Manik Goswami

Classics

4  

Manik Goswami

Classics

বিপর্যস্ত পৃথিবী

বিপর্যস্ত পৃথিবী

22 mins
515


বিপর্যস্ত পৃথিবী 

মানিক চন্দ্র গোস্বামী


প্রদীপ্ত আমার ছোটবেলার বন্ধু। এক পাড়াতেই বাস। একই স্কুলে পাঠ। এক বেঞ্চেই পাশাপাশি বসে কাটিয়ে দেওয়া ছাত্র জীবন। মারামারি,ঝগড়াঝাঁটি, খুনসুটি করতে করতেই শৈশব পার। একটু বড় হতেই দুজনের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। একে অন্যকে বেশিক্ষন ছেড়ে থাকা যায় না। আমাদের দুজনকে একসাথে দেখলেই লোকে বলতো, 'মানিক জোড়'। গলায় গলায় অন্তরঙ্গতা থাকলেও একটা বিষয়ে আমাদের দু'জনের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান ছিল । প্রদীপ্ত পড়াশোনায় খুব ভালো, মানে খুবই ভালো ছেলে ছিল। ক্লাসের পরীক্ষায় ও কোনোদিন দ্বিতীয় হয়নি। সেখানে আমি ছিলাম নিতান্তই ফাঁকিবাজ। আমার লক্ষ্য ছিল, কোনোভাবে পরীক্ষাগুলো উতরে যেতে হবে। ভীষণ একটা উৎসাহ ব্যঞ্জক পরীক্ষা আমি দিতে পারতাম না, আমার বিচার বুদ্ধিটা ঠিক সেইভাবে তৈরিই হয়ে ওঠেনি। প্রদীপ্তর সবচেয়ে বড় একটা ভগবান প্রদত্ত বিশেষ গুণ ছিল, যে গুণটা শুধু আমি কেন অন্য যে কোনো নামি দামি স্কুলের ভালো ভালো ছাত্রদের মধ্যেও দেখতে পাওয়া যায় না। পরীক্ষা দিতে বসে প্রশ্নপত্র হাতে পেলেই এক নম্বর প্রশ্নের থেকেই উত্তর লিখতে শুরু করে দিতো। পরপর পাঁচটি বা ছটি, যে রকম চাওয়া হতো, উত্তর লিখে তবেই থামতো। যে কোনো পাঠ্য বিষয়ের পরীক্ষা হোক না কেন, বা যত বেশি সংখ্যক প্রশ্নই দেওয়া থাক না কেন, সবেতেই প্রথম পাঁচ বা ছ'টি প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতেই হবে। ওর এই গুনের কাছে আমরা হার স্বীকার করে নিতে কোনো রকম লজ্জা বোধ করতাম না, বরং ওর এই গুনের জন্য সহপাঠী হিসেবে আমরা অত্যন্ত গর্ব ও অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতাম। ওর এই গুণটাকে আমি তখনও যেমন শ্রদ্ধা করতাম, এখনও এই প্রৌঢ় বয়সে এসেও করি।

কলেজে উঠে আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হলো। ও ভর্তি হলো শহরের এক নামকরা কলেজে, আর আমি অতি সাধারণ মানের একটাতে। তবে আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন আগের মতোই সুদৃঢ় রয়েই গেলো। পড়াশোনায় দূরত্ব বাড়লেও মনের দূরত্ব আমরা নিজেরাই বাড়তে দিই নি। কলেজের পরীক্ষাগুলোতেও অবিস্মরণীয় ফল করতে থাকলো প্রদীপ্ত। যেদিন ইউনিভার্সিটির মেডেলটা গলায় ঝুলিয়ে সমাবর্তনের অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এলো, সেদিন আমার থেকে বেশি আনন্দ আর কেউ বোধহয় কোনোদিনও পায় নি। কলেজের পড়া শেষ করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে বসে ভালো ফল করে একটা ভালো চাকুরিও জোগাড় করে নিলো। পড়াশোনাটাকে আর বেশি দূর চালিয়ে নিয়ে যেতে পারলো না হঠাৎ করে ওর বাবা মারা যাওয়াতে। ওদের সংসারে এই দুর্যোগ নেমে আসায় সংসারের হাল ধরতে ওকে চাকুরীর ব্যাবস্থাটা করতেই হলো। ভালো একটা পছন্দসই চাকুরী পেয়ে যাওয়াতে, সংসারের যে প্রচন্ড চাপটা ওর কাঁধে এসে পড়েছিল, সেখান থেকে আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতেও পারলো। কিন্তু আমাদের দেশে তো শুধু চাকুরী পেলেই সংসারের হাল ফেরানো যায় না, হাল ফেরাতে ঘরে একটা বউ আনার প্রয়োজন পড়ে যায়। বয়স্কা মায়ের সাংসারিক দায়িত্বের ভার কিছুটা লাঘব করার জন্য মায়ের অনুরোধকে আর বেশিদিন ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই দিনক্ষণ দেখে একদিন বিয়েও হয়ে গেলো। মায়ের পছন্দ করা বৌমা এলো ঘরে। মায়ের মুখের ওপর কিছু বলতে পারেনি প্রদীপ্ত, মেনে নিয়েছিল মায়ের মত এবং পছন্দকে। অবশ্য বউটিও তো দেখতে শুনতে মোটামুটি মন্দ হয় নি। তাই চোখে মুখে লাজের ভাবটা ধরে রাখলেও অবশেষে খুশি মনেই মেনে নিয়েছিল প্রদীপ্ত। একটু একটু করে ভালোবাসতেও শুরু করেছিল বউকে।

দিন পার হতে থাকে। অনেকদিন প্রদীপ্তর কোনো খোঁজ খবর পাই নি। কেমন যে আছে ছেলেটা, কে জানে। আমিও আমার সাংবাদিকতার জীবনে আবদ্ধ হয়ে যাবার পর আর সেরকম যোগাযোগ রাখতে পারছি না। তবুও মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেওয়া তো দরকার। তাই সেদিন ফোন করেই বসলাম প্রদীপ্তকে। ওর সাথে কথা বলে প্রথমেই মনে হলো ও ভীষণ কষ্টে আছে। কথা বলছে, উত্তর দিচ্ছে, তবু তারই মধ্যে মনে হচ্ছে কোথাও যেন একটা বিষাদের ছোঁয়া লেগেই আছে। মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। আমার মনে একটা খটকা লাগাতে আমি প্রদীপ্তকে বললাম,'তোর সাথে এতদিনের কথা জমে আছে। সবটুকু তো আর ফোনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। তার চেয়ে এক কাজ কর, আগামী রবিবার সময় করে আমার বাড়িতে চলে যায়। অনেকদিন পর দুজনে একটু মন খুলে কথা বলতে পারবো'। প্রথম দিকে প্রস্তাবটা মেনে না নিলেও অবশেষে আমার জোরাজুরিতে রাজি হয়ে গেলো। পরের রবিবারেই বিকেল বিকেল এসেছিলো আমার বাড়িতে। চুটিয়ে গল্প করলাম দুজনে। কথা চলাকালীন লক্ষ্য করলাম, প্রদীপ্ত মাঝে মধ্যেই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। আমাদের গল্পের বিষয় থেকে হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যাচ্ছে। ওর মা কেমন আছে, সহধর্মিনী কেমন আছে, এসব জিজ্ঞেস করতেই ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়লো। ওর কাছ থেকে এরপরে যা জানতে পারলাম, সেটা ওর জীবনের মানসিক কষ্টের উপন্যাস বলেই মনে হলো।

বিয়ের পর থেকেই ধীরে ধীরে প্রদীপ্তর মনে হতে থাকে যে ছন্দা তাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। কোনো কিছুতেই ছন্দার মনে খুশি তো দূরে থাক, আনন্দও আর আসে না। প্রদীপ্ত লক্ষ্য করতে থাকে যে তার বৌয়ের মনে কোনোরকম আসক্তিও জাগে না। বিবাহ পরবর্তী জীবনের কোনো আনন্দ বা সুখের প্রতি ছন্দার কোনো আগ্রহই নেই। রাতে কাছে তো আসেই না, আসলেও পাশ ফিরে নির্বিকার শুয়ে থাকে। লোকলজ্জার ভয়ে মাঝে মাঝে এক বিছানায় শুতে আসলেও মন থেকে এই একসাথে শোয়ার ব্যাপারটা মেনেই নিতে পারে না। প্রদীপ্ত তার মনের ইচ্ছাটাকে বাস্তব রূপ দেবার আগ্রহে ছন্দাকে অন্তরঙ্গ করার চেষ্টা করতেই, ছন্দা বালিশ বিছানা নিয়ে খাট থেকে নেমে মেঝেতে শুয়ে পড়তো। কিছুদিন এইভাবে চেষ্টা করে অসফল হওয়ার পর প্রদীপ্ত তার মনের ইচ্ছাটিকে দুহাতে পিষে মেরে ফেলতে চাইতে থাকে। ছন্দাকে বিরক্ত করার অভ্যাসটাকেও ত্যাগ করে দিলো অচিরেই। প্রদীপ্ত বুঝতে পারে, ছন্দা তাকে ভালোবাসতে চাইছে না। রাতের বেলায় এই এতটুকু সময়ই তো পায় ছন্দাকে কাছে টেনে নেবে, ইচ্ছেও জাগে একটু আদর করবার। দুজনের কাছাকাছি আসার, ঘনিষ্ঠ হবার এই তো সময়। আর এই সময়েই ছন্দার যত বিরক্তি। অনেক কথাই প্রদীপ্তর মনে হতে থাকে। তবে কি, ছন্দার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই ওর বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। না কি ছন্দার মনের মধ্যে অন্য কারোর জন্য ভালোবাসা জমা করে রাখা আছে, যে কারণে প্রদীপ্তকে ছন্দা একদম মেনে নিতেই পারছে না। না কি ছন্দার চরিত্রই এটা। ও কি আত্মকেন্দ্রিক ? নিজেকে নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকতে চায়। এমনও তো হতে পড়েছে ছন্দার মধ্যে কোনোরকম যৌন আবেদনই এখনো পর্যন্ত গড়ে ওঠে নি। জানতে পারবে কি করে, কথাই তো বলতে চায় না। বাড়ির গুরুজনদেরও সম্মান দেবার প্রয়োজন মনে করে না। রান্না করা তো দূরে থাক, রান্নার কোনো কাজেই আগ্রহটুকুও প্রকাশ করে না। সেই বৃদ্ধা মাকেই সংসারের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব নিতেই হয়েছে।

মনের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে প্রদীপ্তর। দেখতে পায় কারণে অকারণে মায়ের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করে দেয় ছন্দা। মাকে একদমই আর পছন্দ করতে পারে না। প্রদীপ্ত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে ছন্দার সমস্যাটা কি ? কি কারণে কারো সাথে মানিয়ে চলতে পারছে না। সর্বদা বিরক্তি প্রকাশ করার কারণটাও প্রদীপ্ত বুঝে উঠতে পারে না। সারাদিনই মাথার মধ্যে ঘুরপাক করতে থাকে ছন্দার এই অদ্ভুত আচরণের কথা। অফিসের কাজেও আজকাল আর একদম মনোনিবেশ করতেই পারে না। সারাদিন বিভিন্ন রকম চিন্তা মাথার মধ্যে। ছন্দার কাছে অনেকবারই জানতে চেয়েছে তার এইরকম অদ্ভুত আচরণের কারণটা কি ? জিজ্ঞেস করে,' ছন্দা, আমি কি কোনো অন্যায় করেছি ? আমি কি তোমার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছি ? তোমার যদি কিছু বলার থাকে, নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারো। কিন্তু, দোহাই তোমার, এইভাবে মানসিক এবং শারীরিকভাবে আমাকে ভেঙে চুরমার করে দিও না। আমাকে যদি মন থেকে মেনে নিতে নাই পারো, তবে সেটা সরাসরি জানিয়ে দাও। আমি তোমাকে মুক্ত করে দেব। তুমি যদি আমার থেকে আলাদা থাকতে চাও, থাকতেই পারো। টাকা পয়সার ব্যাপারে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই, তোমার ভরণপোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমিই নেবো। বৌমার আচরণে প্রদীপ্তর মা মনে মনে নিশ্চয়ই ক্ষুন্ন হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, আঘাত লেগেছে মনে। ছেলেকে একেবারে ভেঙে পড়তে দেখে, তার এই অবস্থার জন্য নিজেকেই দোষী সাব্যস্ত করে সারাক্ষণই বিমর্ষ হয়ে থাকেন। মনের মধ্যে চাপা কষ্টের ফলেই হয়তো হঠাৎ করেই তার শরীরটা খুব ভেঙে পড়লো, কয়েকদিনের মধ্যেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। সংসার চালানোটাই অসুবিধাজনক হয়ে পড়লো। ছন্দা সংসারের দায়িত্ব তো নিলোই না, বরং উঠতে বসতে রুগ্ন, শয্যাশায়ী মায়ের মুন্ডুপাত করতে লাগলো। কথার সমস্ত আগল ভেঙে দিয়ে মা'কে গালমন্দ করা থেকে শুরু করে মানসিক নির্যাতনও করতে শুরু করলো। এতবড়ো একটা ধাক্কা খাবেন, সেটা বোধহয় প্রদীপ্তর মা একেবারেই আন্দাজ করতে পারেন নি। অবশ্য নির্যাতন তিনি আর বেশিদিন সহ্য করতে পারলেন না। একদিন সংসার ও পৃথিবীর সমস্ত মায়া কাটিয়ে পরপারে যাত্রা করলেন। মায়ের মৃত্যুতে প্রদীপ্ত ভেঙে পড়লেও সংসারের কথা চিন্তা করেই ছন্দাকে দোষারোপ করার থেকে বিরতই রয়ে গেলো।

সেদিন প্রদীপ্ত একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বাড়ি ফিরছে। শরীরটা একটু খারাপ খারাপ লাগছে। হয়তো জ্বরই এসে যাবে। পাখার হওয়াটাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। শীত শীত করছে। নিশ্চয়ই খুব ঠান্ডা লেগেছে। হালকা সর্দি লেগেছে বলেও মনে হচ্ছে। মাথাটাও একটু টিস্ টিস্ করছে। হয়তো একটু বিশ্রাম নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। অফিসের বড়বাবুর কাছে ছুটির আবেদন করার সাথে সাথেই মন্জুর হয়ে গেলো। -'যাও, যাও,সোজা বাড়ি চলে যাও। বিশ্রাম নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। অবশ্য সময়টাও তো এখন ঠিক চলছে না। যা মহামারী শুরু হয়েছে চতুর্দিকে। সাবধানে থেকো। আর টেম্পারেচার টাকে একটু মনিটর করো। সময়মতো না কমলে অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে নিও'। প্রদীপ্তর অফিসের বড়বাবু টি একজন নিখাদ ভালোমানুষ। ওকে প্রচন্ড স্নেহ করেন। কাজ শেখার প্রতি ওর আগ্রহ দেখে স্বেচ্ছায় অনেক কাজ ওকে শিখিয়ে দিয়েছেন। আর বলেছেন, 'কাজ শিখতে গেলে, কাজে পারদর্শী হতে গেলে, কাজকে ভালোবাসতে হবে | আর ভালোবেসে কাজ করতে হলে সময়টাও একটু বেশি দিতে হবে | কাজ কখনও ছোট বড় হয়না, সেটা নিজের চিন্তাধারার ওপর নির্ভর করে | সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ | তোমার দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠুভাবে সেই কাজটা সম্পন্ন করা | যদি প্রথম থেকেই মনের মধ্যে গেঁথে নাও যে এই কাজটা আমার জন্য নয়, পদ অনুযায়ী এই কাজটা আমার করার কথা নয়, অন্য কাওকে দিতে পারতো | তাহলেই তোমার আর উন্নতি হলো না | তাই, কাজকে ভালোবাসতে শেখো, কাজের জন্য সময় দাও | অবশ্য এখানেও একটা সমস্যা আছে | বেশি সময় অফিসে কাটালে সংসারে অশান্তিও দেখা দিতে পারে | শুনতে হতে পারে,'সব সময় কাজ আর কাজ | অফিসের জন্য সারা জীবন দিয়ে দিচ্ছে আর আমার জন্য তার এতটুকু সময় নেই'| তাই, সেদিকটাও তোমাকে দেখতে হবে যাতে সংসারেও শান্তির বাতাবরণটা বজায় থাকে |'

ছুটি পেয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় প্রদীপ্ত | মাথার ব্যথাটা শারীরিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে | কিছুই ভালো লাগছে না | যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বাড়ি পৌঁছে চোখটা বন্ধ করে একটু বিশ্রাম নিতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে | বাস থেকে নেমে একটু জোরেই পা চালাতে থাকে প্রদীপ্ত | বাড়ির কাছাকাছি এসে রাস্তার বাঁকটা ঘুরতেই প্রদীপ্তর মনে হলো কেউ যেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করলো | প্রদীপ্তর বয়সী হবে বলেই মনে হলো | ভালো, সুঠাম চেহারা | কে হতে পারে ? ছন্দার কোনো ভাইটাই হবে মনে হয় বা পরিচিতি কেউ | কেন এসেছে এই দুপুর বেলায় | হয়তো বা কোনো সেলসম্যান হবে, প্রদীপ্ত ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না | সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একটু এগিয়ে যেতেই পাশের বাড়ির বৌদির সাথে দেখা | দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে, মুখে গোটাকয়েক পান পুরে, চিবোতে চিবোতে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে | প্রদীপ্তকে দেখে জিজ্ঞেস করে ওঠে, 'কি ঠাকুরপো, আজ এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরলে যে, কোথাও যাবার আছে, নাকি |' 'না গো বৌদি, আজ শরীরটা ঠিক লাগছে না |মাথাটা ধরেছে, একটু জ্বর জ্বর ভাবও হয়েছে | তাই ছুটি নিয়ে চলে এলাম | কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলেই মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে |' এ কথা সে কথার পর বৌদি জিজ্ঞেস করে,'ওই ছেলেটা কে গো ঠাকুরপো, প্রতিদিন দুপুরে তোমাদের ঘরে আসে |'

 -'কোন ছেলেটা গো বৌদি ?'

-'কেন, একটু আগে ওই যে ছেলেটা তোমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো | তুমি দেখতে পাওনি বুঝি ?'

-'হ্যাঁ, একজনকে ওদিকে যেতে দেখলাম বটে, তা, সে কি আমাদের বাড়িতেই এসেছিলো ?'

 -'তবে আর কি বলছি | সে তো প্রতিদিন তোমাদের বাড়িতেই আসে | কে গো ছেলেটা, তোমাদের পরিচিত কেউ ?'

-'না গো বৌদি, আমি ঠিক বলতে পারবো না | ঘরে গিয়ে ছন্দাকে জিজ্ঞেস করলেই সব জানতে পারবো | আমি তো ভেবেছিলাম সেলসম্যান বুঝি |'

 -'না, না | সেলসম্যান হতে যাবে কোন দুঃখে ? নিশ্চয়ই ছন্দার ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধু হবে | তবে যাই বলো বাপু, অপরিচিত কারো প্রতিদিন দুপুরে কারো বাড়িতে আসা, আমাদের চোখে ভালো ঠেকছে না | অনেক প্রশ্নই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে | যাই হোক, তোমার বৌটাকে মাঝে মাঝে একটু শাসন গর্জন কোরো |'

 -' আরে না না বৌদি, তুমি যা মনে করছো, আমার মনে হয় না ব্যাপারটা তেমন কোনো গুরুত্ব দেবার মতো | তাছাড়া আমি এটা ভাবতেও চাই না যে ছন্দা এরকম কোনো খারাপ কাজ করতে পারে | অনেক বড় ঘরের মেয়ে তো | চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে নোংরামির কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না |'

-'যাক, ভালো হলেই ভালো | আমাদের আবার কুচুটে মন তো, তাই নোংরা দিকটাই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে সবার আগে |'

বাড়ির দিকে পা বাড়ায় প্রদীপ্ত | মনের মধ্যে এই ব্যাপারটা কিন্তু বড্ড খচখচ করছে | প্রতিবেশী বৌদি ঘরের বৌয়ের ব্যাপারে যে ধরণের চিন্তাই করে থাকুক না কেন, প্রদীপ্ত কোনোমতেই ঘরের বৌকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করতে পারে না | তবুও... মানুষের মন তো,সন্দেহ যখন একবার মনের মধ্যে ঢুকেই পড়েছে,তখন ব্যাপারটার সত্যতা তো যাচাই করে দেখতেই হবে |

প্রদীপ্তকে অসময়ে ঘরে ফিরতে দেখে ছন্দা একটু চমকে উঠেছে বলেই মনে হলো | মুখে সেটা প্রকাশ না করলেও অবাক হয়ে যাওয়া চেহারাটা স্পষ্ট ধরা পড়লো | নিজের অভিব্যক্তিকে সামলে নিয়েই ছন্দা প্রশ্ন করলো,'কি হলো, আজ এরকম অসময়ে' | শরীর খারাপ লাগার কথাটা প্রদীপ্ত বলতেই ছন্দা বলে ওঠে,'তা, একটা ফোন করে আসতে হয় তো | কোনো কোনো দিন দুপুর বেলায় আমি শপিং এ যাই তো | আজ যাইনি, তাই ঘরেই পেয়ে গেলে | না হলে তোমাকে তো আমার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো ছবিটার জন্য | যাক, কিছু খাবে না খেয়ে এসেছো' ?

-‘না না, ব্যস্ত হতে হবে না, আমি খেয়েই বেরিয়েছি | বরং, তুমি এখনও না খেয়ে থাকলে, খেয়ে নাও | আমি একটু বিশ্রাম নেবো'|

পরদিন দুপুরবেলায় অফিস থেকেই একবার ফোন করলো ছন্দাকে | অনেক্ষন রিং হয়ে যাবার পর ফোনটা কেটে দিয়ে আবার ফোন করলো প্রদীপ্ত | অনেক্ষন পর ফোনটা অবশেষে ওঠালো ছন্দা | একটু কথা বলতেই ছন্দার কথার মধ্যে বিরক্তির ভাব লক্ষ্য করে প্রদীপ্ত | ছন্দা বলে, 'আজ আবার ফোন করলে কেন ? আমি একটু শপিংয়ে বেরোচ্ছিলাম, দিলে তো আটকে'| প্রদীপ্ত উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,'কোথায় ? কোন মলে যাচ্ছ শপিং করতে'? ছন্দা একটু থতমত খেয়ে একটা নাম বলতেই প্রদীপ্ত বলে ওঠে,'আরে বাঃ, শপিং কমপ্লেক্সটা তো আমার অফিসের একদম কাছেই | একটা কাজ করো, তুমি শপিং করতে থাকো, আমি একটু পরে অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা মলেই চলে এসব | তারপর দুজনে একসাথে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরবো'|

- 'আরে না না | তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না | আমি একা একা পথ চলতে জানি | ঘরে ঠিক ফিরতে পারবো'| 

 -'আমি সে কথা বলছি না | দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরতে পারবো বলেই বলছি | পথে কোনো এক রেস্টুরেন্টে দু'জনে সন্ধ্যের চা-কফিটা খেয়েই না হয় বাড়ি ফিরবো' |                    

 -'কোনো দরকার নেই | আমি একাই সব করতে পারি', বলে দুম করে ফোনটা কেটে দিলো ছন্দা | মনের মধ্যে একটা বিরাট ধাক্কা অনুভব করলো প্রদীপ্ত | ছন্দা এরকম ব্যবহার করছে কেন ? অযথা বিরক্তি প্রকাশ করছে | ছন্দার কি এ সংসারে আর মন বসছে না ? বিয়ে তো হয়েছে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলো | তার ওপর মা'ও তো আর নেই |সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তো এখন ছন্দারই হাতে | এখনও কেন সংসারে মন লাগাতে পারছে না ছন্দা, বুঝে উঠতে পারছে না প্রদীপ্ত | কিছুটা অবশ্য এখন আন্দাজ করতে পারে | যে ছেলেটা প্রতিদিন দুপুরে, প্রদীপ্ত অফিসে থাকাকালীন ছন্দার সাথে দেখা করতে আসে, কোনোভাবে ছন্দা তার সাথে কোনো পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পরে নি তো ? বুকের ভেতর একটা কষ্ট মোচড় দিয়ে কুন্ডলি পাকিয়ে গলায় আটকে গেছে বলে মনে হতে থাকে প্রদীপ্তর | রাগও যে একদম হচ্ছে না তাও তো জোর দিয়ে বলতে পারছে না | অবশ্য রাগ হলেই বা কি আর করতে পারে |বড়জোর ছন্দার ওপর অভিমান দেখাতে পারে, বা রুষ্ট হয়ে এ বিষয়ে দু'তো কটু কথা ছন্দাকে শুনিয়েও দিতে পারে | কিন্তু সত্যিই কি তাতে ছন্দার কিছু যাবে আসবে ? সে আবার উল্টে ড'তো বাজে কথা শুনিয়ে দেবে নিশ্চয়ই | খারাপ কথা বললে প্রদীপ্ত কিছুতেই সেটা মানে নিতে পারবে না | অযথা সংসারে অশান্তি দেখা দিতে পারে | দু'পা পিছিয়ে আসে প্রদীপ্ত | নিজের আর সংসারের মান সম্মান বাঁচিয়ে রেখে চলতে গেলে ছন্দাকে কোনোরকম দোষারোপ করা ঠিক উচিত হবে না | সুতরাং হাত-পা বাঁধা | তাই চুপ করে থাকায় শ্রেয় | শত্রুর তো অভাব নেই দেশে | কে যে কখন কিভাবে মানসিক ধাক্কা দেবে, বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে | সাতপাঁচ ভেবেও কি করা উচিত হবে ঠিক করতে না পেরে নিজের কাজে মন দেয় প্রদীপ্ত | সংসারের সামান্য মন ভারী করা কথাগুলো চিন্তা করে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না | এর ফলে অফিসের কাজে গন্ডগোল হয়ে গেলে সে আর এক অশান্তি | নিজের সুনাম নষ্ট তো হবেই, অফিসেরও অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বা কোনোরকম অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে | সুতরাং সংসারের মালিন্যের চিন্তাটা আপাততঃ বন্ধ রেখে দেওয়া যাক | ডেস্ক টপে অসমাপ্ত কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য পুরোপুরি মনোনিবেশ করে প্রদীপ্ত |

বাড়ি ফিরে ছন্দার মুখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না প্রদীপ্ত | সেই দুপুর থেকেই কি এই রকম মুখ গোমড়া করে বসে আছে নাকি ? শপিংয়ে কি যায়নি ? না কি আজ দুপুরেও সেই ছেলেটা আবার এসেছিলো ? নাঃ, এবার এর একটা বিহিত করতেই হবে | মনে দুশ্চিন্তা, তবু শান্ত ভাবেই ছন্দাকে জিজ্ঞেস করে,'কি গো, কি শপিং করলে আজ ? দেখাও, একটু দেখি' | ঘন কালো মেঘের আড়াল থেকে বজ্রপাতের মতোই আওয়াজ শুনতে পেলো প্রদীপ্ত |

 -'যে ভাবে শপিংয়ে যাওয়া নিয়ে আমায় কটাক্ষ করলে, তারপরে আর কি কেউ সেখানে যাবার সাহস করতে পারে' ?

 -'কেন, আমি আবার কি কটাক্ষ করলাম? আমি তো বলেছিলাম অফিস থেকে ফেরার সময় তোমাকে সঙ্গে নিয়ে আমি বাড়ি ফিরবো | এতে কটাক্ষের কি দেখলে ? আর তো কিছু আমি বলেছি বলে মনে পড়ছে না' |

 - 'এই সামান্য কথাতেই আমার শপিংয়ে যাওয়া নিয়ে তুমি প্রশ্ন তুলেছো | তুমি দেখতে চেয়েছো শপিংয়ের নাম করে আমি অন্য কোথাও গেছি কি না | আমাকে সন্দেহ করেছো | আমার মনে তুমি গভীর আঘাত করেছো | এই রকম সন্দেহ প্রবন লোকের সাথে আর ঘর করা যাবে কি না সেটা আমাকে এবার ভেবে দেখতে হবে' |

 -'এই সামান্য কথাতেই তুমি আঘাত পেয়েছো? তোমার শপিংয়ের ইচ্ছেটাই আমি নষ্ট করে দিয়েছি ? আর ঘর করা যাবে কি না, সে ব্যাপারেও তোমার মনের ইচ্ছেটা তুমি জানিয়ে দিলে | কি আর বলবো বলো | শুধু বলবো, একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে সংসারের দিকে মন দাও | ছোটোখাটো কথা বা ঘটনাকে মনের মধ্যে স্থায়ী জায়গা না দিয়ে একটু সহজ হবার চেষ্টা করো | অশান্তি সংসারকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে চলে | নিজের বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে তাকে সঠিক পথের দিশা দেখাও' |

 -'এতো কথা বলে প্রমান করতে চাইছো যে আমিই ভুল করেছি | ঠিক আছে, ভুল যখন আমারই, আমিই তার প্রায়শ্চিত্ত্ব করবো', বলে রগে গজগজ করতে করতে ছন্দা ঘর থেকে জোর পায়ে বেরিয়ে গেলো |


                                  (২)


সেদিন রাতে অফিসের কাজে অনিচ্ছাকৃত একটা ভুল হয়ে যাওয়ার জন্য ঘরে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেলো প্রদীপ্তর | ভুলটা সংশোধন না করে ফিরতে পারা যায় না | দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকার এই একটা অসুবিধা | যত রাতই হোক না কেন, সবকিছু যতক্ষণ পর্যন্ত ঠিক করতে না পারছো, দায়িত্ব তুমি ঝেড়ে ফেলতে পারো না | এমন একটা ভুল সে করে বসেছে যে সেটা যদি সংশোধন না করে ঘরে চলে যায়, তবে সে ভুলের ফাঁক ফোকর দিয়ে অনেকেই কোম্পানির অনেক বড় ক্ষতি করে দিতে পারে | তাই রাত হয়ে গেলেও প্রদীপ্ত চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারে নি | ঘরে ফেরার পর থেকেই অশান্তির ঝড় বইতে শুরু করে দিলো | -'কাজে আটকে গেছিলে ? কি এমন কাজ যে সময়ে শেষ করতে পারোনি, আটকে থাকতে হয়েছিল ? ছটার সময় তো অফিস ছুটি হয়ে যায় | কে ছিল তোমার জন্য যে রাত এগারোটা পর্যন্ত অফিসের দরজা খুলে বসে রয়েছিল ? আমার কাছে কিছু লুকোনোর চেষ্টা করো না | কোথায় গেছিলে ? কে ছিল সাথে ? বেলেল্লাপনা করার সময় কি একটিবারের জন্যও মনে পরে নি যে ঘরে বৌ আছে ? বয়স যত বাড়ছে, ভীমরতি ধরছে | মনের মাঝে ফল্গুধারা বইছে | নিশ্চয়ই কোনো মনভোলানো নারীর সংস্পর্শে এসেছো, তাই সময়ের জ্ঞানটাও হারিয়ে ফেলেছো' |

চুপ করে শুনছে প্রদীপ্ত | জানে, এখানে কোনো রকম প্রতিবাদ করতে গেলেই শুরু হয়ে যাবে তুমুল অশান্তি আর অশ্রাব্য কথার বাণে বিদ্ধ হতে হবে প্রদীপ্তকে | কিন্তু চুপ করে থাকলেই কি আর সব কিছু শান্ত হয়ে যায় ? শ্রবণ অযোগ্য বাক্যের বাণে বিধ্বস্ত হয়ে পরে প্রদীপ্ত | একেই তো সারাদিনে এতটা কাজের ধকল সহ্য করতে হয়েছে, এমনিতেই ক্লান্তি এসে গেছে শরীরে | সারাদিনে খাওয়া দাওয়া বলতে গেলে হয়নি কিছুই | তার ওপর অবিরাম বাক্য বর্ষণ | সহ্য করা যাচ্ছে না আর | তবুও সতর্ক থাকতে হচ্ছে | রাগ দেখিয়ে বেফাঁস কিছু বলে ফেললেই তুলকালাম বেঁধে যাবে | তার চেয়ে চুপ করে থাকাটাই মঙ্গলের | একতরফা যা বর্ষণ হচ্ছে হোক, একসময় ঠিক শান্ত হয়ে যাবে | এক গ্লাস জল খেয়ে শুয়ে পড়ার জন্য এক পা এগোতেই আবার শুরু হয়ে যায় বাক্যবাণের ফুলঝুরি | -'সারা সন্ধ্যে ঠাঁই পায়ে দাঁড়িয়ে এই যে একগুচ্ছ পিন্ডি রান্না করলাম সে কি শুধু আমার গেলার জন্য ? না খেয়েই বাবু চলছেন শুয়ে পড়তে | জিনিস নষ্ট করাটা না হয় ছেড়েই দিলাম, আমার খাটুনির কি কোনো দাম নেই ? শুয়ে পড়লেই হলো ? পিন্ডিগুলো গিলে তবেই শুতে যাবে | জিনিস নষ্ট করা আমি একদম বরদাস্ত করতে পারবো না, এই আমি বলে দিলাম’ |

মাথাটা দপদপ করলেও অগত্যা প্রদীপ্ত চুপ করে খাবার টেবিলের চেয়ারে এসে বসে | মুখ বুঝে কিছু খেয়ে নিয়ে উঠে পড়ে | শুয়ে পড়লে হয়তো মাথার দপদপানিটা একটু কমবে |

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রদীপ্ত দেখে ঘর ফাঁকা। ছন্দার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। সদর দরোজার ছিটকিনিটা খোলা। দরজাটা ভেজানো রয়েছে। ঘরের আলমারির লকটাও খোলা। ভেতরের জিনিসপত্র সব ঠিকঠাক আছে কি না তারও তো কোনো হদিশ দিতে পারবে না প্রদীপ্ত। ও জানেই না আলমারিতে কি কি জিনিস রাখা থাকতো। আর গেলেই বা প্রদীপ্ত কি করতে পারে ? ছন্দার জিনিস। নিয়ে গেলে ওর জিনিসই নিয়ে গেছে। এসব নিয়ে আর মাথা ঘামায় না প্রদীপ্ত। কিন্তু এই সাত সকালে ছন্দা গেলো কোথায় ? আনমনেই এঘর ওঘর করতে থাকে প্রদীপ্ত। যাক যে, হয়তো বা কোনো কাজে বেরিয়েছে। হয়তো বা পুজোর জন্য ফুল- মালা কিনতে বেরিয়েছে। দাঁত ব্রাশ করে চোখ মুখটা তো একটু ধুয়ে নেওয়া যাক, বলে প্রদীপ্ত এগিয়ে যায় ওয়াশ বেসিনের দিকে। বেসিনের একপাশে এটা কি পড়ে আছে ? একটা কাগজ। এখানে এই কাগজটা কোথা থেকে এলো ? প্রদীপ্ত মনে করার চেষ্টা করে,কাল রাতে অফিস থেকে ফিরে কোনো দরকারি কাগজ এখানে ফেলে রাখে নি তো ? কাগজটা হাতে নিয়ে প্রদীপ্ত একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করে। না, এটা তো একটা চিঠি মনে হচ্ছে। আগ্রহ বশে চিঠিটা খুলে পড়বার চেষ্টা করে প্রদীপ্ত। ছন্দার লেখা চিঠি। কি লিখেছে ? ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই অকর্মন্য, সেকেলে, বোকা ছেলেটার সাথে আর সংসার করা যায় না। ছন্দার মনে ভালোবাসার যে ছবিটি আঁকা হয়ে রয়েছে,আধুনিক এই যুগে তার ধারে কাছেও আস্তে পারে না প্রদীপ্ত। এই রকম একটা ছেলের সাথে সংসার করতে করতে সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রদীপ্তকে কিছুতেই মনের কোনো কোণেই জায়গা দিতে পারছে না। তাই, এইভাবে পরাধীন হয়ে থাকার কোনো প্রশ্নই আর ওঠে না। স্বাধীনচেতা হয়েই জীবনটাকে উপলব্ধি করতে চায়। সে কারণেই চলে যাচ্ছে সে। আর কোনোদিন ফিরে আসার কথাও চিন্তায় আনবে না। পরে কোনো একদিন ডিভোর্স পেপারে সই করার জন্য পেপারটা পাঠিয়ে দেবে। সমস্ত সম্পর্কই ছিন্ন করে চলে যাচ্ছে সে।

প্রদীপ্তের ফোনে সমস্ত ব্যাপারটা জানতে পেরে আমি এলাম ওর বাড়িতে। অনেক দিন পর দেখা হওয়াতে এই বিষন্ন আবহাওয়ার মধ্যেও অনেক অনেক পুরোনো কথাও উঠে আসলো। প্রদীপ্তকে কিছু পরামর্শ দিলাম। বললাম, ছন্দা যদি নিতান্তই আর ফিরতে না চায়, আর প্রদীপ্তও যদি মন থেকে ছন্দাকে আর মেনে নিতে না পারে, তবে ডিভোর্স পেপারটা পাঠালেই প্রদীপ্ত যেন সেটাতে সই করে দিতে দ্বিধা না করে। বললাম, একদম এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে যেন নিজের শরীরটাকে নষ্ট না করে। ডিভোর্স পেপারটাতে সই হয়ে গেলে আমরা বন্ধুরা মিলে একটা ভালো মেয়ে দেখে প্রদীপ্তর আবার একটা বিয়ে দিয়ে দেব।

-'আবার বিয়ে ? অসম্ভব। নেড়া বেলতলায় একবারই যায়। আর আমি বিয়ে করবো না' - জোর গলায় বলে উঠলো প্রদীপ্ত। ওকে বোঝালাম। 'এই অল্প বয়স থেকে সারাটা জীবন একা একা কাটানো যায় না। একজন মনের মানুষের দরকার পড়েই। আর তাছাড়া,এবার তো মেয়ে আমরা বন্ধুরা পছন্দ করে দেব। সুন্দর চরিত্রের দেখে শুনেই দেব। নিশ্চয়ই ভালো হবে। এবার সুন্দর ভাবেই সংসার করতে পারবি'। প্রদীপ্ত চুপ করে থাকে। 

নতুন সংসার পাতার চিন্তাধারাটা প্রদীপ্তর মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছি, মনের মধ্যে এই ধারণা নিয়ে সেদিন ফিরে এসেছিলাম। তারপর অনেকদিন কেটে গেছে, প্রদীপ্তর সাথে দেখা করার সময়, সুযোগ করে উঠতে পারিনি। প্রদীপ্তও আসে নি আমার সাথে দেখা করতে। অবশ্য তাতে আমি কিছু মনে করি না। আমি বুঝতে পারি, প্রদীপ্ত এখন যে রকম মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, সেই অবস্থা থেকে সহজেই বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা ওর পক্ষে অত সহজ নয়। একটা স্বার্থান্বেষী মেয়ের জন্য অনেক সময় লাগবে স্বাভাবিক হতে। বেশ কয়েকবার ফোনে প্রদীপ্তকে না পেয়ে আমিই একদিন আবার এলাম প্রদীপ্তর সাথে দেখা করতে। প্রদীপ্ত কে দেখে রীতিমতো চমকে উঠলাম। সেই সুন্দর, সুঠাম চেহারা একেবারে ভেঙে গেছে। চোখ দুটো কোটরে ঢুকে গেছে। উস্কো খুস্কো চুল। একমুখ দাড়ি। চেহারায় লালিত্য বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সেই মেধাবী প্রদীপ্তর চোখেমুখে সব হারানোর ছবি, বেদনা ক্লিষ্ট চেহারা।

 -'কি দুর্দশা করেছিস চেহারাটার। তুই না পুরুষ মানুষ। তাছাড়া, তুই যেরকম ছেলে, এতো সহজেই কিভাবে ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারলি ? তোর অভিধানে ব্যর্থতা বলে কোনো শব্দ থাকতে পারে না। স্কুল জীবনের কথাগুলো একবার মনে কর। 'হবে না, পারবো না,' বলে কোনো কিছুই তোর মনের মধ্যে জায়গা পেতো না। এখন হঠাৎ কি হলো ? একটা স্বার্থান্বেষী মেয়ের জন্য নিজের জীবনটাকে তুই শেষ করে দিবি ? এইভাবে চললে আর কদিনই বা বাঁচবি ?একটা মেধা এইভাবে সংসারের প্যাঁচকলে পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে না। আমি অন্ততঃ নষ্ট হতে দিতে পারবো না। আমি মেয়ে দেখছি, প্লিজ, না বলিস না। ডিভোর্স পেপারে যখন সই করেই দিয়েছিস তখন আর এইভাবে জেদ ধরে বসে থাকিস না। অনেক সময় রয়েছে, জীবনটাকে এবার সুন্দর করে গুছিয়ে নে'।

-'কেন তুই আবার আমাকে ফাঁসিকাঠে গলাটা এগিয়ে দিতে বলছিস ? আমার জীবনে শান্তি বলে তো কোনো বিষয় বস্তুই আর অবশিষ্ট নেই। শুধু শুধু আরো অশান্তি টেনে আনার কোনো মানে হয় না'।

-'আমি তোর কোনো ওজর আপত্তি আর শুনবো না। আমি যেটা ঠিক বলে মনে করছি সেটাই হবে। ভালো মেয়ে দেখে তোর বিয়ে দেবই। তোর কোনো কথাই আর মানছি না। তুই তো এমনিতেই মরবি। চেহারার যা হাল করেছিস, এইভাবে চলতে থাকলে আর বেশিদিন তোর আয়ু নেই। নতুন সংসারে ঢুকলেও তুই বলছিস আবার তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবি। আমি বলি কি, তবুও তুই সেই চেষ্টাটা করেই দেখনা। তাতে যদি আরো দুটো দিন বেশি বাঁচতে পারিস'। 

                                          (৩)

প্রদীপ্ত তার নতুন সংসার পেয়ে খুশি। বউটা দেখতে শুনতে যেমন ভালো হয়েছে, স্বভাবটাও তেমনি খুব চমৎকার। নম্র, ভদ্র, সুন্দর আচার ব্যবহার। শিক্ষিত তো বটেই, তবে পুঁথিগত বিদ্যায় গর্ববোধ করে না। মানুষের ব্যবহারই তার আসল শিক্ষা - এই ধারণাই নিজের মনে পোষণ করে মণিদীপা। এতদিনে প্রদীপ্ত একটু শান্তি খুঁজে পেয়েছে। এবার নিশ্চয়ই সে তার মেধার প্রতিফলন দেখাতে পারবে নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে। তার নিজের চেহারাতেও একটু রঙ ধরেছে। আসলে, মন প্রফুল্ল থাকলে তার প্রকাশ পাওয়া যায় চেহারাতে। আর এখন নেই সেই কথার কচকচানি, মন খারাপের পালা। নিজের কাজে নিমগ্ন হয়ে যাবার অনেক সময় এখন পাওয়া যাচ্ছে। মণিদীপা তো ভীষণ গুণী মেয়ে। বড় অফিসের উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত। মণিদীপা বৈজ্ঞানিক। অনেক দায়িত্ব তার। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজকর্ম করতে হয় তাকে। একটু ভুলচুক হয়ে গেলে পুরো কাজটাই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মন, মেজাজ সর্বদা শান্ত রাখার চেষ্টাটাই করে। অযথা যাতে উত্তেজিত না হয়ে পড়ে, জোরে কথা বলে না ফেলে সেইভাবেই নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করে যায়। প্রদীপ্তও চেষ্টা করে মণিদীপাকে খুশি রাখবার। সে বোঝে, মন খুশি তো জগৎ খুশি। সব কাজই সুষ্ঠুভাবে শেষ করা যায়।

সংসারের সমস্ত দায়িত্বই এখন দুজন কাজের লোকের ওপর। একজন রান্নাবান্না, অর্থাৎ খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা সামলাচ্ছে, অপরজন ঘর দুয়ার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিয়োজিত। সপ্তাহান্তে শনি ও রবিবার প্রদীপ্ত ও মণিদীপা, দুজনেরই অফিস ছুটি। এই দুটো দিন দুজনে দুজনকে আপন করে পায়। গল্প গুজব করে, সংসার কিভাবে আরও উন্নততর প্রক্রিয়ার মাধ্যমের সুন্দর করে গড়ে তোলা যায় সেই আলোচনা করে, ইনভেস্টমেন্ট, ফান্ড, ভবিষ্যৎ, সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে করতেই কখন পার হয়ে যায় ছুটির সুন্দর দুটি দিন। কখনো কখনো এদিক ওদিক ঘুরতে যাওয়া, মাঝে মধ্যে সিনেমা দেখা, কখনো গঙ্গার তীরে বসে হাওয়া খেয়ে আসা, এই ধরণের কাজের মাধ্যমেই খুঁজে পেতে চায় মনের প্রশান্তি। আবার তো নতুন সপ্তাহ শুরু হওয়া মানেই কাজের মধ্যে নিজেদের নিমজ্জিত করে দেওয়া। সেই সময় কেউ কারো খোঁজ খবর রাখার সামান্যতম সুযোগটুকুও পেয়ে ওঠে না। শরীর ঠিকমতো চললে সব ঠিক। একে অন্যের খোঁজ খবর রাখার কোনো অবকাশই নেই সপ্তাহের এই পাঁচটা কাজের দিনে। ওদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু করে প্রদীপ্ত। সাহস করে মণিদীপাকে জানিয়েও দেয় তার মনের কথা। আধশোয়া অবস্থায় প্রদীপ্তর মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে মণিদীপা বলে ওঠে,'আর ক'টা দিন সবুর করতো বাবুমশাই, অফিসে আমার এখন কাজের ভীষণ চাপ। নতুন একটা প্রজেক্ট এসেছে। সময় দিয়েছে মাত্র এক বছর। এই এক বছরের মধ্যেই সমস্ত রকম টেস্টিংয়ের কাজ গুলো শেষ করে, রিপোর্ট তৈরী করে, জমা দিতে হবে। এতগুলো টেস্টিং নিয়ে এই ধরণের কাজের জন্য এক বছর খুবই কম সময়। কিন্তু, কি আর করা যাবে। অফিসের ডিরেক্টর যেখানে নিজেই এই প্রজেক্টের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন তখন আমাদের মতো সাধারণকে তার আজ্ঞা পালন করতেই হবে। সময়মতো কাজগুলো শেষ করতে পারলেই না দেশে-বিদেশে অফিস তথা ডিরেক্টরের নাম উজ্জ্বল হবে। আমার নামও লোকজন জানতে পারবে। গ্লোবাল ফিল্ডে একটা পরিচিতি হবে। সুতরাং বাবুমশাই, এই একটা বছর একেবারে চুপ হয়ে থাকো। অত্যুৎসাহী হয়ে ওঠার কোনো কারণই এখন আর অবশিষ্ট নেই। চুপ করে যায় প্রদীপ্ত। মণিদীপাকে কাছে টেনে নিয়ে নিবিড় হওয়ার চেষ্টা করে। বলে ওঠে, 'সবই আমার কপাল। বুঝলে দীপা। ভগবানও চায় না যে আমার কোনো ইচ্ছে পূরণ হোক'। 

মণিদীপার শরীরটা একটু খারাপ হয়েছে। জ্বর হয়েছে মনে হচ্ছে। গায়ে, হাতে, পায়ে অসম্ভব রকমের একটা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। অফিসের কাজের চাপটা এখন আবার এতো বেশি হচ্ছে যে, নিজেকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার কোনো অবকাশই সে এখন পাচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত প্রজেক্টটা সুষ্ঠুভাবে শেষ না হচ্ছে, রিপোর্টটা জমা না পড়ছে, ততদিন অন্যকিছু ভাববার সময়ই পাওয়া যাবে না। রাত্রে ভালো ঘুম না হওয়ার কারণেই হয়তো জ্বরটা আসছে, গা গরম হচ্ছে। ঠিকমতো ঘুমটা হলেই নিশ্চয় শরীর ঠিক লাগতে শুরু করবে।

দু তিন দিন হয়ে গেলো, জ্বরটা এখনও লেগে রয়েছে। অরুচিটাও বেড়েছে। ঘরে যা ওষুধ পত্তর ছিল তা খেয়েও জ্বর কমে নি। এবার তো ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে। ঠান্ডাটা বেশ ভালো রকমই লাগিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য এই জ্বর গায়েই মণিদীপা সংসারের কাজকর্মগুলো ঠিকমতো দেখে শুনে নিচ্ছে। প্রদীপ্তকে ঠিক সময়মতো খাবারটা এগিয়ে দিলেও নিজে কিন্তু কিছুই খেতে চাইছে না। প্রদীপ্ত লক্ষ্য করেছে, মণিদীপা কিছুই খেতে চাইছে না। এইভাবে তো চলতে পারে না। পাড়ারই একজন ডাক্তারকে দেখাতে নিয়ে যায় মণিদীপাকে। অনেক্ষন দেখে ডাক্তারবাবু বেশ কিছু টেস্ট করানোর জন্য লিখে দিলেন। ওষুধ লিখে দিয়েছেন বেশ কিছু। সময় অনুযায়ী ওষুধগুলি ঠিকঠাক খেতে বলে দিয়েছেন।

টেস্ট রিপোর্টগুলো হাতে নিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন ডাক্তারবাবু। একটু গম্ভীর হয়েই বললেন,' এই ওষুধগুলো খেয়ে জ্বর না নামলে, গায়ের ব্যথা না কমলে, মণিদীপাকে যেন হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় প্রদীপ্ত। একজন বড় ডাক্তারের নাম লিখে দিলেন। তাকে একবার দেখিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দিলেন।

আজ প্রায় দু'মাস হয়ে গেছে, মণিদীপার চিকিৎসা চলছে শহরের এক বড় হাসপাতালে। সপ্তাহে দুদিন করে কেমোথেরাপি করাতে হচ্ছে। এত সুন্দর মাথার চুলগুলো সব ঝরে গেছে। চেহারা একেবারে ভেঙে গিয়েছে। শরীরের লাবণ্য বলে আর কিছু নেই। চোখ কোটরে বসে গেছে। রক্তে লোহিত কণিকা বারে বারে নেমে যাচ্ছে। ফলে মাঝে মাঝেই ব্লাড পুশ করতে হচ্ছে। শরীরে ব্যথা কিন্তু কিছুতেই কমছে না।

আর মাস ছয়েক বেঁচে ছিল মণিদীপা। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ভুল প্রমান করে, সংসারের অন্ধকূপে প্রদীপ্তকে হতাশার গহ্বরে নিক্ষেপ করে দিয়ে, প্রদীপ্তর চোখে সুখ ও স্বপ্নের তারার টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে দিয়েই, ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের অতলে নিমজ্জিত করে দিয়ে, হারিয়ে গেলো মণিদীপা। মনের মধ্যে জেগে ওঠা একরাশ আশার বাস্তবায়িত রূপ দেখতে না পাওয়ার হতাশায় পাগল হয়ে গেলো প্রদীপ্ত। বদ্ধ উন্মাদ। আমরা হেরে গেলাম।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics