STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Classics Others

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Classics Others

ভোলানাথ বৃদ্ধাবাস

ভোলানাথ বৃদ্ধাবাস

2 mins
257

কাল থেকেই অনিকেত বাবুর মনটা ভালো লাগছে না - আসলে মনের এই অবস্থার কারণ তো মায়া। প্রয়াত স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলেন - এই সংসারে যত জড়িয়ে পড়বে তত কষ্ট। অবশ্য জড়িয়ে পড়ব না বললে তো হয় না, কখন যে নিজের অজান্তে একটা টান তৈরী হয়ে যায়। দিন বদলেছে, আগেকার দিনের মত আর নিজের বাড়ি নয়, এখন সব এপার্টমেন্ট মানে ফ্ল্যাট বাড়ি। সব ছোট ছোট ঘরে জীবন কাটানো। অনিকেত বাবু খুব মিস করেন তার সেই গাছপালা ঘেরা বসতবাড়িটি। দুঃখ পান নাতি সোনার কথা ভেবে এসব কিছুই দেখতে পেলে না হতভাগ্য শিশু। জন্মে থেকে খালি দেখছে ইট আর সিমেন্টের জঙ্গল। খেলার জন্য এক চিলতে সবুজ ঘাসে ভরা মাটিও অবশিষ্ট নেই। সবটাই গ্রাস করেছে হাই রাইজ আবাসনগুলো। এতে তো মনের সুকোমল বৃত্তি গুলো তৈরী হয় না। অবশ্য এটাই এখন সভ্যতার উন্নয়ন, হৃদয়ের স্থান এখন গৌণ।


আর কত দেরি করবেন বাবা ,আপনার ছেলে নিচে গাড়িতে অপেক্ষা করছে,চোখে চোখ রেখেই সময় কাটিয়ে দিলেন ,ছবি টা নিয়ে যান ওখানে টাঙাবেন। বৌমার কথায় স্মৃতির জগৎ থেকে আবার বাস্তবে ফিরে এলেন অনিকেত বাবু।


অনিকেত হালকা হেসে এক পলক ঘুরে দেখল,তারপর ছবি টা খুলে নিয়ে দরজা এগোতে গিয়ে পা আটকে গেল। সোনা পা ধরে আছে "দাদাই তুমি আর আসবে না" অনিকেত হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল।কপালে স্নেহ চুম্বন এঁকে দিয়ে বলল "বাবা কে দেখ দাদাই "।


এরপর ধীর পায়ে সিঁড়ি নীচে নেমে গেল।


:- এতক্ষণ কোথায় ছিলে? কতদূর যেতে হবে জান? চেক গুলো কোথায়?


অনিকেত ছেলের কথার উত্তর না দিয়ে চেকবুক টা ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিল।


:- এখন রাখো গাড়ি থেকে নেবে নেবো।


আসলে ফ্ল্যাটের ঐ ৩টি ঘরে এখন সত্যি খুব অসুবিধা হচ্ছিল। সোনাও বড় হচ্ছে এখন আরো জায়গার প্রয়োজন - ছেলে আর বৌমা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। অনিকেত ব্যাপারটা বোঝেন - তাই নিজেই বললেন যে ওনাকে বৃদ্ধাবাসে রেখে আসার জন্য। এই ভোলানাথ বৃদ্ধাবাসের নাম শোনাই ছিল, এখনকার বৃদ্ধাবাসের সুনাম আছে তাদের সার্ভিসের জন্য। এখানেই ঠিক করা হল অনিকেত বাবুর বর্তমান ঠিকানা। উনি তখন মনে মনে হাসলেন বাবা মা দেখে শুনে ভালো নামই রেখে ছিলেন। অনিকেত মানে গৃহহীন।


গাড়ি বারুইপুরের কাছে একটা আশ্রমে এসে ঢুকল। আশ্রমিকরা গাড়ি থেকে সব জিনিসপত্র নামিয়ে বলল আপনারা অফিসে বসুন অধ্যক্ষ আসছেন। "বাবা চল,অফিসে বসবে"।অনিকেত ছেলে কথায় কর্ণপাত না করে বাগানের দিকে এগিয়ে গেল আর ছেলে গিয়ে অফিসে বসল । অধ্যক্ষ বাগানেই ছিলেন ।


:- আরে অনিকেত বাবু কতো দিন পরে এলেন,শরীর ভাল তো?আপনার পাঠানো টাকা প্রতি মাসে ঠিক সময়েই পাই। আপনি একটু ঘুরে দেখুন,আমি পাঁচ মিনিটে আসছি, অফিসে একজন বসে আছেন।


অধ্যক্ষ অফিসে ঢুকলেন ।


:- "নমস্কার আমিই এই আশ্রমের অধ্যক্ষ", আপনিই ফোন করে বৃদ্ধাবাসের কথা বলে ছিলেন তো?


:- হ্যাঁ, আপনি ওনা কে চেনেন !!!


:- হ্যাঁ! উনি প্রতি মাসে আমাদের এই ভোলানাথ আশ্রমে টাকা পাঠান, আগে মাঝে মধ্যে নিজেও আসতেন। খুব সজ্জন মানুষ, আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে, নিজের সন্তান হয়নি বলে এই আশ্রম থেকে একটি শিশুকে উনি দত্তক নিয়ে ছিলেন ............।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract