Suvam Guchhait

Comedy Romance Others

3  

Suvam Guchhait

Comedy Romance Others

অ্যারেঞ্জ নাকি লাভ মেরেজ??

অ্যারেঞ্জ নাকি লাভ মেরেজ??

6 mins
105



............ "উফফ, কতদিন না আপনাকে বলেছি, এইভাবে জিনিস গুলো ফেলে যাবেন না। আমার কি কষ্ট হয়না???"

" কষ্ট??কিসের কষ্ট??উফফ আমার আর ভালো লাগছেনা, আমি ফোন রাখছি।"

"সেই তো। এখন তো আর ভালোই লাগবে না আপনার।......"

"ধের....."

পিপ পিপ... রেগে মেগে বাধ্য হয়ে ফোন কেটে দেয় অজয়। উফফ জীবনটা পুরো "জীবন্ত যমালয়" হয়ে গেছে ওর।

কি কিছু বুঝলেন না তো?? বুঝবেন একটু অপেক্ষা করুন। এত তাড়াতাড়ি ধৈর্য হারালে চলবে মশাই?? 


ফোন রেখে সবে মাত্র কাজে মন দিয়েছে, ফের ফোন।

স্ক্রিনে ভেসে উঠলো " ডাকিনি" । 

উফফ ইনি কে? ফোন কেটে দেওয়ার পর ও ফোন করে ??ফোনটা সাইলেন্ট করে উল্টে রেখে দেয়।

কার পাল্লায় যে পড়েছে অজয়, মাত্র 2 মাসে সে বেশ বেশ বুঝতে পারছে।

নিতান্তই বেশ ভালো ছেলে অজয়। পড়াশুনায় ব্রিলিয়ান্ট যাকে বলে, অজয় সেই গোত্রের মধ্যেই পড়ে। তবে কলেজে উঠলে যা হয় আরকি একটু পাখনা গজায়। হ্যাঁ সব মানুষের গজায়, কারোর ছোট, কারোর বড়। তবে তা দেখা যায়না।

অজয়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়। তবে ছোট পাখনা। পড়াশুনায় ভালো থাকার দরুন কলেজে মোটামুটি ভাবে সে ঠিক "প্রথম" বা "দ্বিতীয়" হয়েই যেত। কিন্তু সে নিয়ে বিন্দুমাত্র গর্ব ছিলোনা ওর। বন্ধুরা বেঁকা চোখে দেখতো বটে, আর দেখাটাই স্বাভাবিক কারণ কোন ছেলে প্রেম করেও প্রথম বা দ্বিতীয় হয়??

ইতিহাস সাক্ষী মশাই, বিশ্বাস করুন কেউ হয়নি। কেউ টেনে টুনে পাস করেছে নচেৎ ডুবেছে। অজয়ের কিভাবে ঠিক বিপরীত হয় তা কেউ বুঝতে পারতো না।

ফাস্ট সেকেন্ড ইয়ারে বেশ চুটিয়ে প্রেম করলো অজয় আর অহনা। বিয়ের কথা বার্তা প্রায় হবো হবো। এমন সময় ঘটলো বিপত্তি।

হ্যাঁ আপনারা ঠিকই ধরেছেন আর পাঁচটা কলেজ প্রেমের মতন এটাও ভোকাট্টা। সরকারি চাকুরিজীবি ছেলে। বাবা মার এক মাত্র সন্তান। মেয়ে কি আর থাকে?? তবে এটা ঠিক যে মেয়ে লড়েছিলো বাবা মার সাথে, কিন্তু ওই আর কি শেষমেষ যা হয়। বাবা মা জিতেই গেল। আর বেচারা অজয় যে কিনা কোনো দিন প্রথম বা দ্বিতীয় ছাড়া কিছুই হয়নি, খেয়ে গেল গোল।

তারপর আর পাঁচটা মন বা হৃদয় ভেঙে যাওয়া পুরুষের মতন দেবদাস হয়ে গেল। কিন্তু ....কিন্তু তাতেও অজয়ের দ্বিতীয় বা প্রথম হওয়া কেউ টলাতে পারলো না।

ছেলে ভালো তাই বোধ হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে একটা জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠলো ও।

আরে দূর মশাই সব দেবদাস কি মদ ই খাবে নাকি?? এমন ধারণা ভুল। ইনি দেবদাস ঠিকই কিন্তু আশ্চর্য রকম ভাবে ওইসব কিছুর নেশাই করলো না। 

বিরহ যন্ত্রনায় কাতর প্রেমিকের মতন শুরু করলো বিরোহের কবিতা, বিরোহের গল্প লিখতে। 

রোজ খাতার মধ্যে পেন না পেনের মধ্যে খাতা গুঁজে পড়ে থাকে তা কেবল ওই জানে।

এমন দৃশ্য স্বাভাবিক ভাবেই অজয়ের মা বাবা ঠিক মেনে নিতে পারেলন না।

তার কারণ ওই যে একটাই " আমার ছেলে। একটা ছিঁচকে মেয়ের জন্য এইভাবে থাকবে?? মোটেও না।মোটেও না। আমি আমার ছেলের ভালো জায়গায় বিয়ে দেব। "।

সত্যি বলতে অহনাও কিন্তু খুব একটা সুখী হয়নি। NRI ছেলে মানেই একটু মদ, একটু সিগারেট আর একটু ওই আর কি?? ( আরে মশাই সব কি খুলেই বলতে হবে? একটু বুঝেও নিন না)।

কিন্তু উপায় কি? বাংলা সিরিয়ালের ওই একই রগরগে উত্তেজনা হীন স্ক্রিপ্টের মতন চিপকে থাকতে হবে সারা জীবন। মুক্তির উপায় প্রায় নেই বললেই চলে।


তো অজয়ের বিয়ে দেওয়া হবে। ঠিক করলো সবাই। কিন্তু মেয়ে কই? সত্যি বলতে এখন মেয়ে পাওয়া খুবই কঠিন। ( আপনি পারলে আগে থেকে পটিয়ে রাখুন। ভবিষ্যতে নাও পেতে পারেন)। হুলুস্থুল কান্ড সে এক।মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, থুড়ি মনের মতন মেয়ে। 

অজয়ের অবশ্য এইসব দিকে বিন্দুমাত্র লক্ষ্য নেই, ও মজে আছে কবিতা গল্পে। স্বাভাবিক ভাবেই, বউ বলে কথা। তবে ওই আর কি একটাই জিনিস পারে না চুমু খেতে । 

এইদিকে অজয়ের বাবা মা নাকি মেয়ে খুঁজেও পেয়ে গেছেন।খুব সুন্দরী, ভদ্র, সুশীলা।

তবে অজয়ের তাতে তেমন কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বিয়ের দিন এগিয়ে এলো। কিন্তু অজয়ের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তবে এখানে একটা কথা বলা দরকার অজয় ইতিমধ্যে একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে। জোটাবেই না কেন? ভালো ছেলে। তাই আরও একটু ব্যস্ত এখন। 

বিয়ে কার সাথে, কেমন দেখতে এইসব ও কিছুই জানেনা। ভাবতে পারেন আজকালকার ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েরা যেখানে প্রেম করে নিজেরাই বিয়ে টিয়ে পাকাপাকি করে ফেলছে, সেখানে অজয় নাকি মেয়ে দেখেনি,জানেও না কেমন দেখতে? কেমন ব্যবহার। তাই বন্ধুরা তো রোজ বলে " ভাই এইরকম ভাবে বিয়ে করিসনা, মারা পড়বি"।

কিন্তু প্রতিবারই অজয়ের একটাই কথা " দু বছরে কিছুই বুঝলাম না। আর দু দিনে কি বুঝে যাবো??"

কথাটা একটু হলেও সত্যি বটে।


এদিকে বিয়ের দিন এগিয়ে এলো। অজয়ের হুঁশ নেই। ও ব্যস্ত কাজ আর সাহিত্য চর্চায়। এদিকে অজয় কিন্তু একটু হলেও রোমান্টিক হয়ে উঠছে, তার কল্পনার বউয়ের জন্য একটা কবিতাও লিখে ফেলেছে। ফুলশয্যার রাতে শোনাবে বউ কে।

বিয়ের দিন অজয় উপস্থিত হলো শ্বশুর বাড়ি। বেশ খাতির অভ্যর্থনা করেই ওকে আনা হলো। মনে হচ্ছিল ছাগল কে বলির দেওয়ার আগের মুহূর্ত। বেশ সুন্দর সুগন্ধি গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে একটা দারুন ব্যাপার বটে। মনে মনে বেশ অস্বস্তি করছিল অজয়ের। স্বাভাবিক, জীবনের প্রথম বিয়ে। অন্যদের মতন প্র্যাক্টিস করে তো আসেনি।


এইবার এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

শুভদৃষ্টির পালা। এই প্রথম অজয় তার ভবিষ্যতের অর্ধাঙ্গিনী কে দেখবে। ভাবা যায়। একটা দারুন উত্তেজনা ওর শরীরে উপর থেকে নিচে অবধি বয়ে গেল। গায়ের রোম অবধি খাড়া হয়ে উঠলো অজয়ের। 

ধীরে ধীরে পান পাতা নামছে। এদিকে ঘামছে অজয়। দুরু দুরু তার বুক। কি হবে জানা নেই। কেমন দেখতে কে জানে?

পান পাতা পুরোটা নামার পর অজয়ের মুখ হা। চোখের সামনে এ কি দেখছে ও?? এও কি সত্যি??

 আজকালকার দিনে যদি কোনো ছেলে মেয়ে না দেখে একে বারে বিয়ের পিঁড়িতে মা বাবার পছন্দ করা ছেলে বা মেয়ে কে বিয়ে করে তবে আমি নিশ্চিত ওরা অজ্ঞান হয়ে যেতই। কিন্তু অজয়ের মা বাবার বেশ প্রখর দৃষ্টি আছে বলতে হবে। 

অসাধারণ দেখতে। হয়তো সুন্দর বললেও কম হবে।

অজয়ের মন থেকে আচমকাই অহনা উধাও হয়ে গেল। এখন শুধু সেই রাতের অপেক্ষা। ( ভেবে নিন যা খুশি)।

কিন্তু এখানেই তো টুইস্ট। অজয়ের জীবনে নামলো অজানা অন্ধকার।

সিঁদুর দান হওয়ার পর অজয় এমনি , দামিনির হাতে একটা ছোটো চিমটি কাটলো, অজয় ভেবেছিল বুঝি বউ তার দিকে একটা মিষ্টি দৃষ্টি দিয়ে তাকাবে,কিন্তু হলো উল্টো। একটা কটমট করা চোখ ধেয়ে এলো ওর দিকে। ব্যস অজয়ের সব শেষ। আর সাহস করেও ওদিক মাড়ায় নি।

কালরাত্রি কাটলো। তারপর এলো সব পুরুষদের প্রতীক্ষিত সেই বৌ ভাতের দিন।( আপনার কি ভাবলেন???)।

সবই কাটলো , অজয়ের বাবা ভালো করে বুঝিয়ে সুজিয়ে অজয় কে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা দিলো বন্ধ করে। দরজা বন্ধের আওয়াজে অজয়ের শরীর কেঁপে উঠলো ভয়ে। বিছানার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে অবাক হয়ে গেল ও। বউ যে তার ঘুমিয়ে পড়েছে। যাক একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। না হলে যে কি হতো কে জানে। অজয় কি ভেবেছিল আর কি হলো। আরেঞ্জ মেরেজ ও মনের মতন হলোনা ওর। ধুস। 

বালিশ কে বগলদাবা করে মাটিতেই শুয়ে পড়লো ও।

পরের দিন বউয়ের ডাকে ঘুম ভাঙল অজয়ের, " এই যে শুনছেন। আপনার চা"

চোখ খুলেই বউয়ের সেই অপরূপ রূপ দেখে ফের একবার মুগ্ধ হলো অজয়। চায়ের কাপ নেওয়ার বাহানায় একবার হাতটা ছুঁলো ও। তারপরে যা ঘটলো তার জন্য অজয় বোধ হয় একদম প্রস্তুত ছিল না ।

" আপনাকে না কতবার বলেছি গায়ে হাত দেবেন না। এমন পরপুরুষের ছোঁয়া আমি পেতে চাইনা।"

অজয় ঢোক গিলে বললো " পরপুরুষ কে?? আমি যে তোমার স্বামী"।

" স্বামী তো??আপনাকে আমি চিনি কি?? চিনিনা। তাহলে হলেন তো পরপুরুষ।"

অজয় ঠিক কি বলবে বুঝে উঠতেই পারলো না। অনেক কষ্ট করে বললো " বলছি, তুমি তো আমায় তুমি করেই বলতে পারো। আবার আপনি কেন??"

দামিনী আরো খানিকটা রেগে উঠে বললো " দেখুন ওই একবার দেখাতে কেউ আপন হয়না। তাই আপনি করে বলবো। আর আপনিও তাই বলবেন।।আর বিয়ে হয়েগেছেই মানে যেখানে সেখানে ছোঁয়ার চেষ্টাও করবেন না।"

একি হলো অজয়ের জীবনে!!! এ যে মেঘ না চাইতেই বজ্রবিদ্যুৎ!! ব্যাস সেদিন থেকেই অজয়ের জীবনের শনির সাড়ে সাতি শুরু। অজয় বুঝেই উঠতে পারেনা যে লাভ মেরেজ ভালো নাকি আরেঞ্জ। আর ইনি আদপে বউ নাকি অন্য কিছু? 

খুব মুশকিলে জীবন কাটছে। পান থেকে চুন খসলেই যমালয়। তাই তো শখ করে বউয়ের নাম দিয়েছে "ডাকিনি"। অত্যন্ত সতর্ক তো থাকা যাবে। না হলে কোনোদিন হয়তো বেচারা অজয়কে তুলে দুটি আছাড় দিয়ে দিল। বলা তো যায়না।। বউ বলে কথা।।সবই সম্ভব।

উফফ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy