STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics

4  

Nityananda Banerjee

Classics

ভোরের সূর্য্য

ভোরের সূর্য্য

3 mins
232

পর্ব বারো


হঠাৎ পর্দা সরিয়ে বিপাশা এসে দাঁড়াল ডাক্তারবাবুর কাছ ঘেঁষে। এই প্রথম হক সাহেবের মুখোমুখি হল । ভণিতা না করে সোজাসুজি বলল - আপনি মনে যা ভাবছেন স্যার ওই শশাঙ্ককেই আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি । তার কোন খবর আপনি কি জানেন ?

কথাগুলো শুনে হক সাহেবের মত পুলিশ অফিসারও থতমত খেয়ে গেলেন । শশাঙ্ককে গ্রেপ্তার করে তিনিই তো আদালতে তুলেছিলেন । দীর্ঘ জবানবন্দী, তথ্য, প্রমাণ, সাক্ষ্য দিয়ে বিচারককে সন্তুষ্ট করেছিলেন । বিপক্ষের কোন যুক্তিই সেদিন আদালতকে প্রভাবিত করতে পারেনি । যার নিট ফল মৃত্যুদণ্ড এবং তারপর মজ:ফরপুরের সেন্ট্রাল জেলের কনডেমড সেলে বন্দীত্ব ।

শশাঙ্ক এ যাবৎ উচ্চ আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপীল করেনি । হয়তো করবেও না । আর করুক না করুক তা' নিয়ে হক সাহেবের কোন মাথা ব্যথা থাকার কথা নয় । তিনি তাঁর কাজ করেছেন এবং পুরস্কারস্বরূপ মেজোবাবুর পদ থেকে প্রমোশন পেয়ে বড়বাবু হয়ে মজ:ফরপুর সদর থানায় যোগ দিয়েছেন।

নিজেকে সামলে নিয়ে হক সাহেব বিপাশাকে বললেন - শুনেছি আপনার সাথেও ও অসভ্যতা করেছিল । দুর্ভাগ্যবশত আপনি তখন মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন - সেই জন্য আপনাকে সাক্ষী হিসেবে মিস করেছিলাম ।

বিপাশার দু'চোখে ভর্তি জল । বলল - সে কোন অন্যায় করেনি ; আর যা করেছিল তা' বাধ্য হয়ে । আমি সে কথা জানি ।

হক সাহেব বললেন - বাধ্য হয়ে ? মানে আপনি বলতে চাইছেন চাপে পড়ে শশাঙ্ক ও কাজ করেছিল ?

- হ্যাঁ, ওকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করেছিল ওই সাংঘাতিক লোকটা ! শশাঙ্ক আমাকে তখনই বলেছিল ' তুই কাঁদিস না বিপাশা ; তোর জীবন আমি নষ্ট হতে দেব না । আমি কথা দিলাম আমি তোকে বিয়ে করে সুখী করব ।

স্যার, শশাঙ্ক আমাকে কোলে করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল । এমনকি সব শুনে আমার মা-বাবা যখন বলল তুই মরে যা, এখনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা, তোর মুখ যেন কোনদিন দেখতে না হয় - তখনও শশাঙ্ক আমাকে ছেড়ে যায়নি । সাথে নিয়ে কলকাতায় চলে আসবে বলেছিল । সেইমত বাসস্ট্যাণ্ডের দিকে যেতে গাজীর সামনাসামনি পড়ে যাই । সে আমাকে তার বাগানবাড়িতে বন্দী করে রাখে । আর শশাঙ্কর কি হল জানি না ।

হক সাহেব ভাবলেন এ তো দেখছি হিন্দি সিনেমার মত ঘটনা । তথাপি আরও কিছু জানার জন্য বললেন - কিন্তু শশাঙ্ক তো পালিয়ে যায়নি ! কাজও ছেড়ে দেয়নি । দিব্যি গুণ্ডাগর্দি করে ইলেকশনের জমায়েতে বোমা ফেলে তিনজনকে মেরে দিল ।

বিপাশা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলল - কোথাও একটা ভুল হচ্ছে স্যার । শশাঙ্ক আমাকে বলেছিল ও এ রকম কাজ আর কোনদিন করবে না । তাতে যদি ও না খেয়ে মরে তবু ভালো। আমি নিশ্চিত সে মানুষ খুন করতে পারে না । ছেলেটা স্কুল ফাইনালে জেলায় প্রথম হয়েছিল । আর্থিক দূরবস্থার জন্য কলেজে পড়তে পারেনি । আর হঠাৎ হাতে বেশ কিছু টাকা পেয়ে ভেবেছিল তার জীবনটা সার্থক হয়ে গেল ।

- কি কাজ করত সে ?

- সে ভাবে কিছু বলতে পারব না । তবে সেদিন গাজীর দেওয়া অ্যাটাচি হাতে নিয়ে কোথাও কাউকে দিতে যাচ্ছিল । আমি তখন কলেজে যাবার বাস ধরেছি । দূর থেকে দেখলাম ওটা হাতে দৌড়তে দৌড়তে এসে বাসে উঠল । বসল আমার পাশের সীটে । 

ওর সাথে আমার কথা বলতে ঘেন্না করছিল । সেইই প্রথম আমাকে চিনতে পেরে কথা বলতে শুরু করল । কি কাজ করে, কার কাজ করে জানতেই আমি তাকে বাধা দিয়েছিলাম । অনেক কথার পরও ও যখন টাকার ধুয়ো তুলে রোজগারের কথা বলল আমি বাস থেকে দু'তিনটে স্টপেজ আগেই নেমে গেলাম ; কলেজে যাব না বলে । দেখি আমার পিছু পিছু সেও নেমে পড়ল ।

কিছু কথা হল । ওকে বললাম এটাচি খুলে দেখ ওতে কি আছে তাহলেই বুঝে যাবি কি কাজ করতে চলেছিস।

গাজীকে তো আমরা চিনি । একটা আস্ত শয়তান । করাচী থেকে ভারতে ঢুকেছিল কোন জঙ্গিদলের সদস্য হয়ে । বলেও ছিল আমাকে চিনিস না! আমি পাকিস্তানী। তোদের মত হিন্দুদের সর্বনাশ করতেই আমার এখানে আসা ।

হক সাহেব উদ্বিগ্ন হলেন । এই সেই গাজী যে জঙ্গি কার্য্যকলাপ সারতে ভারতে এসেছে । এখন মজ:ফরপুরে ডেরা বেঁধে অবৈধ কারবার চালাচ্ছে ।

হক সাহেব পকেট থেকে ফোন বের করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের সঙ্গে কিছু কথা বললেন । ডাক্তারবাবুকে বললেন - একটা বিশাল ষড়যন্ত্রের কথা জেনে গেলাম । আজ আসি। বিপাশাকে বললেন - আপনাকে তথ্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। দেখি যদি কিছু করতে পারি ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics