Suvam Guchhait

Abstract Tragedy Others

4.5  

Suvam Guchhait

Abstract Tragedy Others

ভার্জিনিটি

ভার্জিনিটি

11 mins
369


বারবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছে রুনি। কখন থেকে বসে আছে পার্কের বেঞ্চে। না আর একবার ফোন করা দরকার। রুনি ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করে কল করলো সম্রাটকে। কিন্তু ফের ফোন কেটে দেয় সম্রাট।

আশ্চর্য , বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে কেন ও? বিপদ হলো নাতো। এইসব চিন্তায় মনটা ধুক পুক করতে লাগলো রুনির।

ঠিক আর ১০মিনিট পরে ও দেখলো সম্রাট ছুটতে ছুটতে আসছে। এসে ধপ করে বসে পড়লো ওর পাশে। হাপাচ্ছে ও।

" কি হলো? এত হাপাচ্ছ কেন?এই নাও জল" বলে ব্যাগ থেকে জল বেরকরে এগিয়ে দেয় রুনি।

জল খাওয়ার পর বোতল রাখতে রাখতে রুনি বললো " কতবার যে তোমায় ফোন করলাম, কত যে চিন্তা হচ্ছিল"

অভিমানী মুখটা হাত দিয়ে তুলে সম্রাট বললো আরে রাস্তা খুব জ্যাম।

দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে। দুজনে একটু ঘনিষ্ট হয়ে বসলো। সম্রাটের ঠোঁট যখন রুনির ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে তখনি হঠাৎ রুনি দেখলো ওর জামায় মেয়েদের মাথার চুল। কি ব্যাপার? রুনি কিছু বললো না।

কিন্তু সম্রাট যেই কিস করতে যাবে রুনি মুখ সরিয়ে নেয়।

" কি হলো?? আজ একবার করতে দাও"

"তুমি ভালো করেই জানো সম্রাট, আমার এইভাবে খোলা মেলা সবার সামনে ভালো লাগেনা,কেন তুমি বোঝোনা??"

সম্রাট কিছুক্ষন চুপ করে রুনির মুখ হাত দিয়ে তুলে জোর করে করতে চাইল। রুনি এক ধাক্কা ওকে সরিয়ে দিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে" একবার বললে তুমি বোঝোনা?"

" দূর শালা" বলে রাগে গজরাতে গজরাতে চলে গেল ।

রুনি অবাক। শুধু এই টুকুর জন্য এইভাবে ব্যবহার করলো সম্রাট??

সন্ধ্যা নামছে। আকাশ কালো। রুনির চোখে জল।।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটতে শুরু করলো রুনি। চারিদিক অন্ধকার,একাই বাড়ি ফিরতে হবে ওকে, তাই তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছিল। পার্ক পেরিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর মনে হলো কেউ যেন ওকে পিছু করছে। কিন্তু পিছন ঘুরে কাউকেই দেখতে পেলো না।

অতঃপর মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলো, কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎই, দুটো ছায়া ওর সামনে এসে দাঁড়ায়, রুনি চমকে ওঠে, "কে?"

মুখ তুলে লক্ষ্য করে দুটো আবছা ছায়া মূর্তি ওর দিকে এগিয়ে আসছে। এইদিকে আলোও ভালো নেই,তাই ভালো করে কিছু দেখাও যাচ্ছে না, লোক জন ও খুব বেশি নেই, কি করবে এখন ও।

এইসব ভাবতে ভাবতে লোক দুটো ততক্ষনে ওর সামনে এসে পড়ে। একজন এসে ওর হাত ধরে ফেলে।

রুনি হাত ছাড়িয়ে চেঁচিয়ে ওঠে" বাঁচাও"

আচমকা চেঁচানোয় লোক দুটো ভয়ই পেয়েছিল বোধয়, সেই সুযোগে রুনির দৌড়। কিন্তু ও একটা মেয়ে হয়ে কি ওই তাগড়াই চেহারার লোকের সাথে পারে,

কিছুদূর দৌড়ানোর পর লোক দুটো ওকে ধরে ফেলে, রুনির ভয়ের চোটে গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলনা।

কোনো এক অদৃষ্টের কারণেই হোক বা পুণ্যের জন্যই হোক একটা সিভিক পুলিশ ওখান দিয়ে যাচ্ছিল, রুনিকে ওই রকম অবস্থায় দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসে।

পুলিশ আসছে দেখে লোক দুটো রুনিকে ছেড়ে পালায়।

রুনি তখনও কাঁপছে।

পুলিশ টা ওকে কিছুদুরে রাস্তার একটা দোকানে নিয়ে গিয়ে জল দেয়। প্রায় ২০ মিনিট পর ও স্বাভাবিক হয়।

শেষে ওই পুলিশ টার সাহায্যেই ও বাড়ি পৌঁছায়।

বাড়িতে পৌঁছে মার থেকে একটু বকুনি খেতেই হলো এতটা দেরি হওয়ার জন্য। কিন্তু ভুল বসতও ও ওর মাকে আজকের কোনো কথাই বললো না।

এইবার আসি, রুনির কথায়, কে রুনি? কি তার পরিচয়?

রুনি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট বেলায় বাবাকে হারায়।

না, বাবা মারা যায়নি, ছেড়ে চলে গেছিলো একজন সুন্দরী ভদ্রমহিলার সাথে, তখন ওর বয়স আন্দাজ ৬ কি ৭ বছর। বাবাকে খুব একটা মনে নেই ওর,আসলে ও মনে করতেই চায়না,শুধু হালকা মুখ মনে আছে, সেই থেকেই মায়ের কাছেই মানুষ ও। বাবার গল্প ওর মায়ের থেকেই শোনা

ওর একটা বোন ও আছে। ও এখন স্কুলে পড়ে, ওর থেকে ৫ বছরের ছোট।

কলেজে পড়ার সময়ই আলাপ হয় সম্রাটের সাথে, তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ও। বন্ধুরা অনেক বলেছিল, এখন প্রেম করিসনা, আগে পড়াশুনা শেষ কর, কিন্তু প্রেমের মোহ যে কাটানো দুস্কর। তাই অন্য বন্ধুদের সাথে রুনির সম্পর্ক কমতে শুরু করে।

যার জন্য এত লড়াই, সেই সম্রাটই ওকে ভুল বোঝে। যাইহোক এইসব নিয়ে আর ভাবেনা ও।

সাধারণ ভাবেই দিন চলছিল। হঠাৎ একদিন ওর মা রান্না করতে করতেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়।

রুনি ভয় পেয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কোনোরকমে পাশের বাড়ির একটা দাদার সাহায্য নিয়ে মাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে।

হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। রুনি আর রুনির বোন ভয় পেয়ে যায়। মা ছাড়া যে মাথার উপর আর কেউ নেই ওদের।

৫মিনিট পর মার জ্ঞান আসে। ডাক্তার ভালো করে ওর মাকে পরীক্ষা করার পর বলে " দেখো তোমার মার ব্রেন টিউমার হয়েছে, যতটা তাড়া তাড়ি সম্ভব অপারেশন করতে হবে , না হলে আর কিছুই করার থাকবে না"।

কথা গুলো শুনে রুনি একদম চুপ করে যায়, ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

কিছুক্ষন পর বলে " আচ্ছা তাহলে অপারেশন টা তাড়াতাড়ি করে ফেলুন, যে করেই হোক আমার মাকে বাঁচান"

ডাক্তার বলে " সেতো করবোই, কিন্তু প্রায় ৫লাখ লাগবে, পারবেন জোগাড় করতে??"

রুনি সাতপাঁচ না ভেবেই বলে দেয় হ্যাঁ পারবো।

ডাক্তার সাথে সাথেই ভর্তি করে নেয় ওর মাকে।

কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলনা। কার কাছে যাবে?? ওর কাছে তো এত টাকাও নেই।

সম্রাটকে ফোন করে ও।

" আমার মার খুব শরীর খারাপ, প্লিজ আমায় কিছু টাকা ধার দেবে??"

" কত টাকা?"

"৫ লাখ....."

" what?? তুমি কি পাগল?? এত টাকা পাবো কোথায়?? ফোন রাখো ব্যাস্ত আছি"। এই বলে মুখের উপরই ফোন কেটে দেয় সম্রাট।

রুনির মুখে কোনো কথাই বেরোচ্ছিল না আর। কি করবে এখন ও?

রাতে বোন কে নিয়ে বাড়ি ফেরে। ৪ দিনের মধ্যে টাকা ওকে যে ভাবেই হোক জোগাড় করতে হবে, না হলে ওর চোখের সামনে ওর মা তিলে তিলে মরে যাবে।

নাহ,, আর ভাবতে পারলো না।

বোন কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে সারা রাত জেগে রইলো ও। কি করবে?? কোথায় পাবে? কোথায় যাবে??

পরের দিন সকালে হঠাত পাশের বাড়ির দাদা টা আসে হাজির।

" কি হলো? এত সকালে??"

"তোর জন্য খুব খারাপ লাগছে, শুনলাম সব টাই,"

"হুম"

" শোন আমি তোকে ৫লাখ দিতে পারি,"

" তুমি?? কেন হঠাৎ??"

" তোর মায়ের এইরকম অবস্থা, আমি সাহায্য করবো নাতো কে করবে??"

" না না, আমি নিজেই ব্যবস্থা করে নেব, চাকরি করে মা কে ভালো করে তুলবো"।

" সে নয় করিস, কিন্তু তোর হাতে যে বেশি সময় নেই রুনি, তোকে আমি চাকরি দেব, তুই চাকরি করে আমায় টাকা টা শোধ করে দিস"।

কথাটা বেশ মনে ধরলো রুনির। এতক্ষন চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখছিল, এখন যেন একটু একটু করে আশার আলো পাচ্ছে।

" কি বলে যে তোমায় ধন্যবাদ দেব, অরুন দা, কথা দিলাম চাকরি করে সব শোধ করে দেব, তুমি সত্যিই ভগবান"।

অরুন দা বললো " ঠিক আছে চল, তোর বায়োডাটা আছে তো??? নিয়ে চল, আজই তোর একটা হিল্লে করেদি"।

রুনি ভীষণ খুশি। সব কিছু নিয়ে চললো অরুনদার সাথে, একটা আশার আলোকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠার জন্য।

চাকরিটা পেলো রুনি, বেশ মোটা মাইনের চাকরি। মাসে ২০ হাজার। একটা জীবনবিমা কোম্পানিতে।

" অরুনদা ধন্যবাদ , তাহলে ৫ লাখ টা??"

" হ্যাঁ রে কাল পরশুর দিকে পেয়ে যাবি, টাকা টা তুলি"।

এই বলে অরুনদা চলে গেল। রুনিও আনন্দে বাড়ি ফিরলো, বোন কে সব কথা বললো। বোন ও খুব খুশি।

পরেরদিন অফিসে গেল। কিন্তু বড় অদ্ভুত ব্যাপার আর পাঁচটা কোম্পানির মতন নয় দেখতে। সাধারণ বাড়ি। ভেতরে গোটা পাঁচেক লোক, তার মধ্যে ২জন মেয়ে। পরিবেশ তেমন ভালো লাগলনা ওর। কিন্তু ওর ইন্টারভিউ হলো অন্য জায়গায়। কিছুই বুঝতে পারলো না ও। যাই হোক এখন ওর অনেক টাকার দরকার, এইসব উল্টো পাল্টা ভেবে লাভ নেই।

ঢুকে একটা চেয়ারে বসলো ও।একটা লোক এসে ওর হাতে একটা ফাইল দিয়ে বললো, " এই লোকটা আমাদের গ্রাহক, এনার কাছে যাও, ইন্স্যুরেন্স টা করিয়ে আনো"।

রুনি লোকটার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে চলে গেল।

লোকটার বাড়ির সামনে পৌঁছানোর পর বেল বাজলো, তার আগে ভালো করে চারপাশ দেখেনিল। খুব বেশি লোক নেই । এমন ফাঁকা জায়গায় কিভাবে একটা লোক থাকতে পারে??

লোকটা দরজা খুলে বললো " কে আপনি?"

রুনি নিজের পরিচয় দিতেই লোকটা বললো " আরে আসুন আসুন ভেতরে আসুন"।

সোফায় বসতে দিয়ে লোকটা ঠিক তার উল্টো দিকে রাখা একটা চেয়ারে বসলো।

রুনি সব কিছু এবার বলতে শুরু করলো।

৫,১০ মিনিট বলার পর রুনি লক্ষ্য করলো লোকটা কেমন যেন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে। রুনি যেন একটু আড়ষ্ট হয়ে বসলো।

লোকটা বুঝতে পেরে বললো " কফি খাবেন?"

" না না, আমি কফি খাইনা"

" বেশ তবে চা??"

রুনি ঘাড় নাড়তেই লোকটা উঠে গেল রান্না ঘরে চা করতে।

সেই সুযোগে রুনি বেশ ভালো করে বাড়িটা দেখতে লাগলো। ৩মিমিট পর লোকটা চা নিয়ে এসে রাখলো। " নিন খেয়ে নিন, নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে"।

রুনি চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করলো, জীবনবিমা শর্ত গুলো,

ঠিক মিনিট ৬ র পর চা শেষ করার সাথে সাথেই কেমন যেন হতে লাগলো রুনির। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

যখন ওর জ্ঞান ফেরে তখন দেখে, ও একটা ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে। আর সে অর্ধনগ্ন,,,,,,,,,।

কিছু বুঝতে পারে না ও। তড়িৎ বেগে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে ও। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে পার কাছে চাপ চাপ রক্ত, আর মেঝের উপর পড়ে আছে ওর জামা প্যান্ট।

চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে ওর। কোনো রকমে নিজেকে সামলে বাকি জামা কাপড় পড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসার পথেই বাধা পরে ওর। ওই লোকটা সামনে।।

রুনি লোকটার সব বাধা অগ্রাহ্য করে ঠেলে ফেলে দিয়ে বেরোনোর দরজা খুলে তীর বেগে বেরিয়ে আসে ও। এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা দৌড়।

১০মিনিট দৌড়ানোর পর বড্ডো হাঁপিয়ে পড়ে ও।

এটা কি হলো ওর সাথে?? মাঝ রাস্তাতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে ও।

কোনো রকমে বাড়ি পৌঁছেই সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে ঢোকে ও।

সারা শরীর এখন তার অপবিত্র, ও যে আর পবিত্র রইলো না,, হায় ভগবান। এইসব ভাবতে ভাবতে ভীষণ কাঁদতে থাকে ও।

এইদিকে বোন বার বার জিগ্যেস করতে থাকে " দিদি তোর কি হয়েছে?? বলনা,, দিদি"।

কিছুক্ষন পর স্নান সেরে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দেয়। বোনের ডাক ও আজ ওর কাছে অসহ্য হয়ে উঠছিল।

মুখ ঢেকে বিছানার উপর বসে রুনি।

শান্ত, ধীর, চোখে তার আর জল নেই।। কেঁদে কি হবে?? যা সর্বনাশ হওয়ার তা তো হয়েই গেল, বেঁচে থেকে কি লাভ??।

আত্মহত্যার কথা যখন মাথায় ঘুরছিল ঠিক তখনই হাসপাতাল থেকে ফোন আসে।

ব্যাগ টা খুলে ফোন বের করতে গিয়েই অবাক, ব্যাগর ভিতর এক তাড়া নোটের বান্ডিল।

ফোনটা ধরে ও।

" হেল,, রুনি বলছেন?? আপনার মার অবস্থা খারাপ, এখুনি অপারেশন করতে হবে, ৫০হাজার টাকা জমা দিতে হবে।"

দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটে গেল হাসপাতালে।

হাসপাতালের কাউন্টারের গিয়ে ব্যাগের ভিতর রাখা টাকার বান্ডিল টা দিয়ে দিল।রুনি তখনও জানেনা ওতে কত টাকা আছে।

যখন টাকা নিলো ওরা তখন বললো " ম্যাডাম , ২০ হাজার টাকা বেশি আছে"।

এই বলে ফেরত দিয়ে দিল ওরা। তখন রুনি বুঝলো ওর ব্যাগে ৭০ হাজার টাকা ছিল।

তখন সব কিছু আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে শুরু করে রুনির সামনে।

এই সময় ভীষণ ভাবে মনে হতে লাগলো রুনির যে সম্রাটের কোলে মাথা দিয়ে কাঁদবে।

ফোন করলো ওকে।

রিং হলো। ফোন ও তুলল। হঠাৎ পাশ থেকে একটা অপরিচিত মহিলা কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো, " আরে ফোন টা রাখো না"।। সাথে সাথেই সম্রাট বেস্ত আছি বলেই ফোন টা কেটে দেয়।

খুব রাগ হলো রুনির। সব পুরুষই এক। শরীর বোঝে, রুনি প্রায় মনস্থির করেই নিয়েছিল এইভাবেই যদি আয়ে তার মা বাঁচে, তাহলে এই ভাবেই করবে ও আয়ে। আজ নিজের সতীত্বের থেকে মায়ের জীবন অনেক অনেক বেশি দামি রুনির কাছে।

আর কিসের সতীত্ব?? কিসের ভার্জিনিটি?? সব মিথ্যে। সব পাগলের প্রলাপ।

পরেরদিন ফের সে সেই অফিসে যায়। এই ভাবেই রোজগার করে ধীরে ধীরে মা কে সুস্থ করে তুলল।

কিন্তু কোথাও যেন তার অপরাধ বোধ হতে লাগলো। মা যদি জানতে পারে এইভাবে তাকে রুনি বাঁচিয়েছে, তাহলে তখনই মরে যাবে। না, যাই হয়ে যাক মা কে জানতে দেওয়া যাবে না।

আর এই কাজ সে করবেও না।

মা বাড়ি ফেরার ২দিন পর থেকেই কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। তারপর থেকেই বার বার ফোন আস্তে শুরু করে। অরুনদার ও ফোন আস্তে শুরু করে। বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখে। কিন্তু কতদিন!!? কতদিন মুখ লুকিয়ে বাঁচবে রুনি??

এই দিকে সম্রাটের সাথেও সম্পর্ক শেষ। তিলে তিলে শেষ হচ্ছে রুনি।

হঠাৎ এক বিকেল বেলায় অরুনদা এসে হাজির।

" কি ব্যাপার?? তুমি??"

" হ্যাঁ, আমি। কাজে যাচ্ছিস না??"

"কাজ???" বলে ঝাঁঝিয়ে ওঠে রুনি, "এটা কাজ??তোমায় দাদা বলতে ঘেন্না হয় আমার, কত ভরসা করেছিলাম তোমার উপর। শেষ মেস এই প্রতিদান দিলে?? ছি ছি ছি"।

"আজ আমার জন্যই নিজের মা কে ফিরে পেলি মনে রাখিস"

"আমি আর কাজে যাবো না, তুমি চলে যাও"

' আস্তে আস্তে কাকিমা শুনলে মরে যাবে" বলে একটা নোংরা হাসি হাসে অরুন দা।

রুনি চুপ। অরুন দা ফের বলে " ঠিক আছে যাস না, এইটাই তোর শেষ কাজ, এই টা করে দিলেই তোর ছুটি"।

আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় অরুন।

রুনি মুখ বুজে সবটুকু সহ্য করে।

কথা মতন তার শেষ কাজ করতে যায় ও। "আজকের পর মুক্তি" এই কথাটাতেই ভীষণ খুশি ওর মন।

অন্যান্য দিনের মতন ফাইল ও ঠিকানা নিয়ে চলে যায় রুনি শেষ কাজ সমাপ্ত করার জন্য।।

ঠিকানায় পৌঁছানোর পর বেল বাজলো রুনি। কেউ দরজা খুলল না। ৫ মিনিট অপেক্ষা করার করার পর দরজায় একটু ঠেলা দিলো। দেখলো দরজা ভেতর থেকে খোলা।

ভিতরে ঢুকে দেখলো কেউ নেই। ডাকলো রুনি " কেউ আছেন?"

বাথরুম থেকে আওয়াজ এলো" ভেতরে বেডরুমে বসুন আসছি"

রুনি অবাক, বাবা সবই আগে থেকে জানে নাকি?? ভালো অযথা নেকামো সহ্য হয়না রুনির।

বেডরুমে ঢুকে জামা টা খুললো রুনি, অন্তর্বাস খোলার সময়ই পায়ের আওয়াজ এলো ওর পেছন দিকে।

ওই অবস্থাতেই মুখ ঘোরালো রুনি।

যা দেখলো তাতে ওর মুখ থেকে একটাও কথা বেরোলনা। এ কি দেখলো?? কেন দেখলো রুনি?? এটা কি চোখের ভুল?? এতটা চোখের ভুল কি হতে পারে??

লোকটা ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো রুনির দিকে। নিজের জামা খুলে বিছানায় শুয়ে দিলো ওকে।

রুনির মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে একটাই কথা বেরোলো " বাবা",,,,,,।

হায়রে হতভাগ্য মেয়ে।। কোথায় কোথায় না নির্যাতিত হতে হয়। প্রতি পদে পদে অপমান আর লাঞ্ছনা। আর কত??

কাকে বিশ্বাস করবে রুনি?? বাবা কে?? যে ওর মাকে ছেড়ে চলে গেছে??

সম্রাটকে?? যে অন্য মেয়ের জন্য ওকে ছেড়ে দিল। যার কাছে শরীর সব।

অরুনদাকে?? যে টাকার লোভে বোনের মতন একজন কে বেচে দিতে পারে। কিন্তু তাও অরুনদাই ওর মাকে বাঁচাতে সাহায্য করেছে।

সেই পুলিশ কে?? যে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়েছে?? নাকি সেই ডাক্তার , যে তার মাকে মৃত্যু থেকে বাঁচিয়েছে।

কোনটা ভালো কোনটা খারাপ!? কে ভালো কে খারাপ?? সবাই কি সমান?? নাকি কিছু ভালো মানুষও আছে??

নাকি সবটাই শরীর ঘিরে?? বড্ডো সস্তা।

আসল বোধহয় সবটা আলো আঁধাররের খেলা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract