Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Tragedy Inspirational

4.5  

Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Tragedy Inspirational

ভাগ্যান্বেষণ

ভাগ্যান্বেষণ

4 mins
609


নতুন জামাটা আলমারি থেকে বের করল ঋভু | এবারের পুজোয় বেশি জামা না হলেও, যে কটা হয়েছে, সে কটার রং ও ডিসাইন বেশ চমকপ্রদ বটে | ঋভুর বাবা সদ্য কাজ হারিয়েছেন | প্যান্ডেমিকে নিজেদের সংসার চালানোটাই কেমন যেন দায় হয়ে উঠেছে | স্ত্রীয়ের কাছ থেকে প্রতিদিন মুখঝামটা খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ তাঁর থাকে না | ছেলেকে যে পুজোতে ভালো করে ঘুরতে নিয়ে যাবে, সে উপায়ও তাঁর নেই | বলা ভালো, ভাগ্যিস তাঁর নিজের বোন তার ভাইপোকে দুখানা জামা আর একখানা হাফ প্যান্ট দিয়েছিলো!

ঋভুর মুখে কত আনন্দ! পুজো এসেছে বলে কথা! কত আনন্দ সে তার বাবা ও মায়ের সাথে ঘুরতে যাবে! কিন্তু অভাগা যে জানেই না তার বাপের অবস্থা! বাবাকে প্রশ্ন করলে বাবা হাজার কষ্ট গিলে জবাব দেন - "হ্যাঁ বাবা যাবো তো!"

ষষ্ঠীর রাতে যখন স্ত্রীয়ের সাথে মিত্তির বাবু শুতে গেলেন, স্ত্রীকে একটি কথা বলবো বলবো করেও বলতে পারলেন না | মাঝরাতে নিদ্রাহীন অবস্থায় যখন তেষ্টা মেটাতে খাট ছেড়ে উঠলেন, স্ত্রীর প্রশ্নে চমকে উঠলেন | হাত থেকে জলের বোতল পড়ে গেল | স্ত্রী প্রশ্ন করলেন - "এত রাতে জেগে কেন তুমি? "

কাঁপা কাঁপা গলায় মিত্তির বাবু উত্তর দিলেন -" তোমার হাতের ঐ বালা দুটো বেঁচে দিতে পারবে? ধারের টাকায় সংসার চলছে | ছেলেটাকে নিয়ে পুজোতে না হলে একদিনের জন্যেও বেরোতে পারবো না | আমি কাজ পেলেই শোধ করে দেবো |"

মিসেস মিত্তির বুঝলেন তাঁর স্বামী কাঁদছেন | বেশ শক্ত গলায় উত্তর দিলেন -" ঠিক আছে |"

তারপর রাত কেটে দিন এল | পাড়ার প্যান্ডেল থেকে ঢাকের শব্দে সারা ঘর মেতে উঠল | সেই একবছর থেকে বাড়িতে বসে আছেন মিত্তির বাবু | ওষুধের দোকানে কাজ করতেন তিনি | প্যান্ডেমিকে হঠাৎই তাঁর শরীর খারাপ হল | কয়েকদিনের ছুটিতে বাড়িতে বসে রইলেন | একমাস পর যখন তিনি অসুস্থতা থেকে উঠলেন, তখন দেখলেন দোকানে অন্যকোনো লোককে নিয়ে নিয়েছে | দোকানে দোকানে, বন্ধুর কাছে হাত পাতলেন একটা কাজ পাবার জন্যে, কিন্তু কোনো লাভ হল না | তিন মাস পর একটি বেসরকারি কারখানায় ঢুকলেন বটে, কিন্তু সেই কারখানাও পনেরো দিন পর বন্ধ হয়ে গেল | প্যান্ডেমিকে বেআইনিভাবে কারখানা খোলার দরুণ পুলিশ বাধ্য হয়ে এসে আইনি পথে কারখানাটিকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ করিয়ে ছাড়ল |

মিত্তির বাবু আজও বেড়িয়েছেন কাজের খোঁজে | ছেলে ও স্ত্রীকে বলে গেছেন, আজ সন্ধ্যেতে তিনজন মিলে ঠাকুর দেখতে যাবেন | বেরোনোর সময় নিয়ে গেছেন স্ত্রীর হাতের দুখানা সোনার বালা |

সন্ধ্যে হল | ঘড়িতে সময় যখন সাতটা, ঠিক তখন মিত্তির বাবু ঘরে ঢুকলেন | তড়িঘড়ি করে স্নান সেরে পুরানো অথচ ইস্ত্রি করা একখান জামা বের করে পড়লেন | তারপর বের হলেন ছেলে ঋভু আর স্ত্রী রঞ্জনা কে নিয়ে ঠাকুর দেখতে |

পাড়ার ঠাকুর দেখে, কিছুটা এগোতেই ঋভুর পায়ে ব্যাথা শুরু হল | ছেলের কষ্ট দেখে ঋভুকে কোলে তুলে নিলেন মিত্তির বাবু | সারি সারি সাজানো ঝকমকে লাইট আর প্যান্ডেলের থিম দেখতে দেখতে কখন যে রাত গভীর হয়ে গেল, তা বোঝাই গেল না | রাস্তায় ঋভু যে কত খাবারের বায়না ধরেছিলো, ঘুগনি, ফুচকা, মালপোয়া, রোল, কোল্ডড্রিঙ্কস এবং আরও কত কি | ঐ ছোট্ট পেটে অত খাবার না ধরলেও একটু একটু করে সব খেয়ে দেখেছে সে | গরিব ঘরের ছেলে যে সে! এত খাবার বছরে হয়ত সে একসাথে একবারই পায়! শিশুমনে কোনো পাপ থাকে না যে |

রাত গভীর হবার সাথে যখন মিত্তির বাবু তাঁর পরিবারকে সাথে করে ফিরছিলেন, তখন তাঁর হঠাৎ অ্যাসিডিটি হয়ে যায় | মিসেস মিত্তির কে বাড়ির সামনে পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে তিনি চলে যান ওষুধের দোকানে | এত রাতে ওষুধের দোকান খুলবে কি খুলবে না সেই অনিশ্চয়তাকে সাথে নিয়েই তিনি তাড়াতাড়ি ছুটে যান |

ভাগ্য প্রসন্ন থাকার ফলে দোকান থেকে কয়েকটা অম্বলের ওষুধ কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পা বাড়ান তিনি | স্বভাবত যে পথ দিয়ে তিনি ফিরবেন ভাবছিলেন, সেই পথে তিন চারটে কুকুরকে একসাথে দেখে অন্যপথ বেছে নেন | চরিত্রের দিক থেকে মিত্তির বাবু একটু ভীতু প্রকৃতিরই বটে |

অন্য রাস্তা দিয়ে আসার পথটা অন্ধকার | কিছুটা আন্দাজে আন্দাজে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় নর্দমার ধারে একটি কিছু দেখে তিনি থমকে দাঁড়িয়ে যান | প্রথমে দেখে মনে হয় কোনো কালো কুকুর শুয়ে আছে | ভয়ে মিত্তির বাবু প্রথমে কাছে গেলেন না, বটে, কিন্তু পরক্ষণেই বাড়ি ফেরবার কথা ভেবে যখন ধীরে ধীরে এগোলেন, তখন তিনি বুঝলেন, এটি একটি ব্যাগ | মনে সাহস ফিরে আসায় যখন তিনি হাঁটু মুড়ে ব্যাগটি পর্যবেক্ষণ করলেন, তিনি বুঝলেন ব্যাগটি বেশ ভারি |

তারপর কৌতূহল সংবরণে ব্যর্থ মিত্তির বাবু যখন ব্যাগের চেনটি খুললেন তখন তিনি চমকে উঠলেন | আনন্দে ভয়ে খুশিতে তিনি পাগল হয়ে যেতে লাগলেন | তিনি দেখলেন, তার সামনে ব্যাগ ভর্তি দুহাজার টাকার নোট |

গরিব মিত্তির বাবু আর কিছু ভাবলেন না | ভাগ্যের দোষে তিনি ব্যাগটিকে কাঁধে তুললেন, আর এগিয়ে চললেন অন্ধকার পথে |


সমাপ্ত.......



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy