STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics

4  

Nityananda Banerjee

Classics

ভোরের সূর্য্য পর্ব ত্রিশ

ভোরের সূর্য্য পর্ব ত্রিশ

3 mins
347

পর্ব ত্রিশ


ডিভিশন বেঞ্চে উঠল শশাঙ্কর কেস । কেস হিস্ট্রি, জেলা আদালতের রায় পড়ে ডিভিশন বেঞ্চ বললেন - আমাদের মনে হচ্ছে একটি বিশাল ব্যাপারকে অতি সরলীকরণ করে দেওয়া হয়েছে। 

পুলিশের রিপোর্ট অনুসারে শশাঙ্ক নামের যুবকটিকে বোমা ছুঁড়তে এবং তিনজনকে মরতে দেখেছে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসার হয় পক্ষপাতদুষ্ট নতুবা কারও চাপে পড়ে এই ধরণের চার্জশীট দাখিল করেছে । এতে তথ্য প্রমাণের চেয়ে অধিক সাক্ষ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়েছে । 

এই আদালত মনে করে আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়নি । 

তা সত্বেও ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার না করে নিম্ন আদালতের রায়ের উপর আমরা এখনই কোন স্থগিতাদেশ দিচ্ছি না । 

এই আদালত আসামীর পক্ষে একজন উকিল দিতে চায় ।

মিঃ পাণ্ডে আপনি তো আছেনই আরও একজন উকিলের সাহায্য আপনি নিতে পারবেন । দেখা যাচ্ছে আসামী কেসের খরচ দিতে অপারগ ; সেক্ষেত্রে এই আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছে ওই নিয়োগকৃত উকিলের ব্যয়ভার সরকারি তহবিল থেকে দিতে ।

আদালতে উপস্থিত জনতা বিচারকদ্বয়ের সহৃদয়তার জন্য হাততালি দিতে লাগল।

ডাক্তারবাবু বিপাশাকে বললেন - কুয়াশা বোধ হয় কাটতে শুরু করেছে । স্থগিতাদেশ না পেলেও এবার শশাঙ্ক সুবিচার পাবে ।

বিপাশার চোখ ভারী হয়ে উঠল । কোনমতে নিজেকে সামলে ব্যারিস্টার মিঃ পাণ্ডেকে বলল - স্যার! কোন আশা দেখতে পাচ্ছেন কি ?

সর্বেশ্বর পাণ্ডে হাসতে হাসতে বললেন - জয়ের প্রথম ধাপটা পেরিয়ে গেলাম মা । এভাবেই ধাপে ধাপে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হবে । একেবারে লাফ দিয়ে তো পাহাড় চূড়ায় ওঠা যায় না !

বিচারকদ্বয় পাণ্ডেজীর আনীত ভিডিও/অডিও জমা নিলেন । ইতিমধ্যে হক সাহেব তথা এস পি সাহেবের সরেজমিন তদন্তের রিপোর্ট পাণ্ডেজী পেয়ে গিয়েছেন । সেগুলিও বিচারকদের সমর্পণ করলেন । 

দশদিন পর দ্বিতীয় শুনানির তারিখ ঠিক হল । ওই বেলা বারোটাতেই ।

ডাক্তার বাবু এবং বিপাশা জ্যাকলিন - এঁরা তিনজন কলকাতায় ফিরে গেলেন । হক সাহেব গেলেন মজ:ফরপুর অফিসে । দশ দিন পর আবার তাঁকে কোর্টে হাজিরা দিতে হবে ।

পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে তিহার জেলে গাজী মোল্লা ' 'হক সাহেব' বলে ডেকেছিল এবং পরে পায়ে পড়ে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিল । এস পির সামনে এমন ঘটনা এস পি সাহেব হজম করতে পারেন নি । হক সাহেবকে সন্দেহ করতে লাগলেন । 

অফিসে ডেকে পাঠিয়ে কৈবিয়ত তলব করলেন । 

হক সাহেব বললেন - স্যার আপনার সন্দেহের হয়তো কারণ আছে । কিন্তু আমি সত্যিই গাজীকে তেমন চিনি না। একবার থানায় দেখেছিলাম ঠিকই; কিন্তু নেতাদের চাপে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম । ব্যস! ওইটুকূই। এর বেশী কিছু আমার নলেজে নেই ।

এস পি সাহেব বললেন - গাজী আপনাকে বাঁচানোর জন্য বলছিল কেন ? আপনি কি কিছু উপঢৌকন পেয়েছিলেন?

নাক কান মলে হক সাহেব বললেন - জীবনে কারও কাছে এক কাপ চা-ও খাইনি স্যার । এ সব আমার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করার জন্য বলেছে । ও লোকটা এতই চালাক এবং ধূর্ত যে অনায়াসে ঘোল খাইয়ে দিতে পারে । আপনার যদি তাতেও সন্দেহ থাকে তবে তদন্ত করে দেখুন আমি কোন অপকর্মে জড়িত থেকেছি কি না । প্রদত্ত পার্সোনাল এসেটের সঙ্গে আমার বর্তমান এসেটগুলো চেক করে মিলিয়ে নিন স্যার - তাহলে বুঝতে পারবেন।

এস পি বললেন - শ্যামল সামন্ত যে বলল ওকে এরেস্ট করার সময় পুলিশকে টাকা ছড়ানো হয়েছিল ? আপনিও তো সেই সময় ওখানে ছিলেন ।

- ছিলাম স্যার । তবে সেই জায়গায় নয় ; আমি গাজীর পশ্চাতে দৌড়াচ্ছিলাম । শুনলেন না শ্যামল বলল ও শশাঙ্কর মুখোশের নীচে গাজীর মুখোশটাও পরেছিল ।

- তাতে কি প্রমাণ হয় ? আপনি টাকা খান নি ?

- আমি ব্যাপারটা জানতামই না স্যার । ও কি ছড়াচ্ছে না ছড়াচ্ছে সেদিকে খেয়াল না রেখে ওকে পাকড়াও করার জন্য আমি দৌড়াচ্ছিলাম । প্রায় আধ মাইল ছোটার পর ওকে ধরতে পারি । তবে এটা ঠিক, আমি ওকে গাজীই ভেবেছিলাম। পরে জানা গেল এন আই এ বলেছে ও শ্যামল সামন্ত ।

এস পি সন্তুষ্ট হলেন কি না জানা নেই ; তিনি বললেন - কোর্ট হয়তো নতুন করে তদন্ত করতে বলবে । তখন যদি ফেঁসে যান ; আমি কিন্তু কোন হেল্প করব না , বলে দিলাম ।

- ঠিক আছে স্যার । আমিও কোন সাহায্য চাইব না । তবে তার আগে কে কে টাকা কুড়োচ্ছিল সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি ।


( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics