STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৮

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৮

3 mins
334

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৮

শুভময় মণ্ডল 


সেই পত্রখানি পকেটে নিয়ে আজ দেখা করলাম অভিরূপ রায়ের সঙ্গে। পত্রখানি দেখাবার আর দরকার পড়েনি। খুব দরকার না পড়লে কোথাও নিজের কেরামতি বড় একটা দেখাই না আমি। বিধায়ক সাহেবের সেই নিয়োগপত্রটি দেখানোর আগে, বহুদিন পর তার জোরটা একবার পরখ করে দেখলাম।


রত্নাই এখন অভিরূপ রায়ের ঘরনী, আমিও সেটাই আশা করেছিলাম। তাই, সে নিজের পরিচয় দেবার আগেই, তাকে বললাম - নমস্কার রত্নাদেবী, আপনি পার্টটাইমারই আছেন তো এখনও? পার্মানেন্ট পোস্টে তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়নি বোধহয় আপনার এখনও, তাই না?


দু'জনে একটু মুখ চাওয়া চাওয়ি করে, বলল - হ্যাঁ, আসলে বেশ কয়'বছর ধরেই কলেজে নিয়োগ বন্ধ আছে তো, তাই আর কি...


বললাম - কোনো রকম গৌড়চন্দ্রিকায় আমি যাচ্ছি না। শুধু একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলুন, জীবনসঙ্গী হিসাবে বরাবরই আপনারা দু'জনেই তো চাইতেন পরস্পরকে? তাহলে স্বপ্নাকে এসবের মধ্যে জড়ালেন কেন? 


আর তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আপনারা দু'জনেই পুলিশের কাছে সব লুকিয়ে গেলেন কেন? তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েই বা আপনারা ঠিক কি সুখ পেলেন? বুঝতে নিশ্চয়ই পারছেন, সেই ঘটনার এতদিন পর এসে যখন প্রশ্নগুলো করছি আপনাদের, তখন আসল সত্যটা জানার আমার দরকার আছে? এবং সেটা আমি না জেনে ওঠা অবধি আপনাদেরকেও শান্তিতে যে আর কিছুতেই থাকতে দিতে পারছিনা, সেটাও জানিয়েই দিচ্ছি।


অভিরুপ রায় - স্বপ্নার বাবা ছিল আমার এবং রত্নার দু'জনেরই বাবার হত্যাকারী। মিথ্যা আন্দোলনের নামে অগণিত সাধারণ মানুষ এবং সরকারি কর্মচারীদের নির্বিচারে একসময় খুন করেছিল তারা। আমার বাবা গিয়েছিলেন ওদের এলাকায় সরকারি কর্মচারী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে। রত্নারা ছিল স্বপ্নাদের কাছাকাছি এলাকারই বাসিন্দা।


রত্নার বাবা ছিলেন আমার বাবার ব্যবহৃত সরকারি গাড়িটির চালক। স্বপ্নাদের ওখানে নতুন জলাধার এবং হাসপাতালের নিউ-বিল্ডিং উদ্বোধন করতে যাবার পথে, স্বপ্নার বাবা সদলবলে সশস্ত্র আক্রমণ চালায় তাঁদের গাড়িতে। ঘটনাস্থলেই মারা যান আমাদের দুজনেরই নিরপরাধ দুই পিতা।


এর কিছুদিন পর, ওদের নিজেদেরই পাতা মাইন বিস্ফোরণে মারা যায় স্বপ্নার বাবা-মা। কেউ কেউ অবশ্য এখন বলে নাকি যে ওদের খুন করা হয়েছিলো। জানি না তার সত্যতা কতটা। কারণ, না তো আমি ওই এলাকার বাসিন্দা, না কখনও গেছি সেখানে। এমনকি কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা হলেও রত্নাও কখনও যায়নি সেখানে। তবে যদি সত্যিই তা'ই হয়ে থাকে, তাহলে অন্তত আমরা কোনও কষ্ট পাবো না।


বললাম - খুবই দুঃখজনক ঘটনা, আপনাদের দুজনেরই বাবা বিনা অপরাধে মারা গেছেন, হয়তো স্বপ্নার বাবার ভুলেই ঘটেছে সব। যদি খুনের তত্ত্বটা বাদ দিই তাহলে, স্বপ্নার বাবা নিজের পাপেই নিজে মারা গেছেন, এটা তো বলাই যেতে পারে, তাইনা? 


কিন্তু ঐ ঘটনার সময় স্বপ্না যথেষ্ট ছোট ছিল। সে নিজে এসবের সাথে কখনই জড়িতও ছিল না। এমনকি তার বাবা-মায়ের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর, সে ঐ এলাকায় কখনও ফিরেও যায়নি। তাহলে, কোন অপরাধে তাকে এমন অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো, বলতে পারেন? তার বাবার কৃত অপরাধের থেকে আপনাদের এই অপরাধ কোন অংশে কম হলো, বলুন তাহলে?


অভিরূপ রায় - আপনি আমাদেরকে ওর খুনি ভাবছেন নাকি? যখন আসল পরিচয় জানতে পেরেছিলাম তার, ঘৃণায় আমরা খুন করতেই চেয়েছিলাম ওকে। কিন্তু আমাদের দু'জনের কেউই তার খুনি নই, না'ই তাকে খুন করার কখনও চেষ্টা করেছি। তবে হ্যাঁ, এটা জানি তার প্রাণহানি ঘটেছিল ঠিক কিভাবে, কিন্তু বলবো না।


-চলবে-



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy