Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

4.1  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

বুনো ফুল

বুনো ফুল

4 mins
251


এমনিতে ভবঘুরে টাইপের ছিলাম আমি, কিছুটা উদাসীন। জীবনটা তাই এগোমেলো হয়ে গেছে অনেক আগেই। একজন গুছাতে এসেছিলো। নিজের দিকটা গুছিয়ে নিয়ে চলে গেলো, সময় সুযোগ মতো। জীবনের প্রতি তাবলে আমার কোন অভিযোগ নেই। ভাঙা হৃদয় নিয়ে হাহুতাশ না করে, চেনা জানা পৃথিবীটার সাথে আড়ি করে বিদেশে চাকরি করতে গেলাম। বছর চার পর ফিরে, দেখি সবাই ভুলে গেছেন আমার কলঙ্কিত অধ্যায়টা। সবাই ব্যস্ত এ শহরে। শহরের রঙীন রাত, যানযট হাঁসফাঁস করা দিনের ব্যস্ততা আমাকে প্রভাবিত না করলেও, বিরক্তিকর করে একটু আধটু। তাই ছুটি কাটাতে এক বন্ধুর বাড়িতে যাবো ঠিক করলাম।

কোন পাহাড় , জঙ্গল, কিংবা সমুদ্র সৈকত ন‌য়। একটা সাধারণ গ্রাম, হালকা জঙ্গল আছে। আমার এক বন্ধু ওখানে একটা বৃদ্ধাশ্রম খুলেছে। সাথে মন্দির, পাশ দিয়ে নদী নয় ঠিক, কাঁদর বলে, ওগুলো কে, বলতে পারবেন ছোট নদী বিশেষ, বর্ষার জল ছোট্ট ছোট্ট ঝর্ণা থেকে, বা স্থানীয় মালভূমি র জমা জলে পুষ্ট। তবে সারা বছর হাঁটু জল থাকে। হালকা জঙ্গল, বুড়োবয়সে থাকার জন্য উপযুক্ত জায়গা। আপনারা যেমন গাড়ি কেনার আগে টেস্ট ড্রাইভ নেন। তেমন ঘুরতে আসা এখানে, বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হয়নি' পুরোপুরি, চালু হচ্ছে হবে, আমি বুকিং করবো হয়তো, বছর দশ পর তো কাজ আসবেই। আমার বন্ধু বাবার দুই বন্ধু আপাতত এখানে এসেছেন। অনেক ঘর করছে ওঁরা, পিকনিক করতে আসে এখানে অনেক , দ্বারবাসানী মায়ের মন্দির নাকি কিছু দূরে। কেয়ার টেকার বৃদ্ধ হলেও আমার চেনা, ওদের বিশ্বাসী কাজে লোক সমরেশ কাকা। জল খাবার শেষ হতেই, ছিপ আর মাছের চার নিয়ে হাজির, নিয়ে চললো পুকুর পাড়ে, একটি গাছ তলায় বসিয়ে দিলো আমায়।

মাছ দুই একটা এসেছে ঠিকই, তবে এতোটা রাস্তায়  ধকল ঘুম এনে দিলো চোখে। হঠাৎ জলে তোলপাড় শব্দে ঘুম ভেংগে দেখি, জল থাকে স্নান সেরে ওঠছে , সোমা। ষোড়শী সোমা আমার খুব চেনা। এক কুড়ি বছর পেরিয়ে সেই দিনের সোমা আজ পূর্ণ নারী। ভিজে সাদা শাড়ি, শরীরের অনেক গোপন কথা প্রকাশ করে ফেলেছে, বাকি টুকু কল্পণা র আলপনা, ওর ভিজে শরীর আমাকে কামনার আগুনে দগ্ধ করে ফেলেছে। আমি ওকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম, চোখ সরাতে পারলাম না, সেখান থেকে যেখানে চোখ যাওয়ার কথা নয়। ও অনেক গুলো প্রশ্ন করলো, কিন্তু ঠিক উত্তর দিতে পারলাম না। ও একটা বাঁকা হাসি হেসে, বললো " এখনো সেই হাঁদারাম আছো তাহলে।"

শুনেছিলাম, সোমা বিয়ে হয়েছিল এদিকে কোথাও, কোন বড়লোক বাড়িতে, শেষ খবর পেয়েছিলাম ওর বুড়ো স্বামী খুব অসুস্থ।দুপুরে খাবার পর ঘুরলাম জঙ্গলে, সন্ধায় চা টিফিন খেয়ে, ছাদে গিয়ে বসলাম। প্রত্যাশা মতো সোমা ঠিক এলো। প্রথমে অভিযোগ সুর " সবার সামনে ওমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকো কেন? যে কেউ বুঝতে পারবে তুমি আমাকে চাও। এখনো যখন ভালো বাসো। সেইদিন কেন, চাইলেনা আমাকে , তাহলে তো বিয়ে করতে আমাকে।তোমার শহুরে নীলাঞ্জনা মতো, কাজ হাসিল করে, ছেড়ে দিতাম না আমি তোমাকে।সারা জীবন থাকতাম তোমার পাশে।"

দিনের শেষ হবে হবে, ছাদ থেকে তখন দূরে রঙীন বুনোফুল গুলো দেখা যাচ্ছে। " দেখ সোমা নাম না জানা ওই বুনোফুল গুলো, এখান থেকে ও কত সুন্দর লাগছে। আমি কাছে গিয়েছিলাম, তোর জন্য তুলবো ভাবলাম। কিন্তু ভয় হলো বিষাক্ত যদি হয়। সেদিন স্বপ্ন ছিলো ঘর বাঁধার হয়তঃ। কিন্তু সামর্থ্য ছিলো না। হয়তো বিষাক্ত হয়ে যেতো তোর জীবন, অভাবের তাড়নায়। মরে যেতো ভালবাসা, ভালো লাগা।"

ও একটু উদাস হয়ে বললো " হয়তো বুনোফুল ভেবেছিলে তুমি আমায়, অতো সুন্দরী, শিক্ষিত নয় তো আমি"

আমি ঠিক রাখতে পারলাম নিজেকে একটু আবেগী হয়ে হাতটা ধরে বললাম কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম " না তুই এখনো অনেক সুন্দর" ।

হাতটা ছাড়তে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো, বললো " তুমি এখনো আমায় ভালবাসো , "

উত্তর দেওয়ার আগেই, আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস যেনো আরো কাছাকাছি আসতে চাইলো, অন্ধকারটা আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আমাদের।

সকালে উঠে সাহস করে টাটকা বোনফুল গুলো তুললাম , ওর খোঁপা গুজে দেবো‌ বলে। ঘরে ধুঁকে দেখি সবে স্নান করে সেরে ফিরেছে ও, বেশ সুন্দর লাগছে, একটা চুমু খেয়ে বললো " আয় খোঁপা গুজে দিই।"

ও বলল " সুবুর করো আগে তৈরি হয়ে নিই"

ওঁকে সাজতে দেখতে ভালো লাগলো। কিন্তু হঠাৎ আমার হাত থেকে ফুল গুলো পড়ে গেলো। যখন ও ওর কপালে সিঁদুর তুলো, আমার দমটা বন্ধ হয়ে আসছিলো যখন। একে একে শাঁখা পলা পরলো"

মেঝেতে পরে থাকা ফুল আর মুখ কালো করে বসে থাকা দেখে, আমাকে জড়িয়ে ধরেও বললো " কি হয়েছে আবার আমার বাবুর।"

আমি ওকে সরিয়ে দিয়ে বললাম " তুই বিধবা না, স্বামী আছে। এসব পাপা"

ও হেসে বললো" বিধাবার সাথে ওসব করতে অসুবিধা নেই, ও আবার বিয়ে করে সম্পত্তি বানিয়ে ফেলবে তুমি আমাকে তোমার। শাঁখা সিঁদুর পড়িয়ে, সম্পদ করে ফেলো তোমাদের। নিজেরা কোন চিহ্ন বহন করো না বিবাহিত হবার।স্বামী মানে কি মন শরীর এর মালিক তোমরা। তোমার সোমা আজ এই বুনোফুল মতোই পরিত্যক্ত। বুনোফুল পূজা হয়না, হয়না ঘর সাজানো। মা হতে পারবোনা আমি কোনদিন। তাই বুনো ফুল মতো যত্ন নেবেনা কোন, মালি কিংবা চাষী আমার জন্য। হিসাব রাখবে না, ভ্রমর, মৌমাছি, প্রজাপতি এলো কিনা আমার কাছে। হয়তো এই বুনোফুল মতোই আমিও ক্ষনস্থায়ী ভালো লাগা তোমার কাছে। "

ও বেরিয়ে গেলো। জানালো আরো, কাল সোমবার ছিলো, ও বিধবার বেশেই পূজা করে শিব ঠাকুরের।ঘরে পরে থাকা একটা বুনোফুল তুলে দেখলাম শিশিরের কান্না লেগে আছে তাতে। যদি হয়তো আমিও বনফুলের মতো ই নাম গোত্রহীন ছিলাম বলে, আজো আমার জীবনটা অবাঞ্ছিত, বুনোফুল তবু বেঁচে থাকে, নিজের মতো করে, এ সুন্দর পৃথিবীর আনাচে কানাচে। সূর্যের প্রথম আলোটা কিন্তু ওকে চুমু খেয়ে সুপ্রভাত জানালো। কোন তফাৎ করলো না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract