Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

4  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

বৃত্তের বাঁধনে (Part 7)

বৃত্তের বাঁধনে (Part 7)

17 mins
212


ভ্রাতৃত্ব- এক অদৃশ্য বন্ধন

--------------------------------------

প্রিষা, আমি আমার বাবার প্রথম সন্তান... নিজের ঔরসজাত... তোমার মতো জারজ নই...

বলুন... বলুন... কেন খুন করলেন প্রাঞ্জল রায়চৌধুরীকে !!!

আমি... আমি... বাবাইয়াকে খুন করি নি... যতবার জিজ্ঞেস করবেন, ওই একই উত্তর পাবেন.... আমি খুন করি নি....

সোজা কথায় বলবি !!! না আমি অন্য পথ নেব !!!

আপনি যা খুশি করতে পারেন, তাও আমি বলব- আমি খুন করি নি, করি নি, করি নি.... ওহহহ... ও কিইইই !!! আপনি আমার ওড়না সরাচ্ছেন কেন !!! গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন !!! আপনি কিন্তু এটা করতে পারেন না !!!

স্যার... এই কাজ করার জন্য আপনি কিন্তু Suspend হতে পারেন... আপনি কি করছেন প্রিষার সাথে !!! আপনি ওর সম্মানে হাত দিতে পারেন না !!!

Shut Upppp.... Just keep your mouth shut Oishi... আমি আমার কাজটা খুব ভালো করে জানি...

তাই বলে সিগারেট !!! না স্যার.... আমি পরাগ স্যারকে ফোন করছি...

ঔশী, তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাও... আর হ্যাঁ, যাবার আগে তোমার ফোনটা দিয়ে যাও...

আপ.. আপনি.. ই.. ই.. ওই ভাবে এগোচ্ছেন কেন !!!ওই জ্বলন্ত সিগারেটটা !!! না.. না...

নাহহহহ... নাহহহহ... ম্যাডাম.... Please... Please.... আমাকে একা ফেলে যাবেন না...

নাহহহহ.... নাহহহহহ..... আহহহহহ.... বাবাইয়া.... ঠাম্মিইইইই....

নাআআ.... নাআআআ.... নাআআআআ....

চিৎকার করে ঘুম থেকে ধড়মড়িয়ে ওঠে ঢেউ.... গায়ের বালাপোশটা টেনে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঢেকে থরথর করে কাঁপতে থাকে... এই অন্ধকার ঘরটা যেন ওকে গিলে খেতে আসে, মানস চক্ষে যেন কোনো শ্বাপদের দুই হাত বাড়িয়ে গলা টিপতে আসার দৃশ্যকে প্রত্যক্ষ করে প্রচন্ড ঘামতে থাকে... গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়... পাশে তার ঠাম্মী ঘুমের ওষুধ খেয়ে অকাতরে ঘুমোচ্ছে, তিনি কিছুই টের পান না... হটাৎই দরজার কাছে এক পুরুষালি ছায়া মূর্তি দেখতে পায় ঢেউ... ওর শরীরটা ভয়ে অবশ হয়ে আসে... কাঁপা হাতে বেড সুইচ On করার অনবরত চেষ্টা চালায়, কিন্তু আলো জ্বলে না... আতঙ্কে বিছানার চাদরটাই চেপে ধরে, এক শীতল স্রোত যেন শিরদাঁড়া বরাবর নেমে যায়... চিৎকার করার চেষ্টা করতে গিয়ে বোঝে গোঙানি ছাড়া মুখ দিয়ে আর কিছুই বের হচ্ছে না... ছায়ামূর্তিটা এইবার একটু এগিয়ে আসতেই ঢেউ অনভিপ্রেত কিছু দেখার আশঙ্কায় চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়... হঠাৎই ঘরের আলো জ্বলে ওঠে... পরাগ ঘরে ঢুকে ঢেউকে ওই অবস্থায় দেখে প্রথমে একটু অবাক হলেও মূহুর্তে তার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়... দ্রুত পায়ে ঢেউ-এর কাছে এগিয়ে যেতে গেলে নিজের মনেই যেন বাঁধা পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে... এক অদৃশ্য শক্তি বল যেন পরাগকে টানছে নিজ কনিষ্ঠা ভগিনীর দিকে, কিন্তু মন মানছে না... অবশেষে চিরকালীন সেই সত্যের জয়... মস্তিষ্ককে অবলীলায় হারিয়ে দিয়ে মন তার নিজের জায়গা নিজেই জিতে নেয় আর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসেবে... পরাগ হঠাৎই অনুভব করতে লাগলো, সে যেন কিছু একটা হারিয়ে ফেলছে- নিজেকে খুঁজছে নিজের মাঝে... কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছে না, নিজেকে বড় দোষী বলে মনে হচ্ছে তার... তার মন ভীষন খারাপ হয়ে গেল, ভ্রাতৃত্বের টান তাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে... যতই হোক, রক্তের টান যাবে কোথায় ?? চাইলেও কি কখনো অস্বীকার করা সম্ভব তার নিজের ছোটো বোনের অস্তিত্ব... মেয়েটার জন্য যতই তার ছোটোবেলা নষ্ট হয়ে যাক, তার জন্য কি এই মেয়েটা যে তার বোন সেটা কি মিথ্যে হয়ে যায় !!! ঘৃণার আড়ালে সব স্নেহ ভালোবাসা কি ফিকে হয়ে যায় !!! তার দাদার কাছ থেকে এতটুকুও স্নেহ, ভালোবাসা ওর প্রাপ্য নয় !!! কি দোষ আছে মেয়েটার !!! ও তো নিজেও জানতো না ওর জন্মের সত্যিটা !!! আর জানলেই বা কি হতো !! ও কি কিছু বদলাতে পারতো ?? নাহ !! সেই দিনের সেই শিশুকন্যাটিও ছিল পরিস্থিতির শিকার, তারও যে হাত পা বাঁধা ছিল সারাজীবন মুহূর্তের কাছে... সেই দিন কিন্তু সে নিজেও অনাথ রূপেই গণ্য হতো যদি প্রাঞ্জলবাবু না পাশে থাকতেন... আর এখন পরাগ যেভাবে সবার সামনে ওর জন্মসত্য উন্মোচিত করেছে, তাতে সারাজীবনের জন্য হয়তো ওর গায়ে 'অবৈধ' শব্দটা লেগে গেছে... পরাগের এই কয়েকটা বছরের অপ্রাপ্তির প্রতিদান হিসেবে আমৃত্যু মেয়েটাকে এই পরিচয়ের জন্য সমাজ আঁচড়ে আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেবে...

মানুষের মনের সবটাই নির্ভর করে অনুভূতির উপর, আর অনুভূতি গ্রহণের মাধ্যম হলো ইন্দ্রিয়... ইন্দ্রিয় চালিত করে হৃদয়ের দিশাকে... হৃদয় প্রশ্রয় দেয় আবেগকে... আবেগ ছোটে ভালোবাসার পানে... ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতিতে বেঁচে থাক ভালোবাসা, আর ভালোবাসা বেঁচে থাক তার আঁতুরঘর মানুষের মনে... পরাগও ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ঢেউ-এর দিকে... আলতো করে ঢেউ-এর মাথায় হাত রাখে... হটাৎ ই আজ বড্ড কান্না পায় পরাগের, মনে হয় এক বিরাট বড়ো অন্যায় সে করেছে... আজ তো সেও এক ছোট্ট সন্তানের পিতা... সেও তো অপেক্ষায় থাকে কখন সারাদিনের কর্মকাণ্ডের পর তার কাজুবাবুর সাথে একটু সময় কাটবে, ভাগ করে নেবে কিছু খুশির মুহুর্ত... শুধুমাত্র পরাগ নিজেই নয়, ওই খুদে এক রত্তিটাও তো অপেক্ষা করে তার "বাবাইয়ার" জন্য... দেখতে পাওয়া মাত্রই ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটো বাড়িয়ে দেয়, কোলে নেওয়া মাত্রই খিলখিলিয়ে ওঠে পরশ- যেন নিজের "পরশপাথর"-এর সন্ধান পেয়েছে... তাহলে !!! নিজে পিতৃসুখের সন্ধান পাওয়া, সেই আনন্দ রসে পরিপূর্ণ একটা মানুষ কিভাবেই বা অপর একটি মানুষের পিতৃত্বের প্রতি আঙ্গুল তুলতে পারে !! কিভাবেই বা নিজে বাবা হয়েও অপর কোনো এক সন্তানকে জারজ বলে অভিহিত করতে পারে সে !! নাহ !! সে ঠিক করেনি !! প্রথম দিন থেকেই ভুল করে চলেছে ক্রমাগত, যার শাস্তি এখন তার ছোট বোনটা পাচ্ছে... নিজেকে পাপী ভেবে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে প্রায়শ্চিত্ত করছে... কিন্তু এই ভাবে চলবে না, চলতে পারে না সবকিছু... এক পরিপূর্ণ সাজানো সংসার যখন পরাগ নিজে হাতে ধ্বংস করেছে, তখন তাকে আবার পুনরায় প্রবর্তন করার দায়িত্বও পরাগেরই... তাই ঢেউ-এর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে অস্ফুটে ডেকে ওঠে,

                           বুনি... ই.. ই..

মূহুর্তের আতঙ্কিত ঢেউ নিজের দুই হাতে আঁকড়ে ধরে পরাগের হাত....

ঢেউ : বা.... বাবাইয়া... বাবাইয়া... তু... তুমি ফিরে এসেছো !!! তুমি ফিরে এসেছো বাবাইয়া !!! তু... তুমি তো জানো বলো, আহহ... আমি.... আমি নির্দোষ.... ওরা তোমার বুক থেকে আমাকে কেড়ে নিল... ব... বলো...

পরাগ : ঢেউ... আমি দাদাভা... আমি পরাগ, প্রিষা...

ঢেউ : নাহহহ... তুমিই বাবাইয়া... আমার বাবাইয়া... আমি ওদের ক্ষতি চাই নি... আমি কোনোদিনও কারুর ক্ষতি চাই নি... তুমি তো জানো !!! সব জানো... স... স...

জ্ঞান হারায় ঢেউ... পড়ে যাবার উপক্রম হলে পরাগ সনিপুনতায় তাকে নিজের বুকে আগলে নেয়... নিজের বুকে জড়িয়ে থাকা ছোট্ট বুনিকে আঁকড়ে ধরে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দেয় সন্তর্পনে, পাছে ঠাম্মির ঘুমটা ভেঙে যায়... উনিও অসুস্থ, পুত্রশোকে কাতর.. কাকেই বা সামলাবে এখন.. তবে এই মুহূর্তে ঢেউই ওর First Priority... ওর জ্ঞান ফেরানোটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন... অনেকদিন পর বড় অসহায় লাগছে নিজেকে... পরাগের ঘরে কাজুকে নিয়ে মা আর পাপড়ি ঘুমোচ্ছে... পাপড়িও ক্লান্ত ছেলের ধকলে... তাই ওদের চিন্তা বাড়াতে চায় না সে... তবে এই মুহূর্তে একজনকে তার ভীষণ দরকার... কিন্তু মুখোমুখি হলেই যা তিক্ততা তৈরি হয় দুজনের... তাও প্রিষার জন্য ওর সবচেয়ে বেশি ভরসাযোগ্য তো এই পৃথিবীতে আর কাউকেই মনে করতে পারে না সে... মুখে যতই রাগ দেখাক, ছেলেটা যে অমূল্য রত্ন তা পরাগ প্রথম দেখেই বুঝেছিল... গুরু দ্রোণাচার্যের একলব্য শিষ্য বলে কথা... তাই ভাবনার জগৎ থেকে দ্রুত বাস্তবে ফিরে এসে টেবিলে রাখা জলের গ্লাস থেকে জল নিয়ে ঢেউ-এর চোখে মুখে ছেটায় পরাগ... আকুল কণ্ঠে বলে ওঠে,

পরাগ : এই... এই... ঢেউ... ঢেউ... চোখ খোলো... (গালে আলতো চাপড় মেরে) Come On... Open Your Eyes... ঢেউ... (কপালে হাত দিয়ে) গা তো জ্বরে একেবারে পুড়ে যাচ্ছে... এইবার আমি কি করবো !! Ohh God !! Please help me !!

পরাগ পরম মমতায় ঢেউকে ওর বালিশে শুইয়ে গায়ে বালাপোশটা টেনে দিতে গেলে ঢেউ-এর হাতের, গলার, বুকের আঘাতগুলোর উপর চোখ পড়ে...

পরাগ : এই.... এইভাবে Torture করেছে এই ছোট্ট মেয়েটাকে !!! বুকেও সিগারেটের... This is a kind of Molestation... অফিসার কণিষ্ক আমি আপনাকে ছাড়ব না... আপনার ব্যবস্থা আমি পরে করছি... তার আগে ডক্টরকে ফোন করা উচিত... (পকেট থেকে ফোন বার করে) হ্যালো, ডক্টর সম্মাদ্দার... হ্যাঁ, আমি অফিসার পরাগ রায়চৌধুরী বলছি... আপনাকে এক্ষুনি একবার আমার বাড়িতে আসতে হবে... না... না... ওখানে নয়... আমি বলছি, আপনি Address-টা লিখুন...

এমনসময় ঘরের কলিংবেল বেজে ওঠে... পরাগ একটু বিরক্ত হয়েই দরজা খুলে দেখে বাইরে সমুদ্র দাঁড়িয়ে... সমুদ্রকে দেখে আবার চমকে ওঠে পরাগ... একেই কি 'টেলিপ্যাথি' বলে !! এতক্ষণ ধরে যে মানুষটাকে পাশে চেয়েও লজ্জায় একটা ফোনও করতে পারেনি, সে নিজেই এখন দরজায় এসে দাড়ালো !!

সমুদ্র : Sorry.... Extremely Sorry... এত রাতে আপনাদের Disturb করার জন্য... কিন্তু পরাগবাবু, আমার প্রিষার জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছিল... জানি না কেন, আমার মন বলছিল ও ভালো নেই... আসলে ওর ফোন নম্বরটা তো আমার কাছে নেই... আমার মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে...

মানুষের-ই মনের টানের নাম বোধহয় দেয় ভালোবাসা... তাই তো কিছুই না জেনে, না শুনে, শুধু মনের টানেই ছুটে আসা যায় নিজের মানুষটার কাছে !!! ধন্য এই প্রেমিক !! কুর্নিশ এই ভালোবাসাকে !!এত চিন্তায়ও মুখে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে পরাগ বলে ওঠে,

পরাগ : সব কথা বাইরে থেকেই বলবেন না কি !!! এসেই যখন পড়েছেন, ভেতরে আসুন...

সমুদ্র : Thank You... ও ভালো আছে তো, পরাগবাবু !!!

পরাগ : নাহহহহ... ও ভালো নেই... ওর Panic Attack হয়েছে... Senseless হয়ে গেছে... আম... আমি ফোন করলাম ডক্টরকে... এসেই পড়বে হয়তো... আপ... আপনি যান ওর কাছে...

সমুদ্র : আচ্ছা...

সমুদ্র দুই পা এগোতেই বলবেনা বলবেনা করেও বেদকে পেছন থেকে ডেকেই ফেলে সে,

পরাগ : একটু দাঁড়ান বেদ... আপনার সাথে আমার ছোট্ট একটা কথা আছে...

সমুদ্র : বলুন...

পরাগ : যদিও আমি জানি আমার আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই... ধরে নিন তবুও একজন শুভাকাঙ্খী হিসেবেই জিজ্ঞাসা করছি একটা কথা... কিছু মনে করবেন না Please... (গলায় যেন সামান্য কুণ্ঠাবোধ এর আভাস) প্রিষা আপনার বাগদত্তা... ওর জন্মের সত্যিটা পরে গিয়ে আপনাদের সম্পর্কে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে না তো !!! এখন সমাজের জটিলতা থেকে সমাজের নিয়মরক্ষার জন্য ওকে সুরক্ষা দেবার ঝোঁকের বশে হয়তো এই মূহুর্তে ওকে আপনি মেনে নিয়েছেন... মানে প্রিষা যে আপনার বাগদত্তা, সেটা কি শুধুই আপনার স্যারের কাছে আপনার করা অন্তিম প্রতিশ্রুতির জন্য !!! না কি আপনারা নিজেদের কাছেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ !!!

সমুদ্র : প্রথম উত্তরটা বোধহয় আমি আপনাকে শ্মশানেই দিয়ে দিয়েছি, কিন্তু আমার কাছে এটা বোধগম্য হচ্ছে না যে, হঠাৎ প্রিষাকে নিয়ে আপনার এই মাথাব্যাথাটা কেন !!! ও তো একজন সামান্য 'জারজ' সন্তান, কারোর অনাদরে ফেলে রেখে যাওয়া পাপ... আবার এখন তো অনাথও বটে... তাহলে ওর মতো একজন মেয়ে সম্পর্কে আপনাদের মতো ভদ্রলোকদের এত মাথা ব্যাথা কেন ??

পরাগ : কেন !!! প্রিষার বড় দাদা হিসেবে কি আমার প্রশ্ন করার অধিকার নেই !!! জানার অধিকার নেই তার ভবিষ্যত সম্পর্কে !!

সমুদ্র : (ব্যঙ্গাত্মক হাসি হেসে) হাসালেন অফিসার... দাদা ?? মানে বোঝেন আপনি দাদা-বোনের এই সম্পর্কটার !! বোঝেন, একজন দাদা হতে হলে কতটা গভীর সম্পর্ক হতে হয় !! কত Sacrifice করতে হয় !! কিভাবে বুক দিয়ে আগলে রাখতে হয় ছোট্ট বোনটাকে... প্রয়োজনে শাসন করতে হয়, আবার হাসি খুশি মজা আনন্দের বন্ধু হতে হয়... দুষ্টুমিতে হতে হয় 'Partners in Crime'... আপনি কিচ্ছু বোঝেন না... তাই একজন তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ওর জীবনে প্রবেশ না হয় নাই বা করলেন !! নিজের দায়িত্বে প্রিষার যে ক্ষতিটা আপনি করেছেন, গোটা সমাজের সামনে প্রিষার যে অপমান, অসম্মানটা আপনি করেছেন... তারপর কি আপনার মনে হয় না, আপনার অধিকারটা আপনি নিজেই হারিয়েছেন !!!

পরাগ চুপ থাকে.... তার যে কেন আজ মনে হচ্ছে, শুধু রক্তের সম্পর্কটাই সব হয় না... মনের টানটাই সবথেকে বড়...আজ তার মনের টানের কাছে কেন তার রক্তের সম্পর্কের এতদিনের পোষণ করা ঘৃণাটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে, সে নিজেই বুঝতে পারছে না... তবে সমুদ্র তো কিছু ভুল বলছে না... ও যা দেখেছে, যা শুনেছে এই ক'দিনে- স্বাভাবিক ভাবেই তার থেকেই পরাগের এক চরিত্রায়ন করে নিয়েছে নিজের মতো করে... এর মধ্যে তো কোনো ভুল নেই... সত্যিই তো যে অন্যায় পরাগ করেছে তার কোনো ক্ষমা নেই... এই ঘটনা পাপড়ি বা মা যদি সবটা জানতে পারে তবে তাদের চোখে চোখ রেখেও আর কোনোদিন কোনো আদর্শের কথা বলতে পারবে না সে... অন্তত নিজের স্ত্রীর সামনে তো নয়ই... অল্প সময়েই ঢেউ যা করেছে ওদের জন্য,তাতে... যাক গে !! নিজের ভুল নিজেকেই শুধরাতে হয়... তবে সে সুযোগও পাবে তো !! বেশি দেরী হয়ে যাবে না তো তাদের সম্পর্ক টা সহজ হতে ?? ভাই বোন হিসেবে !!পরাগকে আচমকাই চুপ করে যেতে দেখে সমুদ্র পরাগের সামনে এসে পরাগের চোখে কঠিন দৃষ্টি রেখে বলে,

সমুদ্র : আমার... উত্তরটা পেলাম না অফিসার...

নেপথ্যে : নাআআ.... নাআআআ.... নাআআআআ....

ভেতরের ঘর থেকে ভেসে আসা ঢেউ-এর জড়ানো গলায় আর্তনাদ শুনে পরাগ আর সমুদ্র দু'জনেই একসঙ্গে চমকে উঠে...

পরাগ : ওর বোধহয় জ্ঞান ফিরছে... আপনি আসুন আমার সঙ্গে...

পরাগ একপ্রকার ছুটে ঘরের দিকে যায়... ঢেউ-এর প্রতি পরাগের এই উদ্বেগ প্রথমবার কিছুক্ষণের জন্য সমুদ্রকে বিস্মিত করে রাখে... অবশ্য মনে মনে না চাইতেও একটু হেসে নেয়... সে মুখে পরাগকে যাই বলুক না কেন, সমুদ্র নিজেও বোঝে যে পরাগের তার ছোট্ট বোনের প্রতি টানটা কতটা গভীর !! হয়তো এতদিনের অনভ্যাসে প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করে, তাই বলে স্নেহ, ভালোবাসাটা মিথ্যে নয়... তবে অনেকক্ষণ কথা বলে সময় নষ্ট করেছে সে... এবার ঢেউ-এর কাছে যাওয়াটা সত্যিই খুব প্রয়োজন- ও যে ভালো নেই আর তার নিজের থেকে বেশি আপন এই পৃথিবীতে ঢেউ-এর আর কে আছে !!! তাই আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পা বাড়ায় ঢেউ-এর ঘরের দিকে... ঘরে ঢুকে দেখে পরাগ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে... হয়তো নিজের কৃতকর্মের জন্য নির্দ্বিধায় ঢেউ-এর কাছে যেতে পারছে না... এবার সমুদ্র-এর চোখ চলে যায় ঢেউ-এর দিকে... খাটে ছটফট করছে ঢেউ... আর বিলম্ব করে না সমুদ্র... ছুটে গিয়ে ঢেউ-এর কপালে হাত রাখে... চোখ না খুলে ঘোরের মধ্যেই ঢেউ বলে ওঠে,

ঢেউ : বেদ... বেদ... তুউউ... তুমি কেন এতো দেরী করে এলে !!!

সমুদ্র : আমি তো এসে গেছি ঢেউ... আর ভয় পেও না তুমি...

ঢেউ : তুমি চলে যেও না বেদ... আমার... আমার যে আর কেউ নেই... আমাকে ছেড়ে চলে যেও না....

চির চঞ্চল, ছটফটে মেয়েটাকে বিছানায় নির্জীব হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সমুদ্রর মনটা কেঁদে ওঠে... চোখ থেকে প্রায় গড়িয়ে পড়তে চাওয়া জলটাকে আটকে রেখে ঢেউ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,

সমুদ্র : কোথায় যাব তোমায় ছেড়ে বলো !!!

ঢেউ : (গলাটা শুকিয়ে যায় প্রচন্ড জল তেষ্টায়) সবা... সবাই চলে যায়... ছোট্টবেলা থেকে মা-কে পাই নি... কোনোদিনও পাই নি... এক মূহুর্তের জন্যও না... বাবা... বাবাইয়া একটু ভালোবাসতো... কিন্তু... নিজেকে অধ্যয়নের বৃত্তেই আবদ্ধ করে রাখতো... একদিন... মা নিজের সুখ খুঁজে চলে গেল... একবার ফিরেও তাকালো না... বোধ হয় ভুলেই গেল আমি রয়ে গেলাম পেছনে... অপেক্ষায়... আর বাবাইয়া যেন প্রতিদিন আরো আরো বেশি করে নিজেকে...

সমুদ্র : আমি জানি... জানি তো সবটা ঢেউ... তুমি এত কথা বলো না !!! একটু জল খাবে ?? তোমার তো কষ্ট হচ্ছে খুব !!

ঢেউ : (অনবরত বলেই যায়) আজ বুঝি... আমি তো পাপ ছিলাম... তাই কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারলো না... বাবাইয়া চেষ্টা করেও পারে নি... আর মা চেষ্টাই করে...

সমুদ্র : আহহহ ঢেউ... তোমাকে এতবার করে বোঝানোর পরেও এই কথাগুলো...

ঢেউ : বাবাইয়া কেন সেদিন মেনে নিল অন্যায়টা !! আমি... আমি কিছু না জেনেই সারাজীবনের জন্য অপরাধী... অপ... অপ...

সমুদ্র : ঢেউ... ঢেউ.... ঢেউ...

একমাস পর :

--------------‐-------

প্রাঞ্জল বাবুর পারলৌকিক কাজকর্ম সব মিটে গেছে... তখন অনেক রাত... সমুদ্র সেই রাতে প্রাঞ্জলবাবুর Study Room-এই থেকে গেছে... প্রাঞ্জলবাবু ডায়েরিতে কিছু লিখে রেখে গেছেন... কিন্তু সমুদ্র কিছুতেই সেটা উদ্ধার করতে পারছে না...

হঠাৎই দূর থেকে ঢেউ-এর একটা গান ভেসে আসে,

দীপ নিবে গেছে মম নিশীথসমীরে,

ধীরে ধীরে এসে তুমি যেয়ো না গো ফিরে,

এ পথে যখন যাবে  আঁধারে চিনিতে পাবে,

রজনীগন্ধার গন্ধ ভরেছে মন্দিরে॥

আমারে পড়িবে মনে কখন সে লাগি,

প্রহরে প্রহরে আমি গান গেয়ে জাগি,

ভয় পাছে শেষ রাতে  ঘুম আসে আঁখিপাতে,

ক্লান্ত কণ্ঠে মোর সুর ফুরায় যদি রে॥

সমুদ্র Study থেকে বেরিয়ে দেখে বারান্দার ঝুলন্ত দোলনাতে বসে পরাগের ছেলেকে বুকে আঁকড়ে ধরে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে ঢেউ গান করছে... নতুন মা বোধহয় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে... এদিকে একরত্তির দু'চোখে ঘুম নেই... পিপির কোলে খুদে খুদে চোখ খুলে দুলতে দুলতে গান শুনছে... মাটিতে ঢেউ-এর গায়ের চাদরটা লুটিয়ে পড়েছে... মৃদু বাতাসে ঢেউ-এর চুলগুলো অল্প অল্প উড়ছে, আর তার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলোতে ঢেউ-এর মায়াবী মুখটা দেখা যাচ্ছে... হয়তো মেয়েদের মাতৃরূপেই সবচেয়ে সুন্দর লাগে, সমুদ্র ঢেউ-এর থেকে চোখ ফেরাতে পারছিল না... ধীরে ধীরে ঢেউ তার অন্তরের সবটা জুড়ে অধিষ্ঠিত হয়ে পড়েছে... তাই দূর থেকেও সমুদ্র বোঝে, ঢেউ ওই এক রত্তিকে বুকে আঁকড়ে নীরবে কাঁদছে... একমাস পেরিয়ে গেল, ঢেউ এখনো সহজ হতে পারলো না... হয়তো হওয়া যায় না... পায়ে পায়ে সমুদ্র এগিয়ে এসে ঢেউ-এর দোলনার পাশে এসে দাঁড়ায়... ঢেউ এতটাই আত্মমগ্ন ছিল যে, সে সমুদ্রের উপস্থিতি অনুভব করতে পারে না... ছোট্ট মানুষটা এতক্ষণে ঘুমিয়েছে... ঢেউ চোখের জল মুছে তার কোলের ছোট্ট সোনার কপালে একটা স্নেহ চুম্বন এঁকে দেয়... এক রক্তি ঘুমের মধ্যেই ফোকলা মুখে ফিক করে হেসে ওঠে, আর সেটা দেখে ঢেউ-এর মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে পড়ে... তার মৃদু আভা এসে পড়ে সমুদ্রের ঠোঁটেও... কিন্তু উঠতে গিয়ে এক বিপত্তি ঘটে যায় ঢেউ-এর সাথে... লুটিয়ে পড়া চাদরে পা পড়ে ঢেউ এক রক্তি সমেত বেসামাল হয়ে পড়ে... এক রত্তিকে নিজের বুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ঢেউ যাতে সে কোনো আঘাত না পায়, কিন্তু একটু ধাতস্থ হতেই সে অনুভব করে সে একজোড়া বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ... তার গাল ছুঁয়ে যায় সেই মানুষটার তপ্ত নিঃশ্বাস... ঢেউ-এর গোটা গা কাটা দিয়ে শিহরিত হয়ে উঠলো... ঢেউ-এর ঘন ঘন পড়া গরম নিঃশ্বাস সেই মানুষটাকেও ভেতর ভেতর শিহরিত করে তুললেও তার সংযমী মন তাকে সেই মুহূর্তেই আত্মসংযমের শিকলে বেঁধে নেয়... একটা গম্ভীর অথচ মৃদু স্বরে বলে ওঠে,

নেপথ্যে : সাবধানে ঢেউ... আমি না থাকলে তো কাজুকে নিয়ে পড়ে যেতে তুমি...

ঢেউ মুখ না ঘুরিয়ে বুঝতে পারে সে সমুদ্রের বাহুডোরে বন্দী, সে যে ঢেউ-এর পাশে থেকে সকল ঝড়ঝঞ্ছা থেকে ঢেউকে আগলে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ... ঢেউ কাউকে বোঝাতে পারে না, যে সে সমুদ্রকে ভয় পায়... সমুদ্র অনেকটা বট গাছের মতো, সবাই যার শিকড়কে ভয় পায়... এর শিকড় এত শক্ত যে, বাড়ির ভিতকেও ফাটিয়ে দেয়... আর যেখানে এই গাছ হয়, সেখান থেকে একে উপড়ে ফেলা খুব শক্ত... ঢেউ-এর বাবাইয়া তার অন্তিমকালে এই বট গাছের মতো মানুষের হাতে তাকে সমর্পণ করে গেল, যাতে সমাজের অচলাতলের ভিত ভেঙ্গে সমুদ্রের ভালোবাসার শিকড়ও ঢেউ-এর এই অভিশপ্ত জীবনে বট গাছের মতোই শক্ত হয়... কিন্তু ঢেউ কেন তার এই ঘুণ ধরা জীবনের অভিশাপ এই দেবতুল্য মানুষটার জীবনে কেন পড়তে দেবে !!

তাই, ঢেউ আর সমুদ্র-এর ক্ষেত্রে এখন দূরত্ব আর ভালোবাসা দুটোই সমার্থক হয়ে গেছে... এই দূরত্বের ভালোবাসায় আবেগ আর অনুভূতিটা এতটাই বেশি যে প্রকাশটা নিতান্তই কম হয়ে পড়ে... ঢেউ সমুদ্রের সান্নিধ্যে ধীরে ধীরে তার নারী হৃদয়ের ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করে... তারা পরস্পরের হৃদয়পুরের বাসিন্দা, নয়নযুগলের নয়নমনি হয়েও ঢেউ-এর অতীত কিছুতেই ঢেউকে সমুদ্রের কাছে স্বাচ্ছন্দ্য হতে উঠতে দেয় না... সত্যি বলতে কি, ঢেউ কিছুতেই তার আগের সহজ জীবনে ফিরতে পারছে না... সমুদ্রের স্পর্শ, সমুদ্রের উপস্থিতি ঢেউকে সব কষ্ট-যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা দিলেও সেইগুলো এখনো ভুলিয়ে দিতে পারে নি... তাই ঢেউ সমুদ্রের কাছে এখনো আড়ষ্ট হয়েই থাকে... কেবল তার চোখের কোলে ওই টলটল করা জলটাই বলে দেয়, সে অন্তরে অন্তরে সমুদ্রকে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছে... সমুদ্রের চোখের কোনটাও যেন চিকচিক করে ওঠে...

কাজু : আ... উ উ উ উ... আ... দা দা দা দা... আ... গা গা গা গা... 

কাজুর আধো আধো শব্দে ঢেউ আর সমুদ্র অনুভূতির অনুভব থেকে বাস্তবের জগতে ফিরলো... যে কাজটা শত চেষ্টাতেও সমুদ্র করতে পারে নি, কাজু মূহুর্তেই করে ফেললো... কাজুর Babbling ঢেউকে সহজ করে তোলে... ঢেউ-এর কোল থেকে কাজুকে একপ্রকার ছিনিয়েই নেয় সমুদ্র...

সমুদ্র : দেখো তো কাজু সোনা, পিপিটা কি কয়ে !!! ঘুমু পাড়িয়ে আবার ঘুমু থেকেই তুলে দেয় !!!

কাজু : আ.... দা দা দা দা...

ঢেউ : এটা কি হলো !!!

সমুদ্র : কি হলো !!

ঢেউ : আমার কোল থেকে কাজুকে কেন নিয়ে নেওয়া হলো !!!

কাজু : আ.... আউউউউ..... উউউউ....

ঢেউ : দেখো... দেখো.... I Love You বললো... এইটা আমি ওকে....

ঢেউ আনন্দে সমুদ্রের হাতটা আঁকড়ে ধরে লাফিয়ে ওঠে... সমুদ্র মুখে কিছু না বললেও ঢেউ-এর আনন্দে ওর মুখেও একটা প্রশান্তির আভা খেলে যায়... ঢেউ-এর ছেলেমানুষীকে স্নিগ্ধ প্রশয়ে আবৃত করে সে... সমুদ্রের দৃষ্টির মুগ্ধতায় ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যায় ঢেউ... কাজু এই দুই খুদের কান্ড দেখে তার ছোট্ট ছোট্ট হাত পা ছড়িয়ে আলমোড়া ভেঙে একটা বড় হাই তুলে আবার ঘুমু করার প্রস্তুতি নিতে থাকে- ভাবখানা এমন 'বাচ্চা দুটো যা খুশি করুক, আমি একটু ঘুমু দিই বাবা'.. যদিও এমনসময় ঘরে কারুর দৃপ্ত পদক্ষেপের শব্দ শোনা যায়... ঢেউ-এর চমক ভেঙ্গে চোখে-মুখে ভয়ের ছায়া পড়ে... ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় পরাগ...

পরাগ : কি ব্যাপার !!! তোমরা এখানে !! এখনো ঘুমাও নি !!!

সমুদ্র : বড়মা আর বৌদিভাই কাজুকে নিয়ে রাতের পর রাত জাগছে... কাজু তো এখনো Biological Clock-এর সাথে adjust হতে পারে নি... তাই ঢেউ আজ বড়মাকে ঠাম্মির ঘরে পাঠিয়েছে... ও আজ বৌদিভাই-এর সাথে শোবে...

পরাগ : তা প্রিষা ম্যাডাম-এর কি Rest নেবার দরকার নেই !! মানে একমাস আগেই তো ওনার উপর Deadly Attack-টা হয়েছিল !!! উনি কি সম্পূর্ণ সুস্থ !!!

কোথাও যেন বড় দাদা হিসেবে নিজের কনিষ্ঠার প্রতি এক স্নেহ মিশ্রিত শাসন-এর সুর শোনা যায় পরাগের গলায়... আর কেউ সেটা না বুঝলেও বেদ এর দৃষ্টি এড়ায় না... মনে মনে খুশিই হয় সে...

ঢেউ : (ঢোক গিলে) আমি তো তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম... দাদাভা... (পরাগ তীক্ষ্ণ চোখে ঢেউ-এর দিকে তাকায়)... না মানে স্যার এত রাতে কাজ থেকে ফিরলেন... বেদ-ও এত রাত অব্দি পড়াশোনা করছে... আমি তোমাদের Light কিছু খেতে দিয়ে দিই... একটু Soup আর Toast...

পরাগ : হ্যাঁ, খাবার দিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো...

Fresh হয়ে পরাগ দেখে ঢেউ পরম মমতায় বুকে কাজুকে আঁকড়ে ধরে বোতলে করে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুম পাড়াচ্ছে... পরাগ অপলকে তার কনিষ্ঠা সহোদরাকে দেখতে থাকে... কাজুকে Cot-এ শুইয়ে ঘুরে তাকাতেই পরাগকে দেখে ভয়ে দু'পা পিছিয়ে যায় ঢেউ...

পরাগ : আমি বাঘ না ভাল্লুক, যে আমাকে এত ভয় পাও তুমি !!

ঢেউ : আমি তো আপনার অপরাধী স্যার... তবে আপনি চিন্তা করবেন না, আমি না কয়েকটা Job-এ Apply করেছি... যে কোনো একটা পেয়েই যাবো... তারপর সারাজীবনের মতো আমি চলে যাব... আপনাকে খুব বেশিদিন আমার মতো পাপকে সহ্য করতে হবে না...

কথাটা পরাগের অন্তঃস্থলে প্রায় ছুরি বসার মতো আঘাত করে... পরাগ ভেতর ভেতর অস্থির হয়ে ওঠে...

পরাগ : পা... পাপ !!! তুমি চলে যাবে সবাইকে ছেড়ে !! সত্যিই !! কিন্তু কেন ??

ঢেউ : হ্যাঁ স্যার !!!

পরাগ : (দৃঢ়ভাবে) নাহহ... এই Case Close না হওয়া অব্দি তুমি কোথাও যেতে পারবে না !!! এখন খেতে দাও....

ঢেউ চলে গেলে হঠাৎই ভীষন মনখারাপ করে ওঠে পরাগের... ঢেউকে যতই দেখছে, ততই মাঝে মাঝেই এই মনখারাপটা হচ্ছে পরাগের... কিছু মনখারাপের কোনো কারন থাকে না... তখন শুধু ইচ্ছে করে সবকিছু থেকে দূরে সরে রাতের অন্ধকারে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে রাতের স্তব্ধতা অনুভব করতে...

ঢেউ দূর থেকে খেতে আসার জন্য ডাক দেয়... টেবিলে খাবার দিতে দিতে হঠাৎই ঢেউ-এর পায়ে খুব জোরে টান ধরে... মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে সে... পরাগ আর সমুদ্র ছুটে আসে...

সমুদ্র : (উদ্বেগে) কি হলো !!! কি হলো ঢেউ !!!

ঢেউ : আরে কিছু না... কিছু না গো... ঠান্ডায় পায়ে একটু টান লেগেছে....

পরাগ : তুমি এক্ষুনি গিয়ে Rest নেবে !!! যাও... গিয়ে শুয়ে পড়ো... আমরা এগুলো তুলে দেবো...

ঢেউ পা টানতে টানতে চলে গেলে পরাগের মুখটা চিন্তান্বিত দেখায়... সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে চিন্তান্বিত স্বরে বলে,

পরাগ : ঢেউ-এর এই ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতটা... ওর পায়ে প্রায়ই টান ধরছে... পরশুদিন তো হাতেও এত জোরে টান লাগলো, মেয়েটার চোখে জল গড়িয়ে পড়ছিল....

সমুদ্র : মানে !! আপনি কি কিছু সন্দেহ করছেন !!! মানে এটা কি ঠান্ডাতে লাগা টান নয় !!

পরাগ : একটা কথা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন বেদ, প্রাঞ্জল রায়চৌধুরী Murder Case-এ একমাত্র Eye Witnesses প্রিষা রায়চৌধুরী, মানে ঢেউ... কিন্তু এখনো অব্দি ওর উপর আর কোনো Attack হয় নি বা কোনো Threat আসে নি... আর সেটাই আমাকে সবথেকে বেশি ভাবাচ্ছে...

সমুদ্র : IPS Officer পরাগ রায়চৌধুরী-র বাড়িতে কি Attack করা অত সহজ !!!

পরাগ : বেদ, Law and Crime দুটোই Parallel Way-তে চলে... তাই আমার বাড়ি বলে ঢেউকে একেবারেই Safe and Secure বলা যায় না...

সমুদ্র : আপনি ঢেউকে নিয়ে কি ভয় পাচ্ছেন পরাগবাবু !!!

পরাগ : পরোক্ষভাবে ঢেউ-এর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না তো !!! এইরকম হলে, আমরা ওকে বাঁচানোর সুযোগ পাবো না বেদ !!! ওর উপর খুব ভালো করে নজর রাখতে হবে... Directly হোক বা Indirectly, Attack ওর উপর হবেই বেদ ...

এরপর দু'জনেই চুপ করে যায়... রাতে শুতে যাবার সময় ঘরে পরাগকে না দেখে ঢেউ-এর ঘরের বাইরে থেকে সমুদ্র দেখে পরাগ ঢেউ-এর গায়ের চাদর টেনে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে... পরাগের দৃষ্টিতে সেদিন সমুদ্র কোথাও ঘেন্না খুঁজে পেল না... সে দৃষ্টি এক স্নেহবিগলিত দাদার, এক সহোদর রূপে পিতার... বরং খোঁজ পেলো এক অনাস্বাদিত ভালোবাসার... রক্তের টান !! এড়ানো কি এতই সহজ !!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance