Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Aziza Nasrin

Classics

2  

Aziza Nasrin

Classics

অনন্ত

অনন্ত

7 mins
762


পুরানো ভাড়া বাড়িটা ছেড়ে উঠে এলাম আমাদের ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি একটা বাড়িতে |আমি এম এ করছি, আমার সাব্জেক্ট বাংলা | আমি মেস বা হস্টেল থাকার থেকে ভাড়া বাড়িটাকেই পছন্দ করি, কারণ একা থাকতে ভালোবাসি, আর তাছাড়া আমি এখানে এসে টিউশন শুরু করেছি, বেশ কয়েকজন পড়তেও আসে তাই ভাড়াবাড়িটাই সুবিধাজনক | একটা বেডরুম, একটা ছোট্ট কিচেন, বেডরুম লাগোয়া খুব পুঁচকি একটা বারান্দা আর একটু ফাঁকা জায়গা আছে যাকে ড্রয়িং রুম না বলা গেলেও আমার পড়ানোর জায়গা হিসাবে বেশ মানায় | বেশ পছন্দ এই বাড়িটা আমার |দোতলায় থাকি, বাড়িওয়ালা একতলায়, আর দোতলায় আমার পাশে একটা ফ্যামিলি থাকে,একজন ভদ্রলোক তার স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে থাকেন | তাদের সাথে বেশ ভালোই পরিচয় হয়ে গেছে, ভদ্রলোকটিকে দাদা বলেই ডাকি আর তাঁর স্ত্রী কে মহুয়া বউদি |তাঁদের পুঁচকি ৩ বছরের টুসুকে আমার ভীষণ ভালো লেগে গেল, টুসু এত্ত মিস্টি |

______________________________

সকালবেলা টিউশনি পড়াই, তারপর ১১ টায় ইউনিভার্সিটি , ফিরি বিকালের দিকে |বিকালে কোনকাজ রাখি না, নিজের কাজে ডুবে যায়, মহুয়া বউদির সাথে একটু সময় কাটাই আর রাত একটা ১:৩০ পর্যন্ত নিজের পড়াশোনা করি | পাড়াটা বেশ ভদ্র, তবে প্রায় সব পাড়ার মতই এখানেও গলির সামনে কিছু ছেলে জটলা করে, গল্প করে, তাদের আসর বসায়| তবে এরা কোন টোন টিটকিরি দেয় না, নিজেদের মাঝে কথা বলে আবার নিজেদের মধ্যেই হো হো করে হেসে ওঠে | তবুও আমার এইসমস্ত চাল চুলোহীন ছেলেদের একদম ভালো লাগে না| কোন কাজ নাই, সময়ের সাথে হাঁটবার এদের কোন তাগিদ নাই | এদের মধ্যে বেশিরভাগই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে আর ইচ্ছাও নাই, তাহলে অন্য কোন কাজে তো যুক্ত হতে পারে,তারও কোন ভাবনা নাই এদের |আমি এদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকটা দূরত্ত্ব বাঁচিয়ে চলি | ওদের সম্পর্কে আর কিছু ভাবাও বন্ধ করে দিয়েছি | বেশ কিছুদিন পর পাড়ায় একটা লোক কে লক্ষ্য করলাম |লোকটার বয়স বছর পঞ্চাশ হবে, মাথায় টাক আছে, যে কটা চুল আছে তা কাঁচাপাকা |বেশ লম্বা |লোকটাকেও আমার বিরক্ত ধরে গেল | মুখের দাড়ি কতকাল যে কাটেনি তা উপরায়ালাই জানেন |লোকটা মহা অকর্মা, কোন কাজ করে না বোধহয় |সারাক্ষণ পাড়ার ওই ছেলেদের সাথে জুটে থাকে, ওদের সাথে হাসি ঠাট্টা করে |আর ছেলে গুলোও ওকে নিয়ে বেশ ফুর্তিতেই আছে | লোকটার মহা বাজে স্বভাব হল সবার ব্যাপারেই নাক গলানো | সেদিন দেখি আমাদের বাড়ির সামনের দুটো বাড়ির কাকিমার মধ্যে কিছু একটা নিয়ে তুমুল ঝামেলা বেঁধে গেল, তা লোকটা সেখানে গিয়ে হাজির | "কি নিয়ে এত ঝগড়া গো মুকুলের মা" বলতে বলতে লোকটার প্রবেশ | তারপর হয়ত কোন কারো বাড়িতে অনুষ্ঠান হচ্ছে, লোকটা সারাদিন সেই বাড়িতেই কাটিয়ে দিল,রাস্তায় যাতায়াত করা লোকজনের সাথে সারাক্ষণ কথা বলেই যাচ্ছে |আবার মাঝে কয়েকদিন উধাও হয়ে যায় যেন,তখন আমার বেশ স্বস্তি লাগে |এরকম লোককে সারাক্ষণ চোখের সামনে দেখা মানে নিজের মনের অশান্তি | তা লোকটা আমার সাথেও কয়েকবার ভাব জমানোর চেষ্টা করেছে |আমি নাম ধাম বলেই কেটে পড়েছি, তার সাথে বক বক করার সময় আমার নাই | কয়েকবার পিছন থেকে ডেকেছে, না দেখার ভান করে চলে এসেছি |তারপরেও লোকটা কথা বলে |সামান্যতম জ্ঞানও নাই নাকি! লোকটা স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার করে কি করে কে জানে, কোন চাল চুলো নাই |

মহুয়া বউদির কাছে লোকটার কথা তুললাম |মহুয়া বউদি যা বলল তাতে আমার হাসতে হাসতে পেটটাই ফেটে যাওয়ার জোগাড় |লোকটার নাম মহীতোষ মন্ডল | লোকটা নাকি চরম কিপটে, পাড়ায় প্রচলিত আছে তার টাকে নাকি একবার ব্লেড ঘঁষলে এক পুরু ময়লার আস্তরণ পাওয়া যাবে, মাথায় তেল শ্যাম্পু দেয় না | জামাকাপড় কাচে না |বিয়ে থা করেনি তবুও পাড়ার পুজো টুজো তেও এক পয়সা দেয় না, চাঁদা চাইতে গেলে একেশ্বর বাদের থিয়োরি শুনিয়ে দেয় সবাইকে | তবে লোকটা ভীষণ বড়লোক | তার তিন ভাই বিয়ে থা করেছে, লোকটা বিয়ে করেনি তবে ভাইদের সাথে থাকেনা |একাই থাকে | 

--------------------------------------------------------

আমার আজ ভীষণ রাগ ধরেছিল, বিকাল বেলা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরছি |হঠাৎ লোকটার সাথে দেখা | কিন্তু আমার সারাদিনের ব্যস্ততায় লোকটার প্রতি মেজাজ খিঁচড়ে গেল |বাড়ির সামনে এসে প্রচন্ড চিৎকার করে উঠলাম "আপনার নিজের কোন কাজ নাই? সারাক্ষণ অন্যদের বিরক্ত করেন, চাল চুলো হীন ঘুরে বেড়ান লজ্জ্বা করেনা? একদম আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না, আপনাকে আমার পছন্দ নয় |" লোকটা কিছুটা হতভম্ভ হয়ে তাকাল, তার পরেও একটু মুখ টিপে হাসল |তারপর বলল "আরে শোনো, আমি বিরক্ত করছি না, তোমার সাথে ভালো করে কথা বলা হয়নি তাই আর কি আলাপ করার ইচ্ছা ছিল |আচ্ছা ঠিক আছে, যাও তুমি রেস্ট নাও |"  

আমি আর কিছু না বলে উপরে চলে এলাম| 

ঠিক রাত ৮ টায় আমার দরজায় কেউ টকা দিচ্ছে |দরজা খুলে দেখলাম একজন মহিলা, আগে কখনও দেখিনি, বাড়ির বউ হয়ত, বয়স আনুমানিক বিয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিস |কিন্তু মুখশ্রী ভীষণ সুন্দর, খুব শান্ত, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ আর সিথির সিঁদুর টা তার মুখের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করছে |মাথায় কাপড়টা টানা |আমি নিষ্পলক তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি, উনি হেসে বললেন "ভিতরে আসব?" 

আমি বললাম "অবশ্যই,আসুন |"

উনি বললেন "তুমি আমাকে চিনবে না, তবুও আমি তোমার কাছে কিছু কথা বলার জন্য এসেছি" |

আমি অবাক হয়ে বললাম "বলুন" |

উনি কিছুটা ইতস্তত করে বললেন "আমি মহীর মানে মহীতোষের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি" | বুঝলাম ইনি ওই লোকটার কেউ হবেন | আমার বিরক্ত হওয়ার চান্স ছিল কিন্তু কিছু কিছু মানুষের সামনে বিরক্তি আসে না, এই মহিলা বোধহয় সেই গোত্রের মধ্যে পড়েন | বললাম "বলুন" |

-আজ বিকালে দেখলাম তুমি ওঁর উপর খুব বিরক্ত হয়েছ |আসলে তুমি ছেলেমানুষ, আর পাড়ায় নতুন তাই বোধহয় জান না ও একটু খ্যাপাটে টাইপের মানুষ | অনেক পড়াশোনা করেছে, একটা বড় চাকরিও পেয়েছিল, কিন্তু ওর মাথায় কিছু গন্ডগোল দেখা দেওয়ায় ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তারপর আর চাকরি টা করতে পারেনি |ওই যে গলির শেষে বড় বাড়িটা দেখছ ওটা ওদের |ওর পাশের তিনটে বাড়ি ওর তিন ভাইয়ের |ও একাই থাকে |পাগলের মত ঘুরে বেড়ায় |কেউ দেখে কখনও বলবে যে ও ওই বাড়ির ছেলে? ওথচ জানো, ও বয়স কালে ভীষণ শৌখিন মানুষ ছিল | ও বাচ্চা মেয়ে ভীষণ পছন্দ করে,ওঁর নিজের মেয়ের খুব শখ ছিল, ওর তিন ভাই এর সবার ছেলে |এই পাড়ার সমস্ত বাচ্চা মেয়েকে সে ভীষণ ভালোবাসে, নিজের মেয়ে মনে করে, হয়ত সেই তাগিদেই তোমার সাথে কথা বলতে চায় বারবার |তুমি বিরক্ত হয়েছ, তার জন্য ওর হয়ে ক্ষমা চাইছি, কিন্তু অতবড় লোকের সাথে এরকম চিৎকার করে কথা বোলো না| ওকে বুঝিয়ে বলে দিও,ও আর আসবে না | "

এতক্ষনে ভদ্রমহিলার কথা গুলো যেন গিলছিলাম | আর লোকটার প্রতি কেমন একটা সহানুভূতিও এসেছিল, আমি চুপ করে ছিলাম কারণ, পরে আমারও মনে হয়েছিল একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি | আমি কিছু বলার আগেই ভদ্রমহিলা উঠে পড়লেন | তারপর হাসলেন মৃদু | আমি স্থির বসেই রইলাম |

রাত ৯:৩০ এ বাড়িয়ালার বউ, কাকিমা বলি তাঁর কাছে গেলাম ওই মহীতোষ বাবুর কথা জানার জন্য, আর ওই আত্মীয়া? উনি কে, সেটা আমার জিজ্ঞাসা করা হয়নি | কাকিমা যা বললেন তার সার মর্ম এই যে মহীতোষ বাবু এই পাড়ার মেয়ে সুনন্দা কে ভালোবেসেছিলেন, সুনন্দা খুব সুন্দরী, শান্ত শিষ্ট গুণী মেয়ে | সুনন্দা দের অবস্থাও বেশ ভালো | সুন্দনাও স্বপ্ন দেখেছিলেন মহীতোষের সাথে |দুই বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল | বিয়ের কয়েক দিন আগে মহীতোষ বাবুর বড় দাদার সাথে সুনন্দার বাবার শোনা যায় রাজনৈতিক কিছু কারণে বচসা হয়, তারপর সেই বচসা অনেক দূর পর্যন্ত এগোয় |মহীতোষ বাবুর দাদা এই বিয়ে ভেঙ্গে দেন | সুনন্দার বাবা অবশ্য এই ঝামেলা বিয়ের মধ্যে আনতে চাননি, তিনি বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মহীতোষ বাবুর দাদারা কিছুতেই হতে দিলেন না |মহীতোষ বাবু নিজে গেলেন সুনন্দার বাবার কাছে কিন্তু তিনি বললেন বাড়ির সবার মত না থাকলে মেয়ে দেবেন না |দাদারা কেউ মত দিলেন না| মহীতোষ বাবুর শত অনুরোধেও উনি রাজী হননি তখন সুনন্দার বাবাও তড়িঘড়ি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন |সেই থেকে মহীতোষ বাবুর মানসিক অসুস্থতায় সবকিছু হারিয়ে ফেলেন আর এখন এভাবে জীবন যাপন করছেন |সুনন্দা দেবী তার স্বামী সংসার নিয়ে থাকেন কোলকাতায় |যখন উনি মাঝে মাঝে বাবার বাড়ি আসেন সেই দিন গুলোতেই নাকি আজও মহীতোষ বাবু ইস্ত্রী করা পরিষ্কার জামা কাপড় পড়েন, তার বুনো দাড়ি পরিষ্কার করে গায়ে পারফিউমের গন্ধ ছড়িয়ে সুনন্দা দেবীর বাড়ির আশে পাশে ঘোরাফেরা করেন | সেই দিনগুলো কেই ভালোবাসার দিন হিসাবে পালন করেন |বুকের বাম পাশের জায়গা জুড়ে থাকা মানুষ টিকে দেখা আর তার সামনে নিজেকে একবার দেখানোর সুখেই তার ছন্নছাড়া জীবনে সুখ খুঁজে পান | কেউ তাদের আজ পর্যন্ত সামনা সামনি হতে দেখেনি |তাই বলে কি সুনন্দা দেবী সেই আগের মত চুপি চুপি একবারো জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখেন না? আমার বিশ্বাস হয় না |কারণ কিছুক্ষণ আগে আসা সেই আত্মীয়া থুড়ি সুনন্দা দেবীর চোখ দুটোর ভাষা আমি পড়েছি, কিছুটা হলেও |

_________________________

বাড়িটা দোতলা |ভীষণ সুন্দর |বেল বাজালাম |বারান্দায় মহীতোষ বাবু বের হয়ে এলেন, তার গালে শেভিং ক্রিম লাগানো, হাতে ব্রাশটা, আমাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে কাজের মেয়েটিকে হাঁক দিলেন "ও রাজুর মা,আমার এক মেয়ে এসেছে, দরজা টা খুলে দাও" | আমি ঘরে ঢুকে ঢুকলাম |সুন্দর সাজানো বাড়ি | উনি শেভ করে ঘরে ঢুকলেন হাসিমুখে |বুঝলাম সুনন্দা দেবী এসেছেন তাই | তাকে আমি কিছু বলার আগেই তিনি গল্প জুড়ে দিলেন......আমার স্কুল কলেজের খবর থেকে তাঁর ছাত্রজীবনের গল্পে ঢুকে গেলেন, আমার কেমন জানি কষ্ট হতে লাগল, কষ্ট টা প্রবল নয় অথচ বুক টা চিন চিন করছে |তিনি অনর্গল বকে যাচ্ছেন আর আমি দেখতে পাচ্ছি একটা দোতলা বাড়ির সামনে বছর পঞ্চাশের যুবক স্যুটেড বুটেড হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে আর তার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা জানালার ফাঁক দিয়ে কখনও উঁকি মেরে দেখছেন |তাদের দুজনেই জানেন এই গল্পের কোন শেষ নাই, এই গল্পের শেষে কোন মিলনের স্পর্শ নাই, নাই কোন আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়া |কোন দিনও তাদের ভালোবাসার পথ এক হবে না, তারা আশাও করে না আর |তবুও প্রকৃতি রচিত এই দুই চরিত্রের অভিনয় তারা করে যাচ্ছে বড্ড সাবলীল ভাবে|......বহুদিন থেকে বহু যুগ থেকে এই দৃশ্য ঘটে চলেছে প্রতিটি সভ্যতায় প্রতিটি যুগেই...... কারণ ভালোবাসা আর রাজনীতি পৃথিবী সৃষ্টির আদিতেও ছিল আর আজও আছে | 


Rate this content
Log in