ভোরের সূর্য্য
ভোরের সূর্য্য
পর্ব চৌদ্দ
গাজী সাহেবের হাতে এবং পায়ে ইলেকট্রিকের তার জড়ানো আছে । লক আপের এই সেলটির অবস্থান এমনই যে কোনমতেই সেখান থেকে পালানো সম্ভব নয় ।
হক সাহেব নিশ্চিন্ত মনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছেন । কোন কিছুতেই যখন লোকটার মুখ খোলানো গেল না ; হক সাহেব ইলেকট্রিশিয়ানের কানে কানে বললেন - পুলিশ ডাকো হে ছোকরা । এটাকে এখানে নয় পাশের চৌবাচ্চায় নামিয়ে ফোর ফর্টি দিতে হবে ।
পুলিশের কয়েকজন কনস্টেবল এসে ধরাধরি করে ওকে তারশুদ্ধ চৌবাচ্চার জলে নামিয়ে দিল ।
হক সাহেব বললেন- এবার সুইচটা আমাকে দাও ।
সুইচ হাতে নিয়ে প্রেস করতেই লোকটা কয়েক গজ উপরে উঠে আবার ঝপাং করে জলে পড়ল । সঙ্গে সঙ্গে আবার সুইচ অন করলেন । আবার উপরে উঠে গেল শরীর এবং তখনই জলে পড়ল ।
এই ভাবে কিছুক্ষণ খেল দেখিয়ে লোকটাকে জল থেকে তুলে আনা হল । পরণের জামা কাপড় আলগা হয়ে প্রায় খুলে পড়েছে । মাটিতে তুলতে দেখা গেল একটা মোবাইল ঝুপ করে মাটিতে পড়ল ।
হক সাহেব মোবাইল হাতে নিয়ে কভার খুলে দেখলেন একটা দামী আই-ফোন । এমনভাবে প্লাস্টিক দিয়ে মোড়া আছে যার জন্য ভেতরে জল ঢুকতে পারেনি ।
তিনি ফোনের সুইচ অন করলেন । সঙ্গে সঙ্গে ফোনে রিং হতে শুরু করল । তিনি ফোন তুলে উর্দুতে কিছু বললেন। অন্যপ্রান্ত থেকে উত্তর এল - আগামী শুক্রবার দিল্লিতে চলে আয়; ২৬শে জানুয়ারী লালকেল্লায় হামলা করতে হবে। যেহেতু তুই বিহারে রয়েছিস তোকে কেউ সন্দেহ করতে পারবে না । আসল খেলাটা তোকেই দেখাতে হবে । আমরা হামলা করব এক প্রান্তে; তুই ডিটোনেটরফাটাবি ভিভিআইপিদের সামনে । অনেক বিদেশী নেতৃবৃন্দ আসছেন ; দু'চারজন মারা পড়লে ভারতের মুখে চুনকালি পড়বেই ।
ফোন কেটে গেল । হক সাহেব দেখতে পেলেন যে ব্যক্তি কল করেছে তার লোকেশন গিলখিটের কোন এক স্থান ।
খবরটি সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর তথা বিদেশ দপ্তরেও পাঠিয়ে দিলেন । শুরু হয়ে গেল তৎপরতা ।
হক সাহেব চুলের মুঠি ধরে গাজীকে বললেন - এবার কি বলবি শয়তান?
গাজী চুপচাপ শুনল , দেখল । তার শরীর কারেন্ট খেয়ে এমনিতেই অসাড় হয়ে এসেছিল । তখনকার মত গরম গরম উটের দুধ খাইয়ে ওকে তাজা করার চেষ্টা করা হল ।
একের পর এক পুলিশের ডাড়ী, ' র ' এর গোয়েন্দারা আসতে লাগলেন । এন আই এর তরফেও দুটি দলকে দিল্লি থেকে রওনা করিয়ে দেওয়া হল ।
হক সাহেব ভাবলেন বিশাল একটা ফাঁড়া কেটে গেল যদিও আসল কাজটাই তো বাকি থেকে গেল । কিন্তু এখন গাজীর যা দশা; তাকে কোন প্রশ্ন করা যাবে না । ঠিক আছে। সন্ধ্যে নাগাদ দেখা যাবে ।
হাতে সময় নেই । 'র' এর কর্তারা বা এন আই এর কর্তারা এসে পড়লে ওকে তো হ্যাণ্ড ওভার করে দিতে হবে । লোকাল ইনভেস্টিগেশন তার আগেই সেরে ফেলতে হবে ।
ধীরে ধীরে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছে গাজী মোল্লা । হক সাহেব আদালতের সরকারি প্রসিকিউটরকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকলেন সেলে ।
অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডিং করা হল বয়ান । কল্যাণপুরের ইলেকশন ক্যাম্পেনে গাজী নিজে বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল তিনটি প্রাণ । আর আজ অংশুমানের আধার কার্ড, প্যান কার্ড বানিয়ে ড্রাগ পাচার করছিল । আধারের ছবির সঙ্গে মানিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছিল । সেদিক দিয়ে যে সে ওস্তাদ - হক সাহেব টের পেলেন । সব বয়ান আগামীকাল আদালতে তুলে দিতে হবে । অর্থাৎ পাটনা হাইকোর্টে জমা দিয়ে শশাঙ্কের পক্ষে রায় বিবেচনার আবেদন জানাতে হবে ।
ডাক্তারবাবু এবং বিপাশা রাতে সে সংবাদ হকের মুখে শুনলেন ।
বিপাশা বলল - দেখলেন তো স্যার! শশাঙ্ক কোন অপরাধ করেনি । অথচ তার ফাঁসির আদেশ হয়ে গেল ।
ডাক্তার বাবু বললেন - তুমি কি সেই জন্য হসপিটাল থেকে পালিয়েছিল ?
বিপাশা বলল - না স্যার। শশাঙ্কর খবরাখবর তো জানতাম না । তবে গাজীর খবর নিতেই আমি পালিয়েছি ।এসে তো দেখছি যা করেছি মঙ্গলের জন্যই । নইলে এত সব কথা জানতেই পারতাম না আর শশাঙ্কও বিনা অপরাধে --
হক সাহেব বললেন - এটা এখনও প্রমাণ করার অপেক্ষায় আছে । হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হলে তবেই আর্জি পুনর্বিবেচনা হবে ।
ডাক্তারবাবু বললেন - হবে তো ! সেটাই যথেষ্ট ।
বিকেলের মধ্যেই 'র' এবং এন আই এ এসে ফকরুদ্দিনকে হেফাজতে নিয়ে দিল্লি চলে গেল ।
( চলবে )
