অনুভব
অনুভব
প্রিয় ডায়েরি,
জীবন থেমে থাকে না এটা সত্যি। কিন্তু কিছু ঘটনা হয়তো বা আমাদের হাতেও থাকে না। বর্তমানে আমরা সেরকমই একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। করোনা ভাইরাসের জন্য ঘরের কাজের মেয়েটিকে অনেকদিন আগেই বারণ করে দিয়েছিলাম আসতে। মেয়েটির বছর চব্বিশ বয়স হবে। সর্বক্ষণ থাকতো আমার বাড়িতে। সন্ধ্যের দিকে রাতের খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরে যেত। মেয়েটি ওর ঠাকুমার সঙ্গে থাকে। ওর ঠাকুমাও দু -তিনটি বাড়িতে রান্নার কাজ করতো। সেও যাদের বাড়িতে রান্না করতো সেখান থেকে খাবার নিয়ে ঘরে যেত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই সচেতন হয়ে গেছি আমরা।আর তাই আমার মতই সেইসব বাড়ির লোকরাও ওর ঠাকুমাকে আসতে বারণ করে দিয়েছে। এতদিন তো ঠিকই ছিল।
কিন্তু আজ সকালে কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুলে দেখি কাজের মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে বললো,"বৌদি কাজ করতে দাও তোমার বাড়িতে আবার।" আমি ওকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু ও নাছোড়বান্দা কাজ করবেই। ঘরেও ঢুকতে দিতে পারছিনা ভয়ে, খারাপও লাগছে। কর্তা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো, কোনো অবস্থাতেই এখন কাজ করতে দেওয়া যাবে না। কর্তা তো তাঁর রায় জানিয়ে ঢুকে গেলেন ঘরে। আমার খুব কষ্ট লাগছিলো মেয়েটার মুখটা দেখে। কেমন যেন শুকনো মুখটা। চলে যাচ্ছিলো মাথা নীচু করে, কোনো কথা না বলে।
আমি পিছন থেকে ওকে ডেকে বললাম, "কেন আসতে চাইছিস কাজ করতে এই সময়? সবাইকে তো ঘরে থাকতে বলছে।" মেয়েটি মাথা নীচু করেই বললো, "বৌদি তোমাদের বাড়ি আর বাকি দু বাড়ির থেকে যা খাবার পেতাম,ওতেই আমাদের ঠাকুমা আর নাতনির চলে যেত। কিন্তু এখন তো তোমরা কাজে আসতে বারণ করেছো, তাই পেট ভরে খেতে পাচ্ছি না।" খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এরকম ভাবে যে সবাই অসহায় হয়ে পড়বো ভাবতে পারিনি কখনও। কর্তার অনুমতি না নিয়েই মেয়েটাকে বললাম,"কাল থেকে এসে খাবার যেমন নিয়ে যেতিস, নিয়ে যাস। তবে এখন ঘরে ঢুকলে তোর দাদাবাবু রাগ করবে, তাই বাইরে থেকেই নিয়ে নিস, আমি বানিয়ে রাখবো কাল থেকে। কাজ পরে সব স্বাভাবিক হলে তখন করিস।" খুশি তে ওর চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো।ঘাড় নেড়ে চলে গেল। জানিনা বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠেছিল সেইসময়। এরা তো সারাবছর আমাদের সেবা করে, কখনও এদের জন্য ও কিছু করতে পারলে একটু হলেও খুশির অনুভব হয় বৈকি।