বড়ো মা
বড়ো মা
নৈহাটির বড়ো মা কথা সব জানেন। কিন্তু মেদিনীপুর এক বড় মা। আছেন , তিনি বোধহয় পশ্চিমবঙ্গের সবচাইতে বড় কালি, উচ্চতা প্রায় ৪০-৪৫ ফুট।মাকে দর্শন শুধু নয়, পুজোও করতে পারেন , পারেন মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম পর্যন্ত। বিশেষ দাবি দাবাও নেই তার, বনফুল দিয়েও হবে মায়ের পুজো। এমনকী, ধূপ জ্বালিয়ে মায়ের পুজো হতে পারে। কোনও পুরােহিতও ডাকার দরকার নেই। করাল বদনী ভয়ঙ্কর মূর্তির মায়ের। পুজোর দিনক্ষণও মানা হয় না। সারাবছর যে কোনওদিন মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে সারতে পারেন পুজো। তবে প্রতি অমাবস্যার দিন আপনার কোনও অনুমতি নেই। একইভাবে অনুমতি নেই এই তিনদিনের কালীপুজোয়। তবে পুজো দেওয়ার কোনো পুরোহিত থাকে না,নিজেকেই দিতে হয়।ধূপ রাখা থাকে প্ৰনামী বক্সে টাকা দিয়ে ধূপ নিতে হয়।স্থানীয় রা মা কে খুব জাগ্রত মনে করে।
শিলাবতীর আদুরের শিলাই। ছোটনাগপুরের মালভূমিতে তার জন্ম, পুরুলিয়ার পুঞ্চা শহরের কাছে। তার পর পুরুলিয়া, বাঁকুড়া আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা দিয়ে বয়ে গেছে। ঘাটালের কাছে জোট বেঁধেছে দ্বারকেশ্বরের সঙ্গে। দু’য়ে মিলে নাম হয়েছে রূপনারায়ণ। সেই রূপনারায়ণ গেঁওখালির কাছে মা গঙ্গায় ডুব দিয়েছে। এই ছোট্ট শিলাই প্রায় সারা বছর গা এলিয়ে শুয়ে থাকে, অত্যন্ত রুগ্ন, শীর্ণ চেহারা তার। কিন্তু বর্ষা এলেই তার রুদ্র রূপ, ভাসিয়ে দেয় চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই আর ঘাটাল। এই নদীটি উত্তরবাহিনী এক রূপকথার সাক্ষী হয়ে আছে।
হুঁ ক্ষীরপাই এই বড়ো মায়ের মন্দির। যদিও ক্ষীরপাই চেনেন বাঙালি রা অন্যকারনে। বিদ্যাসাগরের গ্রাম হোক কিংবা গড়বেতা ফেরার হোক কিংবা যাওয়ার পথে পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই শহরে বাঙালি হানা দেবেই এখানের প্রসিদ্ধ ও নামকরা মিষ্টি বাবরসা জন্য স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়|
লোকজন বলেন, উপহার হিসেবে পাও এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা য় পঞ্চমুখ হন মুঘল বাদশা। সেই থেকেই মিষ্টির নাম হয়েছে ‘বাবরসা’। তবে কেউ বলেন আঠেরো শতকের মাঝামাঝি মেদিনীপুরের হয়েছিলো বর্গিদের হানা । আতঙ্কে যখন স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষীরপাই ছাড়তে আরম্ভ করেছে, তখন ইংরেজ অফিসার এডওয়ার্ড বাবরস বর্গিদের হাত থেকে রক্ষা করে তাদের। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতায় পরান আটা নামের এক স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী নতুন মিষ্টি বানিয়ে উপহার দেন বাবরসকে। সেই থেকে মিষ্টির নাম হয় বাবরসা।
বাংলা অন্যতম ঐতিহ্য যে ‘বাবরসা’, তা নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। ময়দা, ঘি আর মধুর জোটে এই মিষ্টি যাকে বলে অমৃত। দেখতেও খানিকটা অমৃতির মতো। গরম ঘি-এর ওপর ফোঁটা ফোঁটা ময়দা ঢেলে তৈরি হয় বাবরসা-র নকশা-আদল। তারপর মধু বা চিনির সিরায় ঢেলে পরিবেশন। একথায় রসগোল্লা, মিহিদানা, সরভাজা, চমচম, সন্দেশ মতো বাংলার অন্যান্য মিষ্টি মতো ঐতিহ্যশালী মিষ্টি এটিও। তবে নিন্দুকেরা বলছে খরচ কমাতে মধুর জায়গা নিচ্ছে চিনির সিরা, ঘিয়ের বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে ডালডা। এতে নিজের স্বাদও হারাতে বসেছে এই ঐতিহ্যশালী মিষ্টি।বাংলার এহেন ঐতিহ্যশালী মিষ্টিই ক্রমে বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে বলা যেতে পারে প্রচারের অভাবে।
যাইহোক বড়োমা কথায় আসি ,পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা টাউনের ক্ষীরপাই হালদার দীঘি এলাকায় বসবাস করেন, বড় মা বোধহয় বছর কুড়ি।ঘাটালের ক্ষীরপাই শহর থেকে মাত্র এক কিলােমিটার দূরের শ্মশানে রয়েছেন মা শ্মশান কালী।
শুধু চন্দ্রকোনা নয় মেদিনীপুর জেলার মানুষএই কালী মাকে বড়মা নামেই জানে।
ক্ষীরপাই এর বড়মার পুজোর সময় স্থানীয় আশপাশের মানুষ ছাড়াও জেলার দুরদুরান্তের মানুষও ভিড় জমায় ক্ষীরপাই বড়মার পূজোয়। পূজা র সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য শশ্মানকালী হলেও এ পুজোয় বলি হয়না।পুজোর পরের দিন হাজার হাজার মানুষ আসে মায়ের খেঁচুড়ি প্রসাদ পাওয়ার জন্য।
স্থানীয় বাসিন্দা শুদ্ধদেব রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে শশ্মানে এই কালীর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে মাটির তৈরী প্রতিমা পুজো হত।তিনিই পরে ৪৫ ফুট উচ্চতার কংক্রীটের মায়ের মুর্তি নির্মান করেন ।বিশালাকার কালী মন্দীরের বৈশিষ্ট্য ভক্তদের নিষেধ আছে কোনও রুপ দক্ষিণা না দেওয়ার ক্ষেত্রে।
কোনও রুপ আর্থিক সাহায্য করা বা দক্ষিণা হিসাবে কোনও পয়সা দেওয়া যাবেনা মন্দীরে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে লেখাও আছে।মা এখানে চতুর্ভুজা। একহাতে রয়েছে মহাপৃথিবী। অন্য হাতে শান্তির প্রতীক পায়রা। আর দুটি হাতে বিশালাকার খড়গ ও নরমুন্ডু। বিরাটকায় মা শিবের বুকে এক পা আর অন্য পা মাটিতে রেখে দাঁড়িয়ে আছেন।মা রূপ ভয়ঙ্কর, দন্তবিকশিত, উদগত চোখ, রক্তাক্ত ঠোঁট, মিশমিশে কালাে গায়ের রঙ। পাশে আছে ডাকিনী- যােগিনীদের। যদিও মা এখানে নিরামিশাষি।