চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা
চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা


বসন্তকাল। প্রকৃতি নতুন করে সেজে উঠেছে। গাছ নতুন পাতা ও ফুলে ভরে উঠেছে। আকাশে ও বাতাসে এক নতুনত্বের গন্ধ। চারিদিক কোকিলের সুমধুর কন্ঠে মুখর হয়ে উঠেছে। এমন এক বসন্তের দিনে আমি কলেজে গিয়ে বসে আছি। হঠাৎ একটি মেয়ে আমাদের ক্লাসে ঢুকল। অসাধারণ দুটি মায়াবী চোখ, তার খোলা চুল যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো, তার মিষ্টি হাসি যেন পূর্ণিমার জ্যোৎস্নার মতো। আমার চোখ যেন তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে চাইলো। তারপর প্রতিদিনই ক্লাসে আমাদের দেখা হয়। কিন্তু আমরা কথা বলতে পারি না। আমি মেয়েদের সাথে চট করে কথা বলতে পারিনা। বন্ধুদেরও বলতে পারিনা ওই মেয়েটির ফোন নাম্বার জোগাড় করে দিতে, পাছে যদি কিছু ভাবে এই ভয়ে। আমরা দুজন দুজনকে কেবল দেখি আর হাসি। এইভাবে দিন কাটতে থাকে। ও আমি তো আপনাদের বলতেই ভুলে গেছি, ওর নাম নীলিমা। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু সায়ককে নীলিমা সম্বন্ধে কিছু কথা জিজ্ঞেস করলাম। শুনে সায়ক বলে উঠলো, "কিরে কি ব্যাপার? ওকে তোর মনে ধরেছে নাকি?" তৎক্ষণাৎ একটু হেসে বলে উঠি,"ধুস! কি যে বলিস তুই?" সায়ক নীলিমার ঠিকানাটা জোগাড় করে দেয়। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর পায়নি। সেদিন ছিল বসন্তের একটি বিকেল, বসে আছি বাড়িতে। হঠাৎ মনে হল নাইবা আমি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার পেলাম, ঠিকানাটা তো আমার কাছে আছে আর সায়ক ওর বাড়িটাও চিনে এসেছে। তৎক্ষণাৎ একটি কাগজ আর কলম নিয়ে বসে পড়লাম জীবনের প্রথম চিঠি লিখতে। অবাক লাগছে তো আপনাদের? এই উত্তর-আধুনিক যুগে চিঠি লেখা? আপনারা হয়তো ভাবছেন জেন-ওয়াইয়ের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও মোবাইল,নেট-দুনিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তে কেন এই চিঠিকেই বেছে নিলাম আমার ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে?তার কারণ, চিঠিই হলো সেই মাধ্যম, যার মধ্যে দিয়ে যেন সেই মানুষটির গন্ধ পাওয়া যায়। এই মাধ্যমের মধ্য দিয়ে ভালোবাসার মানুষটির সাথে একাত্ম হওয়া যায়। দুটো চিঠি লিখলাম কিন্তু কোনটাই আমার মনঃপুত হলো না। ছিঁড়ে ফেলে দিলাম। আবার আরেকটি কাগজ নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। মনের ভিতরে একরকম ভয় লাগছিল। চিঠিতে একটা লাইনে লিখলাম,"তোকে আমি প্রতিদিন দেখি আর নতুনভাবে তোকে উপলব্ধি করি। তোকে শিক্ষক দিবসে শাড়ি পরে খুব সুন্দর লাগছিল। কিন্তু তোর সাথে সামনাসামনি কথা বলতে পারিনি। তোর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর আমার কাছে নেই। তুই যখন ক্লাস করতে করতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসিস, তখন যেন মনে হয় আমি তোর হাসির মধ্যেই পৃথিবীর সব সুখ খুঁজে পাই। তোকে একটা কথা বলতে চাই। কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। তাই এই চিঠিকেই বেছে নিলাম। আমি তোকে ভালোবাসি......" এই চিঠিটা লেখার পর মনের ভেতর নানা প্রশ্ন জাগতে থাকে। তারপর মনে সাহস নিয়ে সায়ককে দিলাম চিঠিটা নীলিমার বাড়িতে চিঠির বাক্সে ফেলে আসতে।সায়ক গিয়ে চিঠিটা ওদের বারান্দায় ফেলে এলো। এর ফলে একটা গন্ডগোল হলো। সায়ক দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলো যে, চিঠিটা কে নিয়ে যায়? চিঠিটা তুলে নিয়ে গেল নীলিমার বাবা। ওই দেখে সায়ক তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে এসে বলল,"সাগ্নিক! একটা খুব বড়ো গন্ডগোল হয়ে গেছে।" আমি শুনেই বলে উঠলাম,"কি হয়েছে? নীলিমা কিছু বলেছে?" সায়ক বলল, "নারে! নীলিমার বাবা চিঠিটা তুলে নিয়েছেন।" শুনে তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। পরেরদিন ভয়ে ভয়ে কলেজে গেলাম। তবে ওর দিকে একবার তাকাতেই ভয়টা কমে গেল। কারণ, নীলিমা আগের মতোই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। দেখে মনে বল পেলাম এই ভেবে যে, ফাঁড়া কেটে গেছে। নাহলে সেদিন কলেজেই আমার প্রাণটা বেরিয়ে যাবার দশা হচ্ছিল। জীবনে প্রথম চিঠি লিখতে গিয়ে জীবন বেরিয়ে যাবে এটা কোনোকালেই ভাবতে পারিনি।