Manik Goswami

Classics

4  

Manik Goswami

Classics

অপ্রিয় সত্য

অপ্রিয় সত্য

9 mins
721


অপ্রিয় সত্য

মানিক চন্দ্র গোস্বামী


একটা পোকা আমার মাথার মধ্যে বাসা বেঁধেছে বোধ হয়। আজ সকাল থেকেই সে তার অবস্থিতি জানিয়ে চলেছে। কুটুর কুটুর করে সারাক্ষণই কিছু কেটে চলেছে বোঝা যাচ্ছে। না হলে আমার মতো এমন বিচক্ষণ ব্যক্তিও সেই ভুলের ফাঁদেই পা দিলো। অবশ্য পোকাটা মনে হয় ছোটবেলা থেকেই আমার মাথার মধ্যে আস্তানা গেড়েছে। ভালোই আছি, ভালো ভাবেই কথাবার্তা বলছি, হঠাৎ বলে দিলাম একটা বেফাঁস কথা। কথাটা শোনার পরই সবার চোখমুখ দেখতাম কেমন লাল হয়ে উঠেছে। অবশ্য মা আমাকে সেদিনই বলেছিলো আমার মাথার মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো পোকা আছে। আমি কিন্তু জানতাম যে আমি একদম সত্যি কথাই বলেছি। কিন্তু সবাই মিলে এটাই প্রতিস্থাপিত করলো যে আমি যেন একেবারে অবিবেচকের মতো কথা বলে দিয়েছি। সুতরাং, আমার মাথায় নিশ্চয়ই পোকা আছে, যেটা নড়ে চড়ে বসলেই আমি ব্যতিক্রমী কথা বলতে থাকি।

সেদিন আমার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। ভালোভাবেই পাশ করেছি। বাড়িতে সবার মুখেই খুশি খুশি ভাব । আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়, ব্যস্ততা চলছে। আমি যেন যুদ্ধ জয় করে ফিরেছি । নানা জনে নানা রকম ভালো ভালো মন্তব্য করছে, কথার মাধ্যমে প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। মিনতি দি, মানে আমাদের বাড়ির কাজের মাসি সে সময় বাসনপত্র গুলো ধুয়ে নিয়ে এসে গুছিয়ে রাখছে। আনন্দের খবর কানে যেতেই মাসি বলে উঠলো,'খুব ভালো খবর। দাদাবাবু ভালোভাবে পাশ করেছে, তাহলে তো মিষ্টি খাওয়া পাওনা হয়ে গেলো'। মাকে উদ্দেশ্য করে মাসি বললো, 'বৌদি, মিষ্টি খাওয়াতে হবে। তবে, একটা আধটা দিলে হবে না। পুরো এক বাক্স চাই'। আমার দিদি পাশেই ছিল দাঁড়িয়ে । কেমন একটা নিচু স্বরে বলে উঠলো, 'ইস, মিষ্টি খাবে। তাও আবার এক বাক্স চাই। এদিকে, কাজের বেলায় গড়িমসি। কোনো রকমে কাজ সেরে শুধু মাসের মাইনের হিসেব কষা। শুধু মাইনে বাড়াও। ওরে বাবা, কাজ না করলে কি এমনি এমনিই লোকে পয়সা দেবে'। মাসির কানে বোধহয় হালকা স্বর পৌঁছেছে কি পৌঁছায়নি, জানিনা। তবে মাসি কিছুটা আন্দাজ করেই বলে উঠলো, 'কি বললে মধুমিতা। আমি কাজ করিনা, শুধু শুধু মাইনে নিয়ে যাই'। মা মাসিকে থামানোর চেষ্টা করে। বলে, 'না, ও সেরকম কিছু তো বলেনি। ও বলতে চেয়েছে, সে তো খুব ভালো কথা। ভাই পাস্ করেছে, মিষ্টি তো খেতেই হবে'। মাসি কিছুতেই মানতে চায় না মা'র ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করাটা। বলতে থাকে,'এই কয়টা টাকায় কি আজকালকার দিনে আর ঠিকে ঝি পাওয়া যায় ? কেউ করবে না কাজ। আমি বলেই করে দিচ্ছি'। 

আরো কিছু বলার আগেই আমার মাথার পোকাটা নড়েচড়ে উঠলো। এমন ভাবে কাটতে থাকলো যে আমি দিদিকে বলে উঠলাম,'কেন দিদি, মাসি তো ঠিক কথাই বলেছে। তুমিই তো এই কথাগুলো বলেছো।' ব্যস, শুরু হয়ে গেলো দিদির কান্না। মা তখন আমাকে বকতে ব্যস্ত। আমি নাকি বিনা কারণে দিদিকে ঘোরতর অপমান করেছি। বাড়ির লোকেদের মান-সম্মান টুকুও ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছি। 

আমাদের বাড়িতে একসময় অনেক লোকজন একসাথে থাকতো। মনে আছে একদিন আমার কাকার সাথে আমার আর এক দূর সম্পর্কের কাকার ( বাবার মাসতুতো ভাই ) মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেলো। বাবার এই মাসতুতো ভাই আলিপুরদুয়ারে থাকে। কলকাতার কলেজে পড়াশোনা করার জন্য এই বাড়িতেই আছে। এখানে থেকেই পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছে। কেন জানিনা আমার মনে হতে লাগলো যে বাবার এই মাসতুতো ভাই আমাদের কাকাকে ঠিক সহ্য করতে পারছে না। সে নিজেকেই একমাত্র কাকার পরিচয় দিয়ে আমাদের কাকার সম্বন্ধে অনেক আজেবাজে কথা বলতে শুরু করলো। আমাদের বোঝাতে চাইলো সেই আমাদের আসল কাকা। আর আমরা যাকে কাকা বলে জানি, সে এ বাড়ির আশ্রিত। বাবা কোনো এক সময় এই দরিদ্র ছেলেটির বেঁচে থাকার দৈনন্দিন কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। ভাই বলে পরিচয় দিয়ে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করার জন্য তার সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে কড়া নজর রাখতেন। সমস্ত ভরণ পোষণের দায়িত্ব বাবা নিজেই বহন করেছেন। তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন । চাকুরী জোগাড় করে দিয়ে তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই এই কাকাকে আমাদের নিজেদের কাকা বলেই জেনে এসেছি। আমাদের কাছে কাকা বলতে তিনিই। অথচ, বাবার সেই মাসতুতো ভাই, যাকে আমরা এই প্রথম বার দেখলাম, প্রথম বার পরিচয় পেলাম, তিনি আমাদের কাকার সম্বন্ধে বলেন কিনা যে ওর কোনো চালচুলো নেই, রাস্তা থেকে পরিচয়হীন এই লোকটাকে বাবা তুলে নিয়ে এসে নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন বলে আজ ও বেঁচে গেছে, আসলে তো সে এ বাড়ির আশ্রিত।

আমার মাথার পোকাটা কিলবিল করে উঠলো। কেমন যেন মনে হলো এই কথাগুলো আমাদের কাকাকে জানানো উচিত। কে যে এই নতুন লোকটা আমাদের কাকা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে| আমাদের কাকাকে তার এইরকম সর্বদা অপমান করার ইচ্ছেটা প্রকাশ পাওয়ার প্রয়োজন আছে। তার মনের এই আসল রূপটা সবাইকে জানানোর দরকার আছে। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি সহজ, সরল মনে সমস্ত কথাগুলো কাকাকে জানিয়ে দিলাম। ব্যস, আগুনে ঘি পড়ে গেলো। দুই কাকার এই দৈনন্দিন মনোমালিন্যের আগুনে ঘিয়ের প্রভাব একেবারে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে দিলো। একজন অপরজনের দিকে জামার আস্তিন গুটিয়ে তেড়ে আসতে থাকলো। এই মারে তো সেই মারে। বিরাট একটা লঙ্কাকান্ড শুরু হয়ে যাবার মুহূর্তেই বাবা এগিয়ে এসে মধ্যস্থতা করে মারামারি করার ইচ্ছেটাকে একেবারে গোড়াতেই শেষ করে দিলেন। আমরা ছোটরা হঠাৎ করে চোখের সামনে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ দেখতে পাবার আনন্দে উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের সমস্ত আশায় ঠান্ডা জল ঢেলে দিয়ে, সমস্ত উত্তেজনা, উদ্দীপনায় ভাঁটার তার এনে দিলেন বাবা। আমার ভাগ্যটা নিতান্তই খারাপ। তা না হলে এই যে একটা উত্তেজনাময় যুদ্ধ দেখতে পাওয়া থেকে বঞ্চিত তো হলামই, উপরন্তু সমস্ত দোষটাই এসে পড়লো আমার ওপর। বাবার কাছে বকুনিও খেলাম খুব। আমি নাকি অল্প বয়সেই বড্ডো পেকে গেছি। বড়দের কথার মধ্যে আমার থাকাটাই নাকি খুব অন্যায়ের হয়েছে। কথাগুলো আমি শুনেছি ঠিকই, কিন্তু আমার নাকি উচিত হয়নি সে কথাগুলো কাকাকে জানিয়ে দেওয়া। এটা নাকি আমার ঘোরতর অন্যায় হয়েছে। বড়রা বকছে, আমি তাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম গুম হয়ে। কিন্তু আমি তো জানি যে আমি কোনো অন্যায় করিনি, সত্যি কথাটাই শুধু জানিয়েছি, বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলিনি কিছুই।

ক্রিকেটটা আমি ভালোই খেলতাম। পাড়ার বড়রা আমাকে বাদ দিয়ে টিম বানানোর কথা চিন্তাই করতে পারতো না । পাড়ার ক্লাবে খেলে খেলেই নাম ডাকটা বেশ ভালোই হয়েছিল। আশে পাশের অন্যান্য পাড়ার সবাই আমার নাম জানতো। মানে একটু নামডাক হয়েছিল আর কি। তো একবার, আমাদের ক্লাবের সাথে উত্তর কলকাতার একটা পাড়ার ক্লাবের ক্রিকেট ম্যাচ ঠিক করা হয়েছে। বড়রাই খেলবে। কিন্তু ওই যে বললাম,আমাকে ছাড়া টিম বানানোর কথা চিন্তাই করতে পারতো না। ছোটদের মধ্যে থেকে একমাত্র আমিই বড়দের টিমে খেলার জন্য মনোনীত হলাম। খেলায় দুই পক্ষই বেশ ভালো খেলেছিল। আমরা প্রথমে ব্যাট করে বড় রানের একটা লক্ষ্য দিয়েছিলাম প্রতিপক্ষকে। তারাও বেশ ভালোই খেললো। একটা সময় যে কোনো পক্ষই জিততে পারে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের টিমের এক দাদা সহজ একটা ক্যাচ ফেলে দিলো। আসলে, আর একটু জোরে দৌড়োতে পারলে বলের নিচে এসে ক্যাচটা ধরতে পারতো, কিন্তু বয়সের ভারে জোরে দৌড়োতে না পারার জন্য শেষ পর্যন্ত একটু দূর থেকেই ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা ধরতে গিয়ে ক্যাচ টা মিস হয়ে গেলো। আর পারবেই বা কি করে ? অতবড় ভারী শরীর নিয়ে এতটা পথ দৌড়ে ওই ক্যাচ নেওয়া কি পাড়ার দাদাদের পক্ষে সম্ভব ? বয়সটা তো বাড়ছে। এই বয়সে কি আর চিতা বাঘের গতি আনা পাড়ার বড়দের পক্ষে সম্ভব ? তাই যা হবার তাই হলো। ক্যাচটা পড়লো আর আমরা হেরে গেলাম। কিন্তু বয়সকালে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ ধরতে যাবার ধকল কি শরীর নিতে পারে ? নিজেও চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলো।

আমরা হেরে গেলাম, অথচ কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। কিছু বলার সাহসও কেউ পাচ্ছে না। আসলে যার বিরুদ্ধে ক্যাচ মিস করার অভিযোগ আসা উচিত, সেই বলাইদা, পাড়ার একজন হোমড়া-চোমড়া ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহসটুকুও কেউ দেখতে পারে না। সবাই চুপচাপ থাকলেও বাড়ি ফেরার সময় আমাদের সত্যেনদা আর হতাশা চেপে রাখতে পারলো না। বলেই দিলো, বলাই একটু চেষ্টা করলেই ক্যাচটা ধরতে পারতো। বড়লোকের ছেলে তো, ক্যাচ ওর হাতে এসে পড়লে তবেই ধরবে। ক্যাচ ধরতে ও দৌড়োবে না। জেতা ম্যাচটা শুধু শুধু বলাইয়ের জন্য হেরে গেলাম।

হয়তো কথাটা সত্যি, বলাইদা ক্যাচটা ধরতে পারেনি বলেই হয়তো আমরা হেরে গেছি। কিন্তু তবুও আমি কেমন যেন মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না। ক্রিকেট তো আর একজনের খেলা নয়, এটা একটা দলগত খেলা। এখানে একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে বাকিরা তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। আর একটু বেশি রান করতে পারলেই হয়তো আমরা জিতে যেতাম, কিংবা হয়তো আরো একটু ভালো বোলিং করতে পারলে প্রতিপক্ষ আমাদের রানটাকে আর ছুঁতেই পারতো না। তাছাড়া বলাইদার জায়গায় অন্য কেউ এমন কি সত্যেনদা থাকলেও আমরা কি জোর দিয়ে বলতে পারি যে সে ওই ক্যাচটা মিস করতো না। নাহ, ব্যাপারটা বলাইদা জানানোর প্রয়োজন আছে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সরাসরি বলাইদাকে একটু জোরের সাথে বলেই বসলাম, এটা তুমি কি করলে বলাইদা ? ক্যাচটা যদি তুমি ধরতে পারতে আমরা তো তাহলে জিতে যেতাম। তোমার জন্যই তো আমরা ম্যাচটা হারলাম।

- কি, আমার জন্য ম্যাচটা হেরেছি ? তুই এ কথাটা বলছিস ?

- না, আমি আর কোথায় বললাম ? এইমাত্র সত্যেনদা বললো বলেই না আমিও বলছি।

ব্যস, আর যায় কোথায় ? লেগে গেলো বলাইদার সাথে সত্যেনদার ঝামেলা। কথা কাটাকাটি হতে হতে প্রায় হাতাহাতির উপক্রম। আমাদের পুরো দলটাই দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে মারামারি লেগে যায় আর কি। যাই হোক দু-একজন শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন দাদাদের মধ্যস্থতায় মারামারি আর হয় নি। শান্ত হয়ে গেলো আবহাওয়া। কিন্তু সব দোষ শেষ পর্যন্ত এসে পড়লো আমার ওপর। আমার কথা বলাটাই উচিত হয়নি। ছোট হয়ে বড়দের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে দেবার জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হলো। বকাঝকাও করলো অনেকে। কিন্তু আমার দোষটা কোথায়। মাথার ভেতর সেই পোকাটা নড়াচড়া শুরু করলো বলেই না এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো।

সেই থেকে আমি ঠিক করেই নিয়েছি যে আমি আর নিজে থেকে কোনো ঝামেলায় নিজেকে জড়াবো না। কিন্তু ভাবি এক আর হয়ে যায় অন্য। আজ সকাল থেকেই মাথার পোকাটা মনে হয় খুব বেশি নড়াচড়া করছে। কেউ কোনো কথা বললেই উল্টোপাল্টা কিছু একটা বলেই ফেলছি। আমি তো জানি, আমি সত্যি কথাই বলছি, কিন্তু সেই সত্যি কথাটাই অন্যেরা কেউ মানতে চাইছে না। বাবার কাছে ছোটবেলার নিদর্শন হিসেবে একটা মেডেল গচ্ছিত ছিল। বাবা খুব ভালো খেলাধুলা করতেন ছোটবেলায়। কোনো এক খেলায় ওই মেডেলটা পেতেছিলেন। স্মৃতি হিসেবে সেটাকে তিনি রেখে দিয়েছিলেন ঘরের এক কোণে এক তাকের ওপর। বহুদিনের অযত্নের ফলে রং উঠে গিয়ে, ময়লা জমে এক অদ্ভুত রূপ নিয়েছিল মেডেলটা। ওই তাকের ওপরেই আরো অনেক পুরোনো ভাঙা জিনিসপত্র ছিল। অপ্রয়োজনীয় পুরোনো ভাঙা জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাবার জন্য একটা ছেলে দোর গোড়ায় হাঁক দিতেই রান্নাঘর থেকে মা চিৎকার করে আমাকে বললেন, 'যা তো, ঘরের কোণে ওই তাকের ওপর যে পুরোনো ভাঙা, রদ্দি জিনিসগুলো আছে সেগুলো বিক্রি করে দে তো। ঘরের জঞ্জালটা একটু কমবে'। আমি দেখলাম পুরোনো জং ধরা অকেজো টর্চ, কম্পিউটারের কিছু ভাঙা যন্ত্রপাতি, ভাঙা ছাতা, ভাঙা ট্রানজিস্টার, এরকম অনেক কিছুই ওখানে রাখা আছে। আমিও সব কিছু ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিলাম ছেলেটার কাছে। বাবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই ফাঁকা তাকে দেখে মাকে জিজ্ঞাসা করলেন জিনিসগুলোর সম্বন্ধে। মা বললেন, 'যত জঞ্জাল সব দূর করেছি বাড়ির থেকে, সব বিক্রি করে দিয়েছি'। বাবা খোঁজ করলেন মেডেলটার। মা বললেন,'ওই তো ওখানেই, কোনো কোণের দিকে আছে নিশ্চয়ই'। কিন্তু না, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তার দেখা মিললো না। আমার ডাক পড়লো। মা জিজ্ঞাসা করলেন, 'তাকের ওই কোণের জিনিসগুলো কোথায়' ? আমি জবাব দিলাম, 'কেন, তুমিই তো বললে তাকের জিনিসগুলো সব বিক্রি করে দিতে। আমি বিক্রি করে তোমাকে তো পয়সা ফেরত দিয়ে দিয়েছি'। 

- 'কিন্তু আমি তো তোকে ভাঙা জিনিসগুলো বিক্রি করতে বলেছিলাম। সব কিছু বিক্রি করতে তো বলিনি'।

- 'কিন্তু মা, টর্চটাও তো ভাঙা ছিল না। সেটাকে বিক্রি করতে বললে কেন'?

ব্যস, শুরু হয়ে গেলো যুদ্ধ। বাবা রাগ করে আর রাতের খাবারই খেলেন না। সমস্ত দোষ এসে পড়লো আমার ওপর। আমার জন্যই বাবাকে তার সম্মানের জিনিসটা হারাতে হলো। আমারও প্রচন্ড কষ্ট হতে থাকলো। কিন্তু, আমি কি করতে পারি? আমি তো মায়ের কথামতোই কাজ করেছিলাম, কেউ মানতেই চাইলো না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics