পুণ্য
পুণ্য
“সবই কপালের ফের, বুঝলেন? ওইটিই হচ্ছে আসল। না হলে একেবারে মোক্ষম সময়ে এরকম হবে কেন? আপনারাই-বা এত জড়িয়ে পড়বেন কেন? কেউই তো আর নিকট আত্মীয় নয়, তাও এমন মায়ায় জড়ালেন! এত দিন আগে থেকে সব ব্যবস্থা করে রেখেও যেতে পারলেন না, অথচ আমি আপনার কত পরে সব ঠিক করে দিব্যি ঘুরে এলাম। মায়া, মায়া, সব মায়ার বন্ধন, বুঝলেন? এবার এসব জাগতিক ব্যাপার থেকে মন তুলুন দেখি, মনে ভক্তি আনুন। সব যদি তাঁর ওপর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তেন, তা হলে আজ অশেষ পুণ্য সঞ্চয় করে ফিরতে পারতেন,” এক-নিশ্বাসে এতগুলো কথা বলে থামলেন সীতাংশু মাইতি, বোধ হয় দম নেওয়ার জন্যই।
যাঁকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলা, সেই প্রদীপ্ত মৈত্র কিন্তু কিছু বললেন না, অল্প হাসলেন মাত্র। সকাল সকাল এত সদুপদেশ শুনে খুশি হলেন নাকি দুঃখিত, তাও কিছু বোঝা গেল না।
সীতাংশু, প্রদীপ্তর প্রতিবেশী। কর্মজীবন দু’জনেরই শেষ। এখন এই অখণ্ড অবসরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্পগুজবে অনেকটাই সময় কাটে। তাই তো কুম্ভমেলা ঘুরে এসে সীতাংশু প্রথমেই এসেছেন ওঁদের বাড়িতে। অবশ্য তার আরও একটা কারণও আছে। এবারের পূর্ণকুম্ভে প্রদীপ্তরও সস্ত্রীক যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। পুণ্য সঞ্চয়ের এত বড় সুযোগ যাঁর হাতছাড়া হল, তিনি যে কত বড় দুর্ভাগা, সে বিষয়ে কি আর সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকে? তাঁকে কুম্ভের বিবরণ শুনিয়ে তাঁর মনের ভার লাঘব করা তো সজ্জন, উপকারী প্রতিবেশীর অবশ্য কর্তব্য। সীতাংশুও সেই কর্তব্যই পালন করছেন। তাঁর স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর বেশ উঁচুর দিকে। মধুছন্দাও তাই ভেতর থেকে সবই শুনতে পাচ্ছিলেন। এবার তিনি বৈঠকখানায় এলেন। বললেন, “নিন, চা খান। গল্প শোনা তো আছেই, এক দিনে বরং না শোনাই ভাল, ফুরিয়ে যাবে তো!”
প্রদীপ্ত এক ঝলক মধুছন্দাকে দেখে আবার সীতাংশুর দিকেই চোখ ফেরালেন।
“ও কথা বলবেন না ম্যাডাম, ও কথা বলবেন না,” সীতাংশু একেবারে হাঁ হাঁ করে উঠলেন, “যে পূর্ণকুম্ভের কথা বলে শেষ হয় না, আমার মতো সাধারণ মানুষ তা বলে উঠতে পারে? চা পরে হবে, আগের কাজ আগে সারি। নিন, কুম্ভের জল নিন। স্নানের সময় আমি খানিকটা ভরে এনেছি, যাঁরা যেতে পারলেন না তাঁদের দেব বলে। স্নান করে জলটা মাথায় দেবেন কিন্তু। আর এই নিন প্রসাদ। গুরুদেব নিজে পুজো করেছিলেন সেদিন,” সীতাংশু পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছোট্ট শিশিতে ভরা জল আর একটা পলিথিনের ছোট পাউচ ভরতি নকুলদানা দিলেন মধুছন্দার হাতে।
গল্প কিন্তু সেই কুম্ভতেই আটকে রইল, তার থেকে এতটুকু এদিক-ওদিক সরল না। আরও আধঘণ্টা ধরে নিজের কুম্ভ দর্শনের অভিজ্ঞতা শুনিয়ে সীতাংশু বিদায় নিলেন, যাওয়ার আগে অবশ্য কুম্ভের জল মাথায় দেওয়ার কথা আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন।
সকালবেলা। সংসারে হাজারটা কাজ থাকে। সেই তাড়াতেই মধুছন্দা আবার ভেতরে ঢুকে গেলেন। প্রদীপ্ত বসে রইলেন। খবরের কাগজটা হাতে নিলেন বটে, তবে শুধু নাড়াচাড়াই করে গেলেন, পড়ায় আর মন বসল না।
নানান আখড়ার সাধুসন্ত, লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী সমাগম, শাহিস্নান— কুম্ভমেলা মানে এসব কিছুই। আর এসব মনে হলেই প্রদীপ্ত কেমন যেন আনমনা হয়ে যান। সেই কোন ছোট থেকে প্রদীপ্তর ইচ্ছে এই সুবৃহৎ মিলনমেলায় যাওয়ার, লক্ষাধিক মানুষের স্রোতে এতটুকু স্থান লাভ করা। ওঁর ঠাকুরদার একবার সুযোগ হয়েছিল কুম্ভে যাওয়ার, তাঁর কাছে গল্প শুনে শুনেই বোধ হয় এই ইচ্ছে। মনের ইচ্ছে মনেই সুপ্ত ছিল। বিয়ের পর মধুছন্দাকে প্রথম মুখ ফুটে বলেছিলেন।
মধুছন্দা অবাক হয়েছিলেন, “ওই ভিড়ে? তুমি তো ভিড়, হইহল্লা পছন্দ করো না।”
“হ্যাঁ ভিড় ঠিকই,” প্রদীপ্ত অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলেন, “থাকা খাওয়ার অসুবিধেও হবে হয়তো, তবু, তবু যেতে চাই একবার।”
“পুণ্যের লোভে?” মধুছন্দা ঠাট্টা করেছিলেন।
“পুণ্য? সেটা ঠিক কী বলো তো? কী করলে হয় পুণ্য? বিশেষ দিনক্ষণ মেনে সঙ্গমে ডুব দিলে? জানি না। আমি তো দেখতে যেতে চাই। মানুষ। মানুষ দেখতে। এই এত বড় দেশের আনাচকানাচ থেকে এত মানুষ ছুটে আসে কিসের টানে বলো তো? একবার, একবার অন্তত আমি যেতে চাই,” প্রদীপ্ত বলেছিলেন। ওঁর মুখ দেখে মধুছন্দার মনে হয়েছিল মনশ্চক্ষে যেন কুম্ভমেলাই দেখছেন।
কিন্তু সাধারণ সংসারী মানুষ ইচ্ছে করলেই সে ইচ্ছে সব সময় পূরণ করতে পারে না। প্রদীপ্তও পারেনি। বারো বছর অন্তর অন্তর কত বার পূর্ণকুম্ভ হল, প্রদীপ্তর যাওয়া হল কই? সংসারী মানুষের যে হাতে-পায়ে বেড়ি, ইচ্ছে করলেই তা কেটে বেরনো যায় না। সীতাংশুর কথাই হয়তো ঠিক, মায়ার বন্ধন।
সেই দিনটার কথা এখনও মনে আছে প্রদীপ্তর। বছরখানেক আগে। খবরের কাগজ থেকে জানতে পেরেছিলেন, ঠিক এক বছর পরেই আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ইলহাবাদের প্রয়াগে হবে পূর্ণকুম্ভ। প্রদীপ্তর বুকের মধ্যে যেন হাতুড়ির ঘা পড়েছিল। গেলে হয় না? এই সুযোগ। শেকলের বাঁধন এখন অনেকটাই শিথিল, নিজে অবসর জীবন যাপন করছেন, ছেলেও তার পরিবার নিয়ে প্রবাসে। এর পরের পূর্ণকুম্ভ আবার বারো বছর পরে, তখন বয়সও অনেকটাই বেড়ে যাবে। ঘোরাঘুরি করার সামর্থ্যই যদি তখন না থাকে? উঠেপড়ে লেগেছিলেন প্রদীপ্ত। খোঁজখবর নিতে শুরু করেছিলেন।
ছেলে অবশ্য প্রথমে বেঁকে বসেছিল, “ওই গাদা গাদা লোকের ভিড়ে যাবে? স্নান করবে ওই ভিড়ের মধ্যে? কত অ্যাক্সিডেন্ট হয় এসব মেলায় জানো না? না না, ওসব হবে না। তোমার আবার পুণ্য পুণ্য করে এত মাথাব্যথা কবে থেকে হল বাবা?”
অনেক বোঝানোর পর সে রাজি হয়েছিল। তবে শর্ত দিয়েছিল থাকার জায়গার ব্যবস্থা সে নিজে করবে, তার পছন্দমতো হতে হবে। তাই হয়েছিল। সে নিজে দেখেশুনে সব ঠিক করেছিল। এক বছর আগে থেকেই প্রায় ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। তবে ছেলে পইপই করে বলেছিল, “ওই ভিড়ে নদীতে স্নান করবে না, বিপদ হতে কতক্ষণ?” শুধু একবার বলে ক্ষান্ত হয়নি, এক বছর ধরেই বলে গেছে, সঙ্গে আরও ‘এই করবে’ আর ‘ওই করবে না’-র লম্বা ফিরিস্তি।
যথাসময়ে প্লেনের টিকিটও কাটা হল। প্রদীপ্ত খুব খুশি। এত দিনে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতে চলেছে। কুম্ভে যাচ্ছেন। আত্মীয়স্বজনরাও শুনে বললেন, “তোমাদের ভাগ্য ভাল। কুম্ভে যাওয়া কি সকলের বরাতে থাকে?”
কিন্তু পূর্ণ হতে চলা আর পূর্ণ হওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রদীপ্তর ইচ্ছেও তাই পূর্ণ হতে হতে হল না। দুটো ঘটনার জেরে। প্রদীপ্ত শহরের মধ্যে যাতায়াত করেন টোটোতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্মলের টোটোতেই চাপেন। ফোন করলে বাড়িতে এসে নিয়ে যায়। সে সওয়ারি নামিয়ে ফিরছিল। ব্যস্ত সড়কে তখন গাড়ি চালানো শিখছিল বছর চব্বিশের একটি ছেলে। উলটো দিক থেকে হেঁটে আসা এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তার প্রথম বলি হল, নির্মল জখম হল বিচ্ছিরিভাবে, টোটোর অবস্থাও ত
থৈবচ। প্রদীপ্তদের যাওয়ার তখন আর মাস দেড়েক বাকি।
তিনটে ছেলেমেয়ে আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে নির্মলের স্ত্রী রুমা পড়ল অকূল পাথারে। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে দুটো বাড়িতে রান্নার কাজ নিল। কিন্তু তাতেও সব দিক সামাল দেওয়া যায় কই?
“চট করে সেরে উঠবে বলে তো মনে হচ্ছে না,” প্রদীপ্ত নির্মলকে দেখে এসে বললেন, “এদিকে শরীরের এই অবস্থা, ওদিকে চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে! কিছু করতে হবে, এসব দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকাও সম্ভব নয়।”
সত্যিই বসে থাকেনওনি ওঁরা, যত দূর সাধ্য করেছেন। এর মধ্যে এল আর-এক দুঃসংবাদ। প্রদীপ্তর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিপুল দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন কিছুদিন, হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হল।
“আর কয়েকটা দিন, বড়জোর মাসখানেক,” ডাক্তারবাবু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন।
“টিকিট ক্যানসেল করে দিই, বুঝলে?” প্রদীপ্ত বললেন, “এই অবস্থায় বিপুলকে ফেলে কী করে যাই? ফিরে এসে তো আর দেখতে পাব না। না না, শেষের ক’টা দিন আমি ওকে ছেড়ে যেতে পারব না। বাবার যখন প্রথম অ্যাটাকটা হল, আমি নেই এখানে, বিপুল কী না করেছিল! ওদিকে নির্মলও এখনও সুস্থ হয়নি, এদের ফেলে আমি কুম্ভে যেতে পারব না। অনেক ইচ্ছেই তো মেটে না, অনেক কিছুই অধরা থেকে যায়, পূর্ণকুম্ভও না হয় আমার অধরাই থেকে গেল।”
সীতাংশু সেদিনও এসেছিলেন। প্রদীপ্তর এই মতিভ্রমে হা-হুতাশ কিছু কম করেননি।
“এত জড়িয়ে পড়বেন না মশাই, এ মায়ার বাঁধন ছিঁড়ুন। জন্ম-মৃত্যু কি আমাদের হাতে নাকি? যা হওয়ার তা তো হবেই, আমরা কি আটকাতে পারব? এ তো ওপরওয়ালার পরীক্ষা, বুঝছেন না? ভক্তির জোরে আপনারা এ বাঁধন থেকে বেরোতে পারেন কি না সেটাই তিনি পরখ করছেন,” সীতাংশু বলেছিলেন।
“পরীক্ষায় ডাহা ফেল করলাম ধরে নিন, কিন্তু এখন যাওয়া আমাদের পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয়,” প্রদীপ্ত জবাব দিয়েছিলেন।
চিকিৎসকের কথা সত্যি প্রমাণ করে বিপুল চলে গেলেন। ক’দিন পরে একটু সামলে প্রদীপ্ত খেয়াল করলেন, দু’দিন আগেই তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল।
সীতাংশুরা অবশ্য গেছেন এবং অশেষ পুণ্য সঞ্চয় করে ফিরে এসেছেন। এসে অবধি প্রদীপ্তকে সেই বিবরণ শুনিয়ে যাচ্ছেন।
“তুমি বারণ করো না কেন? ওই একই কথা বারবার বলেন!” মধুছন্দা বিরক্ত হয়ে একদিন বললেন।
“কী হবে বারণ করে? বলে যদি আনন্দ পান তো বলুন না। তবে একটা কথা বুঝি না, জানো। কোনও কিছুতে এত আনন্দ, এত শান্তি পেলে কি তা এত ভাবে এত বার বলতে হয়?”
“তোমার কথার মাথামুন্ডু আমি কিছু বুঝি না! এ ওঁদের বিশ্বাস, অটল বিশ্বাস বুঝলে, এ তুমি আমি বুঝব না।”
“হয়তো। তবে আমাদের পুণ্যের ঝুলি যে শূন্য, তাতেও ওঁর অটল বিশ্বাস কিন্তু,” প্রদীপ্ত হেসে ফেললেন।
ডোরবেল বাজল।
“আবার উনি নাকি!” মধুছন্দা আঁতকে উঠলেন।
না, সীতাংশু নন। প্রদীপ্তর পুরনো সহকর্মী তরুণ এসেছেন।
“বোনের বাড়ি এসেছি, নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে, ভাবলাম আপনার সঙ্গে দেখা করে যাই। কেমন আছেন প্রদীপ্তদা?” বললেন তরুণ।
“ভাল, ভাল। তোমার খবর কী?”
“আর বলবেন না। গিন্নির পাল্লায় পড়ে কুম্ভে যেতে হয়েছিল। তার খুড়তুতো বোন সপরিবার যাচ্ছিল, আমাকেও জবরদস্তি নিয়ে গেছিল। আমার গিন্নির এসবে খুব বিশ্বাস, কিন্তু আমার ছিটেফোঁটাও নয়।”
“কুম্ভে গেছিলে? সে তো খুব ভাল কথা হে!”
“আমার পক্ষে খুব একটা ভাল কথা নয়। আমার শ্যালিকারা দীক্ষিত, তারা অতি ভক্তিপ্রাণ মানুষ। আমি গেছিলাম দেখতে। জাস্ট দেখতে।”
“কী দেখলে তাই বলো। শুনি।”
“জনসমুদ্র বলতে পারেন। নানারকমের মানুষ। কিন্তু তা কোথায় নেই বলুন তো? এখানে যেমন ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ, ধনী-দরিদ্র হাত ধরাধরি করে রয়েছে, ওখানেও তেমন। ব্যবসা, লোক ঠকানো এখানেও আছে, ওখানেও আছে। সত্যিকারের সাধুসন্ত কি আর নেই, নিশ্চয়ই আছেন, তবে তাঁদের মধ্যে আর ক’জন আমাদের চোখে ধরা দেন? আর পাপ-পুণ্য? সেও তো সব জায়গাতেই আছে। আমার গিন্নি অবশ্য বলে, আমার পাপী মন, তাই খারাপ দিকটাই নজরে পড়ে, ভাল কিছু দেখি না। এই আমিই বোধ হয় একমাত্র মানুষ, যে সঙ্গমে স্নানটান কিছু করেনি। একবার ডুব দিলেই হয়ে গেল? অনেক পুণ্য হল আর সব পাপ ধুয়েমুছে গেল? সারা জীবন কী করলেন সেটা কিছু নয়? আমি এসব মানি না। লাভের মধ্যে, বেশ কিছু ছবি তুলেছি। ভাল কথা, আপনার পাশের বাড়িতে এক ভদ্রলোককে ঢুকতে দেখলাম। উনিও কুম্ভে গেছিলেন।”
“সীতাংশুবাবু। এসবে খুব ভক্তি, বিশ্বাস তো...”
“কীসে?”
“এই কুম্ভ, স্নানটান এসবে। আমাকে প্রায়ই বলেন তুচ্ছ জাগতিক ব্যাপারে না জড়াতে,” প্রদীপ্ত হেসে বললেন।
“তাই বলেন বুঝি? তবে শুনুন। আপনার এই সীতাংশুবাবুও ওই একই জায়গায় উঠেছিলেন, উনিও ওখানকার শিষ্য। একদিন দেখলাম ভাণ্ডারা দিয়েছেন। কম খরচ! বললাম না আমার পাপী মন, এসবে বিশ্বাস হয় না ঠিক। ওখানকার শিষ্য-শিষ্যাদের মধ্যে অনেক বড় বড় লোকজন আছেন। তাঁদেরই একজন কেউকেটাকে ধরে সীতাংশুবাবু তাঁর ছোট ছেলের একটা হিল্লে করেছেন। সে নাকি তেমন কিছু করত না। এক ভদ্রলোককে বলছিলেন শুনেছি, ভক্তির ফল ফলবেই। আমি অবশ্য স্রেফ জাগতিক ইন্টারেস্ট দেখলাম, অন্য কিচ্ছু নয়। পাপী মন বলেই বোধ হয়!”
প্রদীপ্ত বাক্শক্তিরহিত।
আরও কিছুক্ষণ গল্প করে তরুণ চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বারবার করে ওঁর বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করে গেলেন।
প্রদীপ্ত ভেতরে গেলেন। দেখলেন, মধুছন্দার হাতে একটা নিমকির প্যাকেট আর টেবিলের ওপর একটা মিষ্টির বাক্স।
“রুমার গলা পেলাম মনে হল? তরুণের সঙ্গে কথা বলছিলাম বলে আর ভেতরে আসিনি। এ সময়ে? কী হল আবার?” প্রদীপ্ত জিজ্ঞেস করলেন।
“কিচ্ছু হয়নি। নির্মলকে নিয়ে এসেছিল। নির্মল আবার টোটো নিয়ে বেরোচ্ছে। বলল, আগের মতো ভাড়াও পাচ্ছে। দ্যাখো, এই সব আবার কিনে এনেছে। আমার মিষ্টি খাওয়া বারণ সে খেয়ালও আছে, তাই নিমকি এনেছে। এত ভাল লাগল নির্মলকে দেখে। একটু টেনে হাঁটছে ঠিকই, তবে আর কোনও অসুবিধে নেই। এগুলো আমার হাতে দিয়ে কিছু বলবে কী, দু’জনের গলা দেখি বুজে আসছে। বকুনি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি। সন্ধে হয়ে গেছে, ছেলেমেয়েগুলো রয়েছে,” মধুছন্দা বললেন। এক অদ্ভুত আলোয় ওঁর মুখখানা জ্বলজ্বল করছে।
সেই আলোর ছোঁয়া প্রদীপ্তর মনেও লাগল। এক নিমেষে মনটা হালকা হয়ে গেল।
“দাও দেখি একটা মিষ্টি, খেয়ে দেখি,” বললেন উনি।