STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics

4  

Nityananda Banerjee

Classics

ভোরের সূর্য্য

ভোরের সূর্য্য

4 mins
399

পর্ব আট

- কি স্যার ! বড্ড একঘেয়েমি লাগছে তো শুনতে ! আমার জীবন কাহিনী এমনই । না আছে থ্রিল, না সাসপেন্স । রোমান্সের তো বালাই নেই ।

মিঃ বিবেকানন্দ কুমার চোখ থেকে চশমা খুলে রুমাল দিয়ে মুছে নিলেন কাঁচ দু'টো । ছানার কোপ্তায় কামড় বসিয়ে বললেন - বলে যা । বলে যা । যা মনে আসে মুখ দিয়ে উগরে দে । আরে তোদের মত কত শয়তানকে দেখেছি - যখন পুলিশের সদর দপ্তরে কাজ করতাম । সবই তো জানি ক্রিমিনালদের ইতিহাস । তুই আর নতুন কি বলবি ?

শশাঙ্কর হাত আছে ডিনারের থালায় । মাথা উঁচু করে মিঃ কুমারের দিকে চেখ তুলে বলল - ভীষণ মনোটোনাস লাইফ স্যার । ধরা পড়ার আগে পর্য্যন্ত মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি । ধূর ধূর ! সে কি কোন কাজের কাজ ছিল! তবে স্যার নেশায় জমলে মানুষ এমনিই করে । তা সে যতই ' থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়ই' হোক না কেন!

মিসেস সঞ্জনা কুমার শশাঙ্কর প্রতিটি কথা মন দিয়ে শুনে যাচ্ছিলেন । তাঁর মনে হচ্ছিল এখনই কাগজ অলম নিয়ে বসে পড়ি জীবনী লিখতে। বেচারা শশাঙ্ক ! সমাজের অবিচারে পিষ্ট হয়েই এমন কাজে নেমেছে । নইলে ওর স্কুল জীবনের ট্র্যাক রেকর্ড তো খুব ভালো । 

বললেন - দইবড়াটা চেখে দেখো । এমন জিনিস বাজারে পাওয়া যায় না ।

শশাঙ্ক বিনীতভাবে বলল - আপনাকে দেখে আমার মায়ের হাতের রান্নার কথা মনে পড়ে গেল । খুব যত্ন করে রান্না করত শুধু আমাকে খুশী করার জন্য । বাবা তো সেই কোন সকালে বেরিয়ে যেত ; বাড়ি ফিরতে রাত দশটা বাজত । সেই সময়টায় আমিই তো মায়ের বন্ধু ছিলাম ।

বাবা গত হবার পরও আমার যত্ন-আত্তিতে কোন খামতি রাখেনি । স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার সময় তো আমিই যেন ওর সব আশা-আকাঙ্ক্ষার একমাত্র উপাদান ছিলাম ।

চারুকাকা নিজে এসে কথা দিয়েছিলেন স্কুল ফাইনালে ভালো রেজাল্ট করলে চাকরিটা বাঁধা । মা ভীষণ খুশি হয়েছিল । তেমনই দুঃখ পেয়েছিলাম আমি নিজে । চারুকাকা মুখ ফিরিয়ে নিতেই চোখে সর্ষে ফুল দেখেছিলাম। উদাস মনে পথে হাঁটছি । গাজী সাহেব যেন দরবেশ হয়ে উদয় হল।

মিঃ কুমার বললেন - আরে সেগুলো তো শুনেছি । পরের কথা কিছু থাকলে বল । নইলে থাম । খেয়ে নিয়ে শেষ ঘুমটা দে গিয়ে যা !

সঞ্জনা বিরক্ত হয়ে বললেন - আ: করছ কি ? ওকে বলতে দাও না ! মাঝে মাঝে ফোড়ন কাটো কেন !

কুমার সাহেব চুপ করে গেলেন । শশাঙ্ক বলতে লাগল ।

- ম্যাডাম ! আমি সব দরজায় গেছি । কোথাও কোন আশার কথা পাইনি । নিজের গাঁয়ের স্কুলে - যেখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছি - হেড স্যার তো খুবই চেনাজানা ছিলেন । কত বার বইপত্র কিনে দিয়েছেন । একস্ট্রা ক্লাস নিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রিপেয়ারেশন করিয়েছেন । তো গাঁয়ের স্কুলেই দারোয়ানের একটা পদ খালি পড়েছিল । ডি আই সাহেব ওঁকে বলেছিলেন লোকালি এরেঞ্জ করে নিতে। উনি এপ্রুভ করে দেবেন ।

আমি হেডস্যারকে নিবেদন করলাম। উনি বলেছিলেন 'দেখছি' । কিন্তু কি বলব ম্যাডাম আজও উনি দেখেই যাচ্ছেন । পরে শুনেছি দশ হাজার টাকা নিয়ে বাদল পরামানিককে ওই চাকরিটা দিয়ে দিয়েছিলেন ।

টাকা না থাকলে মানুষ যে আর মান পায় না - গাঁয়ের লোকের মনোভাবেও তা বুঝে গেছি । যে বন্ধুরা সহপাঠী ছিল তারাও আমাকে এভয়েড করতে লাগল; পাছে দু'মুঠো খেতে দিতে হয় ।

বড় দুঃখে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিলাম । কপর্দকহীন ভিখারীর মত পথে পথে ঘুরছি । কলের জলে ক্ষুৎপিপাসা মেটাচ্ছি । কিন্তু এভাবে কতদিন থাকা যায় ! পেটে খিদে নিয়ে ভিক্ষেই শুরু করলাম ।

করুণায় হোক বা অবহেলায়; দু'চার টাকা হাতে আসতে লাগল । সেও এযনি কপাল যে বেশী দিন ভিক্ষেও করতে পারলাম না ।

একদল ভিখারী এসে পথ আটকে দাঁড়াল ।

- মেম্বারশিপ আছে ?

বললাম - সে আবার কি ?

এখানে ভিক্ষে করতে গেলে ইউনিয়ন করতে হবে । তবে রেল স্টেশনে, বাজারে, বাসস্ট্যাণ্ডে, মন্দিরে বা মসজিদে ভিক্ষে করা যাবে । আছে তো প্রমাণ দেখা ; না থাকলে জলদি ফোট্ । সেকেটারি ( সেক্রেটারি) বাবু খবর পেলে নেংটা করে ছাড়বে । হাত পা ভেঙে দিয়ে পথে ভিক্ষে করতে নামিয়ে দেবে । রোজগার সব তুলে দিতে হবে কর্তার হাতে , বদলে কিছু খাবার পাবি ।

এবার মন বলল হকারি করি । ভিক্ষের ধনে লজেন্স কিনে লোকাল ট্রেনে বিক্রি করতাম । সেখানেও দেখি ইউনিয়ন আছে । লোকালের জন্য আলাদা ; মেল এক্সপ্রেসের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত । আমার তো মেম্বারশিপ নেই; কাজেই সে পথও বন্ধ হয়ে গেল।

মিসেস কুমার বললেন - তারপর ?

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics