ভ্যালেন্টাইন'স ডে
ভ্যালেন্টাইন'স ডে
সামনেই ভ্যালেন্টাইন'স ডে। দিনটিকে উল্ল্যেখযোগ্য করে তুলতে অনেকেই নিজের মনের মানুষটির জন্য বিশেষ আয়োজনে ব্যাস্ত হয়ে উঠবেন। কিন্তু আজ সেসব কথা যাক। বরং ভ্যালেন্টাইন'স ডে নিয়ে এমন কিছু কথা বলি যার অনেকটাই হয়তো আমাদের দেশে অজানা রয়ে গিয়েছে।
◆ রোম দেশে শুরু হয়েছিল ভ্যালেন্টাইন'স ডে.....◆
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ভ্যালেন্টাইন'স ডের উৎপত্তি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন রোম দেশের বিখ্যাত উৎসব লুপারকালিয়া থেকেই এই দিনের উৎপত্তি। রোমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী লুপারকালিয়া প্রতিবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পালন করা হত। উৎসবের রীতি অনুযায়ী রোমের রাস্তাঘাটে ওইদিন পুরুষ ও নারী দিগম্বর সেজে ঘুড়ে বেড়াত। রোমানদের বিশ্বাস ছিল ওই দিন পোশাক না পড়লে নাকি সন্তান সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর পুরুষ ও নারীরা অমন খোলাখুলি ঘোরাঘুরি থেকেই পরবর্তী কালে এই দিনটি প্রেমের দিন হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে এমন ধারনা যে খুব কষ্টকল্পিত তাও নয়। দ্বিতীয় ধারনা অনুযায়ী রোমের রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নিজের সেনাবাহিনী জোরদার করতে তরুন সমাজে বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন। কেন না, অবিবাহিত পুরুষের পিছুটান বলে কিছুই থাকবেনা। ফলে নিঃশেষে প্রান দান করে অমর হতেও তাদের দ্বিধাবোধ থাকবে না। কিন্তু আইন যখন গড়া হবে তখন তার কিছু বিরোধিতাও আসবে এতে আশ্চর্য কী ? এবার বিরোধিতা করলেন চার্চের এক পাদরি, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি চুপিচুপি তরুন সমাজে বিবাহরীতি চালু করলেন। ধরাও পড়লেন রাজার হাতে। আর রাজাদেশে তাঁর মৃত্যুদন্ড হল। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কে মারা হয়। প্রেমের উপাসকের মৃত্যুদিনটিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ওই দিনেই প্রেম দিবসের ঘোষনা করা হয়।
◆ প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো রীতি ◆
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুদূর রোম থেকে মার্কিন দেশেও ক্রমশ ভ্যালেন্টাইন'স ডে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তবে সেই জনপ্রিয়তা মার্কিন ক্লাসরুমেই সীমাবদ্ধ ছিল বহুদিন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা প্রিয় বন্ধু ও বান্ধবীকে প্রেমের কার্ড উপহার দিত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ। এই কবিতা লেখার প্রথা চালু হয়েছিল ৬০০ বছরের বেশি আগে। শোনা যায় অরলিয়ানসের ডিউক চার্লসকে যখন টাওয়ার অব লন্ডনে বন্দি করা হয় তখন তিনি তাঁর স্ত্রীয়ের জন্য একটি প্রেমের কবিথা লিখেছিলেন। সেটা ১৪১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকেই প্রেমের কবিতা লেখার চল যুবসমাজে ছড়িয়ে পড়ে।
◆ এসথার হল্যান্ড ও ভ্যালেন্টাইন'স ডে ◆
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এসথার হল্যান্ড ছিলেন চিত্রকর। টাইম পত্রিকায় কাজ করতেন তিনি। সময়টা এই ১৮৫০ সাল হবে। হল্যান্ড ভ্যালেন্টাইন'স ডে সম্পর্কে নানাধরনের ছবি এঁকেছিলেন। ছবিগুলোয় প্রেমের চেয়ে হাস্যরসই বেশি ধরা পড়েছিল। তবু মার্কিন দেশে হল্যান্ডের সেইসব ছবি দারুন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌছায় যে সেইসব ছবির একটা বাজারও তৈরী হয়হ শোনা যায় সেইসময় হল্যান্ডের ছবির এতই চাহিদা হয়েছিল, তিনি ১ লক্ষ ডলারে তাঁর ছবি বিভিন্ন মার্কিন পত্র-পত্রিকায় বেঁচেছিলেন। আর তারপর থেকেই এসথার হল্যান্ড 'মাদার অব আমেরিকান ভ্যালেন্টাইন' হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
◆ হৃদয়ে লেখো নাম...... ◆
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে। 'To wear your heart on your sleeves'.
বাক্যটা আকাশ থেকে পড়েনি। এই বাক্যটির সঙ্গেও ভ্যালেন্টাইন'স ডের একটা রীতি জড়িয়ে গেছে। বস্তুত সেই রীতি থেকেই উঠে এসেছে এই প্রবাদটি। লস অ্যাঞ্জেলিস টাইমসের খবর অনুযায়ী মধ্যযুগে পুরুষরা নাকি নিজের প্রিয় নারীটির নাম একটা চিরকুটে লিখে তা শার্টের হাতায় গুঁজে রাখতেন। তারপর সেই চিরকুট শার্ট থেকে বার করে পরা হতো। সেইমতো কারও প্রেম পরিণতি পেত কেউবা প্রত্যাখিত হতেন। এই যে শার্টে হৃদয়ের কথা লিখে রাখা সেই থেকেই ইংরেজি প্রবাদ বাক্যটির জন্ম হয়েছে। এখন এই বাক্যের অর্থ অবশ্য আর এতটা আক্ষরিক নেই। কারও মনের ভাব তাঁর চোখে মুখে ধরা পড়লে তাঁর সম্বন্ধে এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয়।
◆ হৃদ মাঝারে ◆
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজকাল প্রেমের সিম্বল হিসেবে হৃদয়ের ছবি আঁকা হয়। তবে চিরকালই যে এমন রীতি ছিল তা নয়। বস্তুত প্রেমের সঙ্গে হৃদয়কে জুড়ে দেওয়ার পুড়ো কৃতিত্বটা পুরোপুরিই দেওয়া উচিত ফরাসি ও ইতালিয়ান শিল্পীদের। আগে হৃদয় সংক্রান্ত সবকিছুই মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অর্থাৎ বুদ্ধি ও স্মরনশক্তির সঙ্গেই হৃদয়ের ছিল নিবিড় যোগাযোগ। কিন্তু পরবর্তী কালে ফরাসি ও ইতালিয়ান চিত্রকররা প্রেমের ছবিতে লাল হৃদয় এঁকে প্রেমের সঙ্গে হৃদয়ের পরিচয় ঘটালেন। তারপর থেকে যা ই-প্রেমজ, তা-ই হৃদয়সংক্রান্ত। এই বদলটা ঘটেছিল আনুমানিক ১৪ শতাব্দি নাগাদ।
◆ কিউপিডের তির আর লাল গোলাপ ◆
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কিউপিডের সঙ্গে পরিচয় আছে নিশ্চয়ই।তিনি রোমান দেবী ভিনাসের পুত্র। বিষের আঠা মাখানো তিরধনুক হাতে নিয়ে, পিঠে ডানা লাগিয়ে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ায় আর যুবসমাজকে লক্ষ করে তির ছোঁড়ে কিউপিড। কিউপিডের তির গায়ে লাগলেই ব্যশ, প্রেম অবশ্যম্ভাবি ! আর প্রেম মানেই লাল গোলাপের গুচ্ছ। কিন্তু কেনই বা অন্যান্য গোলাপ প্রেমের মধু থেকে বঞ্চিত হল কখনও কী ভেবে দেখেছেন ? কারনটাও রোমান দেবদেবীতেই আটকে আছে। রোভান প্রেমের দেবী ভিনাশের প্রিয় ফুল লাল গোলাপ। তাই তো লাল গোলাপই প্রেমের প্রতীক হিসেবে দেশে দেশান্তরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
◆ উপহারের নানারকম ◆
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ভ্যালেন্টাইন'স ডে উদযাপন হবে অথচ উপহারের উল্লেখ থাকবে না, তাও আবার হয় নাকি ? আমাদের দেশে ক্রমশ ভ্যালেন্টাইন'স ডে --র উপহার কার্ড আর ফুল ছাড়িয়ে হীরের আংটি, পেনডেন্ট ইত্যাদি গিয়ে ঠেকেছে। আর বিদেশে ? সেখানে কিন্তু ভ্যালেন্টাইন'স ডে উপলক্ষে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় উপহার চকোলেটের বাক্স। ইতিহাস অনুযায়ী রিচার্ড ক্যাডবেরি সাহেব প্রথম ভ্যালেন্টাইন'স ডে--র উপহারের তালিকায় চকোলেটের বাক্সের নাম তুলেছিলেন। ১৮৬৮ সালে প্রথম রিচার্ড ক্যাডবেরির তৈরী চকোলেটের বাক্স উপহার দেওয়া হয় ভ্যালেন্টাইন'স ডে তে। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত বিদেশে প্রেমের দিনের সেরা উপহার চকোলেট। তবে ফ্লেভার অব্যশয় অনেক বদলেছে। বদল হয়েছে চকোলেটের আকৃতিও। এখন নাকি ক্যারামেল ফ্লেভারড নাট ফিলড চকোলেট ভ্যালেন্টাইন'স ডে-র উপহার হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়া বিদেশে অনেকেই বিশেষ এই দিনে নিজের প্রিয়জনকে কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিতেচান। এগুলোকে বলে 'এক্সপেরিয়েন্স গিফ্ট'। এ যেমন কোনো কনসার্টের টিকিট বা ভ্রমনের বুকিং উপহার দিলেন প্রিয় মানুষটিকে। বিদেশে এমন দিনের প্রেমের মুহূর্ত উপহার পাওয়ার জন্য উদগ্রীব্ থাকে যুবসমাজ।