Aziza Nasrin

Classics Fantasy

4.4  

Aziza Nasrin

Classics Fantasy

ছোট্ট একটা প্রেমের গল্প

ছোট্ট একটা প্রেমের গল্প

4 mins
424



না: আর ভালো লাগছে না | নীলা উঠে বসে | গত পরশুদিন থেকে সে জ্বরে ভুগছে |বলতে গেলে সে গত তিন দিন ধরে শুয়েই আছে|ভাগ্যিস জ্বর টা তার এক্সাম-এর পর হল |এক সপ্তাহ আগে তার থার্ড ইয়ার এক্সাম কমপ্লিট হল |ফিলজফি অনার্স|আজ সকাল থেকে একটু ভাল বোধ হচ্ছে | কিন্তু মনটা উশখুশ করছে | গত তিন দিন সে ফেসবুক-এ যেতে পারেনি | সে নিশ্চয় তার জন্য অপেক্ষা করছে |অভি |অভিরূপ |না না, অভি নীলার বয়ফ্রেন্ড নয় | আচ্ছা বয়ফ্রেন্ডই যদি না হয় তাহলে সে অভির জন্য এত উতলাই বা হচ্ছে কেন? এর উত্তরও নীলা জানে না |গত ১ মাস আগে তাদের ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে ফেসবুকে |অভি হল নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড জয়ির এক মাসির ছেলে |একমাস আগে সে এসেছিল জয়িদের বাড়ি, নিলার বাড়ি থেকে কয়েকটা বাড়ি পর জয়িদের বাড়ি |শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে এম.টেক করছে|নীলা দেখেছিল তখন |কিন্তু কোন কথা হয়নি |অভি চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই নীলার ফেসবুকে অভির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে | তারপর থেকেই তারা খুব ভালই বন্ধু হয়ে উঠেছে | তবে কিছুদিন থেকেই কেন যে নীলার মনে হচ্ছে অভি কেমন যেন অন্যরকম বিহেভ করছে| কেন যেন মনে হচ্ছে ও অন্যকিছু বোঝাতে চাইছে |আর নীলাও যে কিছু বুঝতে পারছে না, তা নয় |অভির সাথে চ্যাট করা যেন এক নিয়মিত রুটিন হয়ে গেছে তার কাছে |ওর সাথে চ্যাট করতে বসলে কিভাবে যে সময় চলে যায় বুঝতেই পারে না | অভির এক একটা কথায় বুকটা অজানা এক আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে |

এখন দুপুর ২ টো | পাশে মা ঘুমাচ্ছেন | আস্তে আস্তে উঠে সে ল্যাপটপটা নিয়ে বিছানায় ফিরে আসে |ফেসবুকটা অন করে |২১ টা মেসেজ |১৩ টা অভির | তখনই আরো একটা মেসেজ ঢুকল|অভির |

-তিন দিন ধরে তোমার দেখা নেই|কি হয়েছে? 

নীলার মুখে হাসি ফুটে উঠল|

-এই একটু শরীর খারাপ ছিল |

অভি রিপ্লাই দিল না |নীলার ফোন বেজে উঠল |

-হ্যালো 

-কি হয়েছে তোমার? 

বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল | এটা যে অভি তা আর বলার দরকার হয় না |কিন্তু ও তো অভি কে নাম্বার দেয়নি |তাহলে? নিশ্চয় জয়ি |ঘুমন্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে নীলা কোন কথা না বলে বারান্দায় চলে আসে |

-না সেরকম কিছু নয় |সামান্য জ্বর হয়েছিল |

-"সামান্য? তাহলে ৩ দিন থেকে ফেসবুকে আসনি কেন? আমি তোমার অপেক্ষা করছি সারাক্ষণ | জয়ির কাছে থেকে কালই নাম্বার নিয়ে রেখেছি কিন্তু কল করতে পারছিলাম না |কেমন আছো তুমি এখন? "

নীলা কি বলবে বুঝতে পারছে না | একটা ছেলে তার শরীর খারাপ শুনে এত উতলা হয়ে উঠেছে |৩ দিন ধরে তার জন্য অপেক্ষা করছে | অজানা এক অনুভূতি তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরছে |

-হ্যালো, নীলা আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছ? 

-হ্যাঁ, পাচ্ছি |

এমন সময় মায়ের গলা পাওয়া গেল |

-শোনো, মা ডাকছে |পরে কথা বলি? 

-ওকে, কখন ফেসবুকে আসবে? 

-দেখি |রাখো |

-না, আগে বলো কখন আসবে? 

-আচ্ছা, রাতে আসব|

-প্রমিস? 

-প্রমিস |

আজ জয়ির দিদির বিয়ে | অভি এতক্ষণে নিশ্চয় এসে গেছে | নীলা একটা হাল্কা গোলাপি আর সাদা রং-এর কম্বিনেশনে ফ্রক চুড়িদার পরেছে | টানা টানা চোখে কাজল লাগিয়ে,কপালে ছোট্ট একটা টিপ পরে, ঠোঁটে হাল্কা লিপ্সটিক এর ছোঁয়ায় তার সুন্দর মুখখানি অপরূপ করে তুললো | তার ঘন সুন্দর চুল ছোট্ট একটা ক্লিপ দিয়ে আলগোছে আটকে নিয়ে বেরিয়ে গেল |জয়ির বাড়ির সামনেই অভি দাঁড়িয়ে আছে | ও: যার সাথে এত চ্যাট করে তাকে সামনে দেখে যে এরকম অপ্রস্তুত হয়ে পরবে তা সে কখনও ভাবে নি | যত রাজ্যের লজ্জা তাকে ঘিরে ধরল | অভি সামনে এগিয়ে এল |তার চোখ নীলার দিকে আটকে গেছে |"অসম্ভব সুন্দর দ্যাখাচ্ছে তোমাকে "| বুকটা কেঁপে উঠল নীলার |কোনমতে "থ্যাংক ইউ " বলে সে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেল |দেখা হলে কত কথা হবে.... কতকিছু ভেবেছিল |কিন্তু অভির সামনে তো সে দাঁড়াতেই পারল না |অভির চোখের দিকে তাকাতেই পারছে না | সারাদিন ধরে চলল তাদের লুকোচুরি| অভি তার কাছাকাছি আসলেই সে দূরে সরে যায় সেখান থেকে |প্রতিটা মুহূর্তে সে উপলব্ধি করতে পারছে যে, ২ টো চোখ তাকে বন্দী করে রেখেছে |অবশেষে সন্ধ্যাবেলা যখন দোতলার বারান্দা পেরিয়ে নিচে নামছে বাড়ি আসার জন্য, হঠাত ২ টো হাত এসে টেনে নিল তাকে |পিঠটা দেওয়ালে এসে ঠেকল | অভি তাকে বন্দী করে ফেলেছে |এত কাছাকাছি!! কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে |হৃৎপিন্ড টা এবার বুঝি ছিটকে বেরিয়ে আসবে|

অভি: তুমি বোঝ না আমি তোমাকে ভালবাসি?? 

লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠল |শরীর কাঁপতে শুরু করেছে |এই বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিল কেউ |সিঁড়ি বেয়ে কেউ উপরে আসছে |

নীলা :কেউ আসছে |

অভি :আসুক |আগে বলো কেন আমার থেকে দূরে দূরে থাকছ?

নীলা :ওকে, আর থাকব না |ছাড়ো |

অভির কোন ভাবান্তর নেই | একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সে |

নীলা: কেন বোঝ না, ভালোবাসি বলেই কাছে যেতে ভয় পাই |

বলেই সে নিজেকে কোনরকমে ছাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে |পিছনে আর ফিরে তাকাবে না সে |নীলা নিজেই বিশ্বাস করতে পারে না এইমাত্র সে অভিকে "ভালবাসি " বলে দিয়েছে |ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হচ্ছে | জোর কদমে সে বাড়ি চলে আসে | নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে |অদ্ভুত এক অনুভূতিতে শিহরিত হয় | বালিশে মুখ ডুবিয়ে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দেয় |প্রথম প্রেমের ভাললাগার ছোঁয়া সারা শরীর মনকে উদ্ভাসিত করে | কল্পনার সমুদ্রে সে ডুবতে থাকে |ফোন বেজে উঠল |অভি!! না :এখন সে রিসিভ করবে না |একটু অপেক্ষা করুক ওই "অসভ্য ছেলে "টা |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics