ভোরের সূর্য্য
ভোরের সূর্য্য
পর্ব তেরো
ফকরুদ্দিন গাজী মোল্লা পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসবাদী দলের সক্রিয় সদস্য । চোরাপথে কাশ্মীর সীমান্ত পেরোতে গিয়ে দলছুট হয়ে যায় । সেখান থেকে পালিয়ে নির্বিবাদে মজ:ফরপুরে এসে পৌঁছায় ।
এখানে উর্দুভাষীদের অঞ্চলে আস্তানা গাড়ে । নিকটস্থ মসজিদে নামাজ পড়তে যায় । মাদ্রাসা স্কুলের কয়েকজন শিক্ষককে হাত করে । অবশ্য এজন্য তাকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি ।
সন্ত্রাসীদের টাকায় লেনদেনের ব্যবসা খুলে । প্রথমদিকে নিজেই ড্রাগ এবং অস্ত্র পাচার করত । ধীরে ধীরে পসার জমিয়ে এখন নিজেই সর্বময় কর্তা রূপে তখতে বসে আছে। পুরানো ইয়ার বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখে যার সিম পাকিস্তানের।
ভারতীয় স্কোয়াডের সঙ্গে ভারতীয় ফোন ব্যবহার করে । ভারতীয় সিমের ফোন কয়েক গণ্ডা হলেও সবেধন নীলমণি পাকিস্তানি সিমটিই ছিল বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ।
গাজীর মনে বিশ্বাস কথাটি অর্থহীন । স্বাভাবিক কারণে এখানের সকলকেই সে সন্দেহের চোখে দেখে । এমনকি স্বগোত্রীয় হিন্দুস্থানী মুসলমানদেরও সে ভরসা করে না । তাই সব কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে রাখে ।
যেমন সেদিন । শশাঙ্কর হাতে এটাচি দিয়ে নির্দেশ দেয় কোথায় যেতে হবে । শশাঙ্ক চলেও যায়; কিন্তু বেচারা জানতে পারে না গাজীর জি পি এসে সে নজরবন্দী ।
তাই হঠাৎ বাস থেকে মাঝপথে নেমে যাওয়া জেনে যায় গাজীসাহেব । অমনি কালো রঙের গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করে । ফলাফল তো আগেই দেওয়া হয়েছে ।
অক্টারলোনী সাহেবের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হক সাহেব স্থির করলেন আর ছুটি নয়; কাজে যোগ দিতে হবে । অতএব চল মজ:ফরপুর । ফোনে ডাক্তারবাবুকে জানিয়ে দিলেন তিনি কর্মস্থানে রওনা দিয়েছেন । গাজীকে খুঁজে পেতেই হবে । তোরা রেডি থাকিস ; যখন ডাকব, বিপাশাকে নিয়ে আসতে হবে ।
দিন সাতেক পর একটা ড্রাগ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছেন হক সাহেব । ডেকে নিলেন ডাক্তারবাবু ও বিপাশাকে ।
ছবি দেখিয়ে বিপাশাকে বললেন - একে চেনেন ?
বিপাশা ভালো করে চোখ বুলিয়ে ছবিটা দেখল । বলল - আরে , এ তো মহিম কাকার ছেলে অংশুমান।
হক সাহেব বললেন - ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন !
বিপাশা বলল - সিওর - ড্যাম সিওর - এ অংশুমানই ।
হাসলেন হক সাহেব ।
- না । এর নাম ফকরুদ্দিন গাজী মোল্লা ।
বিপাশা বিস্ফারিত চোখে চেয়ে দেখল গাজী কেমন নির্বিবাদে অংশুমানের রূপ ধরে ঘুরছে ।
বলল - অংশুমানও কি ওর দলে কাজ করছে ?
- বলতে পারছি না । তবে ছবিটা পেয়েছি যে লোকটাকে ড্রাগসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ; তার পকেটে ।
- কিন্তু গাজী অমন হতে গেল কেন ?
ডক্টর জেমস অক্টারলোনী বললেন - এই হক ! আমার মনে হচ্ছে ইলেকশন ক্যাম্পেনে শশাঙ্ক বোমা ছুঁড়েনি । মনে হয় গাজীই নিজে একাজ করেছে । কি জানি! তখন হয়তো শশাঙ্ক সেজে গিয়েছিল ।
হক সাহেব বললেন - ইউ আর এবসলিউটলি রাইট । মে বি হি ওয়াজ গাজী হিমসেল্ফ ।
বিপাশা বলে উঠল - স্যার , তাহলে শশাঙ্কর বিনা অপরাধে ফাঁসি হবে কেন ! স্যার, এর একটা বিহিত করুন প্লীজ ।
হক সাহেব বললেন - আপনি কি শশাঙ্ককে খুব ভালবাসেন ?
- একদমই স্যার । এখন আমার ওই তো আশা-ভরসা ।
ডাক্তারবাবু বললেন - মি: হক, মাই ডিয়ার ফ্রেণ্ড, তুই আমাকে একজন ভালো উকিলের সন্ধান দে । আমি উদ্যোগী হয়ে কোর্টে যাব - আপীল করব ।
হক সাহেব বললেন - দাঁড়া! এত তাড়া কিসের ? এখুনি তো ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে না !
- তবু। তুই একটা ব্যবস্থা করে দে ।
ওদের দু'জনকে কোয়ার্টারে রেখে এলেন হক সাহেব ।
একজন ইলেকট্রিসিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকলেন লক আপে যেখানে সুখনিদ্রা দিচ্ছে ড্রাগ পাচারকারী।
বললেন - এই উপযুক্ত সময় । ফোর ফর্টি ভোল্টস পাস করাও ওর শরীরে ।
এই ইলেক্ট্রিশিয়ান কোন ভাড়া করা ব্যক্তি নয় । পুলিশ ডিপার্টমেন্টেরই লোক । তিনি লাল নীল তারে বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুলে এবং ডান পায়ে এমন ভাবে তার জুড়ে দিলেন যে নিদ্রাকারী কিছু টের পেল না ।
ইলেকট্রনিক সুইচ টিপলেই কারেন্ট পাস হবে ।
লোকটিকে বললেন - প্রথমে বারো ভোল্ট ডি সি কারেন্ট দাও । জাগুক । তারপর প্রশ্ন করব । সন্তোষজনক উত্তর না দিলে ফোর ফর্টি চালিয়ে দিও ।
বারো ভোল্টের কারেন্ট দেওয়া হল । ধড়মড় করে উঠে বসল ড্রাগ পাচারকারী। আবার দেওয়া হল । এবার ব্যাঙের মত লাফ দিতে দিতে বলতে লাগল - কেয়া হো রহা হ্যায় জী?
ভেতরে ঢুকলেন হক সাহেব ।
- ওয়েলকাম টু মুজ:ফরপুর সেন্ট্রাল লক আপ , ইণ্ডিয়া , মি: ফকরুদ্দিন গাজী মোল্লা সাব ।
কেয়া লোগে ? চায় ? কফি ?
গাজী তখনও নেচে বেড়াচ্ছে । সুইচ অফ করে দেওয়া হল । গাজী ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল ।
- কি নাম তোর ?
- অনশুমান সাব ।
- বাপ কা নাম?
- মাহিম ।
কাঁহাকে রহনেবালা হো ? রাঁচি ইয়া করাচী?
( চলবে )
