Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

ব্যান্ডেল চার্চের ইতিকথা

ব্যান্ডেল চার্চের ইতিকথা

3 mins
418


১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ নির্মিত ব্যান্ডেল গির্জা বা ব্যান্ডেল চার্চ পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম খ্রিষ্টান গির্জাগুলির একটি। এই গির্জার পোষাকি নাম দ্য ব্যাসিলিকা অফ দ্য হোলি-রোসারি, ব্যান্ডেল। ব্যান্ডেল শব্দেটি কিন্তু ইংরেজি শব্দ নয়। পর্তুগিজ ভাষায় ব্যান্ডেল শব্দের অর্থ হল, জাহাজের মাস্তুল। একটা গির্জার নাম কেন জাহাজের মাস্তুল হবে? তা জানতে ফিরতে হবে আজ থেকে চারশো বছরেরও বেশি আগে, ষোড়শ শতকের শেষ ভাগে।


ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে পর্তুগিজরা ব্যান্ডেল শহরটিকে বন্দর হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৫৩৭-এ পর্তুগিজ অ্যাডমিরাল সাম্পায়ো যুদ্ধ জাহাজ ও সেনা নিয়ে শের খাঁ-কে আক্রমণ করেন । সেই যুদ্ধ জয়ের দৌলতেই পর্তুগিজরা গঙ্গার পাশে বাণিজ্যকুঠি গড়ে তোলার সুযোগ পায়।১৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে তারা মুঘল সম্রাট আকবরের নিকট থেকে হুগলিতে একটি শহর নির্মাণের অনুমতি পায়। তখন থেকেই এখানে বসবাস শুরু করলে এরা। ক্যাপ্টেন পেড্রো তাভারেস বন-জঙ্গল সাফ করে নতুন নগর ও বন্দরের পত্তন করলেন। নাম রাখলেন ‘উগোলিম’ (ইংরাজিতে আগলি)। ঐতিহাসিক সেই নাম-শব্দেরই অপভ্রংশ ‘হুগলি’।

এদিকে ক্যাপ্টেন পেদ্রো তাভারেস সর্বসমক্ষে ক্যাথলিক ধর্মপ্রচার ও গির্জা নির্মাণ করার জন্য সম্রাটের অনুমতি লাভ করেন।পাদ্রিরা স্থানীয় লোকেদের ধর্মান্তরিত করতে শুরু করেন। ১৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজেরা হুগলি নদীর তীরে এই অঞ্চলে,একটি বন্দর ও দুর্গ নির্মাণ করে ফেলেন এখানে।১৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ হুগলিতে ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার। ১৫৯৯ সাল নাগাদ হুগলি নদীর তীরে এই জায়গায় গড়ে তুলল পর্তুগিজরা আর সেখানেই একটা গির্জা তৈরি করল উপাসনার জন্য। 

চলছিল বেশ কিন্তু পর্তুগিজদের লুঠপাট ইত্যাদির জন্য মুঘলরা বেশ অসন্তুষ্ট ছিল তাদের উপর। সেই সব কারণে, সম্রাট শাহজাহান আদেশ, ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুরেরা হুগলি পর্তুগিজ কলোনি আক্রমণ করলেন। আসলে ১৬২২-এ সম্রাট জাহাঙ্গির-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন যুবরাজ হারুণ বা শাহজাহান। পর্তুগিজের গভর্নর মাইকেল রডড্রিগস শাহজাহানকে সাহায্যের করতে রাজি হননি। তাই বদলা নিতে ১৬২৮-এ মুঘল সুবেদারকে ব্যান্ডেল অভিযান করান সম্রাট।যুদ্ধে পর্তুগিজরা চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হল, বহু পর্তুগিজ ও স্থানীয় ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান মারাও পড়ে এবং সেই সঙ্গে পর্তুগিজদের কেল্লা ও গির্জাও ভেঙে দেয় মুঘলরা।


 ২৪ জুন, সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট-এর উৎসব কথা আপনাদের জানা আছে। ১৬৩২-এর এই দিন কপটতার সাথে, মুঘল সেনারা পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে অস্ত্রভাণ্ডারের দখল করে বারুদখানায় আগুন লাগায়। সাধারণ খ্রিস্টানদের গণনিধন হয়। তৎকালীন পর্তুগিজ গভর্নরকে এবং নিহত হয় পাঁচ পাদ্রিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। চার্চ সহ সব ভবনগুলিও ধুলিসাৎ করে দেওয়া হয়। মুঘল রাজধানী আগ্রার দুর্গে প্রবীণ পাদ্রি ফাদার জোয়ান ডে ক্রজ এবং ৪০০০-এর বেশি পর্তুগিজ নরনারীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ।

এখানেই ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। বন্দি গির্জার পাদ্রি ফাদার জোয়ান ডে ক্রুজকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে এক মত্ত হাতির সামনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সেই মত্ত হাতি ফাদারকে পায়ে না পিষে, শুঁড়ে করে নিজের পিঠে বসিয়ে নেয়। ওই অলৌকিক ঘটনা দেখে সম্রাট শাহজাহান ফাদার ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের মুক্তি দিলেন । এর সাথে সম্রাট শাহজাহান গির্জা পুনর্গঠনের জন্য অর্থ প্রদান করেন । এবং ১৬৩৩-এ ব্যান্ডেলের ৭৭৭ একর জমি নিষ্কর হিসাবে পর্তুগিজদের দান করেছিলেন তিনি।

১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে গোমেজ দে সোতো একটি নতুন গির্জা নির্মাণ করেন। মঠের পূর্ব দ্বারে এখনও পুরনো গির্জার কীস্টোন বা ভিত্তিপ্রস্তরটি দেখা যায়।নতুন গির্জা তৈরির কাজ তখন শেষ পর্যায়ে। এমন সময়ে সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া একটা পর্তুগিজ জাহাজ হঠাৎই ওই নতুন গির্জার চুড়ো দেখে দিক নির্ণয় করে সেখানে পৌঁছে গেল। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তীর খুঁজে পেলে প্রথম যে গির্জা দেখতে পাবেন, সেখানেই তিনি জাহাজের মাস্তুলটা দান করবেন এবং সেই মতো তিনি মাস্তুলটা গির্জাকে দান করে দিলেন। আর পর্তুগিজ ভাষায় ব্যান্ডেল শব্দের অর্থ যেহেতু মাস্তুল তাই ওই গির্জা এবং সেই সূত্রে জায়গাটার নামও হয়ে গেল ব্যান্ডেল। ব্যান্ডেল চার্চে আজও রয়েছে সেই পুরনো মাস্তুলটা। তবে অনেক বলেন পর্তুগিজ ‘ব্যান্ডেল’ শব্দের অর্থ হল বন্দর।


তথ্য_এই সময় ও ডিঙি


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract