STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

4  

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

ছায়ানট পঞ্চবিংশ পর্ব

ছায়ানট পঞ্চবিংশ পর্ব

6 mins
299

আদালতের অনুমতি থাকায় মিঃ কে নাগার্জুনের কেন্দ্রীয় হাজতে কনডেমড সেলে রাখা বিপত্তারণ ও তক্ষশীলার সঙ্গে দেখা করার কোন অসুবিধা রইল না। 

তার আগে কলকাতার নামকরা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিলেন। ডক্টর সুবীর বল স্বনামধন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। মনোরোগীদের নিয়ে তাঁর একটি গবেষণা পত্র সায়েন্স জার্ণালে ইতিমধ্যে কেউ কেউ পড়েছেন ।

ডক্টর বল নাগার্জুন সাহেবকে বললেন - পেশেন্টরা অফ কোর্স মনোরোগী। কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে তো দৃঢ়ভাবে বলা যাবে না । আমাকে কি জেলে ওদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে পারবেন ?

- হোয়াই নট স্যার । আই গট দ্য এফিভেভিট ফ্রম দ্য অনারেবল কোর্ট । অলসো আই গট পারমিশন ফর দেয়ার চেক-আপস ।

ডক্টর বল খুশি হয়ে বললেন - তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই। আগামী কাল ব্যস্ত আছি; পরশুদিন ফার্স্ট আওয়ারে আই মিন উইদিন ইলেভেন আওয়ার্স উই উইল মিট দেম।

মিঃ নাগার্জুন ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলেন ।

তিনি পরের দিন জেলরের সঙ্গে দেখা করে বিপত্তারণ বাবু ও তক্ষশীলা দেবীকে চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করবার আবেদন জানালেন ।

জেলর সাহেব আদালতের নির্দেশ পড়েছেন। আপত্তি করলেন না । তবু বললেন - আমরা তো রেগুলার ফিজিক্যাল টেস্ট করছি । আবার আপনি বলছেন----

নাগার্জুন সাহেব তখন বললেন - ফিজিক্যাল টেস্ট করিয়েছেন কিন্তু মেন্টাল টেস্ট ?

জেলর কিছু বলতে যাচ্ছিলেন ; বাধা দিয়ে নাগার্জুন সাহেব বললেন - উই সুড লুক ইনটু দ্য ম্যাটার সিন্স ইট ইজ এ কেস অফ ডেথ পেনাল্টি । আপনি নিশ্চয় সহমত

হবেন যে বন্দীদেরও বাঁচার অধিকার আছে !

জেলর সাহেব আর কোন মন্তব্য করলেন না। বললেন - আপনি কি আসামীদের পক্ষের উকিল ?

- ইয়েস স্যার। মাই নেম ইজ মিঃ কে নাগার্জুন , সিনিয়র প্র্যাক্টিশনার এট মাদ্রাজ হাইকোর্ট। প্লীজ লেট মি চেক দ্য মেন্টাল স্ট্যাটাস অফ দ্য একিউজড।

জেলর সাহেব - বাট দে আর অলরেডি বিং সেন্টেন্সড টু ডেথ।

- আই অবজেক্ট স্যার । দিস ইজ নট দ্য ফাইনাল স্টেজ ।

এরপর উচ্চ আদালত, সর্বোচ্চ আদালত এবং সর্বোপরি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আছেন । সব চেষ্টা বিফল হলে তবে ডেথ সেন্টৈন্সের কথা আসছে।

জেলর দেখলেন এই রকম উকিলের সঙ্গে তর্কে জড়ানো উচিত হবে না। অতএব তিনি বললেন - ঠিক আছে আগামীকাল সকাল এগারোটা থেকে বারোটা পর্য্যন্ত একঘন্টা সময় দেওয়া হল । 

মিঃ নাগার্জুন রাতে ফোন করলেন ডক্টর বলকে।্য

- স্যার ! টাইম স্লট বুকড - উইদিন ইলেভেন টু টুয়েলভ আওয়ার্স টুমরো ।

- ভেরি গুড । উইল ইউ কাম টু মি ফর পিক আপ ?

- হোয়াই নট স্যার । প্লীজ বি রেডি টু টাইম। আই উইল রিচ ইউ উইদিন টেন মর্নিং !

- ওকে, ওকে । নো প্রব্লেম। এনি মোর ? 

- নাথিং স্যার । থ্যাঙ্কস এ লট ।

পরের দিন ঠিক সকাল পৌণে এগারোটা নাগাদ ডক্টর বল এবং মিঃ নাগার্জুন দু'জনে জেলের ভেতরে প্রবেশ করলেন।

জেলর সাহেব তখনও আসেননি । তাঁরা অপেক্ষা করতে লাগলেন । এগারোটা নাগাদ জেলর এসে তাঁদের অভ্যর্থনা করলেন ।

মিঃ নাগার্জুন ডক্টর বলের সঙ্গে জেলরের পরিচয় করিয়ে দিলেন।

জেলর বললেন - আমি ওনার নাম শুনেছি। মোস্ট রেপুটেড মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার । অবশ্য আইন জগতে আপনিও একজন দিকপাল । তবে কি জানেন আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না তাঁর মত একজন স্বনামধন্য ডাক্তার জেলে আসবেন অপরাধী চিকিৎসার জন্য .....

বাধা দিলেন মিঃ নাগার্জুন ।

- মিঃ জেলর সাহাব ! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। আমি যখন কেসটা হাতে নিয়েছি তখন একটা এসপার উসপার না করে তো ছাড়ব না । আপনি পেশেন্টদের নিকট নিয়ে চলুন ।

জেলর সাহেব হাসলেন গর্বের হাসি ; যা একজন জেল সুপারের উপযুক্তই বটে । বললেন - উঁহু ! লক আপে নয়; ওটা তো কনডেমড সেল - ওখানে এক্জামিন করা যাবে না । আপনারা বসুন । আমি ওদের আনতে বলছি । যা হবে আমার সামনেই হোক ।

ওঁরা আপত্তি তুললেন না ।

মিনিট কয়েক পর বিপত্তারণ এবং তক্ষশীলাকে ওদের সামনে নিয়ে আসা হল ।

মিঃ নাগার্জুন বললেন - আপনাদের কেসে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আপনাদের রিলেটিভ ।

বিপত্তারণ বাবু বললেন - কে সে ?

- রজনীকান্ত ভাই । মাই ফ্রেণ্ড ।

তক্ষশীলা দেবী বললেন - কিন্তু আমরা তো প্রাণভিক্ষা চাইছি না ।

জেলর হো হো করে হেসে উঠলেন । মিঃ নাগার্জুন শান্ত দৃপ্তকন্ঠে বললেন - শুনুন ম্যা'ম ! আমি একা নই ; সঙ্গে ডাক্তারবাবুও রয়েছেন - আপনাদের চিকিৎসা করার জন্য । আপনারা যাতে সুবিচার পান তার জন্য মাদ্রাজ ছেড়ে এখানে এসেছি । আচ্ছা দাঁড়ান ---

বলে ব্যাগ থেকে দুটো মাইক্রোফোন দুজনের কানে লাগিয়ে দিলেন । তার অপর প্রান্ত একটা রেকর্ডারের সঙ্গে গুঁজে দিয়ে বললেন - এই কথাগুলো শুনুন কিন্তু প্লীজ কেউ কোন কমেন্ট করবেন না ।

জেলর সাহেব সন্দিগ্ধ হয়ে পড়লেন । তবে কি আগন্তুক দু'জন কোন বদ মতলবে এখানে এসেছেন ! কোর্টের কাগজপত্র সব ভুয়ো ! 

বললেন - মিঃ ব্যারিস্টার ! কি আছে ওই রেকর্ডে ?

মিঃ নাগার্জুন বললেন - আপনার কোন ভয় নেই । যা ঘটবে আপনার সামনেই ঘটবে । আর রেকর্ড যদি শুনতে চান তো এই নিন আপনি আগেই শুনে নিন।

বিপত্তারণ বাবুর মাইক্রোফোন জেলর সাহেবকে দিতে গেলেন । দু'পা পিছিয়ে গিয়ে জেলর বললেন - আসামীদের সঙ্গে কেন ? শোনাতে হলে শুধু আমাকেই দিন ! জানি না কি মতলবে এসেছেন !

মিঃ নাগার্জুন বললেন - আমরা নিজে থেকে আসিনি। আদালতের নির্দেশে এসেছি। আপনার যদি মনে হয় একলা শুনবেন - তো শুনুন।

জেলর সন্দেহ দূর করতে কানে মাইক্রোফোন লাগিয়ে একমনে শুনতে লাগলেন । 

দেখা গেল তিনি ফোন একবার বাঁ কানে, একবার ডান কানে ধরে চাপ দিচ্ছেন ।

এই ভাবে কয়েক সেকেন্ড কেটে গেল । জেলর সাহেব কিছু শুনতে পাচ্ছেন না । বললেন - কিছুই তো শোনা যায় না !

মিঃ নাগার্জুন বললেন - যাবে না তো ! ওই টেপে কোন বার্তা নেই । শুধু ওদের কানে লাগিয়ে আপনাকে পরীক্ষা করে নিলাম।

বলে হাসতে লাগলেন।

জেলর বললেন - আমাকে এপ্রিল করতে এসেছেন ! 

ডক্টর বল বললেন - দেখে নিলাম আপনার উদ্বেগের মাত্রা সন্তোষজনক কি না !

- কি বলছেন মশাই ! আমার উদ্বেগে আপনাদের কি এসে যায় ?

- অনেক কিছুই জেলর সাহেব । এসব চিকিৎসা শাস্ত্রের ব্যাপার । আপনার মাথায় আসবে না। আর এলেও আপনি বুঝতে পারবেন না।

- আমি যদি বুঝতে না পারি ; আসামীরাও বুঝতে পারবে না। এই আমি বলে দিচ্ছি।

ডক্টর বল বললেন - সে ঠিকই বুঝে গেছি মিঃ জেলর । এই দেখুন বলে একটা যন্ত্র এগিয়ে দিয়ে বললেন - এটা কি জানেন ?

- হ্যাঁ, এটা একটা হিয়ারিং এইড ।

- ইয়েস । হিয়ারিং এইড । এতে শ্রুতি লোপ পেয়েছে যাদের ; তারা যাতে শব্দগুলো ঠিকঠাক শুনতে পায় - তাই কানে লাগানো হয় ।

- এর সঙ্গে মানসিক চিকিৎসার কি সম্পর্ক ? এ তো সবাই জানে !

- জানে । নিশ্চয়ই জানে । কিন্তু ওইটুকুই। আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা, শব্দের কম্পাঙ্ক মেপে স্থির করি কার কেমন পাওয়ারের এইড লাগবে । এগুলো নিশ্চয় জানেন না ?

জেলর বললেন - আমাদের ওসব জেনে কি হবে ? অপরাধীদের জন্য জানলে বরং ভালো হয় ।

ডক্টর সাহেব হাসলেন ।  

- ঠিক কথাই বলেছেন। রোগী রোগ নিয়ে আসে সুস্থ হতে ; তার ও সব জেনে কি হবে ? কিন্তু আমাদের জানতে হয়। এই যে এখানে এসেছি - সে তো কিছু জানতেই ।যেমন জেনে নিলাম আপনার হিয়ারিং প্রব্লেম নেই । কিন্তু আপনি ভীষণ উদ্বিগ্ন । তাই না ?

জেলর লজ্জিত হলেন । ডক্টর বল আবার বলতে লাগলেন - জেলর সাহেব ! এই শ্রবণ যন্ত্র দিয়ে আপনার শ্রবণ শক্তির পরীক্ষা যেমন হল - তেমনই আপনার মানসিক টানাপোড়েন জেনে গেলাম।

- মানসিক টানাপোড়েন ? নাহ্ দেখছি আপনি পাগলের ডাক্তার হয়ে আমাকেও পাগল করে দিতে চান ! বলি, মতলবটা কি আপনাদের ? আমাকে জেরা করা নাকি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের বাচাঁনো ?

মিঃ নাগার্জুন মাঝখানে এসে বললেন - আপনি শান্ত হোন। আমাদের পরীক্ষা করতে দিন ।

- আমাকে ?

- না না আপনাকে কেন ! এনাদের। আমরা পরীক্ষা করতে চাই এঁদের মানসিক স্থিতি ।

জেলর বললেন - তাই করুন। আমি আর কথাই বলব না । 

শুরু হল রোগী পরীক্ষা ।

( ক্রমশঃ)


 




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics