ব্লকলিস্ট
ব্লকলিস্ট
- খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। সোনা প্লিজ! একবার, ফর ওয়ান্স, ওয়াশরুমে যাও, তোমায় আজ খুব খুব আদর করবো।
- মানে? কী বলতে চাইছো? আগে তো কখনও...!
- আগে চাইনি। আজ চাইছি।
তোমার সর্বাঙ্গ দেখাবেনা আমায়?
- ছিঃ! কৃষ্ণেন্দু! তুমি...!
- কী, আমি? ঋষিব্যাসদেব? আমার অর্গাজম থাকতে নেই?
- আমি তোমাকে ভালোবাসি কৃষ্ণেন্দু!
- হ্যাঁ, তাইতো ভার্চুয়ালি আদর করতে চাইছি। কী ভেবেছ, সারাজীবন কপালে রসকলি এঁকে যাবো?
- ইউ আর সিক! শেম অন ইউ! এই তুমি আমায় ভালোবাসো? এই তুমি আমায় রেসপেক্ট করো? আমার ভাবতেই ঘেন্না হচ্ছে...
- এই হোল্ড হোল্ড! পরকীয়া আর ঘেন্না একসাথে হয়না ডার্লিং!
- চুপ! একদম চুপ! ফারদার আমায় কন্ট্যাক্ট করবেনা। আমি ভুলে যাবো 'কৃষ্ণেন্দু' নামে আমি কাউকে চিনতাম!
- আরে যাও যাও, তোমার মত মেয়েদের আমার খুব চেনা আছে। আবার নতুন চার তৈরি করবে তো নতুন মাছ ধরতে?
প্রচন্ড ধিক্কারে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজগুলো ডিলিট করে কন্ট্যাক্ট-লিস্টে কৃষ্ণেন্দুর নম্বরটা ব্লক করলো পর্ণা।
গলার কাছে দলা পাকানো কষ্টটা বারবার অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে।
প্রচন্ড চিৎকারে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু উপায় নেই, বিছানায় ক্লান্ত মনীশ ঘুমোচ্ছে। উঠে পড়বে।
ফোনটা রেখে পর্ণা ব্যালকনিতে গেল।
ঘুমন্ত শহর জ্যোৎস্না মেখে মায়াময়।
কিন্তু চাঁদ'টা বড্ড একা! মাঝে মাঝে দু-একটা তারা মিটমিটিয়ে জ্বলে ওঠে,আবার নিভেও যায়।
ঠিক যেমন কৃষ্ণেন্দু!
বিয়ের আগে পর্ণা আর কৃষ্ণেন্দু বন্ধুত্ব ব্যতীত অন্যকিছু ছিল না।
মনীশ ব্যবসায়ী মানুষ। সারাদিন ব্যস্ত থাকে। বাইরেও যেতে হয়।
সময় দেওয়া নেওয়ার অভাবে বিয়ের তিন'টি বছর পরে, সম্পর্কটা একপ্রকার যান্ত্রিক হয়ে গেছে।
খুব কষ্ট পেতো পর্ণা। নিঃসঙ্গতা গিলতো প্রতিনিয়ত।
ক্রমে সোশ্যাল মিডিয়া সেই কষ্ট ভুলিয়ে দিলো।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই কৃষ্ণেন্দুর আর পর্ণার জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হলো।
কাছাকাছি না থেকেও এক অদৃশ্য সুতোর বাঁধনে দুজন আঁটকে থাকতো অষ্টপ্রহর।
কিন্তু আজ কৃষ্ণেন্দুর এমনতর আবদারের অর্থ কী?
ভার্চুয়াল জগতের এহেন অনেক খবরই পর্ণা শুনেছে এবং জেনেওছে, এর পরিণাম অনেকক্ষেত্রেই বিভিন্নপ্রকার সাইবারক্রাইম।
তাইবলে, কৃষ্ণেন্দু!
পর্ণা কৃষ্ণেন্দুকে চিনতে এতটা ভুল করলো!
নিজের ওপর ঘেন্না হচ্ছে। ছিঃ!
আর কোনোদিন, কক্ষনো কারোর কাছে নিজেকে সহজলভ্য হতে দেবে না পর্ণা।
চোয়াল শক্ত করে পর্ণা ভিতরে যায়।
---------------------------------------------------------------
ঘুম আসছেনা।
দুচোখ বুজলেই ডিপি'র হাসিমুখটা ভেসে উঠছে, মনকে ভীষণরকম পীড়া দিচ্ছে। কিন্তু সে যে নিরুপায়!
পর্ণাকে সে ভালোবাসে, নিজের থেকেও বেশি, এটা যেমন সত্যি, তেমনি পর্ণা অন্যকারোর স্ত্রী, এটাও সত্যি। স্বামীর সঙ্গে যে সম্পর্ক এতদিনে গড়ে উঠতে পারতো পর্ণার সেটা হয়তো তার জন্যই গড়ে ওঠেতে পারেনি!
কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে পর্ণার সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, উল্টে কলঙ্ক আছে। কোনোদিন জানাজানি হলে পর্ণাকেই সবাই অসম্মান করবে।
যাকে ভালোবাসা যায়, তার অপমান যে দ্বিগুণ হয়ে নিজের দিকেই ফিরে আসে!
এ'ই ভালো।
কৃষ্ণেন্দু জানে, পর্ণা এখন থেকে তাকে ঘেন্না করবে, চরম ঘেন্না। হয়তো তাকে ব্লকলিস্টেই পাঠিয়ে দেবে! কিন্তু নিজের সংসারে, স্বগরিমায় বিরাজ তো করতে পারবে তার ভালোবাসার পর্ণা!
কৃষ্ণেন্দুর কাছে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিই বা হতে পারে?
মোবাইলটা আলগোছে তুলে নেয় কৃষ্ণেন্দু।হোয়াটসঅ্যাপে যায়।
পর্ণার ডিপিটা ইমেজবিহীন। বুকটা হাহাকারে ভরে ওঠে। পর্ণা তাকে ব্লক করেছে।
ফেসবুকে যায়, খুঁজে পায়না পর্ণাকে। কৃষ্ণেন্দু বুঝলো, ওখানেও সে ব্লকড!
গ্যালারির কোণে পর্ণার বিয়ের একটা ছবি, পর্ণাই পাঠিয়েছিল কিংবা কৃষ্ণেন্দু নিজেই হয়তো ডিপি থেকে সেভ করে রেখেছিল!
পর্ণার সিঁথি রাঙিয়ে দিচ্ছে মনীশ, মাথায় টানছে লজ্জাবস্ত্র। পর্ণার বোজা চোখে পরমতৃপ্তির স্বাদ! দুই চোখ বন্ধ করে ছবিটা বুকে চেপে ধরে কৃষ্ণেন্দু।
তার ঠোঁটের কোণেও পরিতৃপ্তির হাসি।