবতী দেবী । যেমন ডাকসাইটে তেমনি দুর্দান্ত দিদিমণি। হেডমিস্ট্রেস, অফিসিয়াল কাজের চাপ বা মিড-ডে-মিল থাকলেও প্রতিদিন চেষ্টা করতেন একটা করে ক্লাস নেওয়ার । তাই ছাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কটা যেমন ভালো তেমনি তাদের কাছে জনপ্রিয় ও বটে । তবে শুধু রাগী বলে বা ভালো পড়ান বলে নয় প্রভাবতী একজন ছাত্রদরদী শিক্ষিকা বলে। এক ছেলে অর্ক আর মেয়ে অঙ্কিতা ।


  বেশ চোখে চোখে মানুষ করেন ছেলেমেয়েদের । একটু নিয়মের নড়চড় নেই। বা রে! মানুষের মতো মানুষ হতে হবে না?

  প্রদীপ বাবু ভালো মানুষ গোত্রীয়, মাস্টার বটে কিন্তু বাংলার, বিষয়ের মতো নরম সরম, বৈষয়িক ব্যাপারে বীতস্পৃহ । একটু-আধটু লেখালেখিও করেন। নিজের বই পড়া আর লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত আর ব্যস্ত নিজের স্কুল নিয়ে । আসলে বউ এর দাপটে শশব্যস্ত। 


 সবাই জানে অর্ক আর অঙ্কিতা খুব ভালো, যেমন পড়াশুনা তেমন আচার-আচরণে। হবে না? 

 মা যেমন দাপুটে ! প্রভাবতী দেবীও ছেলের ভালো ব্যবহার আর ভালো রেজাল্টের ফলে, ছেলে মানুষের মত মানুষ হচ্ছে এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ।

 

 অর্ক মা বলতে অজ্ঞান। সবে ক্লাস ইলেভেন সাইন্স। পাশের স্কুলে পড়ে। প্রভাবতী দেবী বছর তিনেক হলো মনোমোহিনীতে হেডমিস্ট্রেস হয়ে এসেছেন। তার আগে অবশ্য দূরে বারাসাত কলোনি স্কুলে ছিলেন । 


 বাড়ির কাছাকাছি স্কুল হলে যাতায়াতে অত সময় নষ্ট হবে না, ছেলে মেয়েকে আরো একটু সময় দেওয়া যাবে এই ভেবেই সহ শিক্ষিকা থেকে হেডমিস্ট্রেস হওয়া। 

 

 অঙ্কিতা এখনও নরম মাটির দলা, মায়ের আঁচল ধরা। প্রভাবতী দেবী ছেলে গরবে গরবিনী । হবেন নাই বা কেন? অর্ক মাধ্যমিকে জেলার মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে আর রাজ্যে সপ্তদশ তাই শুধু প্রভাবতীই নয় অর্ক কে নিয়ে পুরো পরিবারই গর্বিত।


 পড়তে বসে অঙ্কিতা হঠাৎই বলে উঠলো, "জানো মা, দাদা না আজ স্বাতী দিদির সঙ্গে ঝগড়া করছিলো",      "ঝগড়া ?",প্রভাবতী অবাক । 

"সাথী কে? ", প্রভাবতী দেবী একটু কৌতুহলী। 

"স্বাতী দিদি আমাদের স্কুলে পড়ে, নাইনে।"

" দাদা ওর সঙ্গে ঝগড়া করছিলো কেন ?",

 "রোজ যখন স্কুলে যাই ,দাদা স্বাতী দিদির সঙ্গে কথা বলতে চায় ,স্বাতী দিদি চায় না ।"

  স্বাতী অঙ্কিতার স্কুলে পড়ে । প্রভাবতী পাশের স্কুলে ইচ্ছে করেই মেয়েকে দিয়েছেন,নিজের স্কুলে না দিয়ে।নিজের কাজের প্রভাব যদি মেয়ের উপর পড়ে। 


 সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে ডেকে পাঠান। 

"স্বাতী কে? তোমার সঙ্গে তার ঝগড়া হয় কেন? ",

" ধুর,ও একটা বাজে মেয়ে।"

ওর বাজে মেয়ে কথাটা উচ্চারণের ভঙ্গি দেখে প্রভাবতী অবাক । একট বয়সে ছোট মেয়ের সম্পর্কে ছেলের বাজে শব্দটা উচ্চারণ করার ভঙ্গি দেখে প্রভাবতী চমকে ওঠেন। অর্ক কবে এরকম বদলে গেল ?কবে মানুষকে বিশেষ করে মেয়েদের সম্পর্কে এভাবে অবজ্ঞা করে কথা বলতে শিখল ?শুধু ছেলের রেজাল্ট আর মিষ্টি বুলিতে ভুলে ওর ভেতরের আমূল পরিবর্তনটাই প্রভাবতী বুঝতে পারেননি। 


 রাগে দুঃখে যেন নিজের উপরই ক্ষেপে উঠলেন প্রভাবতী। ছেলেকে বললেন,"ভালো ভাবে কথা বলো, মনে রেখো তুমি একজন মেয়ের সম্পর্কে কথা বলছো", 

"যা বাব্বা! আমি আবার কি করলাম? ",

"কিছু করনি, কিন্তু ভদ্রভাবে কথা বলো। আর তার সম্পর্কে তোমার এত বিরক্তি কেন? "


 অর্ক দুহাত ছড়িয়ে কাঁধ নাচিয়ে বলে,"আরে ওই ফালতু মেয়েটা আমাকে ..",

ব্যাস আর কথা শেষ করতে পারে না অর্ক । প্রভাবতীর চড়টা সজোরে এসে পড়ে ছেলের গালে। 

"একটা মেয়েকে ফালতু বলার তুমি কে? এসব বিশেষণ বাদ দিয়ে আসল কথাটা বলো",

  

 অর্ক বোনের সামনে চড় খেয়ে হতভম্ব । প্রভাবতী ভাবছেন চড়টা মারলেন বটে,তবে মনে হয় যেন চড়টা আরো আগেই মারতে হত, তবে বেটার লেট দ্যান নেভার! 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics