#YES_I_AM
#YES_I_AM
নিকিতা, নিকিতা ডিসুজা| বাড়ি মুম্বাই | বাবা ব্যবসায়ী, কোটিপতি | বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে নিকি| মুম্বাই আই আই টির এম এস সি কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর অসম্ভব ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট | সি ইস দ্য টপার | গাঁজা খাওয়াতেও সে তুখোড়, দিনে দু প্যাকেট সিগারেট না টানলে তার মাথা খোলে না | গায়ের রং কালো |মোটা | মুখশ্রী সুন্দর নয় মোটেই |চুলটা কানের নিচে নামানো....হালকা কোঁচকানো | চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা | তাকে সব সময় ঢোলা টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টারেই দেখতেই সবাই অভ্যস্ত | সে বন্ধু বান্ধব সেরকম কেউ নেই, কেমন যেন সবার প্রতি ডোন্ট কেয়ার ভাব | তার স্বপ্ন রিসার্চ করা.... ইউরোপ | সৌন্দর্য তাকে আকৃষ্ট করে না, মনে মনে একটা অবজ্ঞা আছে সুন্দরের প্রতি | বাবা তাকে যখন আদর করে ছোটোবেলায় প্রিন্সেস বলে ডাকত তখন সে তীব্র প্রতিবাদ করে বলত "পাপা, প্লিজ ডোন্ট কল মি দিস ননসেন্স প্রিন্সেস, আই আম দ্য আগলি, নলেজেবল, জিনিয়াস গার্ল "| ছোট থেকেই তার চারপাশের পরিবেশ তাকে জানিয়ে দিয়েছে সে কুৎসিত |শিশু মনে তার জন্য অনেক কস্ট পেয়েছে সে|কিন্তু নিজেকে সামলে নিতে তার বেশি দেরি হইনি| বাবা হয়ত মেয়ের কস্ট টা বুঝেই হেসে বলতেন "অফ কোর্স, ইউ আর এ জিনিয়াস"| এখন অবশ্য এসব নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই.... সামনে উজ্জ্বল..এক ভবিষ্যতের ... অনেক বড় হউয়ার স্বপ্নে বিভোর | প্রেম? তার মতে প্রেম হল একটা "মিথ", যার বাস্তব কোন অস্তিত্ত্ব নেই | আর মানুষের হৃতপিন্ড টা শুধু ব্লাড সার্কুলাশনের জন্যই.... কোন হৃদয় "ঘটিত ব্যাপার"এখানে কাজ করে না |
তাই এহেন মেয়ের সাথে এসব নিয়ে তর্ক করতেও কেউ আসে না |কেউ যে সেভাবে তাকে পছন্দ করবে এটাও কেউ ভাবে না |একদিন লাইব্রেরিতে যাওয়ার পথে পিছন থেকে একটা ডাক এল "হাই নিকি " -হাই.... -হে, আই আম হর্ষ, নিউলি আপোয়েন্টেড... ফর পি এইচ ডি কোর্স |" -হুম জানি এর সাথে আলাপ করা ইচ্ছা এখন তার নেই |বাই বলে যখন সে চলে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছে তখন হঠাৎ হর্ষ বলে "নিকি ই লাইক ইউ..... বলতে পারো ভালোবেসে ফেলেছি "| বলে কি? পাগল নাকি? নাকি রসিকতা করছে? যেন আকস্মিক বজ্রপাত! -হে আই ডোন্ট বিলিভ ইন লাভ |ওকে? বাই দ্য ওয়ে, আই আম কোয়াইট সারপ্রাইসড.... এখানে অনেক সুন্দর মেয়ে তুমি পেয়ে যাবে... বাই |" কথাগুলোর সাথে অবজ্ঞা ঝরে পড়ছিল, হর্ষ তা বুঝতে পেরে বলল "আমি তোমাকেই ভালোবাসি, |" না :সে কোন ছেলের মুখ থেকে কোনদিন এটা শুনবে আশা তো দুরস্থান, ভাবতেও চাইনি | তাকে ইউরোপ যেতে হবে, লাইব্রেরির দিকে পা বাড়াল |
------------------ -হ্যালো, আমি হর্ষ| -এই তুমি কেন এরকম পাগলামো করছ | -ভালোবাসি তাই -কিন্তু আমি তো বাসি না | -সেটাই তো বলছি, বেসেই দেখো একবার | -আমার কোনরকম ইন্টারেস্ট নাই এরকম ফালতু ব্যাপারে | -আমার তো আছে | -শাট আপ
(২)
কখনও ক্যান্টিন, কখনও লাইব্রেরী আবার কখনও কফি শপ.... নিকিতা-হর্ষ কে দেখে সবার খুব দমে গেল |প্রেমে পড়ে গেল নাকি শেষ পর্যন্ত! কিন্তু কেয় তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারে না....,আসলে নিকিতা বলেই পারে না | এইখানে একটু বলে রাখি... সেই প্রাচীন কাল থেকে সাহিত্যে লেখকেরা নারী হৃদয়কে বড় বিচিত্র বলে আখ্যা দিয়ে এসেছেন, তাকে বোঝা নাকি বড়ই দুষ্কর |আমিও এখানে তাদের সাথে একই মত প্রকাশ করে বলতে চাই সত্যিই বিচিত্র, নাহলে কি কোন এক গভীর রাতে আসা ফোন কলের জন্য ওই মেয়ে বসে থাকে? নাকি উত্তর দায় সেই এস এম এস এর যাতে লেখা "ইউ আর বিউটিফুল "আর সে রিপ্লাই দেয় "ইয়েস আই আম "? কিন্তু কেউ জানল না ভেতরকার খবর | কিন্তু ঈশ্বর বড় নিষ্ঠুর..... (
৩)
বহুবছর কেটে গেছে |নিকিতা সত্যিই খুব সফল হয়েছে | সে আজ হাভার্ডের এক প্রফেসর| কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রির এক উপর তার এক থিসিস.... সাড়া ফেলেছে সারা পৃথিবী জুড়ে |ভীষণ ব্যস্ত সে |স্টুডেন্টস মহলে তার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া|না, সে বিয়ে করেনি |কাছের বন্ধুরা অনুমান করে সে হয়ত আজও ভালোবাসে হর্ষ কে |শেষ সেমিস্টারের এক্সামের আগের দিন হর্ষ তাকে ছেড়ে চলে গেছে অন্য এক পৃথিবীতে | তারপর নিকি এক্সাম দিয়েছে, নিজের "টপার পজিসন ধরে রেখে পাড়ি দিয়েছে ইউরোপ |কিন্তু তার মনের ভিতরটা সবার কাছেই অজানা রয়ে গেছে | সবাই এটাও ভাবে ভাবে নিকি তো এরকম ই বিয়ে করার কথা তো তার নয় |কিন্তু সেই নিকি কোথাও যেন একটু পরিবর্তিত|নিকি আজ আর বলে না প্রেম একটা মিথ, সেই আটিচ্যুড.. সবার প্রতি শীতল দৃষ্টি আর নেই |পৃথিবীর কাছে সে নিজেকে রেখেছে এক রহস্যময়ীর আচ্ছাদনে আবৃত করে |তবে কেউ যদি কোন এক শনিবার সন্ধ্যায় তার বাড়ি যায় তাহলে হয়ত দেখতে পাবে এক ধোয়ান্ধকার ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো সেই বছর পঁচিশের হর্ষ ফ্রেমে হাসি মুখে চেয়ে আছে, যেন বলছে "ইউ আর বিউটিফুল " আর একটার পর একটা সিগারেট শেষ করতে থাকা সামনে বসা মেয়েটা মনে মনে বলছে "ইয়েস আই আম "|