Tandra Majumder Nath

Classics

3  

Tandra Majumder Nath

Classics

ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া

ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া

4 mins
965


রাত সাড়ে দশটা। সুজাতা বাড়ি ফিরেই জুতো ব্যাগ স্কার্ফ যেদিকে যা পারলো ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে থাকলো।

-মা ও মা। একটু জল দাও তো।

-আসছি দাড়া।

এই নে জল। কিরে ঠাকুর দেখা হয়ে গেলো?

-না মা খুব tired লাগছে।প্রোগরাম দেখছিলাম ক্লাবের।

-আর তিতাসদের কি খবর।

ধুর ওরা যাবে সেই রাত ১২টায় গাড়ি রিজার্ভ করে।

আমি যাব না। খুব জোড়া জোড়ি করছিলো বলেছে রাতে আবার ডাকতে আসবে।

তুমি কিন্তু বলে দেবে যে আমি ঘুমোচ্ছি আমি বেড় হবোনা।

-ঠিক আছে। যা ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়।

***

তখন রাত দুটো। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা,প্রথমে সুজাতার কানে পৌছোয়নি দরজার শব্দ। অনেকক্ষণ দরজার ধাক্কা দেওয়াতে এবার সুজাতার ঘুম ভাঙলো। কখনো কলিং বেল বাজছে আবার কখনো দরজার ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ ভেসে আসছে।

সুজাতা আড়মোড়া ভেঙে মা কে জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকলো,

-মা ও মা মা

ঘুমোচ্ছো নাকি? দেখোনা এতো রাতে কে এসেছে।

ধুর! নিশ্চই তিতাসরা। এতো রাতে ভাল লাগেনা।

মা ও মা।

ধুর মা মনেহয় ঘুমোচ্ছে, কোন সাড়াশব্দ নেই।

আর ওদিকে দরজা ধাক্কার আওয়াজ ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে।

নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে ড্রইং রুম হয়ে সদর দরজার সামনে এসে সুজাতা জিজ্ঞেস করলো।

-কে?বাইরে কে?

দরজার ওপাশ থেকে কোন উত্তর নেই।

আরে বলবে তো কে?

কোন সাড়া নেই কিন্তু দরজায় ক্রমশ ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে।

সুজাতা বরাবরই একটু সাহসী কিন্তু তবুও যেন তারও কেমন লাগছিলো দরজা খুলতে।

তবুও সাহসে ভর করে দরজা খুলে দিলো।

দরজা খুলতেই ওমনি হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো সুজিত।

সুজিত কে দেখে সুজাতা তো অবাক।

কিছুক্ষণের জন্য যেন স্তম্ভিত হয়ে গেছিলো।

-দাদা। এত্তদিন পর তুই!! বলেই সুজিত কে জড়িয়ে ধরলো সুজাতা।

কোথায় ছিলিস এতোদিন হুম এই বোনকে মনে পড়েনি একবারো?

-আরে বলবো। সব বলবো।

-আয় বোস, দাড়া মা কে ডাকি বলেই সুজাতা মা বলে ডাকতেই সুজিত সুজাতার মুখ চেপে ধরলো। সসসশ একদম না।

মা কে ডাকতে হবে না। আমি যা বলছি শোন।

-কেনো। মা কে ডাকবোনা। তুই জানিস মা এখনো তোর জন্য কাঁদে।

ডাকি না রে।

-না একদম না, একদম ডাকবিনা।

আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা। তুই দীর্ঘ এক৷ বছর পর এলি।সেই যে ব্যাঙ্কক পড়তে গেলি আর আসলিনা। না ফোন না চিঠি কিরে তুই।

সুজিত নিরুত্তর,

-আচ্ছা দাদা কাল কথা হবে। এখন ঘুমিয়ে পড়। এতো রাতে জানিনা কোথা থেকে এলি। অনেক ক্লান্ত নিশচই।

-ঘুমোবো! ঘুমোবো মানে টা কি?

রাত কটা বাজে রে এখন?

-দুটা পনেরো।

-দ্বিতীয়া কটায় লাগবে জানিস?

-দ্বিতীয়া লেগে গেছে রাত দেড়টায়।

-বাহ ভালো। নে ফোঁটাটা তবে দিয়ে দে তো এখন।

-মানে? সুজাতা যেন আকাশ থেকে পড়লো।

এখন ফোঁটা দেবো মানে।

- যা শুনলি ঠিক তাই। আমি এখনি ফোঁটা নিয়ে চলে যাব।

-বলিস কি তুই। পাগল হলি নাকি।

চলে যাবি মানে।

-তুই ওতো প্রশ্ন করিস না তো।

-আরে কি দিয়ে মিষ্টি মুখ করাবো।

-কেনো রে পাগলি। মিষ্টি পাগল আমার বোন টা কি মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে নাকি।

আগে তো ফ্রিজ ভর্তি মিষ্টি থাকতো সবসময়।

খেতিসও রে তুই।

-বাব্বা তোর দেখি খুব মনে আছে।

-সুজিত হাসে আর বলে বোন রে তুই আমার।

-নে দে ফোটা দে।

-দাড়া একটু পায়েস করি।

-এখন পায়েস? লাগবে না রে শুধু ফোটা দে। ভোড় হতে চললো আমি বেড় হব তো।

-দাড়া না তুই বোস। পাঁচ মিনিটে বানিয়ে আনছি।

***

কিছুক্ষণ পর সুজাতা পায়েস করে নিয়ে আসে। ধূপবাতি চন্দন মিষ্টি পায়েস জল পূজোর ঘরে দূর্বা ছিলো আর ধান নিয়ে থালা সাজালো সামনে আসন পেতে দিলো।

-দাদা, আয় বোস। এতো রাতে কেউ ফোটা দেয়।

কাল দিতাম।

সুজিত আসনে এসে বসলো।

সুজাতা দই চন্দন দিয়ে সুজিতের কপালে ফোঁটা দিয়ে বললো- ভাইয়ের কঁপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়লো কাঁটা, যমুনা দেয় যম কে ফোঁটা আমি দেই আমার ভাই কে ফোঁটা।

-নে হা কর মিষ্টি খা

সুজাতা মিষ্টি আর জল খাইয়ে দিলো সুজিত কে।

সুজিত পকেট থেকে একটা দামী রিস্ট ওয়াচ বেড় করে সুজাতার হাতে পড়িয়ে দিলো।

-এই নে তোর গিফট। তোর জন্য কিনেছিলাম অনেক দিন আগে।এখন ঘড়ি দেখতে পারিস তো?

তুই তো কলেজে ওঠার পরও ঠিক করে ঘড়ি দেখতে পারতিস না। বলেই সুজিত খিক খিক করে হেসে উঠলো।

-দাদা

সুজাতা সুজিত কে মারতে গেলে সুজিত ঘরের মধ্যে ছোটা ছুটি করতে থাকলো।

কিছুক্ষণ পর সুজাতা হাফিয়ে ওঠে।

-নাঃ, আর পারছিনা। এই দাদা বোস

-পারলি না তো ধরতে। আর কোনদিন পারবিও না আমায় ছুঁতে। বলেই হেসে উঠলো।

-চুপ কর শয়তান।

-এই বুনু আয় না সোফায় বোস না তোর কোলে মাথা রেখে আমি একটু ঘুমোই।

আগে তো আমি প্রায়ই তোর কোলে মাথা রেখে ঘুমোতাম মনে পড়ে তোর?

-মনে পড়বে না আবার। খুব পড়ে। আয় আমার কোলে মাথা রাখ।

সুজাতার কোলে মাথা রেখে সুজিত শুয়ে পড়লো সোফায়।

-বুনু, একটা গান করনা।

তোর গলাটা ভাড়ী মিষ্টি জানিস। সেদিন তো আমি তোর রেকর্ডিং করা গানটাই শুনছিলাম আর প্রায়ই তোর গান শুনতাম।

সুজাতা সুজিতের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে গান ধরলো তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দিবোনা.......

****

-সু..এই সু... কিরে? ওঠ বলছি।

আধ বোঝা চোখে দেখলো সামনে মা দাঁড়িয়ে। চোখ টা কেমন ঝাপসা লাগছে।

-কিরে সু এই যে মেয়ে কি ব্যাপার টা কি তোর??

-চোখ বন্ধ করেই সুজাতা বললো কি হয়েছে মা

এতো চিৎকার করছো কেনো।

-চিৎকার করছি মানে, নিজের ঘর ছেড়ে তুই সোফায় ঘুমাচ্ছিস কেনো?

এবার সুজাতার হুশ আসলো ধড়ফড় করে উঠে বসলো।

-কিরে সদর দরজার বাইরের দরজা খোলা কেনো? রান্না ঘরে দেখলাম অল্প পায়েস করেছিস? কি ব্যপার কি বলতো তোর?

- এবার সুজাতা চিৎকার করে ডাকতে থাকলো দাদা এই দাদা কিরে কোথায় তুই, দাদা?

জানো মা দাদা এসেছিলো সুজাতা মা কে জড়িয়ে ধরে বলে। হাত দেখিয়ে বললো এই দ্যাখো আমাকে রিস্ট ওয়াচ গিফট করেছে।

সুজাতার মা সপাটে সুজাতার গালে চর মেরে বেয়াদপ মেয়ে বলে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।

সুজাতার বাবা রজতাভ বাবু এসে বললেন মজা মস্করা করিস ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে এমন মস্করা করিসনা যাতে তোর মা কষ্ট পায়।

-কিন্তু বাবা দাদা কাল এসেছিলো কিন্তু কোথায় যে চলে......

রজতাভ বাবু সুজাতা কে থামিয়ে দিয়ে বললেন

একবার যে মারা যায় সে কখনো আর ফিরে আসে না। তুই তো ভালো করেই জানিস গতবছর ব্যাঙ্কক থেকে ফেরার সময় ওর প্লেন ক্রাস হয় আর ওকে আমরা চিরদিনের মতো....

রজতাভ বাবু আর বলতে পারলেন না,

ওদিক থেকে সুজাতার মায়েরও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিলো।

আধবোজা গলায় রজতাভ বাবু বললেন -আর তুই সেই আজকের ভাইফোঁটার দিনেই মস্করা টা করলি ছিঃ।তিনিও ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন।

-কিন্তু বাবা কাল রাতে দাদা এসেছিলো।

বিশ্বাস করো আমায়।

বাবা। বাবা। বাবা।

হঠাৎ করে একটা শীতল বাতাস যেন সুজাতার কপালে চুম্বন করলো,

আর জানিয়ে দিলো বুনু আমি আছিরে তোর সাথে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics