Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Inspirational Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Inspirational Others

বিমাতা

বিমাতা

5 mins
173


আজ অগ্নির মনটা ভালো লাগছে না, যখন থেকে ঐ কথাটা কানে এসেছে ও একটা কেমন ঘোরের মধ্যে রয়েছে।বাবা আবার বিয়ে করবে শুনে অগ্নি একেবারে আকাশ থেকে পড়েছিল । অগ্নির এখন ক্লাস ইলেভেন। একদম বাচ্চা তো নয়, বোঝে সব সংসারের অনেক কিছুই । যখন ওর নিজের বাবা আর মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তখন ও সবে ক্লাস থ্রীতে পড়ে । মা কে বেশ মনে পড়ে ওর । শেষের কয়েক বছর উনি আর কোন যোগাযোগ রাখেন না।তার আগে অবধি মাসে একবার লুকিয়ে দেখা করে যেত ওর সাথে। এমনকি ওর কাস্টডি নিয়ে মা আর বাবার মধ্যে মামলাও হয়।মামলায় বাবা জিতেছিলেন।অগ্নির বাবা অরণি একজন রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার।একা হাতেই মানুষ করেছেন অগ্নিকে। আসলে বাবা যেহেতু রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তাই তার ছিল বদলির চাকরি - ফলে সংসারে যথেষ্ট সময় দিতে পারতেন না। যে কারণে বাড়ি আসলেই মায়ের সাথে ঝগড়া আর মায়ের লুকানো কান্না। এটাই বেশীর ভাগ স্মৃতি। এরমধ্যে হয়ত নিজের একাকীত্ব কাটাতে মায়ের বর্তমান স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠতা আর একদিন সব মায়া কাটিয়ে গৃহত্যাগ। পরে অবশ্য আইন মোতাবেক বিচ্ছেদ হয়েছে - তারপর থেকেই অগ্নির বাবা অরণি তার বাবা ও মা দুই। কিন্তু এখন আবার বিয়ে কেন এই বয়সে!শরীর? এখনও চাই? গা টা রাগে রি রি করে ওঠে অগ্নির।


অগ্নিকে বাবা বললেন,তুমি তো এখন বড় হয়েছ,আর এক বছর বাদে তুমি সাবালক হবে, তাই তোমায় সব খুলেই বলি, তোমার মা-র সাথে আমার দেখে শুনে বিয়ে হয়। বিয়ের প্রথম ছয় সাত বছর সব কিছু খুব ভালোই চলল, তুমি এলে। তার পর সব যেন কেমন বদলে যেতে লাগল।জানতে পারলাম তোমার মা একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছেন।দু - এক বছর পর, অশান্তি যখন চরমে, আমি আত্মসন্মানকেই বেছেছিলাম নিজের জন্য।


তারপরের সবটা তুমি জান।


এখন আমার জীবনে একজন এসেছেন, তার নাম স্বাগতা মিত্র ।তিনিও আমার সাথে রেলওয়েতেই চাকরী করেন। একটি ওয়ার্কশপে আমাদের আলাপ হয়। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব।উনি বিধবা ।বিয়ের কিছু বছর পর ওনার স্বামী মারা যান এক জটিল রোগ ক্যান্সারে । ওনার কোন সন্তান নেই। এতদিন আমরা দুজনেই আর বিয়ের কথা ভাবিনি। এখন মনে হচ্ছে আমরা এক সাথে ভালো থাকব, তাই এই সিদ্ধান্ত।পাশে একটা বন্ধু থাকা তো দরকার শেষ জীবনে।


সবটা বলে থামলেন অরণি । তীব্র চোখ তুলে তাকাল অগ্নি ।এমনিতে ও খুব কম কথা বলে, শান্ত আর অন্তর্মুখী। শুধু বলল, "বাঃ নিজেরা ভালো থাকবে এটাই ভাবলে? আর আমি? আমায় লোকে বলবেনা? "


অরণি আর কিছু বললেন না ছেলেকে।অগ্নি সমর্থন বা আপত্তি দুটোর কোনটাই করলনা।বিয়েটা ওনাদের হল। বিয়ে মানে ওই কোর্ট ম্যারেজ আর কি।বিয়ের পর স্বাগতা চলে এলেন অরণির বাড়িতে। অগ্নি কিন্তু এখানেও আর প্রতিবাদ করল না। এল। ও জানে ও নাবালক। আর একটা বছর চোখ কান বুজে সব সহ্য করবে ও। তবে ও আর একটাও কথা বলেনা সেদিনের পর থেকে।


বাবা অগ্নিকে বাবু বলে ডাকতেন। স্বাগতা ওকে বাবু বলে ডাকতেই, কঠিন এবং কাটা কাটা ভাবে বলল,আমাকে দয়া করে অগ্নি বলবেন,বাবু নামটা আমি বাইরের কারো মুখে শুনতে অভ্যস্ত নই।স্বাগতার মুখটা একটু কালো হয়ে গেলেও সামলে নিলেন। অরণি ওকে বকাবকি করতে যেতেই স্বাগতা বারণ করলেন, বললেন ওর এই প্রতিক্রিয়াটা খুব স্বাভাবিক।ওর বয়েসটা দেখ। আমাদের ওকে অনেকটা সময় দেয়া দরকার।


ছুতোয় নাতায় স্বাগতাকে অপমান করে অগ্নি ।ওনাকে খুব প্রয়োজন হলে ডাকে মিসেস ঘোষ বলে,নইলে ডাকে না। বিনা প্রয়োজনে মার সাথে কথা বলে না।


স্বাগতার ভীষণ খারাপ লাগে,ও কাঁদে ।অরণি বোঝান, তখন স্বাগতা উল্টো বলে, ওকে সময় দাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। অরণি আলোচনা করেন তার বয়স হয়ে যাচ্ছে, এবার তো সম্পত্তির জন্য কোর্টে গিয়ে লেখাপড়া করা দরকার। ওনার চিন্তা ওনার অবর্তমানে অগ্নি যদি স্বাগতার দেখাশোনা না করে তাহলে কি হবে?


কারণ ভবিষ্যতে অগ্নিই তো ওনার প্রপার্টির ওয়ারিশন হবে।


সব শুনে সাফ মানা করল অগ্নি ।বলল আমার কিচ্ছু চাইনা। আমি নেক্সট ইয়ার টুয়েলভ পা্শ করেই বাইরে যাব পড়তে। মা ও বাবার দেয়া পড়াশোনার জন্য রাখা বহুদিন আগের ফিক্সড ডিপোজিটের টাকায় আমার হয়ে যাবে, আর কিছু আমার চাইনা।


অরণি আর কথা বাড়ালেন না - স্বাগতা আর উনি দুজনে আলোচনা করে ,শুধু উইল করে রাখলেন সবটা, অগ্নির জন্য।সেদিন খুব বৃষ্টি,ছেলেটা ফিরছে না,রাত এগারটা বাজে,এত দেরী তো হয়না।ছাতা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলেন স্বাগতা ।সাড়ে এগারটায় ফিরল অগ্নি ।বৃষ্টির জন্য লোকাল ট্রেন বন্ধ,অনেক ঘুর পথে অটোয় এসে তারপর হেটে এসেছে।রাস্তায় স্বাগতাকে দেখে অবাক হলেও ইগনোর করল অগ্নি । স্বাগতাও চুপচাপ।কোথাও একটা ঘটনাটা দাগ কেটে গেল অগ্নির মনে। এই প্রথম মা ছাড়াও কেউ কনসার্ণ ওর জন্য। কিন্তু ও বারণ করার পর থেকে অগ্নি বলেই ডাকেন উনি।কোন কিছুতেই ইন্টারফেরার করেন না উনি, কিন্তু ওনার কেয়ারটা,ঘিরে থাকা উষ্ণতাটা আজকাল টের পায় অগ্নি ।অস্বস্তি হয়, আবার ভালোও লাগে।


সেদিন টিউশন থেকে ফেরার সময় অগ্নির সামনে স্বাগতাকে নিয়ে একটা বাজে মন্তব্য করল একজন, ওর ক্লাসের ই।"তোর সৎ মায়ের দম আছে অগ্নি , এই বয়সেও ভাল পুরুষমানুষ পটতে পারে বল?" কেন জানিনা ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল অগ্নি ,আর নিজেই আশ্চর্য হল। কিছুদিন আগে এ ধরনের খারাপ কথা ও নিজেও ভেবেছে ঐ মহিলাকে নিয়ে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো।


কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরে হঠাৎ অগ্নি দেখল, ওর ফোনে স্বাগতার অনেকগুলো মিসড কল। ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই বোঝেনি।অন লাইন হতেই ওনার ভয়েস মেসেজ।


বাবার একটা দুর্ঘটনা হয়েছে অফিস থেকে ফেরার সময়, অবস্হা ক্রিটিকাল। স্বাগতা হাসপাতালে যাচ্ছেন, অগ্নি যেন চিন্তা না করে খাওয়া দাওয়া করে নেয়।রাগে গা টা জ্বলে গেল। চিন্তা করবে না ও বাবার জন্য?


দৌড়ে উদভ্রান্তের মত অগ্নি পৌঁছল হাসপাতালে।স্বাগতা পাগলের মত দৌড়াদৌড়ি করছেন ।একবার রক্ত,একবার ওষুধ।এত ভালবাসে মহিলা বাবাকে?তার মাঝেও ওকে তিন বার বলল কিছু খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে।মায়েরা বোধহয় এমন ই হয়,তাইনা?


রাত তখন প্রায় শেষ,ডাক্তার জানালেন, সংকটটা কেটেছে।অরণি এখন স্টেবল।অগ্নি দেখল রিসেপশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে আকুল কান্না চাপার চেষ্টা করছেন পঞ্চাশোর্দ্ধ স্বাগতা।


গত কয়েক ঘন্টায় স্বাগতাকে দেখেছে আর মনটা ওলট পালট হয়েছে অগ্নির।


উঠে গিয়ে স্বাগতার পিঠে হাত রাখল অগ্নি ।আস্তে করে ডাকল, "মা "!চমকে তাকালেন স্বাগতা ।উঠে অগ্নিকে দেখে বললেন, "বড্ড অসহায় লাগছিল অগ্নি। যদি তোমার বাবার কিছু হয়ে যেত!তোমার কাছে কি জবাব দিতাম?"


অগ্নি বলল, "না আজ থেকে বাবু বলেই ডেকো।চিন্তা করোনা মা , বাপি ভালো হয়ে যাবে।"


এক বছর পর,আজ অরণি একদম সুস্থ,অনেক গুলো কঠিন অপারেশন করতে হয়েছিল,এখন ভালো আছে। এখন ব্যাগ গোছাচ্ছে ওরা,কাল ওরা দীঘা যাবে,অগ্নির পরীক্ষা শেষ।একটা ফ্যামিলি পিকচার তো অবশ্যই তুলবে ওরা, "মা, বাপি , আর মাঝে অগ্নি"। মা তো এখন অগ্নির বেস্টফ্রেন্ড,তাই কথা আর ফুরোয়না ওদের। এখন বাপ ব্যাটা দুজনে ক্যামেরার লেন্স নিয়ে পড়েছে,দেখে অজান্তেই চোখে জল আসে স্বাগতার। আসলে হৃদয় দিয়ে কাউকে ভালোবাসলে তা কখন মিথ্যে হয় না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract