ভোরের সূর্য্য
ভোরের সূর্য্য
পর্ব দশ
হঠাৎ করে শশাঙ্কর মনে হল সত্যিই তো রাত পোহালেই তার ফাঁসি । তাই জেলর সাহেব বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন - ভোরবেলায় উঠবি। স্নান করে একটা নতুন ধুতি পাঞ্জাবি দেব - পরে নিবি । আর একটা রজনীগন্ধার মালা দেব সেটাও গলায় জড়িয়ে নিবি !
শশাঙ্ক হেসে ফেলল । হাসি দেখে জেলরের পিত্য জ্বলে গেল । বললেন- হাসছিস যে ? তোর লজ্জা করে না ? তিনটে খুন করে এখনও দাঁত বের করে হাসছিস ?
শশাঙ্ক বলল - খুন করে লজ্জা পাইনি স্যার । কারণ খুনগুলো করতে বাধ্য হয়েছিলাম । দুঃখ হয় যদিও ।তবে হাসছি কেন জানেন নতুন ধুতি , পাঞ্জাবি, রজনীগন্ধার মালা পরতে হবে ভেবে । মনে হচল যেন বিয়ে করতে যেতে হবে !
শশাঙ্ক আর এক চোট হেসে নিল । বলল - একটা প্রশ্ন করব স্যার ?
জেলার বললেন - বল ।
- আচ্ছা স্যার, ফাঁসি তো ভারতবর্ষেই হয় না ; ভারত ছাড়াও অনেক দেশেই ফাঁসি হয় ; সেখানেও কি ভোরে উঠে স্নান করে, নতুন কাপড় , মালা পরে ফাঁসির মঞ্চে উঠতে হয়?
- তোর তা' জেনে কি হবে ? এগুলো নিয়ম ।
- এ নিয়মের কোন ব্যতিক্রম হয় না স্যার ?
বিবেকানন্দ কুমার শশাঙ্কর এই কথার কোন জবাব দিতে পারলেন না । শুধু একজোড়া বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে শশাঙ্কর দিকে চেয়ে রইলেন ।
ছেলেটা যে কি দিয়ে তৈরি তা শুধু ঈশ্বরই জানেন । শশাঙ্ক মাঝে মাঝে এমন সব প্রশ্ন করে যার কোন উত্তর দেওয়া যায় না ।
এরই মধ্যে শশাঙ্ক নতুন করে আর একটা প্রশ্ন করে বসল ।
- স্যার ! শুনেছি ফাঁসির আগে আসামীকে তার শেষ ইচ্ছা কি বলা হয়ে থাকে । তেমন কোন নিয়ম কি আমার বেলায় থাকবে না কি আমার কেসটা স্পেশ্যাল বলে তা' বাতিল হয়ে যাবে ?
জেলর সাহেব এরও কোন উত্তর দিলেন না । মিসেস সঞ্জনা কুমার বললেন - শশাঙ্ক ! এ সব কথা থাক । তথাপি বলছি তোমার শেষ ইচ্ছেটা কি ?
- ম্যাডাম ! আমার ইচ্ছার কি কোন মূল্য আছে ! ছেলেবেলা থেকে তো অনেক ইচ্ছাই ছিল ; একটাও পূরণ হয়নি । আর তো হবারই নয় । আমি বলছিলাম এটাও নিয়ম নাকি ? যদি হয় তবে ফাঁসির আসামীর শেষ ইচ্ছা কি সরকার বা প্রশাসন পূর্ণ করবে ?
জেলর সাহেব এবার অস্থির হয়ে পড়লেন ।
- শালা ! বয়স তো তোর কম হল না । তবুও বলব অটালেই চলে যাচ্ছিস। এখনও এই ছেলেমানুষী গেল না তোর !
বলি তুই যদি বলিস তোর ইচ্ছে ফাঁসি রদ হোক - তবে সত্যিই কি তা রদ হবে ?
শশাঙ্ক বলল - বুঝেছি স্যার । তবে একটা কথা কি জানেন - ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন দাম দেওয়া হয় না । যেমন এই যে
আপনারা কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে আমার জন্য এলাহি আহারের আয়োজন করলেন - এটারও কোন দাম নেই । নিজের বিবেক থেকে বলুন তো স্যার - আপনারা কি আমাকে ভালবেসে এত আয়োজন করেছেন ? নিতান্ত বাধ্য হয়েই করেছেন অথবা উপর মহলের নির্দেশে করেছেন । আমি জানি আপনারা পকেট থেকে খরচ করে আমাকে খাওয়াচ্ছেন না । এর জন্য বিল করে পাঠিয়ে দেবেন । এক হাজার খরচ হলে বিশ হাজারের বিল ধরাবেন । পাশও হয়ে যাবে । উঁচু মহলের ব্যাপার- স্যাপার - দেবা ন জানন্তি ।
বিবেকানন্দের মনে হল ভোর বেলায় নয় এই বেটাকে এখনই ফাঁসি দেয়া উচিত । বাপরে বাপ । কি ভয়ানক সব প্রশ্ন ।
মিসেস সঞ্জনা কুমার অর্থাৎ জেলার সাহেবের স্ত্রী এতক্ষণ কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলেন । শশাঙ্কর হাতটা ধরে বললেন - ভাইটি আমার । এ সব কথা থাক না । আমি সত্যিই তোমাকে ভালবেসে এত সব রান্না নিজের হাতে বানিয়েছি । নইলে কি দরকার ছিল এতসব ঝামেলা করার ! বিশেষত আজটাল যখন অনলাইনেই সব কাজ হয়ে যায় ।
শশাঙ্ক সঞ্জনাকে আঘাত দিতে চায়নি । বলল - ম্যাডাম । আমি দুঃখিত। ভাবাবেগে এসব কথা বলে ফেলেছি ।
আমার জানতে ইচ্ছে করছিল তাই বলেছি । প্লীজ কিছু মনে করবেন না ।
মিসেস কুমার বললেন - ইটস ওকে । তারপর বলো...
( চলবে )
