ভালো শাঁকচুন্নী
ভালো শাঁকচুন্নী
শিশু হলেই ভালো হতো। বেশ সহজ সরল মন হতো। আজ কাল শহরের সভ্যতার পেচে যাওয়া লাশটা শৈশব কে নষ্ট করে দিচ্ছে। যে ঠাকুরমার কাছে আমরা রূপকথার গল্প শুনতাম। তার বৃদ্ধ আশ্রমে, বন্ধু বান্ধব মাসি পিসি,কাকা দাদু জায়গা নিয়েছে এখন মোবাইল ফোন।
যাইহোক আমার শৈশবটা ছিলো মজাদার। তবে আপনাদের মতো গল্প বলা ঠাকুর মা দিলো না। বরং একটা কাঠের চাকা ওয়ালা ঘোড়া পুতুল ছাড়া সময় কাটানোর মতো খেলনা ছিলো না। আমায়। কিন্তু তবুও মাকে কাজ বেড়িয়ে যেতে হতো আমাকে একা রেখে। একটা ই কথা বুঝতে চাইতো মা বাবা বাবার একটা ভালো চাকরি পেলে আমরা অনেক খেনলা থাকবে, নানা রঙের জামা কাপড় থাকবে।
আমি কিছু বলতাম না। কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে যখন কম ভাড়া জন্য পুরাতন ঘর ছেড়ে নতুন বাড়িতে এলো। এবাড়ি খুব একটা খারাপ না অনেক গাছ পালা আছে। প্রথম দিনতো আমাকে মাকে ডাকতে হয়নি, একটা টিয়া পাখি আমাকে চ্যাচামেচি করে তুলে দিয়ে ছিলো। সারাদিন এখানে কেটে যাবে শালিক পাখির ঝগড়া শুনে, কোকিল পাখিকে ভেংচিয়ে, পানকৌড়ির মাছধরা দেখে।
তবে একদিন ইস্কুলে থেকে তেঁতুল এর আচার কিনে খেতে খেতে বাড়ি ফিরছি তখন আমার গেট আটকে একটা হেংলা বৌ বললো " আমাকে একটু আচার দে না ?"
আমি বললাম " কেন দেবো তুমি আমার কে?"
ও বললো " আমি তোর শাঁখচুন্নী পিসি , আজ থেকে তোর বন্ধু"
আমি বললাম " না না তোমাকে আমি আচার দেবো না , তুমি যদি ছেলে ধরা হয়।"
শাঁকচুন্নী পিসি বললো " দূর বোকা ছেলে ধরারা কখনো খাবার চায়, ওরাতো ভালো ভালো খাবারের লোভ দেখিয়ে ছেলেদের ধরে নিয়ে যায়। দেনা কতদিন আচার "
তাও ঠিক মা তো তেমন ই বলছে কারো থেকে তাই কোন কিছু নিতে না করে দিয়েছে।
তবু ও তেঁতুল এর আচার কি কাউকে দেওয়া যায় নাকি! আমি বললাম " চিনা জানিনা আঁচার কেনো দেবো, আর তুমি কতো বড়ো তুমি আমার বন্ধু হবে কি করে?"
কথাটা শেষ করতে না করতেই শেওড়াগাছ থেকে আমার মতো বাচ্চা ছেলে লাফিয়ে পড়লো। বললো " আমি তো ছোট আমার সাথে বন্ধুত্ব কর।"
আমি বললাম " আমার কি লাভ ?"
শাঁখচুন্নী পিসি বললো " এবাবা বোকা ছেলে বন্ধু তে কেউ লাভক্ষতি হিসেবে করে নাকি।"
তবে তাও ঠিক আমি ছোট লাভক্ষতির হিসাব তো জানতে এমনি ও জানি না। তবে গুড্ডু পাপাই ওরা যখন আমার বন্ধু হয়েছিলেন। তখন তো আমি এসব হিসাব করি নি।
শেষ বললাম ঠিক আছে ভাব। ওতে আমার লাভ হলো। এক পিস তেঁতুলের আচারে বদলে শাঁখচুন্নী পিসি আমাকে আমাকে রূপকথার গল্প শুনিয়ে , নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিল, খোকা বাবু আমার সাথে সারা বিকাল খেলা করলো।
যাবার সময়। আমাকে একটা আদুলি দিলো যদিও ও একটাকা দিতে চেয়েছিলো আমি নিই নি। আসলে ওটা চালতার আচার কিনে আনার জন্য। ওরা আমাকে আবার আচার কিনে আনতে বলছিলো বার বার। আমি বললাম "আমরা কি বড়লোক যে রোজ রোজ আচার খাবো"
তখন ও এক টাকা দিয়ে ছিলো। আমি নিতে চাই নি।
তখন ও বলেছিলো "তোর মাতো বড়ো বাজারে থেকে কাপড় জামা কিনে এনে লোককে দিয়ে পয়সা নেয়। "
আমি বললাম "সে তো মা ব্যবসা করে। "
শাঁখচুন্নি পিসি বললো " সেইরকম তুই আমাদের আচার এনে দিবি বিনিময়ে একটুখানি তুইও খেয়ে নিবি এক ব্যাপার হলো"
আমাদের বন্ধুত্ব বেশ জমে উঠেছিলো । শুধু মাত্র ওরা রবিবার করে আসতো না। তাই মা বাবার সাথে কোন দিন ওদের আলাপ করানো হয়নি।
কিন্তু একদিন আমাদের খুব বিপদ হলো। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। আমার মন মরা, মা খুব দৌড়া দৌড়ি করছে এখানে সেখানে।
সবকিছু শুনে শাঁখচুন্নী পিসি একটা পুঁটলি দিয়ে বললো " এটা মাকে দিবি।"
আমি বললাম " কি আছে এতে"
ওরা বললো "এতে টাকা আছে।"
আমি বললাম "না না আমি নেবো না মা বকবে।"
শাঁখচুন্নী পিসি বললো " আমি না তোর পিসী , নিলে কিছু হবে না।"
আমার মামা পিসি কেউ মাকে "টাকা ধার দেয়নি তোমার যদি কোন খারাপ মতলব থাকে , মা বলছে বেশি লোভ ভালো নয়"
শাঁখচুন্নী পিসি বললো " আমি ও তো তোকে এমনি দিচ্ছি নাকি, ধার দিচ্ছি বড়ো হয়ে চাকুরী করে শোধ করে দিবি। তবে এ পুঁটলি টা কিন্তু শুধুমাত্র তুই তোর মাকে দিবি"
কথা মতো মাকে দিলাম। পুঁটলি খুলে মা দেখলো । অনেক গুলো সোনার পয়সা। আমি কোন দিন ওগুলো আগে দেখিনি, মা বললো ওগুলো কে মোহর বলে। মা জিজ্ঞেস করলো আমি কোথায় পেয়েছি।
পরে দিন রাতে ফিরে এসে মা শাকচুন্নি পিসিকে ডাকতে বললো , মোহরের পুঁটলি টা ফিরত দিয়ে জেনে নিলো ওরা কি ভাবে মারা গেছে। এই শাঁখচুন্নী পিসির ছেলে মেয়ে হয়নি বলে নাকি বর শাশুড়ি অনেক কথা শুনাতো। তাই ও নাকি মারা গিয়েছিলো মনে দুঃখে । খোকা বাবু ওর ছেলে নয়, কিন্তু মা হবার সাধ ছিল বলে ওকে সাথে রেখে দিয়ে ছিলো। আর আমি শিও বলেই ও আমাকে এতো ভালো বাসে। মা ওদের নাম গোত্রে, বাবার নাম ঠিকানা সব কিছু নিয়ে নিলো। পরেরদিন আমাদের বাড়িতে একটা কি পুজা করা হলো ওদের আত্মার শান্তি কামনায়।
আমি তখনি জানতে পারলাম ওরা যে আসলে ভুত ছিলো। আগে জানলে গুপী বাইন বাঘা বাইনে মতো বর চেয়ে নিতাম। মা যদিও বলে বর টর বলে কিছু হয়না। মানুষ কে সব কিছু অর্জন করতে হয় কষ্ট করে। আমি যদি না পড়াশোনা করি তাহলে কি সরস্বতী আমাকে এমনি পাশ করিয়ে দেবে?
সে যাইহোক শাকচুন্নি পিসি আর ওর ছেলে কে খুব মিস করি আমি।