ভার্জিন
ভার্জিন


ফুলশয্যার রাতে মিমি কে প্রশ্ন করেছিলো সুগত ,"তুমি কি ভার্জিন?" মিমি অবাক চোখে দেখছিলো সুগত কে। আজকালকার যুগেও এই ধরণের প্রশ্ন কেউ করতে পারে বলে মিমির ধারণা ছিল না। প্রথমটা একটু হতবাক হয়ে গেলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে
মিমি র অকপট স্বীকারোক্তি, "ভার্জিন মানে যদি সতীত্ব হারানোর কথা জিজ্ঞেস করতে চাইছো তুমি, তাহলে বলবো সে অর্থে আমি ভার্জিন। আমার কোনো পুরুষের সঙ্গে সহবাসের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু যদি এটা মনে মনে ভেবে রেখেছো যে, আমার হাইমেন এখনও অক্ষত আছে, সেটা তোমার ভুল ধারণা হলেও হতে পারে। কারণ যেহেতু আমি একজন নৃত্যশিল্পী, তাই হয়তো ওটা অক্ষত নাও থাকতে পারে। আসলে যখন নাচ করতাম, তখন মাথায় এটা ছিল না তো, ভবিষ্যতে আমাকে এরকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।"
সুগত মিমির এই স্পষ্ট স্বীকারোক্তি তে আর কোনো কথা জিজ্ঞেস করতে সাহস পেলো না। মিমির কাছে গিয়ে একটু ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করলো। কিন্তু মিমির মনে যে সুগতর প্রতি একটা ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল, সেটা এই একটা প্রশ্নের মাধ্যমেই মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল,"তুমি কি ভার্জিন"? আর তাই ও সুগতকে চাইলেও আর মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না। কই ও তো সুগতকে একবার ও জিজ্ঞেস করেনি যে, সুগত এখনও ভার্জিন আছে কিনা। নাকি ভার্জিনিটির যত সংজ্ঞা শুধু মাত্র মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মিমি এই ভার্জিন কথাটা নিয়ে এর আগেও অনেক কিছু শুনেছে। আগেকার দিনে নাকি স্ত্রী ভার্জিন কিনা জানবার জন্য, ফুলশয্যার রাতে সাদা চাদর পেতে রাখা হতো বিছানায়। সকালে সেই চাদরে যদি রক্তের দাগ দেখা যেত, তবে সে মেয়ে ভার্জিন। আর না দেখা গেলে সে মেয়ে অসতী। কিন্তু সে সব তো আগের ধ্যান ধারণা। এখনও কেউ এধরণের ধারণা রাখতে পারে নাকি? তার মানে হাইমেন বা সতীচ্ছদই একটা মেয়ের সতী বা অসতী হবার মাপদন্ড হিসাবে বিবেচিত হতো। বর্তমানে যদিও এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে কিছুদিন আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এধরণের কথাবার্তা নিয়ে বিস্তর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সুগত পরের দিন রাতে এই ব্যাপারটা ভুলে গেলেও মিমি কিন্তু ব্যাপারটা ভুলতে পারেনি। তাদের দুজনের দাম্পত্য জীবনে এই একটা শব্দ 'ভার্জিন' কাঁটার মতো মিমির অন্তরে বিদ্ধ হচ্ছিল। মিমি জানেনা এই কাঁটা সে কোনোদিন উঠিয়ে ফেলে দিতে পারবে কিনা তাদের বিবাহিত জীবন থেকে। আর তাই পরের দিন সে নিজেই সুগতকে বললো,"কাল রাতে যে প্রশ্নটা। তুমি আমাকে করেছিলে, তার উত্তর তো আমি তোমাকে দিয়েছি। কিন্তু আরো একটা কথা তোমাকে জানিয়ে রাখি। যে হাইমেনকে শুধুই একটা মেয়ের চরিত্রের মাপকাঠি হিসেবে না ধরে, বরং এটা জেনে রাখা তোমার জন্য জরুরি যে এটা নারী শরীরের অত্যন্ত জরুরি একটি অংশ। যা বাচ্চা বয়সে মেয়েদের যৌনাঙ্গকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও পিরিয়ডস হবার পর রক্তের স্বাভাবিক স্রোত নির্ধারণ করে এই হাইমেন। আর তাই বলতে পারো নারীরের অন্যান্য অঙ্গের মতই হাইমেন ও নারী শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের রক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করে। তোমার মতো কিছু প্রাচীনপন্থি লোকের ভার্জিনিটির সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য নয়।"
"কিন্তু মিমি আমি তোমাকে সেভাবে কথাটা বলতে চাইনি। আর যদি আমার এই ধরণের প্রশ্নে তুমি অসহজ অনুভব করেছো, তার জন্য আমি দুঃখিত। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তোমার কাছে।"
মিমি অত্যন্ত সাবলীল ভাবে বললো সুগতকে,"এটা অসহজ বা সহজ অনুভূতির প্রশ্ন না। প্রশ্ন হচ্ছে আমার আত্মসম্মান বোধের। যেটাকে তুমি এই একটা প্রশ্নের মাধ্যমে যথেষ্ট আঘাত করেছো। আর সুগত ভার্জিনিটি একটা মেয়ের শরীরে না, মানুষের মনেতে, তার দৃষ্টিভঙ্গিতে খোঁজাটা বেশি জরুরি।
পরের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। একজন এ যুগের স্বাধীনচেতা মেয়ে হিসাবে মিমির আত্মসম্মান বোধ যথেষ্ট আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে সুগতর এই প্রশ্নে। আর তাই ও সুগতকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয় যে, সুগতর সঙ্গে ,ওর এই মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে চলা মিমির পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। আর তাই সুগতর সঙ্গে থাকাও ওর পক্ষে সম্ভব নয়। আর তার সঙ্গে মিমি একথাও বলেছিল সুগতকে, যে যদি সুগত বিয়ের আগে এই প্রশ্নটা করতো, তাহলে ও তখনই এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিতো। অবশ্য এখনও ও সেটাই করবে। কারণ একটা মানুষের প্রকৃত অর্থে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য একটা সুস্থ মানসিক বোধ সম্পন্ন হওয়াটাও যেমন গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমনি তার স্ত্রী বা অন্যান্য মেয়েদের আত্মসম্মান রক্ষা করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর সুগত সেই ভুলটাই করেছে। সে ভুলে গেছে নারীর ভার্জিনিটি শুধুমাত্র তার শরীরে খুঁজতে গিয়ে সে একজন নারীকে অসম্মানই করেছে। আর এর মূল্য তো সুগত কে দিতেই হবে।